খুদে খরগোশের পালা

খুদে খরগোশের পালা

নাটিকা ফেব্রুয়ারি ২০১৫

 কাজী তাবাসসুম #

(কাব্য ও সুরের দেশ বাংলাদেশ। ভাটিয়ালি, জারি-সারি, পুঁথি ও পালাগান সমৃদ্ধ করেছে বাংলা সংস্কৃতিকে। আলোকিত আমাদের সংস্কৃতির ভান্ডার।) বয়াতী : প্রথমে শুকরিয়া করি নামেতে আল্লাহর ¯্রষ্টা ও মালিক যিনি এই দুনিয়ার (আরে) দরূদ ও সালাম পাঠাই হাবিবে খোদার আনলেন এ ধারায় যিনি শান্তি অপার মা বোন সকলেরে জানাইয়া সালাম খুদে খরগোশের পালা শুরু করিলাম। এক যে ছিল বন- শোনেন সবাই সেই কাহিনী শোনেন দিয়া মন (২) সেই বনে নাইরে কোন নিয়ম ও বিধান জয় হতো যার শক্তি বলে সেই হতো প্রধান নিয়ম ছিল এ জঙ্গলে যে-ই হতো রাজা আইন হতেন নিজেই তিনি খাদ্য হতো প্রজারে- খাদ্য হতো প্রজা। পালাক্রমে সব পশুরা তার দুয়ারে যেত রাজা তাহার পেটটি পুরে আয়েশ করে খেতরে- আয়েশ করে খেত। এ বন জুড়ে ছিল যে হায় শুধুই অনাচার কার কতটা শক্তি সবাই প্রমাণ দিত তার। (আরে) বনে ছিল এক খরগোশ নরম কোমল মন কাঁধে তুলে নিত সকল দুঃখ বেদন খরগোশ বলে, খরগোশ বলে- খেরগোশ : শোন ভাইয়েরা শোন এ জঙ্গলে সবাই সমান সকলে আপন। বয়াতী : এই কথা শুনি সকলে তারে বলে- সমবেত : ওরে ও পাগল- এত ভার তোর কাঁধে সইবে কেন বল। বয়াতী : তবুও মানে না খরগোশ কারেও না ডরে কাহারও বিপদ শুনলেই ব্যথা পায় অন্তরে জানে সে পারবে না সকল দুঃখ করতে দূর তবু করে যায় তার সাধ্য যতদূর । কোরাস : একদিন এক বাঘের গলায় হাড় ফুটিয়াছিল শুনে খরগোশ ছুটে গিয়ে বকেরে সাধিল সিংহ জালে বাধা পড়ছে শুনিয়া খবর ঈঁদুরেরে বলে সে জাল কেটে বাহির কর প্রাণিকূলে সব পশুরা ব্যঙ্গ বিদ্রƒপ করে- কোরাস : দেখিস এ জন্য একদিন ভুগতে হবে তোরে.. শিয়াল : দেখিস এ জন্য একদিন ভুগতে হবে তোরে.. বাঘ : দেখিস এ জন্য একদিন ভুগতে হবে তোরে.. হাতি : হুম, দেখিস এ জন্য একদিন ভুগতে হবে তোরে.. বয়াতী : হঠাৎ একদিন খরগোশ এক শুনিল খবর বাঘ জালে আটকাইয়াছে বিপদ সরবর, খরেগোশ ছুটিল সেদিক পানে - বাঘ : দাঁত দিয়ে জাল কেটে বের কর ভাই কথা দিলাম আজ আমি মারবো না তোমায় বয়াতী : ওরে সরল বিশ্বাসের খরগোশ মুক্ত করে তারে ওমনি ছুইটি আইসা বাঘ হুঙ্কার ছাড়ে। বাঘ : আরে আরে বোকা খরগোশ আর ছাড়ন নাই তোর নরম শরীর দিয়া আমি নাস্তা সারতে চাই। বাঘ : মেরো না, মোরো না, বাঘ মামা ও মামা, মেরো না আমারে রে বাঘ মামা, মামা রে। বয়াতী : শুনিয়া ব্যাঘ্র মশাই আক্রমণ করিল ধরিতে গিয়ে পুনরায় জালেতে জড়াইলো, তখনই খরগোশের মন দয়ার সঞ্চার হইলো। ছুটিয়া শেয়াল, ইঁদুরের খোঁজে বাহির হইলো তিনজনে মিলে তারে করিলো উদ্ধার বাঘ বলে- করবো না আর এমন ব্যবহার। বয়াতী : এমনি আর একদিন খরগোশ পড়িল বিপাকে এক হিং¯্র প্রাণী আঘাত করিল তাহাকে। সারা গায়ে রক্ত মাখি আসিয়া সে হায়, বসিল একাকী এক গাছের-ই তলায় দেহ প্রাণে অন্তরে তার নিদারুণ ব্যথা প্রাণিকূলে না বুঝিল তার মনে-ই কথা। খরগোশ : হায়! প্রাণ কি তবে বৃথা যায়? এতদিনের এত চেষ্টা, এত পরিশ্রম সবই কি হইলো বৃথা, হইলো পন্ডশ্রম সিংহ, শেয়াল ব্যাঘ্র, শকুন হিং¯্র প্রাণী যত কেউ বোঝে না আমার ব্যথা চলে নিজের মত কেউ বোঝে না ব্যথীর বেদন দুর্বলের কথা সবলে মারিল যখন যারে পাইলে যেথা। বয়াতী : ভাবিতে লাগলো খরগোশ মাথা করি নত জীবনের টুকরো কথা, টুকরো স্মৃতি যত এমন সময় খরগোশ হঠাৎ-ই দেখিল তার চেষ্টা বৃথা যায়নি, হয়নি পন্ডশ্রম। দেখিল এক উপকারী খরগোশ পিঠে করি এক আহত ব্যাঙকে তার আবাসস্থলে নিয়ে যায়। ১ম খরগোশ : আহ! বন্ধু, তোমাকে আহতের সেবায় আসতে দেখে অন্তর প্রশান্ত হলো ২য় খরগোশ : তুমি হতাশ হয়ে না বন্ধু প্রাণী সকলের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ জেগে আজ আমরা সবাই একত্রিত হবো থাকবে না কোন ভেদাভেদ। বয়াতী : এই সময় এক হাতি আর এক ইঁদুর এলো খরগোশ ভাবে ইঁদুরে প্রাণটা এবার গেলো কিন্তু না হাতি তারে মারিল না প্রাণে সরায়ে রাখিল তারে অতি সন্তর্পণে অদূরে এক ঝোপের ধারে সভা শুরু হলো, বাঘ, শেয়াল হাতি, খরগোশ সকলে জুটিলো। বাঘ : আমাদের সমান দৃষ্টান্ত আছে, আমরা তার অনুসরণ করবো, যতটা পারি দূর করবো নিজেদের দুঃখ কষ্ট। শেয়াল : আমাদের জঙ্গলের আইন সবাই মানতে বাধ্য থাকবে। হাতি : এই আইন করা হবে সকলের পূর্ণ মতামত ও সমর্থন সাপেক্ষে। খরগোশ : কেউ এই আইন অমান্য করলে তাকে উপযুক্ত শাস্তি দেয়া হবে। সিংহ : আমি আমার অপরাধের জন্যে অনুতপ্ত, আমি সকলের অধীন থাকবো। ইঁদুর : এ জঙ্গলে সবাই আপন, সকলে ভাই ভাই আসুন সকলে মিলে প্রচেষ্টা চালাই। সমবেত : হ্যাঁ হ্যাঁ প্রচেষ্টা চালাই অনুসরণ প্রচেষ্টা চালাই। ১ম খরগোশ : আজ জীবনের প্রান্তে এসে আমার নেই কোনো দুঃখ গ্লানি, হতাশা কি প্রশান্তি, কি গভীর আনন্দে ভরে গেলো অন্তর আহ! আহ! আহ! নেপথ্যে : জঙ্গলে শান্তি আনবে বলে জীবন বাজি রেখেছিল যে খুদে খরগোশ, তাকে প্রাণ দিতে হলো, রক্ত ঝরাতে হলো তার রক্ত বৃথা যায়নি। যাবার আগে সে রেখে গেছে তার আদর্শ আর কিছু অনুসারী, যারা তার হয়ে লড়বে, আমরাও যদি মানুষের সমাজে শান্তি ও কল্যাণ প্রতিষ্ঠা করতে চাই তবে এমনি করে জীবন বাজি রাখতে হবে। গান : আমরা যে চাই সবারই সুখ। দেশের ভালো নুতন প্রভাত আলো ঝলোমলো। কেউ থাকবে না পড়ে আর পথের পরে কেউ থাকবে না অনাহারে অনাদরে আসবে সুদিন ঘরে ঘরে রইবে না আর আঁধার কালো।

আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ