জসীম চাচার উপদেশ । হাসিব মোশাররফ

জসীম চাচার উপদেশ । হাসিব মোশাররফ

গল্প ফেব্রুয়ারি ২০১৯

জসীম চাচার উপদেশকয়েক দিন থেকেই দেখা নেই প্রিয় তিন বন্ধুর।
কিছুদিন আগে বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হওয়ায় বন্ধ ছিল সীমা, খালেদা ও মোজাহিদের প্রিয় স্কুলটি। সপ্তাহ দু’য়েক পর তাদের প্রিয় স্কুল সবুজ সেনা কিন্ডারগার্টেন স্কুলের ক্লাস চালু হয়েছে। সপ্তম শ্রেণীর ক্লাসে হঠাৎ বাংলা শিক্ষক একাধারে মোজাহিদ, সীমা ও খালেদা নামের তিনজনকে দাঁড় করালেন। কেননা ওরা তিনজন একে অপরের সাথে ফিস ফিস করে কথা বলেছিলো। ওরা হলো একে অপরের প্রাণের বন্ধু। যেন তিনজনেই একে অপরের পরিপূরক। ওরা কোথায় জানি যাওয়ার ব্যাপারে আলোচনা করছিল।
কিছুক্ষণ পর শ্রেণিশিক্ষক তাদেরকে বসার অনুমতি দিলেন।
পরিকল্পনা অনুযায়ী বৃহস্পতিবার বিদ্যালয় ছুটির পর তিন বন্ধু মিলে গ্রামের জসীম চাচার বাগানে বরই চুরি করে খাবে। কেননা বৃহস্পতিবার মানেই হলো বিদ্যালয়ের হাফ ক্লাস।
চার ক্লাস পরে বিদ্যালয় ছুটির ঘণ্টা বাজলো। বিদ্যালয় ছুটির পর মোজাহিদ, সীমা ও খালেদা ওরা তিনজন গ্রামের আঁকাবাঁকা পথ ধরে রওনা দিলো জসীম চাচার বরই বাগানের দিকে। কিছুক্ষণ পরেই পৌঁছে গেল বরই বাগানে। ওদের মধ্যে মোজাহিদ উঠলো বরই গাছে। আর সীমা ছিল গাছের নিচে বরই কুড়ানোর জন্য।
অন্য দিকে খালেদা ছিল পাহারা দেয়ার জন্য, বাগানের এদিক ওদিক কেউ আসছে কি না তা লক্ষ করবে। মোজাহিদ রীতিমতো গাছে বসেই বরই খাওয়া শুরু করে দিয়েছে। একটা খায় আর একটা ছিঁড়ে সীমার কাছে মাটিতে ফেলে দেয়। অন্য দিকে খালেদা যেন আগের দিনের রাজ প্রাসাদের প্রহরীর মতো পাহারায় ব্যস্ত। আস্তে আস্তে অনেক বরই হলো। তারপর মোজাহিদ গাছ থেকে মাটিতে নামলো। তিন বন্ধু মিলে সিদ্ধান্ত নিলো সীমার ব্যাগে বরইগুলো ভরে বাগান থেকে দ্রুত কেটে পড়বে।
তারপর হাজিপাড়ার মাঠে গিয়ে ভাগ করবে। ওরা যখন বাগান থেকে বের হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল তখনই সামনে হাজির হলো বরই বাগানের মালিক জসীম চাচা। এতে ওরা এতটাই ভয় পেয়েছিলো যে, ওদের একেক জনের মুখ ভয়ে লাল হয়ে গিয়েছিলো।
তারপর জসীম চাচা বললেন, শোনো ভয়ের কিছুই নেই। আমি তোমাদের মারবো না তবে কিছু কথা বলবো। এরকম কথা শুনে ওরা কিছুটা স্বস্তি পেল। তবু ওদের ভয় অনেকটাই রয়ে গেল।
জসীম চাচা বললেন, তোমাদের বরই খাওয়ার ইচ্ছা জেগেছে তা আমাকে বললেই তো হতো। চুপিচুপি আসার কী দরকার ছিল। প্রয়োজন হলে আমি নিজেই তোমাদের বরই পেড়ে দেয়ার ব্যবস্থা করতাম।
তোমাদের আগে যারা আমার কাছে বরই চেয়েছে আমি সবাইকেই দিয়েছি। আর আমি তো ভালো করেই জানি যে একটা ছোট গাছ রোপণ করেছিলাম। তার থেকে সময়ের পরিক্রমায় মহান আল্লাহ তায়ালার অশেষ রহমতে আমার এত্ত বরই হয়েছে।
তবে আজ এই বাগানটি যদি আমার না হয়ে গ্রামের অন্য কোনো ব্যক্তির হতো তাহলে এ নিয়ে তোমাদের বাসায় নালিশ যেত। এমনকি তোমাদের বাবা-মায়ের সম্মান নিয়ে কথা হতো। গ্রামের সকলের কাছে অপমানিত হতে হতো তোমাদের বাবা-মাকে। এতে তোমাদের বাবামায়েরা কষ্ট পেতেন।
একটা বিষয় খেয়াল রাখবে- আল্লাহ তায়ালার পরেই বাবা-মায়ের স্থান। বাবামাকে কষ্ট দিলে জীবনে কখনোই সফলতা পাওয়া যায় না।
কারো কোনো জিনিস নিতে হলে প্রথমে অনুমতি প্রয়োজন।
যদি অনুমতি না পাওয়া যায় তাহলে সেই জিনিসের আশা করা যাবে না।
তোমরা যা করেছ ভুল করেছ আর কখনো এমনটি করিও না।
ওরা নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে জসীম চাচাকে বলল, চাচা আপনি আমাদের জন্য দোয়া করবেন আমরা যেন সচ্চরিত্রবান হতে পারি।
জসীম চাচা আরো বলেন, তোমরা কি জানো, আমরা যে কাজই করি না কেন তা আমাদের সৃষ্টিকর্তা সর্বদাই দেখে থাকেন। সৃষ্টিকর্তা কখনই খারাপ কাজকে পছন্দ করেন না। অতএব আমাদের সকলের উচিত সর্বোপরি আল্লাহর হুকুম মেনে চলা।
                        
আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ