দক্ষ প্রাণী বিভার

দক্ষ প্রাণী বিভার

চিত্র-বিচিত্র হাফিজ রহমান জুন ২০২৩

বিভার নিশাচর প্রাণী। বিভার একটি আকর্ষণীয় প্রাণী। এরা ড্যাম, খাল, ছোটো ঘর নির্মাণের জন্য বিখ্যাত। বিভার ড্যাম নির্মাণ করে পানি ধরে রাখে, যাতে শত্রু আক্রমণ করতে না পারে এবং বাসস্থান তৈরির উপাদান ভাসিয়ে আনার জন্য খাল খনন করে। বর্তমানে বিভারের দু’টি প্রজাতি জীবিত রয়েছে। একটি উত্তর আমেরিকায় এবং অপরটি ইউরোপ ও এশিয়ায় পাওয়া যায়।

বিভার দেখতে অনেকটা ইঁদুরের মতো। বিভারের পেছনের পা দুটো হাঁসের পায়ের মতো। এদের বৈঠার মতো চ্যাপ্টা লেজ রয়েছে। লেজ আঁশযুক্ত। পুরো জীবনকাল ধরেই এদের দেহের বৃদ্ধি ঘটে।

বিভার ২৫ কেজি পর্যন্ত হয়। স্ত্রী বিভার আকারে পুরুষের চেয়ে সামান্য বড়ো হয় যা স্তন্যপায়ী প্রাণীদের ক্ষেত্রে খুব কমই দেখা যায়।

স্থলে এদের চলাফেরা খুবই ধীর গতির। কিন্তু পানিতে এরা দক্ষ সাঁতারু। এরা পানি ছাড়া বাঁচতে পারে না। পানিতে ডুব দিয়ে ১৫ মিনিট পর্যন্ত থাকতে পারে।

ভয় পেলে অথবা বিপদ টের পেলে বিভার পানিতে ডুব দেয় এবং লেজ দিয়ে পানিতে জোরে আঘাত করতে থাকে। এ আঘাতের শব্দ অনেক দূর থেকে শোনা যায়। ফলে অন্য বিভাররা বিপদসঙ্কেত পেয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে পারে।

এরা গ্রীষ্মে অক্লান্ত পরিশ্রম করে। বিভার সন্ধ্যা থেকে ভোর পর্যন্ত সারা রাত কাজ করে। দিনের বেলা বিশ্রাম নেয়। এরা এদের শক্তিশালী দাঁত ব্যবহার করে গাছ কাটে। একটি বিভার আধা ঘণ্টায় একটি পাতলা গাছ কেটে ফেলতে পারে। একটি বড়ো আকারের গাছ এরা এক রাতের মধ্যেই কেটে ফেলে। এই গাছ দিয়ে বসবাসের জন্য ঘর তৈরি করে। ঘর তৈরির ক্ষেত্রে এদেরকে দক্ষ নির্মাতা বলা যায়।

জলাভূমি সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে বিভার। ইঁদুরের মতো ধারালো দাঁত দিয়ে বিভার প্রবহমান জলধারায় বাঁধ দিয়ে আলাদা জলাশয় তৈরি করে সেখানে নিজেদের বসবাসের জায়গা করে নেয়। এতে সেখানে জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ কার্বন ও খাদ্য তৈরির বিপুল আধার তৈরি হয়।

জলাভূমির পানি ধরে রেখে কার্বন ও খাদ্যের উৎস হিসেবে কাজ করে, যা পৃথিবীর অন্য যেকোনো বাস্তুতন্ত্রের চেয়ে মানুষের জন্য সবচেয়ে বেশি অবদান রাখছে।

খারাপ আবহাওয়া এবং শত্রুদের থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এরা ড্যাম তৈরি করে। এটি এদের জন্য নির্ভরযোগ্য আশ্রয়স্থল। ধারালো দাঁত দিয়ে বড়ো বড়ো গাছ কেটে সেগুলোর ডালপালা দিয়ে নিজেদের জন্য বাঁধ তৈরি করে। এতে শত্রুরা সহজে তাদের নাগাল পায় না।

বিভার প্রকৃতির জন্য এত উপকারী হওয়া সত্ত্বেও এদের শিকার করা হয়। এর কারণ টানা ৮০ বছর ধরে ভ্যানিলা সৌন্দর্যবর্ধক পণ্য ও হুইস্কি তৈরিতে ব্যাপকভাবে বিভারের কস্তুরী ব্যবহৃত হয়েছে।

মূলত লোম ও ঘ্রাণগ্রন্থি সংগ্রহের জন্য এদেরকে শিকার করা হয়। ১৯৭৬ সালে মন্ট্রিলে অনুষ্ঠিত গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকে বিভারকে মাসকট হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছিল।

আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ