চাঁদ রাত

চাঁদ রাত

গল্প আগস্ট ২০১১

জাহানারা আরজু....

রাত গড়িয়ে দ্বিপ্রহর ছুঁই ছুঁই। রাস্তায় যানজট, লোকজন, হই-হল্লা, রিকশা-বেবির মিলিত শব্দের বিচিত্র তরঙ্গ কমে এসেছে প্রায়। স্তব্ধতা ভেঙে দু-একটা প্রাইভেট গাড়ি চলে যাচ্ছে মাঝে মাঝে। একটু পরেই নৈশপ্রহরী টহল দিতে রাস্তায় নামবে।
রফিক দর্জি দোকানের দরোজা বন্ধ করে দিয়েছে, রাত্রি এগারটার পরই। দোকানের ভেতর কয়েকটা লাইট জ্বলছে বেশি পাওয়ারের। সেলাইয়ের মেশিনটায় পা-দানিতে চাপ দিতে থাকে রফিক দর্জি। দ্রুত হাতে কাপড়গুলো বিন্যস্ত করতে থাকে। রফিক দর্জির দোকানের মাঝে, র‌্যাকে, আলমারিতে, স্তূপ-স্তূপ কাপড় ঠাসা। নানা বর্ণের কাপড় মেঝেতে ছড়ানো ছিটানো কাপড়ের ছাঁটকাট। নানা বর্ণের বাহারে ঘরটায় যেন বসন্তের ফুলের মেলা বসেছে। তিনজন তরুণ কারিগর আরো তিনটি মেশিনে সেলাই করে যাচ্ছে ভীষণ দ্রুততার সাথে। পাশে আর একটি পনরো ষোল বছরের ছেলে ইস্ত্রি করে করে রাখছে সদ্য তৈরি হওয়া জামাগুলো। ব্লাউজ, সালোয়ার কামিজ, ফ্রক, পেটিকোট। সবই মেয়েদের কাপড় চোপড়। দোকানের নামটিতেও রয়েছে বিশেষত্ব। ‘ললনার আচ্ছাদন’ শহরে সবই এক নামেও এ দোকানটি চেনে। বিশেষ করে স্কুলে কলেজের মেয়েরাই সবসময় এখানে ভিড় জমায়। ওদের দোকানের চারজন কর্মচারী ছাড়াও রয়েছে আর একটি চৌদ্দ পনেরো বছরের কাজের ছেলে। আছে এই দোকানে ওদের সাথে সে ঘরদোর ঝাড়ু দেয়। বাসন পেয়ালা-কাপ পিরিচ ধোয়। দোকানের চার-পাঁচজনের জন্য হোটেল থেকে খাবার আনা নেয়া করে। পাশের হোটেলের ওরা বাঁধা খরিদ্দার। এ ছাড়া কাজের ছেলেটা ভেতর বারান্দায় টিনের চুলায় চা বানায়। চা-এর পানি ফুটতে থাকে চা-এর পাতাগুলো বর্ষার নতুন পানির পোনা মাছের মত টগবগে কেটলি পানিতে সাঁতরাতে থাকে। ছেলেটা গুনগুনিয়ে গানের কলিডাজে ও গায়- ‘ও আমার দরদি, আগে জানলে তোর ভাঙা নৌকায় চড়তাম না’- রফিক দর্জির ঘন ঘন চা খাওয়ার অভ্যাস। সেই ছোটবেলা থেকেই এ অভ্যাস। ওর দাদীজান দিনের মধ্যে কম করে হলেও পাঁচ থেকে সাত কাপ চা খায়। রফিক খেলার মাঠ থেকে ফিরেই বাড়ির দেউরি থেকে হাঁক দিত- ‘দাদীজান, চা দে। সকাল থেইকা এত্ত বেলা অইল, চা খাই নাই। ভাল কইরা মালাই দিয়ে চা দিবি, বুঝলি, দাদী। পানসা চা খামুনা।’ দাদীজান বলেন- ‘হাত-মুখ ধুইয়া আয়। তর গলায় চা-এর কলসি বাইন্দা দিমু। সকাইলা ভিজাচুলা। আগুন ধরাইতে এটটু সময় লাগবে তো। একটু সবুর কর ভাই। ওর দাদীজানের বয়স চার কুড়ি ছাড়িয়ে গেছে। এই বয়সেও মোটামুটি চলাফেরা করেন। ওদের চৌচালা ছনের ঘরের বারান্দার কোণে আলগা মাটির চুলায় বুড়ি দাদীজান পাটখরি ভেঙে আগুন জ্বালিয়ে চা বানান। রফিক তাকিয়ে থাকে, সদ্য নীল আগুন কেমন করে দেখতে দেখতে গনগনে লালচে হয়ে ওঠে। দাদীজানের অ্যালুমিনিয়ামের কেটলিতে সারাদিন চা-এর পানি ফুটতেই থাকে। রফিকের দাদী ঘরের তাকের ওপরে রাখা টিনের একটি সুটকেস থেকে নেকড়ার পুঁটলি বের করে আনে। ফুটন্ত পানিতে যতœ করে রাখা নেকড়ার পুঁটলি থেকে চা-পাতা ছেড়ে দেয়। পাতাগুলো থেকে কেমন সুগন্ধ ছড়ায়। তাকিয়ে থাকে রফিক। বারান্দায় বিছানো খেজুর পাতার পাটিতে বসে সাদা টিনের মগটায় পরম তৃপ্তিতে চা খায়। ওর দাদীজান আতিপতি করে ছোট ভেতের টুরিতে করে কিছু মুড়ি, দুটো শবরিকলা এনে দেয়।
রফিক গোমড়া মুখ করে বলেÑ ‘এই-ই খামু। তুই, দাদী আজকাইল কেমন হইচস। কবে থেইকা পরাটা খাই না। একটা আণ্ডাওত দিলি না। তর মুরগি তো রোজই আণ্ডা পাড়ে। আণ্ডা না খাওয়াইলে তর মুরগিটারে জবাই কইরা খাইয়া ফালামু। দাদীজান বলেন, ‘হরে, ভাই, ভালকতা মনে করছস। আমি এহনই আণ্ডা ভাইজা আনতাছি। রাগ করিস না, ভাই।’
রফিকের আবদার এই দাদীর সাথে। এই দাদীর সাথে সাথে চা খেয়ে খেয়ে ছোটবেলা থেকেই যে রফিকের চা-এর প্রতি বেয়ারা ঝোঁক হয়েছে। রফিক গাঁয়ের স্কুলেই সপ্তম শ্রেণীতে পড়ে। কাসে প্রথম হয়। এই প্রথম হওয়ার জন্য ওর স্কুলে বেতন লাগে না। ছোট বোন বকুল আর মুকুল পড়ে কাস ওয়ান আর থ্রিতে। ওদের মা বাবা দু’জনেই সাতদিনের ব্যবধানে মারা গেছেন কলেরা হয়ে। গ্রামে সেবার ভীষণ কলেরা মহামারী আকারে দেখা দেয়। দেশের অনেক তরুণ তাজা প্রাণের অকাল মৃত্যু হয়েছে সে সময়। বেঁচে গিয়েছিলেন ওর দাদী, আর তিনটি নাতি-নাতনী। ওরা বেড়াতে গিয়েছিল ভিন্ন গাঁয়ে মামার বাড়িতে। ওর দাদীর মাথার ওপরে রোজগারের কেউ নেই। ওর কাঁধের ওপর এই তিনজন নাতি-নাতনী। দাদী এ বাড়ি ও বাড়ির কাঁথা সেলাই করে, গ্রামের বিত্তশালী বাড়িতে পালা পার্বণে রান্না করে, পিঠা বানান। বাড়িতে হাঁস-মুরগি পালেন। দুটো গাই পালেন, দুধ বিক্রি করেন। বাড়ি সংলগ্ন বিঘাখানিক জমিনে সবজির চাষ করেন। এ ছাড়া ওদের বিঘা পাঁচেক জমি বর্গা দেয়া আছে। এসব মিলিয়ে যা আয়, তাতে চলে যায় কোনো মতে। গাই গরুটার জন্য একটা রাখাল আছে। সে বাড়ির ফাই ফরমাসও খাটে, হাটবাজার করে এবং রাতদিন গরু দুইটার জোগাল যতœ করে। ছেলেটা ওদের পরিবারেই একজন হয়ে উঠেছে। ওদের মা-বাপের আমল থেকে রয়েছেÑ ওদের পরিবারভুক্ত একজন। ওর নাম মাঈনুদ্দিন। বাড়ির ছেলে মেয়েরা ওকে ডাকে ‘মনু ভাই’ বলে। মনুভাইও ওদের একজন হয়ে সুখ-দুঃখে একাকার হয়ে আছে। রফিক স্কুল ফাইনাল পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে ভাল ফল করে পাস করল। মাস্টাররাও ওকে স্নেহের চোখে দেখেন। ও ভাল ছেলে বলে বরাবরই বৃত্তি পেয়ে এসেছিল। ওর বইপত্রও স্কুল থেকে দেয়া হয়। বৃত্তির টাকা থেকে কিছু কিছু জমিয়েছিল। সেই টাকা থেকে ও শহরে কলেজে ভর্তি হওয়ার ব্যবস্থা করে নিয়েছিল। ওদের বাড়ি থেকে প্রায় তিন মাইল দূরে কলেজ। ওরা দাদী কিছু জমানো টাকা থেকে ওকে একটা সাইকেল কিনে দিলেন। নতুন সাইকেলে চড়ে রফিক যেন রাজ্য জয় করার আনন্দ নিয়ে কলেজে যায়। বাড়ি থেকে প্রায় তিন মাইল দূরে কলেজের অবস্থান। বাড়ি থেকে আধমাইল পর্যন্ত মোটামুটি কাঁচা মাটির ভাল রাস্তা। তারপর পার হতে হয় একটা খেয়া। খেয়া নৌকায় সাইকেলটা ধরে দাঁড়িয়ে থাকে রফিক। মিনিট কয়েক লাগে নদী পার হতে। এই পারাপারের সময়টা ওর খুবই ভাল লাগে। নদীর ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা পানির হাওয়ায় শরীরটা যেন জুড়িয়ে যায়। নদী পার হয়ে হাট-থানা-উপজেলা হাসপাতাল হয়ে কোর্ট-কাচারি অতিক্রম করে আরো খানিকটা পথ পাড়ি দিয়ে ও শহরে ঢোকে। বেশ দূর থেকেই নজর কেড়ে নেয়। কলেজের কৃষ্ণচূড়া গাছের শাখায় শাখায় ফুলের মেলা দেখা যায়। আর একটু এগুলেই কালেজের সম্মুখে শান বাঁধানো ঘাট বিরাট পুকুর। কলেজে-দালানের ছায়া পড়ছে পুকুরের পানিতে। রফিকের মাঝে মাঝে মনে হয় পানির নিচে যেন কোনো রাজপ্রাসাদ।
ওখানে কি কোনো রাজকন্যা ঘুমিয়ে আছে, ভাবে রফিক।
গ্রামের স্কুল গণ্ডি থেকে বের হয়ে এই বিরাট শিক্ষাঙ্গনে নিজেকে মানিয়ে নিতে একটু সময় লাগে। দুই বছর কেটে যায়। এইচএসসিতে ও প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়। বন্যা, মহামারী, দুর্ভিক্ষ দেশটাকে তছনছ করে দেয়। রফিকের পরবর্তী উচ্চতর শিক্ষার দুয়ারে এগুতে নানা অন্তরায় এসে দাঁড়ায়। বৃদ্ধা দাদীর বার্ধক্যজনিত কারণে মৃত্যু হয়। এতোদিনে রফিক বুঝতে পারেÑ তাদের পরিবারের কেন্দ্রীয় চালিকাশক্তিটিকে হারিয়ে গেছে। দাদীর চলে যাওয়ার সাথে সাথে ওদের বাড়ির শেষ বন্ধনটুকু যেন ছিঁড়ে যায়। বোন দুটো শেয়ানা হয়ে উঠেছে। এখনত ওরা প্রায় অরক্ষণীয়া। রফিকের আর কলেজের পড়া চালানো সম্ভব নয়। সংসারে বাড়তি রোজগারের চিন্তা ওর মাথায় ঘুরতে থাকে। ওদের বোন দু’জনও আর ঘরে বসে থাকতে রাজি নয়। একজন স্কুল ফাইনাল দেবে, আর একজন অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী মাত্র। এইটুকু বিদ্যা নিয়ে ওরা কোথায় দাঁড়াবে। কে কাজ দেবে। আত্মীয় মরুব্বির জোর না থাকলে কোনো কাজ হয় না।
অনেক চিন্তা ভাবনার শেষে ওরা দু’বোন ঠিক করল, শুনেছে শহরে ওদের মত অনেক মেয়েই গার্মেন্টসে কাজ করে। ওদের গ্রাম থেকেও দু’জন মেয়ে এ কাজে ঢুকেছে। রফিককে ওরা জানাল। অমত করল না রফিক। ওত নিজেও ভেবেছে ডিগ্রি পরীক্ষাটা দিয়েই ও নিজের পায়ে দাঁড়াতে চেষ্টা করবে। বোন দুটোর যদি এ সময়ে একটা গতি হয়, তাহলে ও নিজের কাজে মন দিতে পারবে। ওদের গ্রাম সুবাদে এক চাচা এসে ওদের দু’বোন বকুল আর মুকুলকে নিয়ে গেছে চাকরিতে ঢোকানোর জন্য। বকুল-মুকুলের এবারই নতুন শহরে আসা। এসেই চাচারই এক বন্ধুর বাড়িতে ঢাকায় আশ্রয় পেয়েছে। এখান থেকে দিন কয়েক পরে কাজ ঠিক হলে ওদের গার্মেন্টসে নেয়া হবে। শহর থেকে বেশ দূরে গাজীপুরে একটা ফ্যাক্টরির খোঁজ পেয়েছে, সেখানে ব্যবস্থা হবে। তবে দু’জনের নয়, একজনের। বড় বোন বকুলকে ওখানে গার্মেন্টসে ব্যবস্থা করে দিলেন গ্রাম সুবাদের চাচা। থাকা-খাওয়া ছাড়াও হাতে বেতন পাবে পাঁচশত টাকা। থাকা-খাওয়ার জন্য কিছু টাকা কাটা যাবে। যারা বাইরে থেকে এসে কাজ করবে। এবং নিজের খরচে খাবার ব্যবস্থা করবে তারা পাবে বারোশত টাকা।
মুকুলকে ঢাকার চাচার বন্ধুর বাড়িতে রেখে গেল। বাড়ির মালিকের ফুলের দোকান। ফুল বিক্রি করা, ফুলের তোড়া বানানো, পানি ছিটিয়ে ফুলের যত্ন নেয়া, মালা গাঁথা, দোকানের অনেক কাম। ফুল ব্যবসায়ী মফিজ মিয়া মুকুলকে দোকানের কাজে নিয়োগ করল। ফুটফুটে সুন্দর মেয়েটাও যেন ফুলের রাজ্যে মিশে গেল। মালিক বাড়ির ভাল খাওয়া দাওয়া পেয়ে ওর ষোড়ষী শরীর রূপে ঝলমল করে উঠল। দোকানে বসে মফিজ মিয়ার কর্মচারী। তাকে সাহায্য করে মুকুল। অল্প দিনের মধ্যেই মুকুলের হাতে সুনিপুণ ফুলের কারুকাজ দক্ষতায় রূপ নিল। মফিজ মিয়ার ছেলেরও রয়েছে আলাদা স্টেশনারি ব্যবসা। পাশাপাশি ফ্যাক্স, ইমেল, টেলিফোনের ব্যবসা। উঠতি আখের উপছানো অর্থের জৌলুস। বাড়িতে বউ আর এক ছেলে নিয়ে বাপের সাথে যৌথ পরিবার। মফিজ মিয়ার সবচেয়ে ছোট ছেলে পলাশ এবার ডিগ্রি পরীক্ষা দেবে। পলাশ একটু ভিন্ন নজরে দেখতে শুরু করেছে মুকুলকে। সময়-অসময়ে সে দোকানে এসে বসে। গল্প জমাতে চায় মুকুলের সাথে। কিশোরী মুকুল ওদের বাড়িতে আশ্রিতা। তাই ওকে ঘাটাতে চায় না। মনে মনে ভাবে, যদি এই দোকানের চাকরিটা চলে যায়- তাহলে কোথায় দাঁড়াবে। মুকুলের  দৈহিক সৌন্দর্যের জন্য ও দোকানে উঠতি বয়সের ছেলে চোকরারা ভিড় জমায়। কেউ দু-একটা গোলাপ বা রজনী গন্ধার ডাটা কেনে, কেউ নেড়ে চেড়ে রেখে যায়। মালিকের ছেলে পলাশ সহ্য করতে পারে না। ওই সব দোকানে আসা-যাওয়া ছেলেদের। ভেতরে  ভেতরে মুকুলের ওপর তার একক আধিপত্য গড়ে উঠেছে। মুকুলকে ঘিরে পলাশের দুর্বলতা ভালোবাসায় লতিয়ে ওঠে। মুকুুলের মনেও ও এ ছোঁয়া লাগে। পলাশের বিচক্ষণ বাবার বুঝতে দেরি হয় না। তা ছাড়া মেয়েটা ভালো ঘরের। আত্মীয় বলতে এক ভাই আর এক বোন কথাটা মফিজ মিয়া স্ত্রীর সঙ্গে আলাপ করে। স্ত্রী রাজি হয়ে যান। এমন নরম স্বভাব আর দেখতে শুনতে ও হাজারে একটা, এ মেয়েকে হাত ছাড়া করা যায় না। একে মনমত গড়ে পিটে নিতে পারা যাবে। পলাশের মা মুকুলের ভাইয়ের সাথে এ ব্যাপারে কথা বলতে চায়। ওর ভাইয়ের এ প্রস্তাবে আপত্তি হবার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। এ সম্মতি দেয়। শুধু একবার ভাবে, বড় বোন বকুলটার আগেই ওর বিয়ে হবে, এ কেমন দেখায়।
এ ব্যাপারে বকুলের সাথে আলাপ করাতে, বকুল খুশি মনে বলে, ভাইজান, আমার জন্য একটুও চিন্তা করো না। আমি কাজ শিখছি ভাল করে, মনোযোগ দিয়ে। আমার কাজে কোম্পানি খুশি। দু’বছর পরে আমাকে উন্নতর প্রশিক্ষণের জন্য বিদেশে পাঠাবে। রফিক মনে সান্ত্বনা পায়- নতুন বোনকে ঘিরে তার নতুন স্বপ্নের সৌধ গড়ে ওঠে।
রফিক বাড়ির গরু দুটো বিক্রি করেছে। বিক্রি করেছে দু’বিঘা জমিও। ও একটি সেলাইয়ের মেশিন কিনেছে। সেই থেকে একটা দোকান ভাড়া নিয়ে মেশিন বসিয়েছে। ওর মেশিনের কাজে দিন দিন উন্নতি হচ্ছে। সদরঘাট থেকে সেই ছাপড়া ঘরের মেশিন এখন উঠে এসেছে পুরানা পল্টনের অভিভজাত এলাকায়। তিন বছরের মাথায় রফিক এখন তিনটা মেশিনের মালিক। সারা দিন রাত্রি কাজ করে। বিরামহীন কাজ। চাঁদ রাত এলে কাজ আরো বেড়ে যায়। প্রায় রাত ভর জেগে কাজ করে। মনটা পড়ে থাকে, কখন শহরে ঈদের নামাজ শেষ হবে, নামাজটা পড়েই ও বসে উঠবে। যাবে বাড়ির আঙিনায় যেখানে পর্ন ছনের ঘরটায় তারা ঝুলছে আর বাড়ির আম গাছতলায় ঘুমিয়ে আছে তারই দাদীজান, বাবা আর মা। বছরান্তে জিয়ারত করবে আর উত্তর-পুরুষের কবর। মুকুল- বকুলও আসবে এ সময় বাড়িতে। ভাঙা বাড়িটা আবার ঝলমল করে বুঝি অভিনন্দন জানাবে।
ঈদের চাঁদ রাতের অগ্রিম আয়োজন চলছে ঘর ঘরে। রফিক দর্জি ক্ষিপ্রগতিতে মেশিনের পা-দানিতে চাপ দেয়। হাতের অসমাপ্ত কাজগুলো রাতের মধ্যেই শেষ করতে হবে। সকালে ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে হবে জামা-কাপড়গুলো নামাজের আগেই। মধ্য রাতের শহর আসন্ন ঈদের সকালের জন্য অপেক্ষায় আছে। ক্রমাগত মেশিনের পা-দানিতে চাপ দিয়ে চলেছে রফিক দর্জি।
                        
আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ