ছাত্রসমাজই পারে সমাজকে বদলে দিতে - মিশা সওদাগর

ছাত্রসমাজই পারে সমাজকে বদলে দিতে - মিশা সওদাগর

মুখোমুখি জুলাই ২০১৬

নাম তার সওদাগর। সওদা করে বেড়ান। হ্যাঁ, তিনি সওদা করেন সিনেমার পর্দায়। দুর্দান্ত অভিনয় দিয়ে দর্শকের মন কাড়েন। এ পর্যন্ত হাজারেরও বেশি চলচ্চিত্রে কাজ করেছেন অভিনয়ের এই সওদাগর। পর্দায় তাকে খলনায়কের ভূমিকায় দেখা গেলেও তাঁর যাত্রা শুরু নায়ক হিসেবে। ১৯৮৬ সালে এফডিসি আয়োজিত নতুন মুখের মাধ্যমে চলচ্চিত্রে কাজ শুরু করেন। এরপর থেকে বাংলা চলচ্চিত্রের খলনায়ক হিসেবে তিনি নিজেকে তুলে ধরেছেন অনন্য এক উচ্চতায়। পেয়েছেন একাধিকবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার।
নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছ কার কথা বলছি! হ্যাঁ, তিনি হলেন বাংলা চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় অভিনেতা মিশা সওদাগর।
হ্যাঁ বন্ধুরা, ‘মুখোমুখি’ এ সংখ্যায় তোমাদের প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন জনপ্রিয় চলচ্চিত্র-অভিনেতা মিশা সওদাগর।

প্রশ্ন : আমার প্রশ্ন হলো জীবনে বড় হতে হলে কোন বিষয়ের ওপর সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দিতে হবে?
মো: নুর উল্যা
হাতিয়া দ্বীপ সরকারি কলেজ, নোয়াখালী
মিশা সওদাগর : সততা, নিষ্ঠা ও একাগ্রতা।
প্রশ্ন : সুস্থ এবং দেশীয় সংস্কৃতির বিকাশ কিভাবে সম্ভব? এ ক্ষেত্রে কার ভূমিকা বেশি?
মো: সাইফুল ইসলাম
তা’মীরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসা, ঢাকা
মিশা সওদাগর : জনগণের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। জনগণকে এগিয়ে আসতে হবে সুস্থ ও দেশীয় সংস্কৃতি বিকাশে। বিদেশী সংস্কৃতিকে জানবে কিন্তু ধারণ করবে দেশীয় সংস্কৃতি, এই মনোভাব যদি জনগণের মধ্যে বিরাজ করে তবে সুস্থতাও চারিদিকে বিরাজ করবে।
প্রশ্ন : আপনি কিভাবে চলচ্চিত্র জগতে এলেন এবং আপনার প্রিয় অভিনেতা কে?
ফাহিম
চকপাড়া, শ্রীপুর, গাজীপুর
মিশা সওদাগর : এফডিসির নতুন মুখের প্রথম বাছাইতে আমি সিলেক্ট হয়ে চলচ্চিত্রে আসি। কাহিনীকার পরিচালক ছটকু আহমেদের চেতনা ছবিতে নায়ক হিসেবে আমার চলচ্চিত্রে প্রথম আত্মপ্রকাশ। যারা ভালো অভিনয় করেন বা করতে চেষ্টা করেন তারা সবাই আমার প্রিয় অভিনেতা।
প্রশ্ন : ১৯৫২ সালে বাংলাভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছিলেন আমাদের ছেলেরা; কিন্তু দেখা যায় বাংলা ভাষাতে এখন ইংরেজির ছড়াছড়ি এবং মিডিয়ার মাধ্যমেই এটা ছড়াচ্ছে বেশি। এ ব্যাপারে আপনার মতামত কী?
মো: জাহিদুল ইসলাম জীহাদ
কোম্পানীঞ্জ, নোয়াখালী
মিশা সওদাগর : ইংরেজি ভাষার প্রতি আমার কোনো বিদ্বেষ নেই। ইংরেজি ভাষাকে তাড়াবার জন্য বাংলাভাষা আসেনি বা সংগ্রাম করিনি। আমরা আমাদের রাষ্ট্রভাষাকে প্রতিষ্ঠা করতে সংগ্রাম করেছি এবং বাংলা এখন রাষ্ট্রভাষা। বাংলাভাষায় ফারসি, উর্দু, আরবি ও ইংরাজি ভাষার চলন অনেক আগে থেকেই আছে। তবে অতিরিক্ত সব কিছুই খারাপ। নিজেকে ইংরেজি জানা কি হনু বোঝাতে যদি বাংলাভাষার সাথে ইচ্ছাকৃত ইংরেজি ভাষা প্রয়োগ করে তবে তা নিন্দনীয়। মিডিয়াকে এই ব্যাপারে সচেতন হওয়া উচিত।
প্রশ্ন : আপনার মাথায় কিভাবে খলনায়ক হওয়ার চিন্তা আসে?
আব্দুল্লাহ আহমাদ, জয়পুরহাট
মিশা সওদাগর : এটা আমার মাথায় আসেনি। আমি খুব সুন্দর নাচ করতাম। নায়ক হবারই ইচ্ছা ছিলো। কিন্তু পরিচালক ছটকু আহমেদ তার লেখা আশা ভালোবাসা ছবিতে যার পরিচালক তমিজউদ্দিন রিজভী আমার জন্য একটা ভালো খলনায়কের চরিত্র লিখে আমাকে অনুরোধ করেন। আমিও অভিনয়ের ভেরিয়েশনের জন্য সেটা করি এবং দর্শক তা লুফে নেয়। ব্যাস শুরু হয়ে যায় খলনায়কের যাত্রাপথ।
প্রশ্ন : বর্তমান যুগের সিনেমাগুলো আমাদের তরুণ প্রজন্মের জন্য কতটুকু উপযোগী?
মু. আবু নাঈম, হাড়িভাসা, পঞ্চগড়
মিশা সওদাগর : সিনেমাকে যদি পাঠদানের স্কুল, কলেজ, ভার্সিটি মনে করো তবে খুব একটা উপযোগী নয়। তবে সিনেমাকে যদি বিনোদনের সাথে ন্যায়-অন্যায় কিছু শিক্ষার ক্ষেত্র মনে করো তবে তা শতভাগ উপযোগী।
প্রশ্ন : আপনার সফলতার পেছনে প্রধান ভূমিকা কী ছিল?
আবু রায়হান, বগুড়া
মিশা সওদাগর : পরম করুণাময়ের অশেষ রহমত ও আমার প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা। আমি যা করতাম তাকে সফল করার জন্য প্রাণান্ত চেষ্টা করতাম। অভিনয়কে আমি ধ্যান-জ্ঞান মনে করে করেছি।
প্রশ্ন : আপনার জীবনে সিনেমার পর্দায় ঘটে যাওয়া একটি স্মরণীয় ঘটনা বলুন?
মতিউর রহমান
ইসলামপুর, সিলেট
মিশা সওদাগর : সোহানুর রহমান সোহান পরিচালিত আমার প্রতিজ্ঞা ছবিতে শুটিংয়ের সময় আামি একবার অচেতন হয়ে যাই সেটা কেউ খেয়াল করেনি। সেট থেকে সবাই চলে যায়, মেকআপ সহকারী মাইনুল এসে সেই যাত্রায় আমাকে সেবা করে বাঁচায়। এটা আমার সিনেমার পর্দায় একটি স্মরণীয় ঘটনা।
প্রশ্ন : আপনার মতে সুস্থ সংস্কৃতির বিকাশে কী ধরনের চলচ্চিত্র, অভিনয় এবং অভিনেতা ছাত্রদের জন্য উপযোগী?
মু. নাজিম উদ্দিন
টুমচর, শিমুলতলা, লক্ষ্মীপুর
মিশা সওদাগর : আমার মতে বিশ্বের সব দেশের সব চলচ্চিত্র সুস্থ সংস্কৃতি বিকাশের সহায়ক নয়। হলিউড, বলিউড, রাশিয়া, ফ্রান্স, এমনকি চায়না-জাপানও উদ্ভট সংস্কৃতির চলচ্চিত্র বানাচ্ছে। আমি আগেই বলেছি চলচ্চিত্র শতভাগ কোন পাঠশালা নয়।  সুস্থ সংস্কৃতি বিকাশের যেমন চলচ্চিত্র থাকবে তেমনি বিনোদনকেন্দ্রিক সামাজিক সমস্যা নিয়েও চলচ্চিত্র হবে। ছাত্রদের সবই দেখতে হবে এবং তাদের জ্ঞান বুদ্ধি দিয়ে ভালোকে গ্রহণ, মন্দকে ত্যাগ করতে হবে।
প্রশ্ন : আপনার সন্তান কয়জন এবং তারা কে কী করেন?
মু. ইমরান হোসাইন
জালশুকা, কালিয়াকৈর, গাজীপুর
মিশা সওদাগর : আমার দুই সন্তান। বড় ছেলে ও লেভেল পরীক্ষা দিয়ে এখন আমেরিকায় পড়াশুনা করছে আর ছোট ছেলে স্কলাসটিকায় কেজি থ্রিতে পড়ে।
প্রশ্ন : আপনার অভিনীত সিনেমার সংখ্যা কত?
মুহিব্বুল্লাহ আল হুসাইনী
নাঙ্গলকোট, কুমিল্লা
মিশা সওদাগর : প্রায় এক হাজার।
প্রশ্ন : নতুন প্রজন্মের কাছে আপনার প্রত্যাশা কী?
রুমান হাফিজ
কানাইঘাট, সিলেট
মিশা সওদাগর : সুস্থ সংস্কৃতি বিকাশের ক্ষেত্রে এগিয়ে আসা। দেশকে ভালোবেসে এর উন্নয়নে ঝাঁপিয়ে পড়া। বাবা-মার প্রতি অনেক অনেক ভালোবাসা। আর বিশেষ করে মাদকমুক্ত থাকতে হবে এবং সবাইকে মাদকমুক্ত রাখার জন্য সচেষ্ট থাকতে হবে।
প্রশ্ন : চলচ্চিত্র একটি সমাজগঠনে যেমন প্রভাব ফেলার কথা সে হিসেবে বাংলা চলচ্চিত্র কতটুকু পেরেছে বলে আপনি মনে করেন?
বোরহান উদ্দিন ভূইয়া
কুমিল্লা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট
মিশা সওদাগর : জীবন থেকে নেয়া ছবিটি তোমরা হয়তো সবাই দেখোনি। এই ছবিটি আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামে দারুণ প্রভাব ফেলেছে। কখনো আসেনি, কাচের দেয়াল, সূর্য¯œান এরকম আরো অনেক ছবি যা আমাদের সমাজ পরিবর্তনে সহায়তা করেছে। আমরা যেসব চলচ্চিত্র নির্মাণ করছি তার কিছু ছবি বাদ দিয়ে আর প্রায় সব চলচ্চিত্রেই সমাজগঠনের কিছু না কিছু প্রভাব বিস্তার করে। নাচে গানে ফাইটে ভরপুর ছবিতেও আমরা খারাপ লোক মানে ভিলেনের পরাজয় দেখিয়ে ভালো মানুষের মানে নায়কের জয় দেখাই। এটা খুব সহজভাবে আমরা বুঝিয়ে দেই খারাপ-মন্দ যত শক্তিশালী হোক না কেন পরিশেষে তাকে পরাজয় বরণ করতে হয়।
প্রশ্ন : আপনি যখন সিনেমার পর্দায় খলনায়কের ভূমিকা পালন করেন তখন দর্শকরা আপনার প্রতি খুবই রাগান্বিত হয়। এটা আপনার কেমন লাগে?
মো: আফতার হোসেন মনির
হাড়িভাসা, পঞ্চগড়
মিশা সওদাগর : আমার মনে প্রশান্তি আসে। আমার মনে হয় আমি আমার চরিত্রে সার্থক অভিনয় করতে পেরেছি।
প্রশ্ন : সুন্দর একটি সমাজগঠনে সহায়ক হিসেবে বাংলা সিনেমা কতটুকু সফল বলে আপনি মনে করেন?
রাজু
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
মিশা সওদাগর : খুব একটা সহায়ক হিসাবে সফল বলে আমি মনে করি না, তবে সমাজগঠনের একটা হাতিয়ার হিসাবে বাংলা সিনেমা তার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এটা ঠিক।
প্রশ্ন : একটি সুন্দর ও সুস্থ জাতিগঠনে ছাত্রসমাজের ভূমিকা কী?
এ.কে.এম রিয়াজ উদ্দীন চৌধুরী
সাতকানিয়া সরকারি কলেজ, চট্টগ্রাম
মিশা সওদাগর : বিশাল ভূমিকা। ছাত্রসমাজই পারে সমাজকে বদলে দিতে। বাহান্ন থেকে এই দেশে যত সমাজ বদলানোর আন্দোলন হয়েছে তার সবারই সামনের সারিতে ছিলো ছাত্রসমাজ। ছাত্ররা হচ্ছে ন্যায় আর আদর্শের প্রতীক। যদিও রাজনৈতিক টানাপড়েনে ছাত্রসমাজের অনেকেই এখন নষ্ট হতে বসেছে তবু আমি বিশ্বাস করি ছাত্ররাই পারে সুস্থ ও সুন্দর জাতিগঠনে বিশাল ভূমিকা রাখতে।
প্রশ্ন : এখন যে চলচ্চিত্রগুলো নির্মিত হচ্ছে সেগুলো কি আগেকার মত মানুষের হৃদয় ছুঁয়ে যেতে পারছে?
মো: মাহবুব আলম
উজিরপুর, শিবগঞ্জ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ
মিশা সওদাগর : না। কারণ এখন বেশির ভাগ ছবিই প্রযুক্তিনির্ভর। কাহিনীর মধ্যে গভীরতা নেই। আবেগ নেই। হৃদয়ের টানাপড়েন নেই। সামাজিক পারিবারিক সমস্যা নিয়ে চিন্তাভাবনা কম। প্রযুক্তির জৌলুস দেখিয়ে এরা গল্পকে টেনে নিয়ে যায় যা হৃদয়কে ছুঁয়ে যেতে পারে না।
প্রশ্ন : সমাজের নৈতিক অবক্ষয়ের পেছনে কিছুটা হলেও আপনার অভিনয়কে আপনি দায়ী মনে করেন কি?
শহিদুল ইসলাম সোহাগ
পাহাড়গাঁও, হরিপুর, ঠাকুরগাঁও
মিশা সওদাগর : না। আমি আমরা সিনেমার চরিত্রকে রূপায়ণ করি। সেটা খুবই মন্দ চরিত্র হতে পারে। আর মন্দটা সার্থকভাবে ফুটিয়ে তুলে আমি মন্দের ক্ষতিকর দিকটা তুলে ধরি। মন্দ লোক হলে তার পরিণতি ভালো হয় না। যারা মন্দ তাদের বোঝায় মন্দের পরিণতি খুবই ভয়ঙ্কর। এই পথে তোমরা যেও না।
প্রশ্ন : এখনকার বাংলা চলচ্চিত্র তরুণ প্রজন্মের বুদ্ধিবৃত্তি, নৈতিকতা বিকাশে কী পরিমাণ ভূমিকা রাখছে?
শাহরিয়ার হাসান জিহাদ
কক্সবাজার সরকারি কলেজ
মিশা সওদাগর : খুবই কম। কারণ বুদ্ধিবৃত্তির চর্চা, নৈতিকতা বিকাশ, বাণিজ্যিক দৃষ্টিভঙ্গিতে আসে না। আর এখনকার প্রায় প্রযোজকই বাণিজ্যিক দৃষ্টিভঙ্গিতেই ছবি  বানায়। যারা বাণিজ্য করতে এবং সস্তা বিনোদন দিয়ে মানুষকে মনোরঞ্জন করতে চায় তারা নৈতিকতাকে বেশি জোর দেয় না। তারা সবই হালকাভাবে উপস্থাপন করে নিজের মূলধনকে রিস্ক-ফ্রি করে। এটা পারতো অনুদানের ছবি। কিন্তু অনুদান হয়ে গেছে লেভেল মার্কা লোকদের বসতি, সেখানে তরুণ প্রজন্মের বুদ্ধিবৃত্তি, নৈতিকতা বিকাশ হয়ে গেছে গৌণ।
প্রশ্ন : আপনি তো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন। আপনার অভিনয়ও অনেক সুন্দর হয়। আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
সুমাইয়া খাতুন
ভালুকা, ময়মনসিংহ
মিশা সওদাগর : নামাজতো ইসলামের মূল স্তম্ভ। শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করার আগেও আমি নামাজ পড়ে যেতে চেষ্টা করবো। আর অভিনয় করেই আমি আজ আপনাদের প্রিয় মিশা সওদাগর। আপনাদের ভালোবাসা থাকলে অভিনয়টাকেও যতদিন পারি জীবনে ধরে রাখবো। আমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হচ্ছে শিশু-কিশোরদের ওপর একটি শিক্ষণীয় চলচ্চিত্র নির্মাণ করা। যে চলচ্চিত্রটি আমি নিজেই পরিচালনা করবো।
প্রশ্ন:  আপনি অভিনয় কোথায় শিখেছেন?
রাকিবুল হাসান সুপ্ত
আনন্দ মোহন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, ময়মনসিংহ
মিশা সওদাগর : কোন ফিল্ম ইনস্টিটিউটে শিখিনি তবে অভিনয়ের প্রতি আমার একাগ্রতা, নিষ্ঠা, সাধনা আমাকে অভিনয় করতে করতেই অভিনয় শিখিয়েছে।
প্রশ্ন : আপনার অভিনীত প্রথম সিনেমা কোনটি?
এমদাদুল ইসলাম (সাগর)
চরকালীদাস, ফরহাদনগর, ফেনী
মিশা সওদাগর : ছটকু আহমেদ পরিচালিত ও নাঈম কাদির প্রযোজিত ‘চেতনা’।
প্রশ্ন : মিশা ভাই, আমি আপনার একজন বড় ভক্ত। আপনার জীবনে কোন দিনটির কথা সবসময় মনে পড়ে?
মো: আলমামুন
শ্রীবরদী সরকারি কলেজ, শেরপুর
মিশা সওদাগর : আন্তরিক শুভেচ্ছা রইল। স্কুলে যাওয়ার প্রথম দিনটির কথা আমার খুব মনে পড়ে। আর আমি যখন সিনেমার পর্দা প্রথম আমাকে দেখলাম সেই দিনটির কথা ভুলতে পারি না।
প্রশ্ন:  শিশু-কিশোর পত্রিকা হিসেবে কিশোরকণ্ঠ আপনার কেমন লাগে? জানালে বাধিত থাকব।
ওমর ফারুক
হাটহাজারী, চট্টগ্রাম
মিশা সওদাগর : শিশু-কিশোররা আমার প্রাণ। আমি বিশ্বাস করি সব শিশুর অন্তরেই ঘুমিয়ে আছে আগামী দিনের সুনাগরিক। আর সেই শিশু-কিশোরদের নিয়ে ছাপানো পত্রিকা আমাকে খুবই সুখী করে।
প্রশ্ন : নিজের ক্যারিয়ারে পাশাপাশি, নিজেকে একজন দক্ষ আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ার জন্য যুবসমাজের কী করণীয়?
মো: সাদিক আজিজ
সাতকানিয়া, চট্টগ্রাম
মিশা সওদাগর : দক্ষ মানুষ হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলার জন্য ধর্ম আর কর্মের কোনো বিকল্প নেই। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ এর সাথে কর্মকে একাগ্রতার সাথে নিষ্ঠার সাথে সম্পন্ন করতে হবে। তবেই নিজের ক্যারিয়ার উজ্জ্বল হয়ে উঠবে।
প্রশ্ন : আমি সত্যিকার নায়ক হতে চাই। এক্ষেত্রে আমি কি মিডিয়াতে কাজ করব? নাকি একজন শিক্ষক হয়ে জাতির জন্য নায়কের ভূমিকা পালন করব?
মো: রাসেল আমিন
গাজীপুর, তিতাস, কুমিল্লা
মিশা সওদাগর : কোনটাই কোনটা থেকে কম নয়। মিডিয়ার নায়ক হোন আর শিক্ষক হিসেবে সমাজে শিক্ষা বিস্তারের নায়ক হোন। মানুষ সব কর্মেই নিজেকে নায়ক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে। কোন কর্মই ছোট নয়। কাঠুরিয়া থেকে রাষ্ট্র্রপ্রধান হয়ে নায়ক হয়েছিলেন। সাকিব আল হাসান, মুস্তাফিজুর রহমান, মাশরাফি ক্রিকেট খেলে নায়ক হয়েছেন। এইরকম পৃথিবীতে অনেক দৃষ্টান্ত আছে।
প্রশ্ন: বর্তমানে আপনার সময় কিভাবে কাটে?
মো: ওয়ালিদ সাইফউদ্দিন
সামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ঢাকা
মিশা সওদাগর : অভিনয় করে। সংসারের নানা কাজ করে। ধর্ম কর্ম করে।
প্রশ্ন: আপনার জীবনের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা কী?
মো: মাকছুদুর রহমান (বাচ্চু)
একাদশ শ্রেণী, লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজ
মিশা সওদাগর : শিশু-কিশোরদের জন্য শিক্ষণীয় কিছু না করতে পারাটাই আমার জীবনে ব্যর্থতা বলে আমি মনে করি।
প্রশ্ন: বর্তমান তরুণসমাজকে নিয়ে আপনি কী স্বপ্ন দেখেন?
মো: মাহাবুল আলম (শান্ত)
পোড়াদহ, কুষ্টিয়া
মিশা সওদাগর : অবশ্যই স্বপ্ন দেখি। তবে ভারতের প্রয়াত রাষ্ট্র্রপতি প্রখ্যাত বিজ্ঞানী এ পি জে আবদুল কালাম বলেছেন, ‘স্বপ্ন সেটা নয় যেটা ঘুমিয়ে দেখো, স্বপ্ন সেটা যেটা পূরণ করার জন্য তোমার চোখে ঘুম আসে না।’
প্রশ্ন : এখন পর্যন্ত দর্শকেরা আপনার কোন ছবিটা বেশি মনে রেখেছে বা রাখছে?
ফেরদৌস আলম
কানাইঘাট, সিলেট
মিশা সওদাগর : প্রিয়া আমার প্রিয়া।
প্রশ্ন : কখনো কি ভেবেছেন আজকের অবস্থানে আসতে পারবেন? কিংবা নিজেকে ঠিক কোন অবস্থানে দেখতে চেয়েছিলেন?
রুমান হাফিজ
কানাইঘাট, সিলেট
মিশা সওদাগর : অবশ্যই ভেবেছি। আমি যখন কোন কাজ করি তার সফলতার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করি। আমি স্বপ্ন দেখি আমার কাজ দ্বারা আমি একটা দৃঢ় অবস্থান তৈরি করে নেবো এবং আমি তখন থেকে সেই স্বপ্ন পূরণের জন্য ঘুমাতে পারি না। আমি একজন জনপ্রিয় অভিনেতার অবস্থানে নিজেকে দেখতে চেয়েছিলাম আর সেই অবস্থান আমি তৈরি করেছি আমার কর্ম দিয়ে। আমার সাধনা দিয়ে।
প্রশ্ন : আপনি অধিকাংশ সময় চলচ্চিত্রে খলনায়কের ভূমিকায় অংশগ্রহণ করেন কেন?
মিরাজ হোসেন ইবনেসিনা
ফেনী সদর, ফেনী
মিশা সওদাগর : দর্শক আমার জনপ্রিয়তার মাপকাঠি। দর্শক আমাকে যে চরিত্রে পছন্দ করে সেই চরিত্র নেবার জন্য প্রযোজক পরিচালক আমাকে চুক্তিবদ্ধ করেন। আর আমি চুক্তির কোন বরখেলাপ করি না। দর্শক ও নির্মাতার ইচ্ছাকে আমি আমার অভিনয়নৈপুণ্য দ্বারা খুশি করতে সব সময় চেষ্টা করি। তবে ইদানীং পজিটিভ চরিত্রেও অনেক অভিনয় করেছি। এইবার ২০১৪ সালের যে জাতীয় পুরস্কার পেয়েছি তা একটা কমিক রোলে।
প্রশ্ন : প্রায় হাজারের মত সিনেমায় অভিনয় করেছেন, কোন শক্তি আপনাকে এতদূর নিয়ে এলো?
মো: আবু নাঈম
হাড়িভাসা, পঞ্চগড়
মিশা সওদাগর : সততা, নিষ্ঠা, একাগ্রতা, সাধনা এবং সর্বোপরি পরম করুণাময়ের ওপর অগাধ বিশ্বাস, আমার পথ চলার অসীম শক্তির প্রেরণা।
প্রশ্ন : একজন সুন্দর মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠার জন্য আপনি কী পরামর্শ দেবেন?
মো: লাবীব মোর্শেদ
হাড়িভাসা,পঞ্চগড়
মিশা সওদাগর : সৎ থাকবেন। নামাজ পড়বেন। স্রষ্টার ওপর বিশ্বাস রাখবেন। যে কাজ করবেন নিষ্ঠার সাথে পবিত্রতার সাথে দায়িত্ববোধ থেকে করবেন। মাদকমুক্ত থাকবেন। সমাজকে মাদকমুক্ত রাখতে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করবেন। নিজে ভালো থাকবেন সেই সাথে আশপাশের সব মানুষকে ভালো রাখতে সচেষ্ট হবেন। তবেই আপনি একজন সুন্দর মানুষ হিসেবে, আলোকিত মানুষ হিসেবে সমাজকে সুন্দর ও আলোকিত করতে পারবেন। আর সেই আলোর পথ ধরেই আগামী প্রজন্ম এই দেশকে নিয়ে যাবে উন্নতির উচ্চ শিখরে। বিশ্বে বাংলাদেশ হবে উন্নতির রোল মডেল। ইনশাআল্লাহ।
                        
আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ