তেলাপতি

তেলাপতি

গল্প মার্চ ২০১৫

শামীম খান যুবরাজ #

তোমাদের বয়সী একটা দুষ্টু ও মিষ্টি ছেলে আছে। নাম তার শায়ান। সারাদিন দুষ্টুমি ছাড়া কোন অবসর নেই তার। যখন ঘরজুড়ে কোনো হইচই শোনা যাবে না; বুঝতে হবে শায়ান ঘুমিয়েছে। শুধু এই সময়টুকুতে সবাই একটু অবকাশ পায়। কারণ সারাক্ষণ তাকে চোখে চোখে রাখতে হয়। বড়দের সাথে এটা ওটা নিয়ে হাতাহাতি করা তার প্রতিদিনের অভ্যাস। উঁচুতে লুকিয়ে রাখা জিনিসও তার কাছে নিরাপদ নয়। চেয়ারের ওপর দাঁড়িয়ে অথবা তার ওপর পিঁড়ি বা মোড়া দিয়ে ঠিকই উঠে যাবে তির তির করে। পেড়ে আনবে। আবার কখনও কখনও হাত ফসকে পড়ে ভেঙে যায় কত কিছু। তখন মায়ের শক্ত বকুনি খেতে হয় তাকে। বকুনি খেয়েও কিন্তু মন খারাপ করে না সে। সোজা গিয়ে দাদার দরবারে নালিশ ঠুকবে ‘আম্মু আমাকে বকেছে, তুমিও আচ্ছা করে আম্মুকে বকে দিও কিন্তু।’ দাদার কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি পেয়ে আবার লেগে যায় দুষ্টুমিতে। আগেই বলেছি ভারি দুষ্ট আর মিষ্টি ছেলে শায়ান। তোমরা হয়তো ভাবছো দুষ্টু ছেলেরা আবার মিষ্টি হয় কেমন করে? বাহ রে! এ বয়সে দুষ্টুমি না করলে কেউ বুঝি ছোটদের আদর করে! এটা তার দাদার কথা। দাদার সাথে খুব ভাব তার। দাদার সাথে ঘুরতে যায় এখানে সেখানে। দাদা তাকে নিয়ে যান নদীর কাছে। ছলাৎ ছলাৎ ছন্দে নদীর বয়ে চলা দেখে শায়ান। মাঝিদের নাও, নাও থেকে জাল ফেলে মাছ ধরা দেখতে খুব ভালো লাগে তার। সে সময় নানান প্রশ্নবাণে বিদ্ধ করে দাদাকে। দাদা বিরক্ত না হয়ে অবলীলায় সব প্রশ্নের উত্তর দিয়ে যান তাঁর প্রিয় নাতিকে। নদী দেখা শেষ হলে ক্ষেতের আল ধরে বাড়ি ফেরার পথে প্রজাপতির রঙিন ডানার কারুকাজ, ঘাসফড়িংয়ের দীর্ঘ লাফ আর হেলিকপ্টারের মতো উড়ে বেড়ানো ফড়িংদের দেখে খুশিতে নেচে ওঠে সে। বাথানের গরুগুলো যখন মাথা নুয়ে আনমনে ঘাস খেতে থাকে তখন তাদের পিঠে বসা ফিঙেরা মেতে ওঠে পোকা আর পতঙ্গ শিকারে। সবুজ মাঠের অদূরে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকে পাহাড়গুলো। পাহাড়ের ওপর সাদা সাদা মেঘের সারি। স্তরে স্তরে কে সাজিয়ে রেখেছেন এসব? এমন সুন্দর প্রকৃতিইবা কার সৃষ্টি? কঠিন সব প্রশ্ন উঁকি দেয় শায়ানের ছোট্ট কোমল মনে। অবশেষে দাদার কাছ থেকে সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহ তায়ালার অস্তিত্বের কথা শুনে তৃপ্ত হয় তার মন। সুন্দর আর শান্ত প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যায় সে। উড়ে বেড়ায় পাখিদের সাথে, গেয়ে ওঠে পাখিদের সুরে, নেচে ওঠে কাঠবিড়ালির সাথে, এ ডাল থেকে ও ডালে ছুটে বেড়ায় সে। দুরন্ত ছুটোছুটির অবসান ঘটে মায়ের ডাকে। শায়ান ওঠো, আজকে তোমার আব্বু আসবে। তাড়াতাড়ি উঠে দাঁত ব্রাশ করে লক্ষ্মী ছেলের মতো নাস্তার টেবিলে হাজির হয় সে। আব্বুর আগমন তার কাছে মহা আনন্দের। আব্বু এলে দুষ্টুমির মাত্রা বহুগুণে বেড়ে যা তার। তখন যা ইচ্ছা করা যায় কেউ বকা দেয় না। আব্বু তো বকা কি জিনিস জানেনই না। সারাদিন তাকে নিয়ে খেলা করেন। দুষ্টুমি করেন। আর খেলনাগুলো ভাগাভাগি করে খেলায় মেতে ওঠে দু’জনে। শায়ানের আবদারে কখনো কখনো ঘোড়া হয়ে যান তিনি। আর একমাত্র ছেলেকে পিঠে নিয়ে টগবগিয়ে ছুটে যান ঘরের মেঝেতে। ঘর ছেড়ে যখন ঘুরতে বের হন গাঁয়ের মেঠোপথ ধরে, তখন শায়ান থাকে বাবার কাঁধে। সেখানে বসেই মুখে খই ফোটে তার। বাবা এটা গো শালিক আর ওটা কি জানো? বাবা জেনেও প্রশ্ন করেন, কী?. ওমা তা-ও জানো না এটা হলো কাঠশালিক ওটা বুলবুলি। দাদার কাছ থেকে শেখা জিনিসগুলো বাবাকে শেখাতে পেরে গর্ব বোধ করে শায়ান। একসময় বাবার ছুটির দিন ফুরিয়ে যায়। মুখ গোমড়া করে বাবার চলে যাওয়া দেখে সে। তখন কেউ শত চেষ্টা করেও হাসাতে পারে না তাকে। দাদা ও বাবা শুধু নয়, একদিন সকলের প্রিয়পাত্র হয়ে ওঠে সে। তার বুদ্ধিমত্তায় সবাই মুগ্ধ। একদিনের ঘটনা। ফুফুর সাথে অটোরিকশায় করে ব্যাংক থেকে ফিরছে সে। ফুফুর টাকার ব্যাগটা ভুলে অটোরিকশায় ছেড়ে এলে শায়ান চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করে। আর আঙুল দিয়ে ইশারায় দেখিয়ে দেয় টাকাভর্তি ব্যাগ। ছোট্ট শায়ানের জন্য বড় ধরনের লোকসান থেকে বেঁেচ গেলো সবাই। ও হ্যাঁ, গল্পে শিরোনাম নিয়ে তো কথাই হয়নি। মজার ঘটনাটি ঘটেছে ঈদের ক’দিন পরই। সেবার দাদা খুব রেখে ছিলেন শায়ানের আব্বু ও চাচ্চুদের ওপর। পারিবারিক বৈঠকে সেদিন সবার যখন বিমর্ষ মুখ। থমথমে নীরব যখন পুরো ঘর, তখনই শায়ানের চিৎকার ‘আব্বু, তেলাপতি তেলাপতি’। শায়ানের চেঁচামিচিতে নীরবতা ভেঙে সবার দৃষ্টি পড়ে উড়ন্ত  তেলাপোকার দিকে। আর তেলাপোকাকে তেলাপতি বলায় সবার মুখে হাসির ঝড় ওঠে। তার এই তেলাপোকা আর প্রজাপতির মিশ্রণ সবাইকে আনন্দ দেয়। উড়ন্ত তেলাপোকাকে সে আজ অবধি তেলাপতিই বলে। শায়ানের দুষ্টুমি আর পাকা পাকা কথায় সবাই মুগ্ধ এখন। শায়ানকে সবাই ভালোবাসে। ভালোবাসে। তার দুষ্টুমিকেও।

আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ