তিতুমীর ভীতু নন

তিতুমীর ভীতু নন

ভ্রমণ ড. মাহফুজুর রহমান আখন্দ জানুয়ারি ২০১০

তিতু কখনো ভীতু ছিলেন না। মানুষের বুকের ভেতর তখন ভয় আর ভয়। কিন্তু মনের মধ্যে পরাধীনতার শৃঙ্খল ভাঙার গান। ইংরেজদের ভয়ে উচ্চারণের সাহস ছিলো না কারো। এ সময় সাহসের সাথে হুঙ্কার দিয়ে ইংরেজ মসনদ কাঁপিয়ে তুলেছিলেন সৈয়দ মীর নিসার আলী। তিতুমীর নামে তিনি সকলের কাছেই পরিচিত। সাহসের প্রতীক হয়ে আছেন তিনি ইতিহাসে। স্বাধীনতাকামী বিশ্বাসী মানুষের হৃদয়ে তিনি আজও অনুপ্রেরণার উৎস। কবি সাজজাদ হোসাইন খানের ভাষায়- ‘এক যে ছিল বীর, নামটি তিতুমীর, বাঁশের লাঠি দিয়ে ভাঙত সে জিঞ্জির।’ শিকল ভাঙার গানে তিনি আজও অনুসরণীয় ব্যক্তিত্ব।

তিতুমীর জন্মেছেন ১৭৮২ সালে। তারিখটা ছিলো ২৭ জানুয়ারি। পশ্চিমবঙ্গের বারাসাত জেলায় তাঁর জন্ম। গ্রামের নাম চাঁদপুর। পিতা সৈয়দ মীর হাসান আলী। মায়ের নাম আবিদা রুকাইয়া খাতুন। বেশ সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবার। তাঁর পিতা ছিলেন হযরত আলী রা.-এর বংশধর। সমাজে বেশ নাম ডাক ছিলো তাদের। সবাই সম্মান করতো। ভালো মানুষ হিসেবে পরিচিত ছিলো সকলের কাছে।

গ্রামের স্কুলে লেখাপড়া শুরু করেন তিতুমীর। তারপর মাদরাসায় ভর্তি হন। ছাত্র হিসেবে খুব মেধাবী ছিলেন। শিক্ষকদের আদর ভালোবাসা পেতেন। ১৮ বছর বয়সে তিনি পবিত্র কুরআনের হাফেজ হন। হাদিসশাস্ত্রেও পাণ্ডিত্য অর্জন করেন। লেখাপড়ার সাথে সাথে যোদ্ধা হওয়ার স্বপ্ন ছিলো তাঁর চোখে মুখে। তাই মাদরাসায় পড়ার ফাঁকে ফাঁকে কুস্তি খেলার প্রতি ঝুঁকে পড়েন তিনি।

যেমন লম্বা তেমনি সুঠাম দেহ। দেখলেই বীরের মতো মনে হয়। চোখ দেখেই সবাই ভয় পেতো। অল্পদিনের মধ্যেই তিতু কুস্তি খেলা রপ্ত করে ফেললেন। গ্রামের কুস্তি খেলায় নিয়মিতভাবে বিজয়ী হতেন তিনি। অল্পদিনের মধ্যেই কুস্তি খেলার সুনাম ছড়িয়ে পড়লো। গ্রাম থেকে শহরে। মহল্লা থেকে নগরে। 

তিতুমীর লাঠি চালানো শিখলেন। বলা চলে লাঠি খেলারও ওস্তাদ। লাঠি ঘুরানো কলাকৌশল দেখে সবাই অবাক হয়ে যেতো। গ্রামের লোকজন তাঁর লাঠি খেলা দেখতে আসতো। একদিকে কুস্তি খেলা অন্যদিকে লাঠি। বিশাল দেহের তিতু ভয়কেও জয় করেছিলেন। ভীষণ সাহসী তিতু সকলের কাছে শক্তিশালী তরুণ হিসেবে বেড়ে ওঠেন।

১৮১৫ সাল। কলকাতায় কুস্তি খেলা হবে। অনেক বড় প্রতিযোগিতার আসর। তিতুমীর অংশগ্রহণ করলেন। লড়লেন বীরের বেশে। চ্যাম্পিয়ন হলেন। অচিরেই তাঁর সুনাম ছড়িয়ে গেলো কলকাতা শহর জুড়ে। তখন থেকে তিনি পেশাদার কুস্তিগির হিসেবে প্রতিষ্ঠা পান। শুধু কলকাতা নয়, তাঁর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়লো সারা ভারতবর্ষে। কুস্তিগির হিসেবে তিনি খ্যাতির শীর্ষে অবস্থান করতে থাকলেন।

নদিয়ার একজন জমিদার তাঁকে চাকরি দিলেন। নিরাপত্তার চাকরি। দেহরক্ষী লাঠিয়াল। জমিদারের দেহরক্ষী। মাঝে মাঝে সম্পত্তি দেখাশোনার জন্য জমিদারের সাথে জমিদারি এলাকাও দেখে আসতেন। তিনি যখন জমিদারি এলাকায় দলবল নিয়ে যেতেন তখন অন্য জমিদারের লোকেরা ভয় পেতো। জমিদারি দাঙ্গা-হাঙ্গামায় নেতৃত্বও দিয়েছেন তিনি।

ইংরেজরা খুব ধুরন্ধর। তারা হিন্দুদের সাথে নিয়ে মুসলমানদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করতে থাকে। রাষ্ট্রের বিভিন্ন সরকারি চাকরি থেকে মুসলমানদের ছাঁটাই করা হলো। মুসলমানদের ব্যবসায়-বাণিজ্যে সমস্যা সৃষ্টি করলো। মসজিদ মাদরাসার লাখেরাজ সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে দেয়। আয় ইনকাম না থাকায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠাগুলো বন্ধ হয়ে যায়। শিক্ষার আলো থেকে দূরে সরে পড়ে মুসলমানেরা। পরিকল্পিতভাবে আস্তে আস্তে হিন্দু ধর্মের রীতিনীতি ও ধর্মীয় কুসংস্কার মুসলিম সমাজে প্রবেশ করিয়ে দেয়। মাজার পূজা, পীর পূজাসহ বিভিন্ন শিরকি রীতিনীতিকে ইসলামী কাজ বলে চালানো হয়। এ সব কাজে নানাভাবে সাহায্য সহযোগিতার মাধ্যমে উৎসাহিত করে। ইসলামের বিধানে নেই এমন কিছু রীতিনীতি মৃত ব্যক্তির উদ্দেশ্যেও করানো হতো। অন্যদিকে হিন্দুদের পুজোর জন্য চাঁদা দেয়া, পুজো এবং মেলায় অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক করতো। দাড়ি রাখাকে অপরাধ বলা হতো। এর জন্য চাঁদা দিতে হতো। নামাজ পড়লে কিংবা মসজিদে আজান দিলে চাঁদা দিতে হতো। সন্তানের আকিকা করলেও চাঁদা দিতে হতো। চাঁদা দিতে হতো সন্তানের মুসলমান নাম রাখলেও। ঈদে কুরবানি করা বন্ধ করে দেয়। ফলে প্রায় পঞ্চাশ ষাট বছরের মধ্যেই মুসলমানদের জীবন চরিত্র পুরোপুরিভাবে বদলে গেলো।

১৮২২ সাল। তিতুমীরের জীবনের বাঁক বদলের সময়। দিল্লি রাজপরিবারের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম ব্যক্তির সংস্পর্শে আসেন তিনি। সে বছরেই তাঁর সঙ্গে মক্কায় হজ্জব্রত পালন করতে যান। এ সময় সাইয়েদ আহমদ ব্রেলভীর সাথে তাঁর পরিচয় ঘটে। তিনিও এসেছিলেন হজ্জ পালন করতে। তিতুমীর তাঁর সংস্পর্শে নতুন জীবনের সন্ধান পেলেন।

সাইয়েদ আহমদ ব্রেলভী। ভারতীয় উপমহাদেশের একজন সমাজ সংস্কারক ছিলেন তিনি। মুসলমানদের মধ্যে একতা সৃষ্টি করেছেন। ভারত থেকে ইংরেজদের তাড়ানোর জন্য সংগ্রাম করেছেন। র্শিক বিদাত উচ্ছেদ করে মুসলমানদের মাঝে সহিহ আকিদার প্রচার করেন। ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করেছেন। অস্ত্র হাতে যুদ্ধও করেছেন তাঁরা।

সাইয়েদ আহমদ ব্রেলভীর সাথে নিজেকে মিলিয়ে নিলেন তিতুমীর। তরিকায়ে মুহাম্মাদিয়া আন্দোলনে তখন গণজোয়ার। সংস্কারবাদী আন্দোলন। সহিহ ইসলামের আন্দোলন। র্শিক বিদআত থেকে মুক্ত হওয়ার আন্দোলন। ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে জেহাদি আন্দোলন। তিতুমীর নিজেকে এই আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত করলেন। প্রায় পাঁচ বছর একসাথে কাজ করলেন। আন্দোলনের কর্মকাণ্ড ভালোভাবে রপ্ত করে দেশে ফিরলেন।

তিতুমীরের আন্দোলনের ধারা ছিল প্রধানত তিনটি।

প্রথমত, শিরক বিদআত থেকে মুসলমানদের মুক্ত করা। ধর্মহীনতার কবল থেকে মানুষকে উদ্ধার করা। ইসলামের প্রকৃত শরিয়তি বিধান শিক্ষা দেয়া এবং শরিয়াহ বিধান মোতাবেক জীবন পরিচালনায় উদ্বুদ্ধ করা।

দ্বিতীয়ত, অত্যাচারী জমিদারদের হাত থেকে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল নির্যাতিত মানুষকে রক্ষা করা।

তৃতীয়ত, ইংরেজদের শাসন শোষণ থেকে মানুষকে মুক্ত করে স্বাধীন ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করা।

তিতুমীর দেশে ফিরলেন ১৮২৭ সালে। কলকাতাসহ বাংলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সফর করেন। জমিদারদের অত্যাচার এবং ইংরেজদের জুলুমের চিত্র তাঁকে ব্যথিত করলো। মুসলমান কৃষক ও তাঁতীদের কষ্টে তিনি আহত হলেন। তাঁদের অধিকার আদায়ে একতাবদ্ধ করার জন্য কাজ শুরু করলেন। অচিরেই তিনি বেশ সুনাম অর্জন করেন। তাঁর নেতৃত্বে চব্বিশ পরগনা, নদীয়া ও যশোরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে সংস্কার আন্দোলন বেগবান হয়ে ওঠে। সেখানে তিনি স্বাধীন সরকার প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন। আধ্যাত্মিক অলি হযরত মিশকিন শাহ’র সহায়তাও লাভ করেন তিনি।

তিতুমীরের কর্মকাণ্ডে ইংরেজরা ক্ষেপে গেলো। উত্তেজিত হয়ে যায় হিন্দু জমিদাররাও। তিতুমীর নারিকেলবাড়িয়ায় ময়জুদ্দীন বিশ্বাসের বাড়িতে সদর দফতর স্থাপন করেন। ময়জুদ্দীন বিশ্বাসের নিকটতম আত্মীয়-স্বজন এগিয়ে এলেন। এগিয়ে এলেন এলাকার বলাই জোলা, ডাকু কারিগর, দায়েস কারিগর, কেদার বক্স কারিগর, পূজতি মল্লিকসহ বহু কৃষক, জোলা ও রায়ত। তিন বৎসরের মধ্যে সকলের মধ্যে বৈপ্লবিক পরিবর্তন দেখা দিলো। তিনি সুবিধাবঞ্চিত  চাষি ও জোলাদের নিয়ে প্রজাবিদ্রোহ শুরু করেন।

তিতুমীরের আন্দোলন দমাতে হবে। তারাগুনিয়ার জমিদার রামনারায়ণ ও পুঁড়ার জমিদার কৃষ্ণদেবের লাঠিয়াল বাহিনী অতর্কিত হামলা করে। মসজিদ জ্বালিয়ে দেয়। মুজাহিদরা থানায় নালিশ দিয়েও কোনো ফল পায়নি। ১৮৩০ সালের ৭ আগস্ট বারাসাতের ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে মামলা দায়ের করা হয়। কিন্তু এক বৎসর পর তা খারিজ করে দেয়। 

মুজাহিদরাও প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। ফলে নওঘাটায় এক সংঘর্ষ হয়। সেখানে জমিদার দেবনাথ রায় নিহত হন। আরো দুটি সংঘর্ষে মুজাহিদরা জয়লাভ করেন। অতঃপর তাঁরা দেশে ইংরেজ রাজত্বের অবসান এবং মুসলিম শাসনের পুনঃপ্রতিষ্ঠার কথা ঘোষণা করেন।

১৮৩১ সালের ১৫ নভেম্বর। বারাসাতের জয়েন্ট ম্যাজিস্ট্রেট আলেকজান্ডার ১২৫ সদস্যের এক পুলিশ বাহিনী নিয়ে নারিকেলবাড়িয়ায় তিতুমীরের অনুসারীদের ওপর হামলা করেন। পরাজিত হন আলেকজান্ডার। তাঁর ১০ জন সিপাহি ও ৩ জন বরকন্দাজ ঘটনাস্থলেই নিহত হয়। আলেকজান্ডারের বাহিনীকে সহায়তা করেছিল নীলকুঠি সাহেবরা। মুজাহিদগণ তাদের সবকটি কুঠি লুট করেন। কুঠির তত্ত্বাবধায়ক ও তাদের পরিবারবর্গের সকল সদস্যকে বন্দী করা হয়। এদের মধ্যে যারা তিতুমীরের কাছে নতি স্বীকার করেছিল তাদেরকে তিতুমীর সসম্মানে মুক্তি দেন।

তিতুমীরের আত্মবিশ্বাস বহুগুণে বেড়ে গেল। দলে দলে লোক তিতুমীরের দলে যোগ দিতে থাকল। তিতুমীর এবার সরাসরি ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলেন। ভারতীয় উপমহাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করলেন। তিতুমীর আত্মরক্ষার জন্য নারিকেলবাড়িয়ায় একটি বাঁশের কেল্লা তৈরি করলেন। 

ভারতীয় গভর্নর জেনারেল লর্ড বেন্টিংক নদীয়ার কালেক্টরকে অবিলম্বে তিতুমীরের আন্দোলন ও বিদ্রোহকে দমন করার জন্য আদেশ দেন। তিনি নদীয়ার বহু সৈন্য নিয়ে নদী ও স্থলপথে নারিকেলবাড়িয়ায় উপস্থিত হন। বাঁশের কেল্লার নিকটবর্তী হওয়ার আগেই তিতুমীরের সহকারী গোলাম মাসুম তাঁর দলবল নিয়ে কালেক্টরের সৈন্যবাহিনীর ওপর আক্রমণ করেন। তিতুমীরের অনুসারীদের প্রবল আক্রমণে ইংরেজবাহিনী পরাজিত হয় এবং কালেক্টর প্রাণ নিয়ে পলায়ন করেন।

ইংরেজ গভর্নর জেনারেল লর্ড বেন্টিংক বিচলিত হয়ে পড়লেন। একজন কর্নেলের নেতৃত্বে দুটি কামানসহ একশ গোরা সৈন্য, তিনশত দেশীয় সিপাহি পাঠানো হয়। সাথে মেজর স্কটের অধীনে দেশীয় পদাতিক বাহিনীর ১১টি রেজিমেন্ট, কয়েকটি কামান সহকারে গোলন্দাজ বাহিনীর সেনাদল এবং দেহরক্ষী বাহিনীর সৈনিক। ১৮৩১ সালের ১৭ নভেম্বর তারা বারাসাতের ভারপ্রাপ্ত জয়েন্ট ম্যাজিস্ট্রেট আলেকজান্ডারের সাথে মিলিত হন। ১৮৩১ সালের ১৯ নভেম্বর মেজর স্কট ও আলেকজান্ডারের সম্মিলিত বাহিনী তিতুমীরের বাঁশের কেল্লায় হামলা করে। 

শুরু হলো অসম যুদ্ধ। তিতুমীর তবু ভয় পাবার মানুষ নন। জীবনের চেয়ে শহীদি মর্যাদাকে বেশি গুরুত্ব দিলেন। বীরত্বের সাথে মোকাবেলা করলেন। কামানের গোলার আঘাতে বাঁশের কেল্লা চুরমার হয়ে যায়। পঞ্চাশজন অনুসারীসহ তিতুমীর যুদ্ধক্ষেত্রে শহীদ হন। প্রায় ২৫০ জন মুজাহিদ ইংরেজ বাহিনীর হাতে বন্দি হন। ব্রিটিশ বাহিনী সবকিছু লুটপাট করে নেয়। কলকাতায় বিচারিক প্রহসনের মাধ্যমে সেনাপতি গোলাম মাসুমকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। কারাদণ্ড দেয়া হয় অসংখ্য মুজাহিদকে।

তিতুমীর শহীদ হয়েছেন। শহীদ হয়েছেন অসংখ্য মুজাহিদ। ধ্বংস হয়েছে বাঁশের কেল্লা। কিন্তু জাগ্রত হয়েছে স্বাধীনতার চেতনা। সহীহ শুদ্ধ পথের দিশা পেয়েছেন বিভ্রান্ত মুসলিম সমাজ। সত্যিকার অর্থে তিতুরা কখনো মরে না। কবি ফররুখ আহমদ যথার্থই বলেছেন ‘জীবনের চেয়ে দৃপ্ত মৃত্যু তখনি জানি, শহীদি রক্তে হেসে ওঠে যবে জিন্দেগানী’।

আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ