চোরের তিনদিন  গৃহস্থের একদিন

চোরের তিনদিন গৃহস্থের একদিন

প্রচ্ছদ রচনা মার্চ ২০১৫

মতিউর রহমান#

মমিনপুর গ্রাম মানেই রহস্যময়। কিছুদিন পূর্বে একদল বন্যহাতি রাতের আঁধারে এসে সব ফসলের ক্ষেত দুমড়ে মুচড়ে দিয়ে যায়। কিন্তু কেউই টের পায়নি। সকালে উঠে শুধু বুঝতে পেরেছ যে, হাতির দলই এ কাজ করেছে। সবার মাথায় পড়লো হাত। কিন্তু যা হওয়ার তাতো হয়েই গেছে সবই আমাদের কর্মফল। অনেক অনেক বছর আগে গ্রামটিতে ছিল এক ভুতুড়ে পরিবেশ। আমরা যখন ছোট তখন নাকি ঘটেছিল এক কাণ্ড! গ্রামের মধ্যে এক বিশাল জঙ্গল ছিল। হঠাৎ একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে সবাই হতবাক। জঙ্গলটি যেন উদাও হয়েছে গেছে! তার জায়গায় হাঁ করে দাঁড়িয়ে আছে ইয়া বড় এক দীঘি। ভয়ে কেউ যায় না দীঘির পাড়ে। একদিন এক বয়স্ক লোক সাহস করে গেলেন গোসল করতে। কিন্তু তিনি আর ফেরেননি। তখন থেকেই ওই দীঘিতে গোসল নিষিদ্ধ। আমার দাদার কাছে শুনলাম আরো ভয়ানক ঘটনা। একদিন দাদা এবং তার বড় ভাই আজরফ আলী খান রাতের প্রায় দেড়টার সময় বাজার থেকে বাড়ি ফিরছেন। আমাদের বাড়ির দরজায় রয়েছে একশো বছরের পুরনো একটা কাঠের পুল। পুলের কাছে আসতেই চমকে উঠলেন দু’জনে। জবাই করা একটা লাশ শুয়ে আছে চোখ মেলে। গলা থেকে ফিনকি দিয়ে রক্ত বেরোচ্ছে। দু’জনে আবার পেছন দিকে দৌড়াতে শুরু করলেন। দৌড়াতে দৌড়াতে বাজার পর্যন্ত পেঁঁৗঁছলেন। হাঁপাতে হাঁপাতে সবাইকে বললেন, ঘটনাটা সবাই শুনে তো হতবাক! সাত-আটজন এলেন তাদের সাথে কিন্তু একি স্বপ্ন নাকি বাস্তব। লাশ তো থাক দূরের কথা, এক ফোঁটা রক্তের দাগও নেই! এভাবে আরো অনেক ঘটনার অন্তরালে ঢেকে আছে গ্রামটি, যা এর আগে কেউ লিপিবদ্ধ করেনি। কিন্তু গত বছর আমার হাতের ওপর দিয়ে যে ঘটনাটা ঘটলো তা আরো আশ্চর্যজনক। এমন ঘটনার জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম না। কে বা কারা রাতের আঁধারে মানুষের ঘরে ঢুকে ভাত তরকারি খেয়ে ফেলে। এভাবে প্রতি ঘরে তিনদিন এক নাগাড়ে চলতে থাকে। তৃতীয় দিন টাকা পয়সা স্বর্ণলঙ্কার সবকিছু নিয়ে যায়। কিন্তু কেউই টের পায় না। এভাবে চলতে থাকে বেশ কিছুদিন। চৌকিদার-পুলিশ সবাই ব্যর্থ। কেউ রহস্য উন্মোচন করতে সক্ষম হয়নি। আমরা ছিলাম তিন বন্ধু। আমি, অসিফ ও ফুয়াদ। বিষয়টি নিয়ে আমরা একদিন বসলাম। সেদিন রাতেই আসিফদের বাড়িতে ঢুকলো চোরেরা। কিন্তু আমরা একই ঘরে থাকার পরও টের পেলাম না। দ্বিতীয় দিন তিনজনই পাহারায় বসলাম। কিন্তু কিছুতেই কাজ হলো না। এতো ঘুম পেল আমাদের আর বসে থাকতে পারলাম না। তিনজনই ঘুমিয়ে পড়লাম। আজ শেষ দিন যা করার আজকেই করতে হবে। না হয় সবকিছু নিয়ে ওরা ভাগবে। সিদ্ধান্ত মোতাবেক এক পাতা ঘুমের বড়ি আনলাম। ভালোভাবে তরকারির সাথে ঘুমের বাড়ি মেশালাম। আজ নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পড়লাম। ব্যাটারা খেয়ে আজ পড়ে থাকবি। সব কৌশল তোদের ব্যর্থ হবে। সকালে ধরা পড়বি আমাদের হাতে। সকালে তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠলাম। রান্নাঘরে গিয়ে  দেখি সব খেয়ে সাবাড়। আলমারির তালা খোলা। স্বর্ণলঙ্কার টাকা-পয়সা কিছুই নেই। ভাবলাম অপারেশন ফেল। যেহেতু তারা ঘুমের ওষুধ মেশানো তরকারি খেয়েছে। সেহেতু কোথাও না কোথাও পড়ে আছে। নিশ্চয়ই গন্তব্যে যেতে পারেনি। চল খুঁজে দেখি।Ñ বললো আসিফ। আর কালক্ষেপণ না করেই তিনজন তিন দিকে বেরিয়ে পড়লাম। হঠাৎ আসিফ চিৎকার দিয়ে উঠল পেয়েছিরে হাবিব পেয়েছি। আমি আর ফুয়াদ সেদিকে দৌড়াতে লাগলাম। কাছে গিয়ে দেখি কালো  পোশাক পরা মুখোশধারী এক লোক পড়ে আছে। আসিফের চিৎকারেও তার ঘুম ভাঙেনি। পাশেই পড়ে আছে একটা ভ্যানেটি ব্যাগ। ব্যাগের ভেতরেই রয়েছে স্বর্ণালঙ্কার ও টাকা। আসিফকে দিয়ে পাঠালাম। আর পাটের দড়ি আনতে বললাম। হঠাৎ ফুয়াদ চিৎকার দিয়ে উঠল, দেখ দোস্ত আরো দুটো। আমারও চোখ পড়লো তাদের দিকে। উপুড় হয়ে পড়ে আছে। মুখে বিভোর। দড়ি এনে শক্ত করে বাঁধা হলো তিনটিকে। এরপর সবাইকে খবর দেয়া হলো। যেন যাত্রা অনুষ্ঠান। চারিদিক থেকে মানুষের ঢল নামছে। পুলিশ এলো, সাংবাদিক  এলো। ফটো তোলা হলো। তখনো চোরগুলো ঘুমে বিভোর। আমরা তিনজন দ্রুত কেটে পড়লাম। পরে কী হলো জানার চেষ্টা করলাম না। বিকেলে আসিফের আব্বু কোত্থেকে এসে তাড়াহুড়ো করে আমাদেরকে তৈরি হতে বললেন। আমাদের নাকি পুলিশ খুঁজছে। তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে আংকেলের সাথে  হাঁটা শুরু করলাম। সরকারি গোরস্তানের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ চোখে পড়লো নতুন তিনটি কবর। ভেবেছিলাম সরকার থেকে পুরস্কার পাবো। কিন্তু এখন অজানার পথে পা বাড়ালাম।

আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ