দৃষ্টিনন্দন পাখি কেটজাল

দৃষ্টিনন্দন পাখি কেটজাল

চিত্র-বিচিত্র আরিফ হোসাইন সেপ্টেম্বর ২০২৩

এই পৃথিবীতে সুন্দর পাখির সংখ্যা অনেক। যেসব পাখি সবচেয়ে বেশি সৌন্দর্যের অধিকারী, তার মধ্যে কেটজাল অন্যতম। বিচিত্র সব রঙের সমন্বয়ে এর রূপ। কেটজালের গায়ের রঙ ঘন সবুজ, বুকের কাছে রক্তের মতো লাল। রয়েছে বিশাল লম্বা লেজ। এই লম্বা লেজ থেকেই পাখিটির নামকরণ। নাহুয়াটল ভাষায় কেটজাল অর্থ ‘লম্বা চমৎকার লেজের পালক’।

দুই আমেরিকা মহাদেশের মধ্যভাগ অঞ্চলকে বলা হয় মেসোআমেরিকা। এখানেই গুয়াতেমালা, পানামা, কোস্টারিকা, মেক্সিকোর মতো দেশগুলোর গহিন বনের গভীরে কেটজাল পাখিদের বাস। 

গুয়াতেমালায় এটি গুয়াতেমালান কেটজাল নামে পরিচিত। এর বিশেষ সৌন্দর্যের কথা বিবেচনা করেই একে গুয়াতেমালার জাতীয় প্রতীক করা হয়েছে। গুয়াতেমালার মুদ্রার নাম কেটজাল। সমগ্র মেসোআমেরিকায় ৬ জাতের কেটজাল দেখা যায়।

সাধারণত স্ত্রী পাখির তুলনায় পুরুষ পাখির দেহ কিছুটা বেশি রঙিন হয়। একটি পুরুষ কেটজাল পাখির লেজের জোড়া পালকের দৈর্ঘ্য এক মিটার পর্যন্ত হতে পারে। কোনো কোনো জাতের পুরুষ কেটজালের মাথায় উজ্জ্বল সবুজ রঙের ঝুঁটি দেখতে পাওয়া যায়। কেটজালের দেহের দৈর্ঘ্য ৩৮ থেকে ৪০ সেন্টিমিটার। লেজের দৈর্ঘ্য ৬১ সেন্টিমিটার। ওজন ২০০ থেকে ২২৫ গ্রাম হয়। এই পাখির ঠোঁট বেশ শক্তিশালী। এ ঠোঁট দিয়ে এরা মরা গাছ অথবা গাছের গুঁড়িতে গর্ত করতে পারে।

আমেরিকার আদি অধিবাসীরা সৌন্দর্য ও স্বাধীনতাপ্রিয় স্বভাবের জন্য কেটজাল পাখিদের পছন্দ করে। এই পাখিদের তারা স্বাধীনতার প্রতীক হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন। 

কেটজাল পাখি হত্যা করাকে তারা পাপ মনে করতেন। কেটজাল পাখির রঙিন পালক তারা ধর্মীয় অনুষ্ঠানের দিন পরিধান করতেন। তাছাড়া এই পালক তারা বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবেও ব্যবহার করতেন। তবে এর জন্য পাখিটিকে কখনো হত্যা করা হতো না। জীবিত পাখি ধরে লেজের পালক তুলে ছেড়ে দেওয়া হতো। এই পালকগুলোকে সেসময় সোনার চেয়েও দামি মনে করা হতো। 

ঘন বনের ভেতর গাছের ডালে ডালে কেটজাল পাখিদের বিচরণ।

কেটজালদের প্রধান খাদ্য নানারকম গাছের ফল। এছাড়া পোকামাকড়, গিরগিটি, সাপ, ব্যাঙ, এসবও এই পাখিরা খেয়ে থাকে। সকাল ও সন্ধ্যা বেলা কেটজালদের কাজের সময়। সাধারণত নীরবতা প্রিয় হলেও কেটজাল দরকার হলে তীক্ষ্ন শিসের মতো আওয়াজ করতে পারে।

সব পাখিকে পোষা বা বন্দী করে রাখা সম্ভব হলেও কেটজাল ব্যতিক্রম। অপরূপ রূপের অধিকারী এই পাখিদের বন্দী করে রাখা বা পোষ মানানো কোনোটাই সম্ভব না। এদের ফাঁদ পেতে বন্দী করা গেলেও বন্দী অবস্থাকে এরা এক মুহূর্তের জন্যও মেনে নেয় না। বন্দী অবস্থায় খাবার, পানি ত্যাগ করে মারা যায়। আজ পর্যন্ত অনেক চেষ্টা করেও মানুষ কোনো কেটজাল পাখিকে পোষ মানাতে পারেনি।

নির্বিচারে বন ধ্বংসের ফলে কেটজাল পাখিরা আজ বিপন্ন। সুন্দর পালকের লোভে মানুষ এদের হত্যা করে। এতোসব প্রতিকূলতা সামলে বর্তমানে মেসোআমেরিকার দুর্গম এলাকাগুলোতে মাত্র কয়েক হাজার কেটজাল টিকে আছে বলে অনুমান করা হয়।

আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ