দুঃসংবাদ

দুঃসংবাদ

গল্প সেপ্টেম্বর ২০১৪

 মোহাম্মদ লিয়াকত আলী

DuSNgbad- বড় আপা খুবই অসুস্থ। হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এখনি দেখতে যাওয়া দরকার, তাড়াতাড়ি রেডি হও। - কিন্তু মাসের শেষ, বাজার খরচই চলছে না। খালি হাতে কি রোগী দেখতে যাওয়া যায়? - যেভাবেই হউক, ম্যানেজ কর, দরকার হলে দু-চার দিন নুন-ভাত খেয়ে থাকব। - আমরা না হয় নুন-ভাত পানি খেয়ে থাকব। ছেলেমেয়েদের কী খাওয়াবে? - ছেলেমেয়েদেরও ক্ষুধা হজম করার ট্রেনিং দরকার। ভবিষ্যতে আরো কত দুর্দিন দেখতে হবে কে না জানে? - সে না হয় সময়মতো দেয়া যাবে। কত রকম প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালু হয়েছে? এখন বসে বসে সে হিসাব করার সময় নেই। সারা বছর আপার খোঁজ নিতে পারিনি। এত বড় অসুখের খবর শুনেও বসে থাকা যায়? - ঠিক আছে, তুমি রেডি হও। আমি দেখি, কিছু ধার-কর্জ পাই কি না। আত্মীয় ও বন্ধুদের কাছ থেকে নিরাশ হয়ে ফিরে শফিক? দুর্দিনেই বন্ধুত্বের পরিচয়। কথাটি সত্য প্রমাণিত হয়। স্ত্রী আশা কখনো নিরাশ হয় না। তার খেয়াল হলো মেয়েটা বছর ধরে টাকা জমাচ্ছে একটি মোবাইল কেনার জন্য। সহপাঠী সবার মোবাইল আছে শুধু তার নেই। আদরের মেয়েকে বলতে বুক ফেটে যাচ্ছিল তবু বলতে হলো। - টাকাগুলো দে? তোর খালাকে দেখতে যাবো। তোর বাবার হাত খালি। - তাহলে আমার মোবাইলের কী হবে? - মোবাইল না থাকলে কেউ মরে যাবে না। পরে দেখা যাবে। তিলে তিলে টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে জমানো টাকা কয়টা হাতে নিয়ে মায়ের সামনে এসে দাঁড়ায় মেয়েটা। একদা একটি কাক একটি ছেলের হাত থেকে এক টুকরা গোশত ছোঁ মেরে নিয়ে যায়। ইশপের গল্পটি মনে পড়ে মায়ের। সেও এখন এক ক্ষুধার্ত কাক। ক্ষুধা যাদের নিত্যসাথী তারা খুবই সতর্ক। কোনো সুচতুর শিয়াল মিষ্টি কথায় ভুলিয়ে মুখের গ্রাস কেড়ে নেবে এমন আশঙ্কা নেই। নির্দয় পাষাণীর মতো মেয়েটির হাত থেকে টাকা কয়টা ছোঁ মেরে নেয় হতভাগিনী মা। সুন্দর একটি স্বপ্ন ভেঙে চৌচির হয় মেয়েটার। দেড় হাজার টাকা হাতে নিয়ে বাবা ছুটে বাজারে। রোগী সেবার চেয়ে মহৎ কোনো কাজ নেই। এটাই একমাত্র সান্ত¦না। আপেল, কমলা, আঙুর এখন বারো মাসই পাওয়া যায়। তবে সিজন ছাড়া দাম বেশি। কিন্তু অসুখ কখনো সিজন মেনে আসে না। শুধু ফল খেলে কারো পেট ভরবে না। হরলিকস, রুটি বিস্কুট, দুধও নিতে হলো সাথে। এতেই হাজার টাকা শেষ। সিএনজিতে চড়লেই একশ টাকা। যাতায়াতের জন্য বাকি টাকা পকেটে থাকা দরকার। - কী, তোমার হলো? সিএনজি ডাকবো? - ডাক, আমি রেডি। হঠাৎ ছুটে আসে মেয়েটা। হাতে মোবাইল। সাথে বান্ধবী মিলা। - মা খালুর সাথে কথা বল। হাসপাতাল থেকে ফোন করেছে। মোবাইল কানে ধরে হাউ মাউ করে কাঁদতে থাকে আশা। - আপারে আমারে মাফ কর। খবর পাইয়াও শেষ দেখাটা করতে পারলাম না। এমনই পোড়া কপাল আমার। শফিক ছোঁ মেরে নিয়ে নেয় মোবাইলটা। কথা বলে কনফার্ম হয় মৃত্যু সংবাদ। - থাক, এখন কান্নাকাটি না করে দোয়া কালাম পড়। রোগী দেখা হলো না। লাশ দেখতে চল। - খাবারগুলো কী করব? - লাশ তো আর ফল খাবে না। আমাদেরই খেতে হবে। নুন-ভাতের আগে না হয় ফলটল খেয়ে নেবে। খবরটা একটু আগে পেলে প্রবলেমটা হতো না। - ঘরে একটা মোবাইল থাকলে ঠিকই পেতে। মেয়ের মোবাইল শুধু মেয়ের কাজে ব্যবহার হতো না। - এক কাজ করি। দেখি খাবারগুলো দোকানে ফেরত দিতে পারি কি না? দোকানদার লোকটা খারাপ না, বুঝিয়ে বললে ফেরত নেবে। - তাই কর। দরকার হলে বিশ পঁচিশ টাকা কেটে রাখুক। টিকিট ক্যান্সেলের মতো। আর খাবার ফেরত দিয়ে একটা মোবাইল সেট নিয়ে এসো। এরকম ঘটনা আরো ঘটবে। - ঠিকই বলেছ। মানুষের অসুখ হবে, হাসপাতালে ভর্তি হবে, মোবাইলে খবর আসবে। তবে অসুখের খবরের চেয়ে মরার খবর লাভজনক। দেখার জন্য কিছু নিতে হয় না।

আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ