কৈশোরে কিডনী রোগ

কৈশোরে কিডনী রোগ

স্বাস্থ্যকথা ডা. এহসানুল কবীর ডিসেম্বর ২০২৩


আমাদের দেহে বুকের খাঁচার জাস্ট নিচের দিকে দুপাশে ৫ থেকে ৬ ইঞ্চি লম্বা আকারের বাদামি রঙের শিমের বিচির মত দু’টো অঙ্গ আছে যাদেরকে ‘কিডনী’ বলা হয়। আর বাংলায় বলা হয় ‘বৃক্ক’। এটা আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারি অঙ্গ এবং দেহকে ঠিক রাখতে কিডনী বিশাল ভূমিকা পালন করে। সেই কিডনী যদি কোন কারণে বিকল হয়ে পড়ে তখন শরীর হয়ে যায় অসুস্থ। এমনকি মৃত্যুও ডেকে আনতে পারে।

এক সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, বিশ্বের মোট জনসখ্যার ১০% কিডনী রোগী। আরেক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, আমাদের দেশে হাসপাতালে আসা শিশু-কিশোরদের মধ্যে প্রতি ২০ জনে ১ জন কিডনী রোগে আক্রান্ত। তবে বড়দের কিডনী রোগ আর শিশু-কিশোরদের কিডনী রোগের ধরণ ও প্রকৃতি একটু ভিন্ন বটে। তাই আজকে কৈশোরে কিডনী রোগ নিয়ে কিছু কথা বলবো।


কিডনী কী কী কাজ করে?

আমাদের দেহের যত দূষিত পদার্থ আছে কিডনী সেসব রক্তের দ্বারা পরিশুদ্ধ করে প্রস্রাবের মাধ্যমে বর্জ্য আকারে বের করে দেয়। অর্থাৎ কিডনী প্রস্রাব তৈরী করে এবং শরীরের ছাকনি হিসেবে কাজ করে। কিডনী এভাবে দেহে পানির ভারসাম্য রক্ষা করে। দেহের অম্ল-ক্ষার এবং খনিজ লবণের ভারসাম্য রক্ষা করে। শরীরের হরমোনের ভারসাম্য রক্ষা করে। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে। দেহের ক্যালসিয়ামের লেভেল নিয়ন্ত্রণ করে। রক্তকণিকা উৎপাদনে সাহায্য করে। 


কিডনী রোগের কারণ কী?

১. কিডনীর ইনফেকশন এবং ঘন ঘন ইনফেকশন হলে।

২. কোন কোন ওষুধের তীব্র পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়ায় কিডনীর ওপর প্রভাব ফেললে।

৩. শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ায় কিডনীর কর্মক্ষমতা নষ্ট করে দিলে।


কৈশোরে কী কী ধরণের কিডনী রোগ হতে পারে?

ক. ইনফেকশন

মূত্রনালীর ইনফেকশন

মূত্রথলির ইনফেকশন

খ. কিডনীর টিস্যুর ইনফেকশন

নেফ্রোটিক সিনড্রোম

গ্লোমেরুলো নেফ্রাইটিস

লুপাস

গ. ক্যান্সার

নেফরোব্লাসটোমা

কিডনীর সিস্ট

ঘ. কিডনীর জন্মগত ত্রুটি

কিডনীর আকার ছোট-বড় হওয়া

রেচনতন্ত্রের গতিপথে ব্লক থাকা

কিডনী ফুলে যাওয়া 

ঙ. বংশগত : পরিবারের কারো কিডনি রোগ থাকলে শিশু-কিশোরদের কিডনী রোগ হতে পারে। 


এসব রোগ কিডনীকে কিভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে?

এসব রোগের মাধ্যমে কিডনীর টিস্যুগুলোতে রক্ত সরবরাহ বিঘিœত করে অথবা অন্যভাবে কিডনীর ছাকনির ক্ষমতা বাঁধাগ্রস্ত করে। উভয় কারণে কিডনীর টিস্যুগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়, কিডনী বিকল হতে থাকে এবং শেষের দিকে কিডনী অকেজো বা ‘কিডনী ফেইল্যুর’ হয়ে মানুষ মৃত্যুমুখে পতিত হয়।


কিডনী রোগের লক্ষণ কী?

কোন একসময় যদি গলায় ইনফেকশন অথবা চর্মরোগ বা চুলকানির ইতিহাস থাকে। পরবর্তিতে তা কিডনীকে আক্রান্ত করতে পারে।

কিডনী রোগে কমবেশী কিছু লক্ষণ উল্লেখ করা হলো। যেমন- 

১. ঘন ঘন জ্বর, অবসন্নতা 

২. পিঠের নিচের দিকে বা কোমরে ব্যথা

৩. ঘন ঘন প্রসাব হওয়া, ফোটায় ফোটায় প্রসাব হওয়া, পেটের নিচের দিকে ফুলে যাওয়া।

৫. প্রসাব করতে গেলে ব্যথা হওয়া বা জ্বালাপোড়া করা, প্রসাব কমে যাওয়া, প্রসাবের সাথে রক্ত যাওয়া ইত্যাদি।

৬. রক্তস্বল্পতার কারণে ত্বক ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া 

৭. শরীর ফুলে যাওয়া। বিশেষ করে মুখমণ্ডল ও পায়ের গোড়ালিসহ পেটও ফুলে যেতে পারে। 

৮. হাড়ে ব্যথা, হাড় ক্ষয়


কী কী পরীক্ষা করতে হবে?

১. রক্তের বিভিন্ন পরীক্ষা

২. প্রসাবের বিভিন্ন পরীক্ষা

৩. কিডনীর আল্ট্রা সনোগ্রাম

৪. অন্যান্য প্রয়োজনীয় পরীক্ষা

চিকিৎসা কী?

কিডনীর যেকোন সমস্যায় কিডনী বিশেষজ্ঞ বা নেফরোলোজিস্টের পরামর্শ নিতে হবে। তারা রোগীর অবস্থা ও রোগের ধরণ বুঝে এন্টিবায়োটিক এবং অন্যান্য ওষুধ দ্বারা কিডনীর নির্দিষ্ট চিকিৎসা করে থাকেন। এছাড়া কিডনীর কার্যকারিতা হারালে “ডায়ালাইসিস” অর্থাৎ যন্ত্রের মাধ্যমে কৃত্রিমভাবে কিডনীর কাজ করানোর মত চিকিৎসা করা লাগতে পারে। আবার কিডনী মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলে বা অকার্যকর হলে কিডনী প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে চিকিৎসা করা যেতে পারে। কিছু খাবারের ব্যাপারে বিধিনিষেধ করা লাগতে পারে।

এছাড়া চিকিৎসকের পরামর্শমত পরিমিত পানি পান বা হিসেব করে পানি পান করাও লাগতে পারে। কৈশোরে ডায়রিয়া বা জ্বর হলে বেশী বেশী তরল পান করা উচিৎ। কারণ এ সময় তাদের শরীরে প্রচণ্ড পানি শূণ্যতার কারণে তাদের কিডনী বিকল হয়ে যেতে পারে।


কিডনী রোগ প্রতিরোধের উপায় কী?        

কিডনী ভালো রাখতে গেলে সঠিক খাদ্যাভ্যাসে অভ্যস্ত হতে হবে। খাবারে বেশী লবন না খাওয়া, বাজারের প্রিজারভেটিভ বা কেমিক্যাল মিশ্রিত খাবার যেগুলোর মাধ্যমে কিডনীর ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ে, সেসব খাবার এড়িয়ে চলা উচিত। এছাড়া নিয়মিত শরীরচর্চার মাধ্যমে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে হবে।


একথা মনে রাখতে হবে যে, শৈশব-কৈশোরে বার বার কিডনি ইনফেকশন হওয়া মানে কিডনী অকেজো বা কার্যক্ষমতা হারানোর পথে অগ্রসর হওয়া। কাজেই দেরি না করে সময়মতো সঠিকভাবে চিকিৎসা করালে কিডনী সুস্থ থাকবে এবং অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।

আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ