জেমস্ ওয়েব টেলিস্কোপে তারকা তৈরির কারখানা

জেমস্ ওয়েব টেলিস্কোপে তারকা তৈরির কারখানা

আইটি কর্নার নাদিম নওশাদ এপ্রিল ২০২৪

প্রিয় বন্ধুরা। কেমন আছো সবাই। আশা করি অনেক ভালো আছো। তোমরা কি জেমস্ওয়েব টেলিস্কোপের নাম শুনেছো? জেমস্ ওয়েব টেলিস্কোপ হলো একটা স্পেস টেলিস্কোপ যা মহাবিশ্বের থেকে আগত আলো গবেষণা করার জন্য তৈরি করা হয়েছে। জেমস্ ওয়েব টেলিস্কোপে ব্যবহৃত যন্ত্রগুলো এতটাই অত্যাধুনিক যে এটা অতি সূক্ষ্মতম আলোর সামান্যতম পরিবর্তনও স্পষ্ট পর্যবেক্ষণ করতে পারে। এর ফলে অনেক পুরাতন ও দূরের বস্তু দেখা সম্ভব হচ্ছে। তোমাদের মনে কি প্রশ্ন জেগেছে, আলোর গতিবিধি পর্যবেক্ষণ কেন প্রয়োজন? আলোর গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে অনেক অজানা তথ্য আমরা আবিষ্কার করতে পারছি। যেমন : মহাবিশ্ব কীভাবে তৈরি হলো? মহাবিশ্ব কীভাবে পরিচালিত হয়? পৃথিবী ছাড়াও অন্যান্য গ্রহে প্রাণের অস্তিত্ব আছে কি না? জ্যোতির্বিদ্যায় জেমস্ ওয়েব টেলিস্কোপ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

সম্প্রতি জেমস্ ওয়েব টেলিস্কোপ একটা নীহারিকার ছবি তুলেছে যা তারকা গঠন করছিল। বিজ্ঞানীরা এই নীহারিকাটির নাম দিয়েছেন এন-৭৯। এই নীহারিকাটি যে অঞ্চলের মধ্যে অবস্থিত সেটা আন্তনাক্ষত্রিক আয়নযুক্ত পারমাণবিক হাইড্রোজেনের একটি অঞ্চল। বুঝতে কষ্ট হচ্ছে, তাই না? আসলে মহাবিশ্বের প্রধানতম গ্যাসের নাম হচ্ছে হাইড্রোজেন। যখন একটা হাইড্রোজেন পরমাণু উত্তপ্ত তারকার কাছাকাছি চলে আসে তখন হাইড্রোজেন পরমাণু আয়নে পরিণত হয়। মহাকাশের বিভিন্ন অঞ্চল চিহ্নিত করা হয় হাইড্রোজেন পরমাণু আয়নিত অবস্থায় আছে কি না তার ওপর ভিত্তি করে। 

এই নীহারিকাটি আমাদেরই গ্যালাক্সি অর্থাৎ মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির একটা উপগ্রহ “Large Magellanic Cloud (LMC)”-Gi H II”-এর ঐ ওও অঞ্চলে অবস্থিত। এই ছবিটি ফ্রেমবন্দি করা হয়েছে “Webb’s Mid-Infrared Instrument (MIRI)” যন্ত্রের দ্বারা।

এন-৭৯ হলো একটা বিশাল তারকা গঠনকারী মহাকাশীয় অঞ্চল যেটা প্রায় ১৬৩০ আলোকবর্ষ পর্যন্ত বিস্তৃত। ভাবতে পারো! কত বড়ো এটা! ১ আলোকবর্ষ প্রায় ৬ ট্রিলিয়ন মাইলের সমান। মানে ৬-এর পর ১২টা শূন্য। সংখ্যাটা একবার চিন্তা করো, কত বিশাল এটা!

Large Magellanic Cloud (LMC)-এর দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে এন-৭৯-এর অবস্থান। ওপরের চিত্রটি এন-৭৯ এর দক্ষিণ দিক, যেটার নাম এস-১, এর তিনটি দৈত্যাকার আণবিক মেঘ কমপ্লেক্স-এর একটিকে ফোকাস করে তোলা হয়েছে। ওপরের ছবিতে তারকা আকৃতির যে প্যাটার্ন দেখা যাচ্ছে, সেটা হচ্ছে বিবর্তন স্পাইকের একটা সিরিজ। বিবর্তন স্পাইকগুলো হলো উজ্জ্বল আলোর উৎস থেকে বিকিরিত হওয়া আলোর রেখা যেটাই মূলত টেলিস্কোপে আমরা দেখতে পাই। অন্য টেলিস্কোপের মতো, এই টেলিস্কোপেও একটা অত্যাধুনিক আয়না ব্যবহার করা হয় যা এই অসাধারণ দৃশ্য ধারণ করে থাকে। জেমস্ ওয়েব টেলিস্কোপে সর্বমোট ১৮টা আয়নার টুকরো ব্যবহার করা হয়েছে যেগুলো ষড়ভুজ আকৃতির এবং এর সকল পার্শ্ব সমান দৈর্ঘ্যরে। সেই কারণেই আমরা ছবিতে ৬টা স্পাইক দেখতে পাচ্ছি।

ছবির দৃশ্যের মতো নিদর্শনগুলো সাধারণত কোনো উজ্জ্বল বস্তু চারিপাশে যেখান থেকে প্রচুর পরিমাণে আলো নির্গত হয় সেইসব বস্তুর চারিপাশে বেশি লক্ষ্য করা যায়। মজার বিষয় কি জানো? এ সমস্ত ছায়াপথগুলো আমাদের চোখে খুব ছোটো মনে হলেও এগুলো এক একটা তারকার চেয়ে অনেক বেশি বড়ো এবং অন্ধকার। যার ফলে এগুলো নিজে এমন কোনো প্যাটার্ন দেখায় না।

আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ