তিন বন্ধু  -রুমান হাফিজ

তিন বন্ধু -রুমান হাফিজ

তোমাদের গল্প জানুয়ারি ২০১৬

রিমন, রহিম ও অনিক ওরা তিন বন্ধু। একই পাড়ায় বসবাস। তাদের তিন বন্ধুকে দেখে মনে হয় যেনো সহোদর তিন ভাই। বয়সের দিক থেকে কিছুটা তারতম্য হলেও পড়ালেখা একই ক্লাসে। প্রতিদিনের মতো আজো তিন বন্ধু বসে গল্প করছিলো, হঠাৎ রহিম বলে উঠলো চলো আমরা তিন বন্ধু মিলে কিছু একটা করি। অনিক বলল কি করতে পারি? উত্তরে রহিম বলল, হ্যাঁ আমরা নিশ্চয়ই ভালো কিছু করতে পারি। এ কথা শুনে রিমন বলল, আমরা ভালো কিছু করতে পারি তবে তার আগে আমাদের নিজেদেরকে ভালো হতে হবে। রহিম প্রশ্ন করলো আমাদের কিভাবে ভালো হতে হবে? উত্তরে রিমন বলল, দেখ বন্ধু আল্লাহ আমাদের এই দুনিয়াতে প্রেরণ করেছেন একটি উদ্দেশ্য নিয়ে। আর তা হলো নিয়মিত তার ইবাদত করা। সর্বদা ইসলামের ওপর অটল অবিচল থাকা এবং শরয়ী বিধিবিধানসমূহ সঠিকভাবে মেনে চলা। কিন্তু সত্যিই কি আমরা তা করছি? এই দুনিয়ার মোহে পড়ে আমরা নিজেদের ধবংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছি এবং চিরস্থায়ী সুখ ও শান্তির জায়গা জান্নাত থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। নিজে যদি ভালো না হই তাহলে যতই ভালো কাজ করি না কেনো তা কখনো আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। রিমনের এ কথাগুলো শুনে রহিম ও অনিক অনেকক্ষণ চুপ হয়ে রইলো। তারা তাদের ভুল বুঝতে পেরে বলল, হ্যাঁ বন্ধু আমরা ভুল করেছি। এখন থেকে তুমি আমাদের এগুলো শিক্ষা দেবে। রিমনের পিতা একজন ইসলামী শিক্ষিত লোক। তিনি সরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘদিন ধরে চাকরি করছেন। এ জন্য রিমন ছোটবেলা থেকেই নিয়মিত নামাজ পড়ে এবং অন্যান্য ইবাদতগুলোও পালন করে।
এখন থেকে তিন বন্ধু একসাথে স্কুলে টিফিনের সময় জোহরের নামাজ পড়ে, বিকেলবেলা আসরের নামাজ পড়ে খেলার মাঠে যায় এবং সন্ধেবেলা আজানের সাথে সাথে খেলা বন্ধ করে মসজিদে আসে। এভাবে তারা প্রতিদিন স্কুলে যায়, নামাজ পড়ে এবং খেলাধুলা করে। রহিম ও অনিকের এসব পরিবর্তন দেখে তাদের পরিবারের সবাই খুশি হয়। এদিকে তাদের সাথে আরো কয়েকজন বন্ধু যুক্ত হয়।
একদা রিমনের পিতা অসুস্থ হলে রহিম ও অনিক তাকে ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়া এবং বিভিন্নভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করে। যা রিমন কখনো ভুলতে পারবে না। রিমনের পিতা সরকারি চাকরি করার সুবাদে বিভিন্ন জায়গায় তাদের বসবাস করতে হয়েছে। কোথাও বেশি দিন থাকা হয়নি। ভাগ্যক্রমে এই এলাকায় তারা চার থেকে পাঁচ বছর ধরে আছে। অনেকটা নিজের এলাকার মতো মনে হচ্ছে তাদের। এমনি এক সময় খবর আসে পিতার বদলি হয়ে যাওয়ার কথা। রিমন তার বন্ধুদেরকে পিতার বদলি হওয়াতে তাদের চলে যাওয়ার কথা জানায়। তখন বন্ধুরা খুবই কষ্ট পায়। তাদের মনের ভেতর অজানা এক চাপা ব্যথা অনুভূত হতে থাকে। মনে হয় যেনো তাদের একেবারে আপন কেউ চলে যাবে।
আজ রিমনের পরিবার চলে যাবে পিতার বদলি হওয়া নতুন জায়গায়। রিমনের মন চাইছে না এই এলাকা ছেড়ে চলে যেতে। বারবার মনে পড়ে তার বন্ধুদের কথা, কিভাবে তাদের ছেড়ে থাকবে। নিঃশব্দে কেঁধে উঠে সে। পাড়ার সবাই এসেছে তাদের বিদায় জানাতে। সবাই হাসিমাখা মুখে বিদায় জানালেও হাসি নেই তার বন্ধুদের মুখে। দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে বিদায় জানায় বন্ধুরা। চলে যাচ্ছে রিমন তাদের ছেড়ে। দূরে বহু দূরে...।
                        
আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ