নতুন জীবনের সন্ধান

নতুন জীবনের সন্ধান

তোমাদের গল্প ডিসেম্বর ২০১১

মো: আখতার হোসেন..

মনোরম বিকেল। কিছুক্ষণ আগেও এক পশলা বৃষ্টি এসে সব কিছু ধুয়ে দিয়ে গেছে। এখন পশ্চিম আকাশে হেলে পড়া সূর্যটাও সামান্য আলো দিচ্ছে। বৃষ্টি বিধৌত গাছের পাতাগুলো আগের চেয়ে বেশি সবুজ মনে হচ্ছে। পরিবেশটাও পূর্বের তুলনায় অনেক সুন্দর লাগছে। এরকম চমৎকার বিকেলেও নোমানের মনটা বিষণ। কিছুক্ষণ আগে হয়ে যাওয়া বৃষ্টি নোমানের দুঃখ ভারাক্রান্ত মনের আকাশটাকে পরিষ্কার করে দিতে পারেনি। এই মুহূর্তে নিজেকে তার খুবই অসহায় লাগছে। মনে হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে অসহায় মানুষটি সে। কারণ এবার এসএসসি-তে ভালো রেজাল্ট করার পরও তার শিক্ষাজীবন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। অথচ কয়েকদিন আগেও সে কত আনন্দ করছিল। এসএসসি-তে ভালো রেজাল্টের পর অনেক উল্লসিত হয়েছিল। কিন্তু এখন সবকিছুই অর্থহীন মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে ভালো রেজাল্ট করাটাই তার জীবনের মস্তবড় ভুল হয়েছে।
প্রতিবারের মতো এ বছরও রেকর্ডসংখ্যক ছাত্র-ছাত্রী ভালো রেজাল্ট করেছে। অথচ তুলনামূলক ভালো কলেজের সংখ্যা খুবই কম। ভালো রেজাল্ট করা অনেক শিক্ষার্থীই এবার ভর্তি হতে পারবে না। তাছাড়া ভালো কলেজগুলোতে আসনসংখ্যা সীমিত অথচ ভর্তি ফরম কেনার লাইন বিশাল দীর্ঘ। ১টা ফরম পেতেই হয়তো সারা দিন লেগে যাবে। দশ বছরের সাধনায় এসএসসি পাস করার পর আবার নামতে হবে ভর্তিযুদ্ধে। এই যুদ্ধে হেরে গেলেই অবসান হয়ে যাবে তার শিক্ষাজীবনের। ভালো কলেজে ভর্তির আশায় সে শহরের বিভিন্ন কলেজের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরেছে। সেই অভিজ্ঞতাও সুখকর নয়। ফরম বিক্রির বিশাল লাইন। সিট অল্প প্রতিযোগী অনেক সবাই চান্স পাবে না। আর সুযোগটাই কাজে লাগাচ্ছে একশ্রেণীর দালাল। তারা ১০০ টাকার ফরম অবৈধভাবে ২০০-৩০০ টাকায় বিক্রি করছে। আর পাশাপাশি নিজেদের ক্ষমতা জাহির করার চেষ্টা চালাচ্ছে। অনেককে আবার নানা ভয় ভীতি দেখিয়ে মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করছে। মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে কলেজে ভর্তি করিয়ে দেয়ার মিথ্যা আশ্বাসও দিচ্ছে অনেককে। তাদের দাবির টাকার পরিমাণও কম নয়, যা কিনা নোমানের দরিদ্র বাবার পক্ষে বহন করা অসম্ভব। দালালদের এরূপ কর্মকাণ্ড দেখে পরীক্ষার ফলাফল অর্থহীন মনে হচ্ছে।
ফরম কেনার লাইনে দাঁড়িয়ে দালালদের দলাদলির মাঝে নোমানের দৃষ্টি পড়ল এক যুবকের দিকে। সুদর্শন চেহারা, মুখে হালকা দাড়ি, কাঁধে একটা ব্যাগ ঝুলানো। কিছুক্ষণ পর লোকটি নোমানের কাছেও এল। সালাম বিনিময় করলো। সামান্য পরিচয়ের মাধ্যমে সে জানতে পারল তার নাম এহসানুল আলম সজীব। এই কলেজেই চতুর্থ বর্ষের ছাত্র। এবং ভর্তিসংক্রান্ত কোনো সমস্যা হলে বা জানার থাকলে তার সাথে যোগাযোগের কথা বলে চলে গেল অন্য কারও উদ্দেশে। দালালদের হট্টগোলের কারণে সেদিন ফরম বিতরণ বন্ধ হয়ে গেল। নোমান আর ফরম কিনতে পারল না। বাড়িতে চলে আসার পর নোমানের ঐ লোকটির কথাই বারবার মনে হচ্ছে। সাত-পাঁচ ভাবতে ভাবতে সে ফোন করল। কল ঢুকতেই অপর প্রান্ত থেকে একটা কোমল কণ্ঠে ভেসে এলো আসসালামু আলাইকুম। কে বলছেন? সালামের আওয়াজ শুনে নোমানের অন্তর প্রশান্তিতে ভরে গেল। সে তার পরিচয় দিয়ে সামান্য কয়েকটি প্রশ্ন করতেই অপর প্রান্ত থেকে আশানুরূপ উত্তর পেল।
টাকা পয়সার কথা জিজ্ঞাসা করতেই কিছুই লাগবে না বলে। আগামীকাল সরাসরি যোগাযোগ করতে বলে ফোন  রেখে দেয়। পরদিন সকালে কথামতো তাদের সাথে সাক্ষাৎ করতে গিয়ে সে দেখলো লোকগুলো সত্যিই খুবই ভালো। তাদের কাছে তার সমস্যাগুলো খুলে বলতেই সমাধান হয়ে গেল। নোমান আশ্চর্য হয়ে গেল। গত দিনের অভিজ্ঞতার সাথে আজকের চিত্র সম্পূর্ণই ভিন্ন। গতকাল দালালরা সামান্য কাজের বিনিময়ে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করেছিল। আর আজ তারা ফরম পূরণ এবং ভর্তিসহ যাবতীয় কাজগুলো করে দিল অথচ কোনো বেশি টাকাই দিতে হলো না। তা ছাড়া তাদের ব্যবহারও গত দিনের দালালদের চেয়ে রাত-দিন তফাত। নোমান যতই তাদের সাথে মিশছে ততই অভিভূত হচ্ছে। তারা সকলেই বেশ ভদ্র, ধূম পান করে না। কিংবা কারো সাথে খারাপ আচরণও করতে দেখেনি সে। তাদের সঙ্গ পেয়ে নোমান এক নতুন জীবনের সন্ধান পেলো। সেও শপথ নিল, আজ থেকে ভালো পথে চলবে এবং সকল সময় স্রষ্টার সন্তুষ্টির জন্য সৃষ্টির কল্যাণে কাজ করবে।
                        
আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ