দ্বীপ রহস্য-০০১

দ্বীপ রহস্য-০০১

গল্প সেপ্টেম্বর ২০১০

হারুন ইবনে শাহাদাত

এক. ‘ওখানে কী ঘটেছে? ওরা কাঁদছে কেন?’ জিয়াদ ওর বন্ধুদের নিয়ে ঘটনার উৎসের দিকে এগিয়ে যায়। : কান্নাকাটি করছেন কেন? কী হয়েছে? : আমার ছেলেকে সাগর গ্রাস করেছে। : ‘সাগরে ডুবে মরেছে?’ জিয়াদ জানতে চায় না। : তা তো জানি না? সকালে বাড়ি থেকে বের হয়ে আর ফেরেনি। : ‘বাবা, গতকাল থেকে আমার ছেলেটিকেও খোঁজে পাচ্ছি না।’ ভিড় ঠেলে কান্নাজড়িত গলায় আরেকজন বলেন। : ‘মানে কী বলছেন?’ চোখ কপালে তুলে জিজ্ঞেস করে জিয়াদ। : ‘বাবা, প্রায় প্রতিদিনই কারো না কারো সন্তান নিখোঁজ হচ্ছে। সন্ন্যাসী বাবা বলেছেন, সাগর দেবতা ভোগ নিচ্ছে, তোমরা তার দয়ায় এ দ্বীপে বেঁচে আছো, অথচ তাকে ভোগ দেবে না, তা কি হয়?’ এক বৃদ্ধ এগিয়ে এসে বলেন। : ‘দাদু, এর আগে কি কখনো এমন ঘটনা ঘটেছে?’ জিয়াদ বৃদ্ধের কাছে জানতে চায়। : না, আমার বয়স চার কুড়িরও বেশি। আমি আমার জীবনে এমন ঘটনা দেখিনি।

দুই. সব ঘটনা শুনে জিয়াদ পণ করে, এ রহস্যের একটা কিনারা না করে সেন্টমার্টিন ছাড়বে না। প্রায় প্রতিদিন একটি করে শিশু নিখোঁজ হচ্ছে, না এটা কিছুতেই মেনে নেয়া যায় না। দ্বীপের অধিবাসীরা বিষয়টি নিয়ে আতঙ্কিত। প্রশাসনও বসে নেই। কিন্তু সমস্যার সমাধান হচ্ছে না, বরং বেড়েই চলছে। শুধু শিশুরাই নয়, কিশোররাও নিখোঁজ হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে বেড়াতে আসা পর্যটকদের সন্তানরাও বাদ পড়ছে না। অবশ্য এখন পর্যন্ত বিদেশী পর্যটকদের কোন সন্তান নিখোঁজ হয়নি। বিষয়টি জিয়াদকে নতুন ভাবনায় ফেলে। সে এ রহস্যের জট খুলতে তার অভিযান শুরু করে। জিয়াদ ঢাকা থেকে বেড়াতে এসেছে এ দ্বীপে। ওর সাথে আছে তিন বন্ধুÑ সামি, অনি ও ওবায়েদ। আসার আগে ওরা দ্বীপটি সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা নেয়ার জন্য বাংলাপিডিয়ার সাহায্য নিয়েছে। কোথাও যাওয়ার আগে ওরা এ কাজটা করতে ভুল করে না। যেখানে বেড়াতে যাবে সে জায়গা সম্পর্কে কোন না কোন মাধ্যম থেকে যতটা সম্ভব জেনে নেয়। এবার চার বন্ধু মিলে খুব ভাল করে বাংলাপিডিয়ার এ অধ্যায়টি অধ্যয়ন করেছে। ওরা জেনেছে, বাংলাদেশের একমাত্র প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিন। বঙ্গোপসাগরের উত্তর-পূর্বে এ ছোট দ্বীপটি অবস্থিত। কক্সবাজারের টেকনাফ উপদ্বীপ থেকে ৯ কিলোমিটার দেিণর এ দ্বীপটি বাংলাদেশের সবচেয়ে দণিাংশ। সমুদ্র থেকে এটির উচ্চতা প্রায় তিন মিটার। ৯ দশমিক ৬৬ কিলোমিটারের একটি খাল দ্বীপের মূল ভুখণ্ডকে দু’ভাগে বিভক্ত করেছে। দ্বীপের উত্তর-পশ্চিমাংশ জুড়ে রয়েছে নুড়ি আর পাথরের লম্বা লাইন। ভৌগোলিকভাবে দ্বীপটি তিন ভাগে বিভক্ত। উত্তরাংশের নাম নারকেল জিঞ্জিরা বা উত্তরপাড়া। এ অংশের দৈর্ঘ্য ২ হাজার ১৩৪ মিটার এবং প্রস্থ ১ হাজার ৪০২ মিটার। দ্বীপটির দণিাংশ দণিপাড়া নামে পরিচিত। এ অংশের দৈর্ঘ্য ১৯ হাজার ৯২৯ মিটার। এর একটি অংশ সরু লেজের মতো হয়ে দণি-পূর্ব দিকে চলে গেছে যার দৈর্ঘ্য ১ হাজার ৮৯০ মিটার, এ অংশের প্রস্থ ৯৭৫ মিটার। স্থানীয় ভাষায় গলাচিপা নামে পরিচিত মধ্যাংশের দৈর্ঘ্য ১ হাজার ৫২৪ মিটার এবং প্রস্থ ৫১৮ মিটার। সেন্টমার্টিনের মূল দ্বীপ থেকে বিচ্ছিন্ন ১০০ থেকে ৫০০ বর্গমিটারের কয়েকটি উপদ্বীপ আছেÑ এ অংশ ছেঁড়াদিয়া নামে পরিচিত। সেন্টমার্টিনের স্থানীয় অধিবাসীরা সবাই সবাইকে চেনে। তারা খুবই সহজ সরল। এ সরল মানুষগুলো প্রকৃতির সাথে সংগ্রাম করে বেঁচে আছে। হঠাৎ করে আসা সন্তান হারানোর এ নতুন বিপদে সবাই আতঙ্কিত। তিন. এখানে বেড়াতে এসে জিয়াদ ও ওর বন্ধু উঠেছে সাগরবিলাসে। আতঙ্কজনক এ খবর শোনার পর আজ বেড়ানোর পরিকল্পনা বাদ দেয়। ওরা চার বন্ধু সাগরবিলাসে এসে বৈঠকে বসে। জিয়াদ সবাইকে উদ্দেশ করে বলে, আমার মনে হয়, এরা কেউই সাগরে ডুবে মারা যায়নি। এ ঘটনার নেপথ্যে অন্য কোন রহস্য লুকিয়ে আছে। : ‘কী সেই রহস্য?’ জানতে চায় অনি। : ‘বিষয়টি আগে থেকে কেউ জানলে কি আর রহস্য হতো।’ বিজ্ঞের মতো করে খুব ধীরস্থিরভাবে বলে সামি। : ‘হ্যাঁ, সামির কথাই ঠিক’Ñ জিয়াদ বলে। : ‘সেই রহস্য খোঁজে বের করতেই হবে।’ ওবায়েদ দৃঢ়প্রত্যয় ব্যক্ত করে। : ‘প্রথমে আমাদের একটি বিস্তারিত পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে’Ñ জিয়াদ বলে। : ‘পরিকল্পনায় কোন কোন দিককে আমরা গুরুত্ব দেবো’Ñ সামির প্রশ্ন। : ‘সুন্দর প্রশ্ন’Ñ অনি বলল। : ‘শোন আমাদের দলের সদস্য মাত্র আমরা চারজন, যারা এ অপরাধের সাথে জড়িত তারা অবশ্যই শক্তিশালী কোন সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্য। অতএব সাবধানে এগোতে হবে’Ñ জিয়াদ বলল। : ‘তাহলে এখন বল আমাদের কী করতে হবে’Ñ তিনজন এক সাথে বলে। : ‘পরিকল্পনার মধ্যে থাকবেÑ এ অভিযানের নেতৃত্ব কে দেবে, অন্যরা কে কী করবে?’ জিয়াদের এ কথা শেষ হওয়ার পর অনি বলল : নেতৃত্ব দেয়ার জন্য আমি জিয়াদের নাম প্রস্তাব করছি। : ‘আমাদের প থেকে কোন আপত্তি নেই’Ñ অন্য দু’জন বলল। : ‘ তাহলে কাজ শুরু করা যাকÑ’ জিয়াদ বলল। : অবশ্যই। : ‘আমাদের প্রথম কাজ স্থানীয় থানায় বিষয়টি জানিয়ে রাখা। তা না হলে ভুল বোঝাবুঝি হওয়ার সম্ভাবনা আছে। তা ছাড়া যে কোন সময় পুলিশের সাহায্যের প্রয়োজন হতে পারে। আর অনি তুমি সন্ন্যাসীকে অনুসরণ করবে। সে কোথায় যায় কী করে, আমাকে ঘণ্টায় ঘণ্টায় রিপোর্ট করবে। সামি আর ওবায়েদ তোমরা দু’জন সাগরের চারপাশ ঘুরে ঘুরে দেখবে, সন্দেহজনক কিছু নজরে এলেই আমাকে জানাবে। এ কাজে কথার চেয়ে মোবাইলের মেসেজকে কাজে লাগাবে বেশি। এ জন্য কিছু সাঙ্কেতিক চিহ্ন বা কোড ব্যবহার করবো আমরা।’ জিয়াদের কাছ থেকে কোড বুঝে নিয়ে ওরা অভিযান শুরু করে। ওদের এ অভিযানের নাম দ্বীপ রহস্য-০০১। চার. অভিযানে বের হওয়ার এক ঘণ্টা পর অনি প্রথম মেসেজ পাঠিয়েছে। এরপর ওর কাছ থেকে আর কোন মেজেস আসছে না। বারবার চেষ্টা করেও জিয়াদ ওর সাথে যোগাযোগ করতে পারছে না। ওবায়েদ ও সামিকে সাগরবিলাসে ডাকে জিয়াদ। ওরা দু’জন আসার পর মিটিংয়ে বসে। জিয়াদ অনির পাঠানো মেজেসটি সামি ও ওবায়েদকে দেখায়। সে লিখেছে স + বি ৩ = কাগ এর অর্থ সন্ন্যাসী তিনবার বিদেশী কয়েকজনের সাথে কথা বলেছে, তাদের হাতে কাগজ দিয়েছে। ওর এ মেসেজে একটি বিষয় পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে, সন্ন্যাসীর সাথে অপরাধী চক্রের যোগাযোগ আছে। অপরাধীরা বিদেশী। ওরা তিনজন এ বিষয়ে একমত হয়। : ‘আমাদেরকে খুব সাবধানে পা ফেলতে হবে। আমাদের বিষয়টি ওরা জেনে গেছে। অনিককে হয় তো ওরা অপহরণ করেছে’Ñ জিয়াদ বলল। : ‘এখন উপায়!’ সামি ও ওবায়েদ জানতে চায়। : উপায় একটা বের করতে হবে, জিয়াদ বলল। : ‘সন্ন্যাসীকে ধরে রিমান্ডে নিলেই তো সব বের হবে’Ñ ওবায়েদ বলল। : ‘তা হয় তো বের হবে, কিন্তু তাহলে অনিককে আর পাওয়া যাবে না।’ জিয়াদ বিজ্ঞের মতো উত্তর দিলো। ‘সূর্য় উদয়ে তুমি সূর্য অস্তে তুমি/ ও আমার বাংলাদেশ প্রিয় জন্মভূমি’Ñরিংটোন বাজছে জিয়াদের মোবাইলে। মোবাইল রিসিভ করলো জিয়াদ। : আসসালামু আলাইকুম। ছোট মামা তুমি কখন এসেছো ? : এই তো এলাম, এসে দেখি তুমি নেই। মনটাই খারাপ হয়ে গেল। : আসার আগে জানাবে না। : তোমাকে সারপ্রাইজ দেয়ার জন্য এবার না জানিয়ে এলাম। : মামা মহাবিপদে আছি। বাড়িতে কাউকে বলা যাবে না, তাহলে কান্নাকাটি শুরু হবে। তুমি তাড়াতাড়ি চলে এসো। জিয়াদের কথা শুনে আর এক মুহূর্ত দেরি না করে, ছোট মামা সেন্টমার্টিনের উদ্দেশে বের হলেন। পাঁচ. সাগরবিলাসের কেয়ারটেকার আবু মিয়া বিষণœ মনে বসে আছে। ছেলে চারটি কোথায় গেল? ওদেরকেও কি সাগর ভোগ নিলো। না, সে ভাবতে পারছে না। এমন সময় জিয়াদের মামা তার সামনে এসে দাঁড়ান। : ‘আপনি কে?’Ñ আবু মিয়া জানতে চায়। : ‘আমার নাম রায়হান।’ আমি জিয়াদের মামা। : স্যা-র গো স্যার...। বলে কান্নায় ভেঙে পড়ে আবু মিয়া। : কী হয়েছে? : স্যার ওদের চারজনকে খোঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। : শোন আমি যে এসেছি এ কথা কাউকে বলবে না। দেখি কী করা যায়। : ঠিক, আছে স্যার। বাইনোকুলার, লাইফবয়, বুলেটপ্র“ফ জ্যাকেট আর লাইসেন্স করা রিভলবার নিয়ে বের হন রায়হান সাহেব। মোবাইল ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখেন বন্ধ। দ্রুত অন করেন। ক্রিং ক্রিং করে বেজে ওঠে। মেসেজ! হ্যাঁ জিয়াদের মেসেজ। ওরা বন্দী হয়েছে। ওদেরকে একটি জাহাজের পাটাতনের অন্ধকার কে আটকিয়ে রাখা হয়েছে। তিনি মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করেন। কিন্তু না তা সম্ভব হচ্ছে না। রায়হান সাহেব পূর্ব, পশ্চিম, উত্তর দিকে বাইনোকুলার দিয়ে বারবার দেখলেন। না সন্দেহজনক কিছু নজরে পড়ছে না। দণি দিকে বাইনোকুলার তাক করতেই নজরে এলো একটি জাহাজ। জাহাজে উড়ছে কালো পতাকা। তিনি আরো ভালো করে ল করলেন, না জাহাজটি চলছে না, মাঝ সাগরে নোঙর করে আছে। তিনি চিন্তা করলেন কী করবেন। না, একা অভিযান চালানো ঠিক হবে না। পুলিশ ও কোস্টগার্ডের সহযোগিতা লাগবে। কাজটি করতে হবে খুব গোপনে। সন্ন্যাসীর বিষয়ে তিনি জিয়াদের নিকট থেকে আগেই জেনেছিলেন। কাজ শুরু করার আগে তাকে যে কোন প্রকারে দূরে সরাতে হবে, কাজটি করতে হবে খুব সাবধানে ও সুকৌশলে, কিছুতেই তাকে বুঝতে দেয়া যাবে না। ছয়. অন্ধকার। দু’ চোখে কিছু দেখছে না জিয়াদ। তবে এতটুকু বুঝতে পারছে তাকে ওরা জাহাজের অন্ধকার কে আটকে রেখেছে। শুধু সে নয়, তার সাথে আছে অনি, সামি, ওবায়েদ আরো আট-দশজন শিশু-কিশোর। শত্রুর হাতে বন্দী হওয়ার পর ওরা জিয়াদের মোবাইল ফোন, জুতার  ভেতর রাখা ছুরি, ক্যামেরা সব কিছু ছিনিয়ে নিয়েছে। বাইরের সাথে যোগাযোগ করার কোন উপায় নেই। মোবাইল ছিনিয়ে নেয়ার আগে শুধু একবার মামাকে একটি মেসেজ করতে পেরেছে। আর কোনপ্রকার যোগাযোগ করতে পারছে না। জিয়াদ কিছু ভাবতে পারছে না। তবে প্রাণপণ চেষ্টা করছে মন থেকে ভয় আতঙ্ক দূর করে ঠাণ্ডা মাথায় চিন্তা করতে। সে তার মামার কাছে শিখেছে, বিপদে ধৈর্য হারোতে নেই। প্রথমে ওকে জানতে হবে যারা ওদের বন্দী করেছে ওরা কারা? ওদের সংখ্যা কত? শক্তি সামর্থ্য কেমন? তারপর মুক্ত হওয়ার চিন্তা করতে হবে। জিয়াদ ল করেছে ওরা সবাই ইংরেজিতে কথা বলে, মাঝে মাঝে অপরাধরাজ্যের বিশেষ পরিভাষা ব্যবহার করে। সে বুঝতে পারে ওরা সংঘবদ্ধ কোন আন্তর্জাতিক পাচারকারী দলের হাতে বন্দী হয়েছে। সে ওদের কথাবার্তায় আরো বুঝতে পারে তাদের সংখ্যা বিশজনের বেশি হবে না। সব সময় জাহাজ পাহারায় থাকে দশ জন বাকিরা বাইরে থাকে। ওদের কাজ বিভিন্ন ফাঁদে ফেলে শিশু-কিশোরদের ধরে জাহাজে নিয়ে আসা। বন্দীদের ওরা খাবার দাবারে তেমন কষ্ট দেয় না। ওদের আলাপচারিতায় জিয়াদ বুঝে, কিছুতেই ওরা বন্দী শিশু-কিশোরদের স্বাস্থ্য নষ্ট হতে দিতে চায় না, তাহলে ভাল দাম পাবে না। জিহাদ সকালের নাস্তার সময় কৌশলে একটি চামচ নিজের কাছে রেখে দেয়। সে ভাবে, এটিই তার অস্ত্র। যা কিছু করার এ অস্ত্র কাজে লাগিয়ে করতে হবে। শত্র“দের হাত থেকে মুক্ত হতে না পারলে, হয় তো জানে বাঁচবে কিন্তু কোনদিন মুক্তি পাবে না। তার প্রিয় মা বাবা, ভাই বোন, আত্মীয়স্বজনকে দেখতে পাবে না। প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশেও ফিরতে পারবে না কোনদিন। মুখ দিয়ে চামচ ব্যবহার করে সে প্রথমে নিজের হাতের বাঁধন, পরে হাত দিয়ে নিজের পায়ের বাঁধন এবং অন্যদের হাত-পায়ের বাঁধন খুলে দেয়। জিয়াদ সবাইকে কাছে বসিয়ে ঘটনার ভয়াবহতা বুঝিয়ে বলে। তারপর অনি, সামি আর ওবায়েদের নেতৃত্বে তিন গ্র“পে সবাইকে ভাগ করে দেয়, নিজের সাথে বলিষ্ঠ দেখে দু’জনকে রাখে। ওদের অভিযান শুরু হয় সকালে। নাস্তা নিয়ে আসা লোকটাকে প্রথমে পাকড়াও করে। ওর হাত থেকে মোবাইল নিয়ে মামাকে বর্তমান অবস্থা জানায়। সামি ওর দল নিয়ে গিয়ে জাহাজের ডেকে ওঠে। বিড়ালের মতো পা টিপে টিপে গিয়ে ওরা ডেকের সশস্ত্র পাহারাদারদের পাকড়াও করে। অনি চলে যায় তার দল নিয়ে, জাহাজের ইঞ্জিনরুমে। সারেং ও ইঞ্জিনিয়ারেদের ওরা বন্দী করে ফেলে। বাইরের সাহায্যের আশায় ছাদ ওঠে আগুন জ্বালিয়ে চিৎকার করতে থাকে ওবায়েদ। সাত. কোস্টগার্ড ও পুলিশ জাহাজ ঘিরে ফেলেছে। মামা দু’জন পুলিশ নিয়ে জাহাজে ওঠেন। জাহাজে পড়ে থাকা একটি ডায়েরিতে তার নজর আটকে যায়। ডায়েরির পাতায় কালো অরে লেখা এক্স। এর মানে সে জানে। এটি একটি সংঘবদ্ধ আন্তর্জাতিক মানবপাচারকারী দলের সঙ্কেত। পাশ্চাত্যে জন্মহার কমে যাওয়ায় কর্মম যুবশক্তি দিনদিন কমে যাচ্ছে। সরকারি নানান নিয়মনীতির কারণে জনশক্তি আমদানিও তারা চাহিদা মতো করতে পারছে না। ফলে কলকারখানায় শ্রমিকের অভাবে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এ অভাব পূরণ করতে কারখানা মালিকদের কাছে শ্রমিক বিক্রির কাজ করে এ সংঘবদ্ধচক্র। শিশু-কিশোরদের ধরে নিয়ে প্রশিণের মাধ্যমে দ জনশক্তিতে পরিণত করে। আঠারো বছর পূর্ণ হওয়ার পর বিক্রি করে দেয়। : ‘মামা! মামা!’ রায়হান সাহেবের ভাবনায় ছেদ পড়ে। তিনি জিয়াদকে বুকে জড়িয়ে ধরেন। বলেন : ‘তোমরা দুর্ধর্ষ আন্তর্জাতিক মানবপাচারকারী এক্সচক্রের হাতে পড়েছিলে।’ এক্সচক্র সম্পর্কে সে এর আগে মামার কাছে শুনেছে। তাই ব্যাখ্যা না করলেও বুঝতে পারে। : ‘মামা তুমি তো পাচারকারী চক্র ছাড়াই পাচার হয়ে আছো, আমরা না হয়’Ñ জিয়াদের কথা শেষ হওয়ার আগেই রায়হান সাহেব বুঝতে পারেন সে কী বুঝাতে চাচ্ছে। রায়হান সাহেব আমেরিকায় লেখাপড়া শেষ করে, আর দেশে ফেরেননি। উচ্চ বেতন সুযোগ সুবিধার জালে আটকে, সে দেশে সামরিক বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করছেন। তিনি জিয়াদের কথার কী উত্তর দেবেন, এ মুহূর্তে তা তার মাথায় আসছে না। আট. পুুলিশ পাচারকারী চক্রের সবাইকে বন্দী করে। বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সহযোগিতায় কোস্টগার্ড জাহাজটি চট্টগ্রাম বন্দরে নিয়ে আসে। হারিয়ে যাওয়া সন্তানদের ফিরে পেয়ে তাদের মা-বাবা আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করেন। পরদিন পত্রিকায় জিয়াদের এ অভিযানের কাহিনী লিড নিউজ হিসেবে ছাপা হয়। টেলিভিশন চ্যানেলগুলোও ফলাও করে প্রচার করে এ খবর।
আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ