তুষার ইমরান উপেক্ষিত রান মেশিন ।  আবু আবদুল্লাহ

তুষার ইমরান উপেক্ষিত রান মেশিন । আবু আবদুল্লাহ

প্রচ্ছদ রচনা জানুয়ারি ২০১৯

গত কয়েক মৌসুম ধরেই ঘরোয়া প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট মানেই তুষার ইমরানের রান উৎসব। প্রতিটি আসরেই তিনি রানের পর রান করে যাচ্ছেন।

[caption id="attachment_12510" align="aligncenter" width="300"]তুষার ইমরান তুষার ইমরান[/caption] কোন খেলোয়াড়ের জন্য জাতীয় দলের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সুযোগ পাওয়া কিংবা খেলার যোগ্যতা প্রমাণ করার মানদণ্ড কী? এই প্রশ্ন করলে সবাই একবাক্যে যে উত্তরটি দেবে সেটি হলো- ঘরোয়া আসরগুলোতে ভালো খেলা। এটিই বিশ্বব্যাপী দেশের হয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রতিনিধিত্ব করার প্রধান উপায় বা যোগ্যতা হিসেবে বিবেচিত। শৃঙ্খলা, ফিটনেসসহ আরো কিছু বিষয় জড়িত বিষয়টির সাথে; কিন্তু সবার আগে ওই পারফরম্যান্স। সেটি দিয়েই নিজেকে আগে জাতীয় দলের যোগ্য হিসেবে প্রমাণ করতে হয়। তবে বাংলাদেশের ক্রিকেটে গত কয়েক বছর ধরেই একজন খেলোয়াড়ের বিষয়ে এই যুক্তি সম্পূর্ণ উপেক্ষিত থাকছে। তিনি তুষার ইমরান। ঘরোয়া ক্রিকেটে প্রতিটি মৌসুমে রানের পর রান করে যাচ্ছেন তুষার; কিন্তু জাতীয় দলের নির্বাচকরা কিংবা ক্রিকেট বোর্ড ফিরেও তাকাচ্ছে না তুষারের দিকে। বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে গত কয়েক মৌসুম ধরেই সেরা পারফরমার তুষার। পারফরম্যান্সের দিক থেকে তাকে অপ্রতিদ্বন্দ্বীই বলা যায়। ২০১৮-১৯ মৌসুমের বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগ (বিসিএল) শুরুর আগ পর্যন্ত প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে (ঘরোয়া ৪ দিনের ম্যাচ) তার রান সংখ্যা ১১ হাজার ১৩০। বলা বাহুল্য বাংলাদেশের আর কোন ক্রিকেটারই এখন পর্যন্ত ঘরোয়া ক্রিকেটে ১০ হাজার রানের মাইলফলকে পৌঁছতে পারেননি। তুষার সেখানে ছাড়িয়ে গেছেন ১১ হাজার রান। ১৬৫ ম্যাচে তার গড় ৪৩। সেঞ্চুরি সংখ্যা ৩১টি, যার মধ্যে ৩টি ডাবল সেঞ্চুরি। আর হাফ সেঞ্চুরি ৫৭টি। তুষার ইমরানগত কয়েক মৌসুম ধরেই ঘরোয়া প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট মানেই তুষার ইমরানের রান উৎসব। প্রতিটি আসরেই তিনি রানের পর রান করে যাচ্ছেন। ধীরে ধীরে রেকর্ড বইয়ের পাতায় তিনি নিজেকে নিয়ে গেছেন অপ্রতিদ্বন্দ্বীর কাতারে। এক মৌসুমে রেকর্ড পাঁচটি সেঞ্চুরিও করেছেন। ২০১৭ সালের বিসিএলের ছয় ম্যাচে ৯১.৩৭ গড়ে ৭৩১ রান করেন তুষার। ওই আসরে দু’টি করে সেঞ্চুরি ও হাফ সেঞ্চুরি করেছিলেন তিনি, ছিলো ডাবল সেঞ্চুরিও। ২০১৮ সালের জাতীয় লিগেও তিনি ছিলেন দ্বিতীয় সেরা রান সংগ্রাহক। ৫ ম্যাচে ৩ সেঞ্চুরি, ১ হাফ সেঞ্চুরিতে করেছেন ৫১৮ রান (গড় ৫৭.৫৫)। কিন্তু কোনো কিছুই নির্বাচকদের মন গলাতে পারেনি। কোন এক অজানা কারণে তারা বারবার উপেক্ষা করে যাচ্ছেন ঘরোয়া ক্রিকেটের এই রান মেশিনকে। সর্বশেষ গত বছরের মাঝামাঝিতে বাংলাদেশ ‘এ’ দলে সুযোগ পেয়েছিলেন তুষার; কিন্তু সেখানেও একটির বেশি ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি তিনি। এটা ঠিক যে, অনেক আশা নিয়ে তুষার ইমরানকে জাতীয় দলে ডাকা হয়েছিলো; কিন্তু তিনি সেই আস্থার প্রতিদান দিতে পারেননি। সেটি অবশ্য দেড় যুগ আগের কথা। বাংলাদেশ যে বছর টেস্ট স্ট্যাটাস পায় (২০০১) সে বছরই ঘরোয়া ক্রিকেটে খুলনার হয়ে ১০৬ বলে ১৩১ রানের একটি ইনিংস খেলে আলোচনায় আসেন তুষার। এরপর ভারতে একটি আনঅফিশিয়াল সফরে করেন ডাবল সেঞ্চুরি। পারফরম্যান্স আর প্রতিভার বিচারেই ২০০১ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে ম্যাচ দিয়ে জাতীয় দলে অভিষেক তার। পরের বছর শ্রীলঙ্কা সফরে কলম্বোয় মাঠে নামেন সাদা পোশাকের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে। এরপর পরবর্তী ৫ বছরে জাতীয় দলের হয়ে ৫টি টেস্ট ও ৪১টি ওয়ানডে খেলেছেন তুষার। পারফরম্যান্স অবশ্য উজ্জ্বল ছিলো না, যে কারণে বাদও পড়েছেন দল থেকে। জাতীয় দলে অভিষেকের সময় তুষারের বয়স ছিলো ১৮ বছর। টেস্ট খেলতে নেমেছেন ১৯ বছর বয়সে। তুষার ইমরানঅনেকে বলেন, অপরিণত এক তরুণ ক্রিকেটারকে টেস্ট ক্রিকেটের কঠিন ফরম্যাটে নামিয়ে দেয়ার দায়ও আছে ক্রিকেট কর্তাদেরও আছে। তুষার ইমরান নিজেও মনে করেন তার অভিষেকটা একটু আগে হয়েছে, আরো অন্তত ৫-৬ বছর পর অভিষেক হলে আরো ভালোভাবে মানিয়ে নিতে পারতেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সাথে। কম বয়সের সেই তুষার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের বন্ধুর পথে হাঁটতে পারেননি সেটা ঠিক; কিন্তু যখন দিনের পর দিন পরিশ্রম করে ধীরে ধীরে নিজেকে পরিণত করে তুলেছেন। ত্রিশোর্ধ্ব বয়সের একজন ব্যাটসম্যান ঘরোয়া ক্রিকেটে রানের পর রান করে যাচ্ছেন- তখন তাকে সুযোগ না দেয়ার যুক্তি কী? তুষার ইমরানকে জাতীয় দলে না ডাকার পেছনে ক্রিকেট কর্মকর্তারা প্রায়ই একটি যুক্তি সরাসরি বা আকার-ইঙ্গিতে বোঝাতে চেষ্টা করেন যে, বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের মান আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের তুলনায় অনেক পিছিয়ে। তাই এখানে ভালো করলেই তাকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের যোগ্য ভাবা যাবে না। কথাটি অবশ্য ঠিক; কিন্তু অন্য সব ক্রিকেটারদের জাতীয় দলে ডাকা হয় তো এই ঘরোয়া ক্রিকেটের পারফরম্যান্স বিবেচনা করেই, তাহলে তুষারের বেলায় কেন সেটা হবে না? আর ঘরোয়া ক্রিকেট যেহেতু জাতীয় দলে যাওয়ার পথ তাহলে সেটি নিম্নমানের থাকার দায়ও তো দেশের ক্রিকেট কর্তৃপক্ষেরই। এসব জিজ্ঞাসার উত্তর পাওয়ার উপায় নেই। তাই তুষার ইমরান হয়তো উপেক্ষিতই থেকে যাবেন এদেশের ক্রিকেটে। তুষার ইমরানতবে এত উপেক্ষাতেও দমবার পাত্র নন ১৯৮৩ সালে যশোরে জন্ম নেয়া এই ব্যাটসম্যান। অদম্য মানসিকতা আর কঠোর পরিশ্রমের সাথে খেলে যাচ্ছেন প্রতিটি ম্যাচ। বয়স ৩৫ পূর্ণ হয়েছে গত ডিসেম্বরে। সমবয়সীরা যখন আরো আগেই ক্রিকেটকে বিদায় বলেছেন, তখন তুষার ইমরান আবারো লাল-সবুজের জার্সি গায়ে তোলার আশাতেই খেলে যাচ্ছেন একের পর এক মৌসুম। হয়তো আরো কয়েক মৌসুম খেলে যাবেন সেই দিনটির আশায়- যদি আবার সুযোগ আসে জাতীয় দলের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খেলার। আর সেই স্বপ্ন ধরা না দিলে একবুক অতৃপ্তি আর অভিমান নিয়েই তুলে রাখতে হবে প্রিয় ব্যাট-প্যাড। 
আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ