দীর্ঘশ্বাস

দীর্ঘশ্বাস

তোমাদের গল্প ডিসেম্বর ২০১৪

সাদিয়াতুত তাসনিম #

golpoহাইওয়ে সড়ক ও নদীর মধ্যবর্তী পাকা রাস্তার ওপর দাঁড়িয়ে আছে জামিলা বেগম। কোলে দুই বছরের ছেলে রাকিব পাশের বুড়িগঙ্গা নদীটি নর্দমা আর কলকারখানার ময়লার দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। আর তার কিছু দূরে প্লাস্টিকের ব্যাগ আর ময়লা কাপড় ধুচ্ছে কয়েকজন মহিলা। তারা সবাই জামিলার মত অসহায়। দু’বছর আগেও কত স্বপ্ন ছিল এদের চোখে। কিন্তু কে জানতো এই স্বপ্নই কাল হয়ে দাঁড়াবে তাদের? বছর তিনেক আগের কথা। পদ্মার ওপারে মাহমুদপুর। সেখানে জামিলা ও আরিফ বেঁধেছিল শান্তির নীড়। ছোট্ট সংসার তাদের। বাড়ির পাশে একটি মুদি দোকান ছিল শরীফের। তা থেকে যা আয় হতো তা দিয়ে ভালই চলছিল তাদের। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস। তাদের সেই ভালো থাকা সহ্য হলো না পদ্মার। দানবরূপী পদ্মা একদিন হানা দিল তাদের সংসারে। শুধু তাদের নয়, আরো অনেকের। আর যায় কোথায় পদ্মা বলে কথা, তাদের থেকে সব কিছু ছিনিয়ে নিয়েছে পদ্মা। তাদের সবকিছু এক মুহূর্তে পদ্মা তার পেটে পুরে নিয়েছে। দানবরূপী পদ্মা কারো আকুতি শোনেনি। তারপর জামিলা ও তার স্বামী সচ্ছল জীবনের আশায় পদ্মার গহবর থেকে বাঁচার জন্য রাজধানীতে পাড়ি জমান। অসংখ্য মানুষ নিয়ে গড়ে উঠেছিল মাহমুদপুর। সেখান থেকে রাজধানীতে পদ্মায় বিলীন হওয়া যে লোকদের ¯্রােত আসে তার সাথে মিলে যায় জামিলা ও আরিফ। রাজধানীতে এসে আরিফ এক পোশাক কারখানায় কাজ করত। তারপর সেখানে এক বাসা ভাড়া করে থাকতো তারা। তাদের কোল আলো করে এলো ফুটফুটে পুত্রসন্তান রাকিব। আরিফ নিজে লেখাপড়া না করলেও রাকিবকে নিয়ে ছিল তার আকাশছোঁয়া স্বপ্ন। জামিলাও স্বপ্ন দেখতো তার ছেলেকে নিয়ে। কিন্তু সেই স্বপ্ন আর পূরণ হবে কিনা কে জানে? সেদিন ছিল বুধবার। সকালে ঘুম থেকে উঠে প্রতিদিনের মতো রাকিবকে বুকে জড়িয়ে আদর করে আরিফ কারখানায় গিয়েছিল। দুপুর ১২টার দিকে শোনা গেল এক গগনবিদারী চিৎকার। একটি পোশাক কারখানা নাকি ধসে পড়ছে। জামিলার বুকের ভেতর হু হু করে উঠল। প্রিয়জনের কিছু হলে বোধ হয় এমনটি হয়। রাকিবকে নিয়ে ছুটে গেল সে আরিফের কারখানায়। গিয়ে দেখল সবই বিধ্বস্ত। রাকিব তো বাবা বাবা বলে পাগলপ্রায়। কী সান্ত্বনা দেবে জামিলা ছেলেকে? অবশেষে আরিফের লাশ পাওয়ার আশায় প্রহর গুনতে থাকে। কিন্তু না ... ভাগ্যের নিষ্ঠুর করাঘাত। আরিফের লাশটিও পাওয়া গেল না। প্রশাসন থেকে কোন সহযোগিতা পায়নি সে। দরিদ্রতা কি তার অপরাধ? নগরীর বিলাসবহুল হোটেলের পাশাপাশি গড়ে উঠেছে বসতির সারি। জামিলা ছেলেকে নিয়ে এই বস্তিতে থাকে। জীবিকা নির্বাহের জন্য বেছে নেয় বাসা বাড়িতে বুয়ার কাজ। তার স্বপ্ন কি পূরণ হবে? কোন বিত্তবান কি এগিয়ে আসবে তার স্বপ্ন পূরণের জন্য? লম্বা একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে এসব কথা ভাবেন আর বস্তির পথে পা বাড়ান জামিলা। এই দীর্ঘশ্বাস দেখার কি কেউ নেই?

আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ