গ্রহ সন্ধান

গ্রহ সন্ধান

সাইন্স ফিকশন রাহিমুল ইসলাম মর্তুজা এপ্রিল ২০২৩

২৫৯৮ সাল। নাসার একটি বড় মিটিং চলছে। এক শতাধিক বড় বড় বিজ্ঞানী এবং প্রফেসর রয়েছেন। ড. আরমান এই মিটিংয়ের প্রধান বক্তা।

কিছুক্ষণ পরে ড. আরমান উপস্থিত হলেন। সবাই তাকে দাঁড়িয়ে স্বাগতম জানাল। তিনি সবাইকে বসতে বললেন।

এবার তিনি আলোচনা শুরু করলেন, ‘আপনারা নিশ্চয় জানেন আপনাদের এখানে ডাকার উদ্দেশ্য একটাই, সেটা হলো মানবজাতি ও প্রাণিকুলকে রক্ষা করা। এর জন্য আমাদের দুইটি অপশন আছে, ১. পৃথিবীকে তার আগের রূপে ফিরিয়ে দিয়ে মানবজাতি ও প্রাণিকুলের বসবাসযোগ্য করা। ২. মহাকাশে অন্য কোনো গ্রহ খুঁজে সেখানে গিয়ে মানবজাতি ও প্রাণিকুলের অস্তিত্ব বাঁচিয়ে রাখা।

পৃথিবীতে এখন আর আগের মতো অবস্থা নেই। চারদিকে ধুলো আর ধুলো। ফসল ভালো হচ্ছে না। রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এখন আপনারা সিদ্ধান্ত নেন যে, কিভাবে জীবজাতির অস্তিত্ব বাঁচিয়ে রাখা যাবে?’

ড. আরমান এক গ্লাস পানি পান করলেন। এরপর তিনি ড. ইমরান এর দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘আপনি বলুন।’

ড. ইমরান নাসার একজন বড় বিজ্ঞানী। তিনি বলতে শুরু করলেন, ‘আমার মনে হয় না পৃথিবীকে আবার তার আগের রূপে ফিরানো যাবে। এর একটি কারণ বর্তমানে পৃথিবীতে যেই পরিমাণ মানুষ আর যেই পরিমাণ ধুলাবালি বৃদ্ধি পাচ্ছে তা কমানো একেবারেই অসম্ভব। আর পৃথিবীতে আগের তুলনায় যে পরিমাণ মানুষ বৃদ্ধি পেয়েছে তেমনি কিন্তু গাছপালা এবং প্রাণীর সংখ্যা বাড়েনি বরং কমেছে। সুতরাং আমার মতামত হচ্ছে আমাদের মহাকাশে ঘুরে ঘুরে এমন কয়েকটি গ্রহ খুঁজে বের করতে হবে যা মানবজাতি ও প্রাণিকুলের বসবাসযোগ্য।’

বিজ্ঞানী রাইম এবার আপনার পালা, বলল ড. আরমান। বিজ্ঞানী রাইম একজন বড় বিজ্ঞানী।

আমিও ড. ইমরানের কথার সাথে একমত, বলল বিজ্ঞানী রাইম। তিনি আবার বলতে লাগলেন, ‘পৃথিবীকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা প্রায় অসম্ভব একটি ব্যাপার। আমার মনে হয় ড. ইমরান ঠিক বলেছেন। আমাদের মহাকাশে এমন গ্রহ খুঁজতে হবে যা অক্সিজেন, পানি, গাছপালা সমৃদ্ধ এবং জীবজগৎ বাঁচার উপযোগী।’

ড. আরমান কিছুক্ষণ চুপ থাকলেন। তারপর মাথা উঠিয়ে সবার দিকে এক পলক তাকিয়ে নিলেন।

এবার তিনি মুখ খুললেন, তাহলে আপনারা সবাই একমত যে আমাদের আর কোনো গ্রহ খুঁজে বের করতে হবে?

হ্যাঁ, সবাই একসাথে উত্তর দিল।


২.

স্পেসশিপে আলবার্ট ও জনসন গল্প করছেন। তারা স্পেসশিপ নিয়ন্ত্রণ করবে। কিছুক্ষণ পরেই স্পেসশিপ উড়াল দেবে গহিন মহাকাশে। ছাড়িয়ে যাবে সৌরজগৎ, গ্যালাক্সি এবং আরো কত কিছু।

নাইন এইট সেভেন সিক্স ফাইভ ফোর থ্রি টু ওয়ান। শাঁশাঁ করে উড়াল দিল স্পেসশিপ। স্পেসশিপ বিদায় দিল পৃথিবীকে।

স্পেসশিপ একটি ওয়ার্মহোল এ ঢুকে অন্য প্রান্ত দিয়ে বের হয়ে যায়। পৃথিবী থেকে শত শত আলোকবর্ষ দূরে যেতে ওয়ার্মহোলের মধ্যে তাদের সময় লাগল কয়েক ঘণ্টা। তারা ৪টি গ্রহ ঠিক করল। তারা সেগুলোর নাম দিলো MP-78, FD-36, YT-15 এবং KL-49। তারা ঠিক করল প্রথম দুইটিতে আগে যাবে। MP-78 এ যাবে এলেক্স ও মিনডন, FD-36 এ যাবে ফিলিপ ও এঞ্জেল। স্পেসশিপে থাকবে আলবার্ট ও জনসন।

স্পেস শাটাল গিয়ে নামল MP-78 এ। এলেক্স ও মিনডন নামল। এদিক ওদিক তাকাল। কিন্তু চারদিকে পানি ছাড়া আর কিছু দেখতে পেল না। চারদিকে শুধু পানি আর পানি। তারা বুঝতে পারল MP-78  জীবজগতের জন্য একেবারেই উপযোগী না। এলেক্স তাদের স্পেসশিপে সিগন্যাল পাঠাল। অপর পাশ থেকে জনসন সিগন্যাল রিসিভ করল এবং বলল, ‘কী খবর এলেক্স! গচ-৭৮ কি জীবজগতের বসবাসযোগ্য?’

এলেক্স বলল, ‘না! এটা একেবারেই জীবজগতের জন্য উপযোগী নয়। চারদিকে পানি আর পানি।’

জনসন বলল, আচ্ছা, তাহলে তোমরা ফিরে এসো।

এলেক্স সিগন্যাল কেটে দিয়ে মিনডনকে বলল, চলো। আমাদের ফিরে যেতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তারা আবার তাদের স্পেসশিপ এ ফিরে আসল।

ফিলিপ ও এঞ্জেল তৈরি হয়ে স্পেস শাটালে উঠল। তাদের গন্তব্য FD-36। গল্প করতে করতে এক সময় তারা পৌঁছে গেল FD-36 এ। তারা স্পেস শাটল থেকে নেমে চারদিকে তাকাল। কিন্তু একি অবস্থা! এখানে চারদিকে শুধু মরুভূমি। তারা আরেকটু দূরে গেল। তারা শুধু মাটিই দেখতে পেল। ফিলিপ স্পেসশিপে সিগন্যাল পাঠাল।

জনসন বলল, ফিলিপ, FD-36 কি জীবজগতের জন্য উপযোগী?

ফিলিপ বলল, না। এখানে চারদিকে মাটি ছাড়া আর কিছু দেখা যাচ্ছে না। না পানি, না কোনো প্রাণীর অস্তিত্ব।

জনসন বলল, তাহলে তোমরা ফিরে এসো।

তারাও ফিরে আসল স্পেসশিপে।


৩.

এবার তাদের মিশন YT-15 এবং KL-49। YT-14 তে যাবে ফিলিপ ও এলেক্স। KL-49 এ যাবে মিনডন ও এঞ্জেল।

ফিলিপ ও এলেক্স তাদের যাত্রা শুরু করল। কয়েক ঘন্টার মধ্যে তারা পৌঁছে গেল YT-15 তে। এই গ্রহটা জীবজগতের জন্য মোটামোটি উপযোগী, কিন্তু সেখানে গাছ রোপণ করার মতো উপযোগী মাটি নেই।  YT-15 এর মাটিগুলো নরম হওয়ার কারণে সেই গ্রহটা মানবজাতির জন্য উপযোগী হলেও মানবজাতিকে শ্বাস-প্রশ্বাস এর জন্য যে অক্সিজেন দরকার তা গাছ থেকেই পাওয়া যায়। এখন গাছ রোপণ করার জন্য যে মাটির দরকার তা এই গ্রহে নেই। তাই তারা জনসনের সাথে কথা বলে আবার স্পেসশিপে ফিরে আসে।

মিনডন ও এঞ্জেল তাদের স্পেস শাটাল ল্যান্ড করল KL-49 এ। তারা স্পেস শাটাল থেকে নেমে একেবারে হতবাক। মহাকাশে এমন সুন্দর গ্রহ থাকতে পারে তাদের কল্পনাও ছিল না। তাদের দেখে কিছু প্রাণী তাদের দিকে আসল। প্রাণী গুলো দেখতে অদ্ভুত রকমের। প্রাণীগুলো এঞ্জেল ও মিনডনকে উদ্দেশ্য করে কিছু একটা বলল। কিন্তু প্রাণীগুলোর ভাষা এঞ্জেল ও মিনডন কিছুই বুঝতে পারল না। পরে প্রাণীগুলো হাতের ইশারা করলে এলেক্স বুঝতে পারল এবং মিনডনকে বলল, তারা আসলে জিজ্ঞেস করছে যে আমরা কে, কোথা থেকে এসেছি?

কিন্তু মিনডন ও এঞ্জেল জবাব দিতে পারল না কারণ তারা প্রাণীগুলোর ভাষা বলতেও পারে না, বুঝতেও পারে না। তবে তারা হাতের ইশারার মাধ্যমে প্রাণীগুলোকে বুঝিয়ে দিল তারা তাদের বন্ধু। শত্রু না।

প্রাণীগুলো বুঝে গেল তাদের ভাষা। প্রাণীগুলো তাদের গ্রহে স্বাগতম জানাল, আপ্যায়ন করল, ঘুরে ঘুরে দেখাতে লাগল তাদের গ্রহ। মিনডন ও এঞ্জেল তাদের স্পেসশিপ ও তার সহকর্মীদের কথা ভুলেই গিয়েছিল।

স্পেসশিপে বসে সবাই চিন্তিত। এতক্ষণ হয়ে গেল তারপরেও কেউ সিগন্যাল পাঠাচ্ছে না কেন। ওদের কোনো বিপদ হয়ে গেল নাতো।

এলেক্স বলল, আমি এবং ফিলিপ KL-49 এ গিয়ে দেখি। তারা এতক্ষণ কী করছে সেখানে?

এঞ্জেল ও মিনডন শুয়ে আছে এক জায়গায়। হঠাৎ মিনডনের মনে পড়ল তার সহকর্মীদের কথা। এলেক্স ও সে তাড়াতাড়ি উঠে তাদের স্পেস শাটলের দিকে গেল। কিন্তু তারা স্পেস শাটলের কাছে গিয়ে অবাক হয়ে গেল। এলেক্স ও ফিলিপ সেখানে উপস্থিত। এলেক্স তাদের দেখে বলল, তোমরা এখানে আনন্দ করছ আর আমরা ওখানে বসে চিন্তা করছি।

মিনডন বলল, এসব কথা এখন বাদ দাও! আগে বলো এই গ্রহটা কি জীবজগতের উপযোগী?

নিশ্চয়! বাকিরা একসঙ্গে উত্তর দিল।

এলেক্স বলল, এখন আমাদের ফিরে যেতে হবে। আলবার্ট ও জনসন আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। তারা স্পেসশিপে ফিরে আসে।

জনসন বলল, ও! তোমরা ফিরে এসেছো। তোমাদের নিয়েই ভাবছিলাম। কখ-৪৯ কি জীবজগতের বসবাসযোগ্য?

এঞ্জেল বলল, নিশ্চয়! এত সুন্দর গ্রহ আমি আজ পর্যন্ত দেখিনি। মনে হয়েছে যেন স্বর্গে এসেছি।

জনসন বলল, তাহলে এবার আমরা পৃথিবীতে সিগন্যাল পাঠাতে পারি।

সবাই সমস্বরে জবাব দিল, নিশ্চয়।


৪.

নাসা এখন খুব ব্যস্ত। তাদের মিশন যেন সফল হয় সেজন্য তাদের প্রাণপণ চেষ্টা। ড. আরমান ও বিজ্ঞানী রাইম বসে আছেন। তাদের চোখে মুখে চিন্তার রেখার ছাপ। ৩ বছর হয়ে গেল কিন্তু এখনো পাঠানো স্পেসশিপ থেকে কোনো সিগন্যাল আসেনি। এদিকে নাসা পৃথিবীতে জানিয়ে দিল শীঘ্রই তারা নতুন কোনো এক গ্রহে পা রাখতে যাবে।

হঠাৎ সিগন্যাল আসল ড. আরমানের কক্ষে। বিজ্ঞানী রাইম সিগন্যাল রিসিভ করে বলতে লাগলেন, সাইন্টিস্ট রাইম স্পিকিং।

অপর পাশ থেকে আওয়াজ এলো, জনসন কলিং।

জনসন! তোমরা সবাই কেমন আছে? এক নিশ্বাসে কথাগুলো বললেল বিজ্ঞানী রাইম।

আমরা সবাই ভালো আছি। আপনি কেমন আছেন? বলল জনসন।

বিজ্ঞানী রাইম বলল, ৩ বছর হয়ে গেল। এত বছর পর তোমরা সিগন্যাল পাঠালে।

জনসন বলল, দুঃখিত! আসলে পৃথিবীর তুলনায় এখানে সময় অনেক আস্তে চলে। সেজন্য হয়ত আমরা খেয়াল করতে পারিনি।

বিজ্ঞানী রাইম বলল, আচ্ছা ঠিক আছে। এবার বলো কোনো গ্রহ পেলে কি জীবজগতের উপযোগী?

জনসন বলল, আমরা পৃথিবী থেকে প্রায় শত শত আলোকবর্ষ দূরে এমন একটা গ্রহের সন্ধান পেয়েছি যা জীবজগতের উপযোগী। এখানে প্রাণীর অস্তিত্বেরও সন্ধান পাওয়া গেছে।

সত্যি! অবাক কণ্ঠে বলল বিজ্ঞানী রাইম।

তার মানে আমরা এখন জীবজগৎকে বাঁচাতে পারব। বলল বিজ্ঞানী রাইম।

জনসন বলল, নিশ্চয়। এরপর লাইনটা কেটে গেল।

বিজ্ঞানী রাইম ড. আরমানের রুমে প্রবেশ করলেন। ড. আরমান চেয়ারে বসে ছিলেন। তিনি উঠে দাঁড়ালেন এবং বিজ্ঞানী রাইমকে বললেন, কী হয়েছে? তোমাকে এত খুশি দেখাচ্ছে কেন?

বিজ্ঞানী রাইম বলল, আমাদের মিশন সফল হয়েছে। আমাদের নভোচারীরা একটি গ্রহ খুঁজে পেয়েছে যেটি জীবজগতের জন্য উপযোগী।

ড. আরমান বলল, এটা তো তাহলে আমাদের জন্য খুব ভালো খবর।

এরই মধ্যে উপস্থিত হলেন ড. ইমরান। ড. আরমান ও বিজ্ঞানী রাইমকে খুব খুশি দেখে বললেন, কী ব্যাপার! আপনাদের এতো খুশি দেখাচ্ছে কেন?

বিজ্ঞানী রাইম বলল, আমরা একটা নতুন গ্রহের সন্ধান পেয়েছি যেখানে প্রাণীর অস্তিত্ব রয়েছে। এবং সেটি জীবজগতের জন্য উপযোগী।

ড. ইমরান বললেন, সত্যি! তাহলে তো এবার জীবজগৎকে বাঁচানো যাবে।

নাসার আনাচে কানাচে খুশির নদী বয়ে যেতে লাগল। তারা একটি নতুন গ্রহের সন্ধান পেয়েছে। এবার শুধু সেই গ্রহে যাওয়ার পালা। শুধু জীবজগৎকে বাঁচিয়ে নতুন গ্রহে নিয়ে যাওয়ার পালা।

আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ