গ্রহ থেকে গ্রহান্তরে   -মুহাম্মাদ দারিন

গ্রহ থেকে গ্রহান্তরে -মুহাম্মাদ দারিন

উপন্যাস মে ২০১৬

অপরূপ নীরব হয়ে আছে চারিদিক। যেন চাঁদ-তারার জনসভায় প্রকৃতিও নিশ্চুপ শ্রোতা। মাঝে মধ্যে নারিকেলের পাতা থেকে শিশিরবিন্দু পড়ার টুপ টাপ শব্দ হচ্ছে। যেন জনসভার পিছে বসা শ্রোতা বাদাম খাওয়ার খোসা ছাড়ানোর শব্দ হচ্ছে।
ধীর পদক্ষেপে ছাদে আসে আসিফ। বসলো পশ্চিম পাশে রাখা ছাদে বসার জন্য পুরাতন বেঞ্চটায়।
সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র ও। আজ ওর মন ভীষণ খারাপ। কোনো কিছুই ভালো লাগছে না। এ সময় কী করা উচিত সেটাও মাথায় আসছে না। আনমনা হয়ে পড়ে ও। ভাবতে থাকে আকাশ-পাতাল। রুমের ভেতর পায়চারি করতে করতে  একসময় চলে আসে ছাদে। এতো রাতে ও কখনও ছাদে আসেনি। তাকালো চারিদিকে। দক্ষিণের নারিকেল গাছ থেকে একটা হুতোম পেঁচা উড়ে গেল। গা ছম ছম করে উঠলো ওর। ভাবলো রুমে ফিরে যাবে। কিন্তু পরক্ষণেই ঐ চিন্তা বাতিল করে দিল।
মনে মনে বলল, ‘ওতো একটা পাখি। ও আমার কী করবে?’
ভয়ের অন্য চিন্তাও মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। তবুও আসিফ সাহস সঞ্চয় করে বসে রইলো বেঞ্চে। সন্ধ্যার ঘটনা আর একবার মনের পর্দায় রিপ্লে করলো।
বিকালে ক্রিকেটে শোচনীয় পরাজয় বরণ করে ওদের দল। প্রতিপক্ষের বোলিংয়ের কাছে ওরা দাঁড়াতেই পারেনি। এরূপ পরাজয় ওরা মেনে নিতে পারেনি। খেলা শেষে অনেক আলোচনা পর্যালোচনা হয় মাঠেই। পরাজয়ের সব কারণ চিহ্নিত করা হয়। এসব কারণে বাড়ি ফিরতে সন্ধ্যা পেরিয়ে যায়। গেট খুলতেই তেড়ে আসেন মা। আচ্ছা করে ধমক লাগান। উদ্ধার করেন ক্রিকেটের চৌদ্দগোষ্ঠী।
সন্ধ্যার পর বাড়িতে ফেরা মায়ের কাছে গুরুতর অপরাধ। এই অপরাধের জন্য মা কয়েক বার থার্ড আম্পায়ার ডেকেছেন। অর্থাৎ আব্বুর কাছে নালিশ।
আব্বু অবশ্য এক্ষেত্রে সবুজ সঙ্কেত জ্বালিয়ে সতর্ক করে দিয়েছেন কয়েকবার।
আজ মা থার্ড আম্পায়ার ডাকলেন না। ঘোষণা দিলেন সন্ধ্যার পর বাডিতে ফেরার অপরাধে ক্রিকেট থেকে ওকে বহিষ্কারের।
কোনোরূপ তদন্ত ছাড়াই এই ঘোষণা। এ অন্যায়। দুনিয়ার কোনো আইনই এটাকে সমর্থন করে না। এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা উচ্চ আদালত আছে কি না তা আসিফের জানা নেই।
রাগের গতি বাড়ছিল আসিফের। মাথা উঁচু করে তাকিয়ে দেখে মায়ের পাশে দাঁড়িয়ে ছোট বোন নোভা ভাইয়ার শাস্তিতে হাসছে।
রাগের গতি বেড়ে ১৭০ মাইল হলো। যেন কোনো রাজধানীগামী এক্সপ্রেস। মা চলে যেতেই ও নোভার ডান কান বাম হাত দিয়ে টেনে ধরলো। ডান হাত দিয়ে সজোরে চড় বসিয়ে দিলো ওর বাম গালে।
জোরে কেঁদে উঠে আপিলের আবেদন জানালো নোভা মায়ের কাছে। ‘আঁ...আঁ...হু...হু... মা...আ.. ভাইয়া আমাকে মারছে।’
দৌড়ে এলেন মা। আসিফ তখনও রাগে ফুঁসছে। নোভা আপিলের আবেদনে পা দাপাচ্ছে আর কাঁদছে। মা শাহাদাত আঙুল না উঠালেও বকা দিলেন আর এক দফা আসিফকে।
রাগে ক্ষোভে দুঃখে ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা করে আসিফ মনে মনে।
হাত-মুখ ধুয়ে বই নিয়ে টেবিল চেয়ারে বসে ও। সামনে বই খোলা থাকলেও মন থাকে অন্যখানে। সামান্য কারণে মা ওকে আজ অতিরিক্ত বকেছেন। মা শুধু বোঝেন পড়া আর পড়া। এই বয়সে যেন পড়ালেখা ছাড়া আর কিছুই করতে নেই। তাও আবার শুধু ক্লাসের বই। কোনো গল্পের বই আবার তাদের সামনে পড়া যাবে না।
অথচ নিজেরা যখন নিজেদের ছোটবেলার গল্প বলবেন তখন বলবেন, তারা ছোটবেলায় এটা করেছেন, সেটা করেছেন, দস্যিপনায় তারা ছিলেন সেরা। হাজার রকম খেলা খেলেছেন তারা। নজরুল, রবীন্দ্রনাথ, শরৎ, গোলাম মোস্তফা, ফররুখ, জসীমউদ্দীন কত লেখকের বই তারা পড়েছেন তার কোনো গুন্তি নেই।
বারবার বলবেন, ‘কি এক ক্রিকেট খেলায় ছেলেগুলোর সব লেখাপড়া গোল্লায় গেল।’
অথচ ক্রিকেটের কারণে বিশ্বে আজ বাংলাদেশ পরিচিত সে কথা কেউ বলবেন না। পৃথিবীতে যে বাংলাদেশ নামে একটা দেশ আছে সেটা বিশ্ববাসী জানতে পেরেছে এই ক্রিকেটের কারণে।
আসিফের মতে সকল মা আজ ক্রিকেটবিদ্বেষী, যা অসহ্য।
রাতে খাওয়ার সময় আসিফ অল্প-স্বল্প খেয়ে উঠে পড়ে। মা-আব্বু দু’জনই তাকান ওর দিকে। কিন্তু কোনো মন্তব্য করেন না।
বিছানায় শুয়ে শুয়ে শুধু এপাশ-ওপাশ করতে থাকে ও। দু’চোখের পাতা মোটেও এক হয়নি।
অনেক ভেবেছে ও। সর্বশেষে সিদ্ধান্ত নিয়েছে এতো নিয়মশৃঙ্খলার ভেতর আর নয়। এখান থেকে বের হতে হবে।
পেঁচাটা আবার নারিকেল গাছে এসে বসলো। ডেকে উঠলো দু’বার। গা ভার হয়ে গেল ওর ডাক শুনে। এ জন্য মানুষ পেঁচার ডাককে অশুভ মনে করে, ভাবলো আসিফ। সত্যি পেঁচার সাথে অশরীরী জগতের কোনো সংযোগ আছে নাকি?
চলে যাওয়া ভয়টা আসিফকে আবারও ঘিরে ধরলো। মাথার ওপর দিয়ে বাতাস কেটে উড়ে গেল একটা বাদুড়। শীতে ঠান্ডা হতে শুরু করেছে আসিফের শরীর। দাদীর কাছে শোনা সমস্ত ভয়ের গল্প আর বইয়ে পড়া জিন-ভূতের কাহিনীগুলো মনে পড়তে আরম্ভ করছে এক এক করে।
ফিরে যাবে আসিফ ঘরে। উঠে দাঁড়ালো। কিন্তু নড়তে পারছে না। দু’পা যেন কয়েক টন ভারি হয়ে গেছে। কোনো মতে একবার চারিদিক তাকালো। সুনসান নীরবতা চতুর্দিকে। মুখটা উঁচু করলো আকাশের দিকে ও। নীরব চাঁদ-তারা যেন ওকে দেখে মিটিমিটি হাসছে।
একটা উল্কা যেন খসে পড়লো আকাশের বুক থেকে।
চোখের পলক ফেলল আসিফ একটা।
উজ্জ্বল আলোর বন্যায় ভাসছে এখন চতুর্দিক। ‘তাহলে কি উল্কাটা আসিফদের ছাদেই পড়বে।’ ভয় পাচ্ছে আসিফ।
হুতুম পেঁচাটা যেন ভয় পেয়েছে এমন ভাবে ডেকে উড়ে গেল।
‘জীবনের শেষ মুহূর্ত চলে এসেছে।’ ভাবলো আসিফ। ‘শেষ পর্যন্ত উল্কার আঘাতে ও সহ মা-আব্বু আর প্রিয় ছোট বোন নোভার মৃত্যু হবে? এতো কোনো স্বাভাবিক মৃত্যু নয়। এমন মৃত্যু কি কারো কখনও হয়েছে?’ দু’চোখ বন্ধ হয়ে এলো ওর।
‘আমার সাথে কি আমার মা-আব্বুও মারা যাবে? আমার মা’টাতো খুউব ভালো। তাহলে সন্ধেয় আমাকে বকলো কেন?’
‘সন্তানের ভালো চাওয়াতো প্রত্যেক মায়েরই কর্তব্য। তাহলে কি আমার মা আমার ভালোর জন্য বকেছেন? সেটাইতো স্বাভাবিক। তাহলে সন্ধেয় মায়ের ওপর অভিমান করে আমি কি ভুল করিনি?’ নিজেকে প্রশ্ন করলো আসিফ।
উত্তরটাও নিজেই দিলো, ‘হ্যাঁ। অবশ্যই ভুল করেছি।’
‘আচ্ছা, সন্তানের দুঃখ কি কোনো মা সইতে পারে? মায়ের মমতা কি কিছু দিয়ে পরিমাপ করা যায়?’ নিজে নিজে ভাবছে ও।
‘মায়ের ভালোবাসা, মমতা ¯েœহ, যদি পরিমাপ করা না যায় তাহলে আমাদের পালনকর্তা আমাদের কত্ত ভালোবাসেন? তাহলে ঐ আল্লাহর দরবারে কেন মাথা নত করবো না?’ হৃদয়ের গভীর থেকে চিন্তাটি বেরিয়ে এলো।
‘আচ্ছা, আমার আব্বুটাতো খুব ভালো। তাহলে মাঝে মধ্যে আমার ওপর চোখ রাঙায় কেন? এটাও কি তার ¯েœহের বহিঃপ্রকাশ? তাইতো!’
‘আমার ছোট বোনটি ও খুব ভালো। সন্ধেয় তাহলে ওকে আমি মারলাম কেন? ওতো ছোট। একটু দুষ্টামি করতেই পারে। নাহ্। ওকে আর কখনও মারবো না।’
‘একদিনতো মরতেই হবে। আমরা না হয় একটু আগেই বিদায় নিলাম!’
‘আচ্ছা আমি কি মারা গেছি! উল্কাটা কি খুব জোরে আঘাত হেনেছে আমাদের ওপর? কোনো ব্যথা পেলাম না কেন?’
‘আমিতো কোনো অন্যায় করিনি? তাহলে ব্যথা না পাওয়ারই কথা?’
‘আচ্ছা আমি কি আমার প্রিয় ছোট বোনকে দেখতে পাব? শুনেছি যারা ভালো ছিলো তারা তাদের সৎ ইচ্ছে পূরণ করতে পারবে।’ চিন্তাগুলো ওর মনের। ছোট বোনকে দেখার অদম্য ইচ্ছায় চোখ দু’টি খুলে গেল ওর।
ও মারা গেছে নাকি স্বপ্ন দেখছে? তাইতো। উজ্জ্বল আলোয় দেখা যাচ্ছে ওর প্রিয় বোনকে। ভয়ে কাঁপছে সে।
একপা এগোলো আসিফ। হ্যাঁ। পা নাড়াতে পারছে। তাহলে কি ও বাস্তবে আছে?
‘ভাইয়া...ভাইয়া।’ ভয়ে যেন কথা বের হতে চাচ্ছে না নোভার।
আসিফ এগিয়ে যেয়ে দু’হাতে ধরলো ওকে। ও বলে উঠলো আসিফ কিছু বলার আগেই, ‘ঘুম ভেঙে গেলে দেখি রুমে আলো জ্বলছে। পাশের খাটে তুমি নেই। রুম থেকে বের হয়ে দেখি চিলেকোঠায় আলো জ্বলছে।’ একটা ঢোক গিলল নোভা। তারপর বলল, ‘দেখি ছাদের দরজা খোলা। এসে দেখি তুমি ওপর দিকে তাকিয়ে চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে আছো আর ঐ যে ওটা থেকে আলো বের হচ্ছে। ভাইয়া আব্বু-আম্মুকে ডাকো আমার ভীষণ ভয় করছে।’ ভয়ে আসিফের সাথে মিশে যেতে চাইলো যেন নোভা।
এতক্ষণ পর খেয়াল হলো আসিফের। পিরিচের মতো গোল অনেক বড় একটা কি যেন কাঁকড়ার মতো চারপায়ে দাঁড়িয়ে আছে ছাদের পূর্ব পাশে। উজ্জ্বল আলো বের হচ্ছে ওটার শরীর থেকে। ভয়ের একটা শীতল ¯্রােত বয়ে গেল ওর নীলদাঁড়া বেয়ে। প্রিয় বোনকে আগলে রাখলো নিজের মধ্যে। কোনো কিছুই যেন ওকে স্পর্শ করতে না পারে এমন ভাবে।
আসিফের মনে হলো ঐ ভয়ানক জিনিসটা সম্পর্কে ও যেন, যেন কিছুটা জানে। কিন্তু এখন তার কিছুই মনে পড়ছে না।
একটা দরজার মতো অংশ সরে গেল ওটার গা থেকে। নেমে এলো বিমানের সিঁড়ির মতো সিঁড়ি। নিভে গেল উজ্জ্বল আলো। জ্বলে উঠলো হালকা সহনীয় আলো।
ওদের দুই ভাইবোনকে অবাক করে দিয়ে সিঁড়িতে এসে দাঁড়ালো আসিফের সমবয়সী একটা ছেলে।
নেমে এলো সিঁড়ির সর্বশেষ ধাপে ছেলেটি।
পরিষ্কার বাংলায় বলল, ‘আস্সালামু আলাইকুম।’
আসিফ ও নোভার মুখ থেকেও সমস্বরে বেরিয়ে এলো, ‘ওয়ালাইকুমুস সালাম।’
ভয়ে চলন-বলন শক্তি হারিয়ে ফেলল দুই ভাইবোন।
সিঁড়ি থেকে নেমে আসিফদের দিকে এগিয়ে গেল ছেলেটি। ভয়ে স্থির দাঁড়িয়ে আছে ওরা দু’জন।
ছেলেটির মুখে মৃদু হাসি ফুটিয়ে হ্যান্ডশেকের জন্য হাত বাড়িয়ে দিল আসিফের দিকে।
ভয়ে কুঁকড়ে দু’ কদম পিছিয়ে গেল আসিফ বোনকে নিয়ে।
ছেলেটি দু’হাত পকেটে পুরে বলল, ‘আমি জানতাম তুমি খুব সাহসী।’
আসিফের আঁতে ঘা লাগলো। মুখে কোনো কথা বলল না।
ছেলেটি আবারও হাত বাড়ালো হ্যান্ডশেকের জন্য।
বিপদের এই মুহূর্তে আসিফের সর্বপ্রথমে মনে এলো মহান প্রভু আল্লাহর নাম। যা থাকে কপালে ভেবে হ্যান্ডশেকের জন্য এগিয়ে দিলো ডান হাত। বাম হাতে আগলে ধরলো বোনকে।
ছেলেটি এবার মৃদু শব্দ করে হাসলো। দু’কদম এগিয়ে এসে হাত মিলালো আসিফের সাথে। রক্তমাংসের মানুষ বলে মনে হলো ওকে। মনের ভয় শঙ্কা কিছুটা দূর হয়ে গেল।
‘আমার নাম হব। আমি তোমাদের নিতে এসেছি।’ বলল ছেলেটি।
‘আ...আ...আ..মি।’ এখনও স্বাভাবিক হতে পারেনি ও।
ওর মুখের কথা কেড়ে নিয়ে বলল হব, ‘তুমি আসিফ। আর তোমার থ্রিতে পড়–য়া এই প্রিয় বোনটির নাম নোভা। এইটা তোমাদের বাড়ি। তোমার আব্বু-আম্মু এখন ঘুমাচ্ছেন। তোমাদের এই বাড়িটা তোমার খুব প্রিয়। কারণ এই স্থানটা না শহর না গ্রাম।’
‘তুমি এতো........।’
হব হাত উঁচু করে আসিফকে থামিয়ে দিল। বলল বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত ঘটে যাওয়া সমস্ত ঘটনা। সর্বশেষে বলল, ‘তোমার সমস্ত ক্ষোভ ও অভিমান দূর হয়ে গেছে। এখন শুধু মনে একটু ভয় ভয় ভাব কাজ করছে।’
‘হ্যাঁ। কিন্তু তুমি এতসব জানলে কী করে?’ বলল আসিফ। ভয়ের বরফ একটু একটু করে গলতে শুরু করছে ওর।
‘সে কথা নাইবা শুনলে! চল নিয়ম শৃঙ্খালার বাঁধন একটু ছিন্ন করি। বেড়িয়ে আসি মহাকাশ থেকে। আর যাবো আমার ঐ সসারে করে।’ পিরিচের মতো বড় জিনিসটাকে নির্দেশ করলো হব।
সসার সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য মনে পড়ে গেল আসিফের। এই সসারে করে ভিন গ্রহের প্রাণীরা ঘুরে বেড়ায় মহাশূন্যে। আসে পৃথিবীতে ভ্রমণ করতে। অনেক বিজ্ঞানী অবশ্য এটা বিশ্বাস করতে রাজি নন। আবার কেউ কেউ বলেন, এটা হলেও হতে পারে। চীন সবচেয়ে বড় টেলিস্কোপ বানিয়েছে সসার দেখার জন্য।
আসিফ দ্বিধা-দ্বন্দ্বে পড়ে গেল। ওর সামনেই হাজির সেই সসার। ও বিশ্বাস না করে এখন কী করবে? ও স্বপ্ন দেখছে নাতো? না কি মরে গেছে ও? চোখ বন্ধ করলো। ঝাঁকি দিলো মাথা। তাকিয়ে দেখলো হব নামের ছেলেটি এবং সসার স্থির আছে। উধাও হয়ে যায়নি।
নোভা মুখের দিকে তাকালো একবার। ও পিট পিট করে ভাইয়ার দিকে তাকাচ্ছে।
‘অত ভেবো না আসিফ। চল। কিছু সময় ভ্রমণ করে আসি।’ ওকে ভাবতে দেখে বলল হব।
‘কিন্তু....।’
‘কিন্তু কল্পলোকের সসার  বাস্তবে সম্ভব কিনা?’ বলল হব।
‘হ্যাঁ। সেইটায়।’ উত্তর আসিফের।
‘কখনও কখনও সম্ভব হয়। দেখ তোমার মনের ভয় আস্তে আস্তে দূর হচ্ছে।’
‘হ্যাঁ। তুমি এতো কিছু জানছো কি করে?’
‘আমিতো তোমারই একটা অংশ। সুতরাং জানতে তো আমাকে হবেই।’ মৃদু স্বরে বলল হব।
‘বুঝতে পারলাম না। বড় জটিল কথা বললে। সহজ করে বল।’
‘ওসব থাক। চল আমরা ভ্রমণ করে আসি। কি নোভা তুমি যাবে না আমাদের সাথে?’ শেষের কথা নোভাকে লক্ষ করে বলল হব।
নোভা কী বলবে ভেবে পেল না। তাকালো ভাইয়ার দিকে।
আসিফের মনের স্ক্রিনে এক একটি ভয়ের চিন্তা উদয় হচ্ছে আর ডিলিট হয়ে যাচ্ছে। সর্বশেষে স্থির হলো হব ভিন গ্রহের প্রাণী এবং ওদের দুই ভাই বোনকে মোহাচ্ছন্ন করে কিডন্যাপ করবে।
আসিফ কিছু বলার আগেই হব বলল, ‘হ্যাঁ। আমাকে ভিন গ্রহের প্রাণী ভাবতে পারো। তবে আমি তোমাদের কোনো ক্ষতি করবো না। তোমাদের নিয়ে কিছু সময় আনন্দে কাটানোর জন্যই আমি এসেছি।’
আসিফ অবাক হয়ে বলল, ‘তুমি অন্তর্যামী নাকি? আমি মনে যা ভাবছি তাই তুমি বলে দিচ্ছে?
‘অন্তর্যামী অর্থাৎ মনের সমস্ত কথা পরিকল্পনা একমাত্র তোমার আমার প্রভুই জানতে পারেন।’ একটু দম নিলো হব। ‘আচ্ছা তোমার ভয় কি এখনও দূর হচ্ছে না?’
‘দেখ একমাত্র মানুষই বিবেক-বুদ্ধিসম্পন্ন প্রাণী।’ সুযোগ বুঝে জ্ঞান দিতে শুরু করলো আসিফ। ‘কার মনে কি আছে কেউ বলতে পারে না।’
মনের কথা প্রকাশ করে ফেলল আসিফ, ‘হয়তো তুমি জিন-ভূত। নয়তো আমাদের দু’জনকে তুমি কিডন্যাপ করতে এসেছো।’
হব এবার মৃদু শব্দ করে হাসলো। হাসি থামিয়ে বলল, ‘ভূত-প্রেতে এখনও আচ্ছন্ন তোমরা?’
নোভা ভিন গ্রহ, সসার এই সবের গল্প ভাইয়ার কাছে শুনেছে। সেই সসারে ও আজ চড়বে!
দু’ভাইবোনকে  ওত শত ভাবতে না দিয়ে হব দু’হাতে দু’ভাই বোনকে নিয়ে প্রবেশ করলো সসারে। সসারের ভেতরটা একটা ছোটখাটো ঘর। এখানে পাশাপাশি তিনটা চেয়ার, তিনটা চেয়ারের সামনেই রয়েছে তিনটা ওয়াল টিভি স্ক্রিন। সমস্ত ঘরজুড়ে রয়েছে অসংখ্য যন্ত্রপাতি, যা ওরা কোনো দিনই দেখেনি।
হব নিজে বসে দু’জনকে দু’চেয়ারে বসতে বলে একটা রিমোট হাতে সুইচ চাপ দিয়ে সসারের দরজা বন্ধ করলো। হবের হাতের ইশারায় তিন মনিটর ওপেন হয়ে গেল। সেখানে ভেসে উঠলো একটা গ্রহের ছবি।
হব বলল, ‘আমরা যাব ঐ গ্রহে। ওখানে নেই পৃথিবীর মানুষের মতো ভেদাভেদ। নেই মানুষে মানুষে হানাহানি, মারামারি। ওখানকার শিশুরা করে না পৃথিবীর শিশুর মতো দুঃখে হাহাকার। সবাবই তাদের ভালোবাসে।’
নোভা হাততালি দিয়ে ওঠে। বলে, ‘তাহলে খুব মজা হবে।’
একসময় হব কমান্ড দিলো সিটবেল্ট বেঁধে নিতে। আসিফ নোভা বেঁধে নিলো সিটবেল্ট।
হব সামনের মনিটরের টাচে কিছু কমান্ড করতেই সসারটা মৃদু কেঁপে গুঞ্জন করে ওঠে। ওপর টাচে স্পর্শ করতেই সা করে ধাবিত হয় ঊর্ধ্ব দিকে। হারিয়ে যায় আকাশের লক্ষ কোটি তারার মাঝে।
(চলবে)
                        
আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ