ঝাড়ুদার মাছ

ঝাড়ুদার মাছ

বিশেষ রচনা ফেব্রুয়ারি ২০১০

আরিফ হাসান

[caption id="attachment_240" align="alignright" width="250" caption="ঝাড়ুদার মাছ"][/caption] আমরা অনেকেই ঝাড়ুদার ভাইদের মানুষই মনে করি না। ভাবি ওরা খুব নীচু শ্রেণীর এক ধরনের প্রাণী। অথচ তারা রোজ যে কাজটি করেন সেটা যে অনেক উঁচু মাপের কাজ এটা কেউ ভাবিই না। একবার ভাবো তো, তারা না থাকলে কী হতো? চারপাশে ময়লার পাহাড় জমে যেত। নোংরা পরিবেশে বাস করতে করতে আমরা অসুস্থ হয়ে পড়তাম। তারপর...

ঝাড়ুদাররা আমাদের মতোই মানুষ। তবে প্রাণিজগতেও (মাছের জগতে) ঝাড়ুদার আছে। তারা মানুষ ঝাড়ুদারদের মতো রাস্তাঘাট, বাড়িঘর বা অফিস-আদালত পরিষ্কার করে না। তারা পরিষ্কার করে আরেক মাছের শরীর, গলা, ফুলকা আরো অনেক কিছু। এরা বিভিন্ন ধরনের মাছের আঁইশ, মুখ এবং ফুলকার মধ্যে বাস করা পরজীবী খেয়ে এদের শরীর পরিষ্কার করে দেয়। এই সব মাছ বেঁচে যায় বিভিন্ন ধরনের রোগের আক্রমণ থেকে। ভাবছো অন্য মাছের মুখের ভেতর ঢুকে ময়লা পরিষ্কার করা তো ভয়ঙ্কর ব্যাপার। যদি সুযোগ বুঝে ঝাড়ুদার মাছটিকে সাবাড় করে দেয়! না, অন্য মাছেরা এমন কাজ একেবারেই করে না। করবেই বা কেন? ঝাড়ুদার মাছ যখন অন্য মাছের মুখে ঢুকে ময়লা পরিষ্কার করে তখন ওরা মজা তো পায়ই, ময়লা পরিষ্কার হওয়ায় রোগে ভুগে মরার হাত থেকেও তো বেঁচে যায়, তাই না?

অন্য মাছের শরীর পরিষ্কার করার জন্য ঝাড়–দার মাছের একটা নির্দিষ্ট স্টেশন থাকে। এখানে এসেই অন্য মাছ তাদের ময়লা পরিষ্কার করে যায়। সাধারণত সাগরের যে এলাকায় প্রচুর প্রবাল প্রাচীর আছে সেই এলাকাটাকেই এরা স্টেশন হিসেবে ব্যবহার করে। ঝাড়ুদার মাছের সবচেয়ে বড় স্টেশন হলো ভারত এবং প্রশান্ত মহাসাগরের প্রবাল প্রাচীর ঘেরা এলাকা। যে সব মাছের মুখ, দাঁত, আঁইশ, মরা চামড়া বা ফুলকা পরিষ্কার করা দরকার তারা এই স্টেশনে এসে নানান অঙ্গভঙ্গি করে ঝাড়ুদার মাছের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করে। এখানে অনেক সময় ‘বাঘ ও বকের গল্প’র মতো ঘটনা বলে বড় কোনো মাছের মুখ বা দাঁত পরিষ্কার করার সময় ঝাড়ুদার মাছেরা খুব সাবধানে থাকে।

মানুষের জগতে ঝাড়ুদার ভাইয়েরা রাস্তাঘাট কিংবা বাড়িঘর পরিষ্কার করার বিনিময়ে যেমন টাকা পায় তেমনি মাছের জগতে ঝাড়ুদার মাছেরা পায় খাবারের নিশ্চয়তা। অর্থাৎ বড় বড় মাছের মুখ, দাঁত, আঁইশ কিংবা ফুলকার ফাঁকে লুকিয়ে থাকা ময়লা বা খাদ্যকণাই হলো ঝাড়–দার মাছের প্রধান খাবার।

ঝাড়ুদার মাছ হিসেবে সবচেয়ে বেশি সুখ্যাতি আছে র‌্যাসেস নামের এক ধরনের মাছের। এরপরই যাদের নাম পাওয়া যায় তারা হলো চিকলিডস, ক্যাটফিশ, গোবি ও এক ধরনের চিংড়ি।

যাদের বাড়িতে অ্যাকুরিয়াম আছে তাদেরকে মাঝে মধ্যেই অ্যাকুরিয়াম পরিষ্কার করতে হয়। যারা এটা করে তারাই জানে এটা কতো ঝামেলার কাজ। এই ঝামেলার কাজটি পানির মতো সহজ করে দিতে পারে ঝাড়ুদার মাছ। অ্যাকুরিয়ামে থাকা অন্য মাছের ত্যাগ করা ময়লা, মাছের গা থেকে ঝরে পড়া মরা চামড়া বা আঁইশ এবং বিভিন্ন ধরনের খাদ্যকণা পরিষ্কার করার কাজে ঝাড়ুদার মাছ নিজেদের দারুণ পটু হিসেবে প্রমাণ করেছে। ফলে বর্তমানে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের অ্যাকুরিয়ামে অন্য মাছের পাশাপাশি ঝাড়ুদার মাছ হিসেবে র‌্যাসেস, চিকলিডস, ক্যাটফিশ, গোবি ও চিংড়ি মাছ রাখা হয় অন্য মাছের শরীর পরিষ্কার করার জন্য।

আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ