না ফেরার দেশে   - মো: আ: আল ইসলাম মামুন

না ফেরার দেশে - মো: আ: আল ইসলাম মামুন

তোমাদের গল্প নভেম্বর ২০১৫

নাজমুল ও রিফাত দুই বন্ধু। তারা এবার সপ্তম শ্রেণীতে ভর্তি হয়েছে। নাজমুলের বাড়ি কুড়িগ্রাম আর রিফাতের বাড়ি ঢাকা। নতুন ভর্তি হয়েছে বলে তাদের মাঝে নতুন সখ্য গড়ে উঠেছে। নাজমুল আর রিফাত বিকেলে একসাথে ঘুরে বেড়ায়, আর সন্ধ্যায় ছাত্রাবাসে ফিরে আসে। নাজমুল একদিন রিফাতকে বলল, আমার বাড়ি থেকে চিঠি এসেছে বাড়ি যাওয়ার জন্য। রিফাত নাজমুলকে বলল, তোমার মা তোমাকে খুব ভালোবাসেন, তাই না? নাজমুল রিফাতকে বলল হ্যাঁ, আমার মা আমাকে খুব ভালোবাসেন। দেখ না বাড়ি থেকে না আসতে চিঠি পর্যন্ত আসছে। সামনে নাজমুলের প্রথম সাময়িক পরীক্ষা। তাই নাজমুল পরীক্ষার জন্য ভালোভাবে প্রস্তুতি নেয়। আর প্রথম সাময়িক পরীক্ষা দিয়ে বাড়ি যায়। বাড়ি গেলে তার মা তাকে বুকে জড়িয়ে ধরে সোহাগ করতে থাকেন। আর তার মুখে চুমু দিতে থাকেন। আর বলেন, বাড়িতে এবার ৪-৫ দিন থাকবি। এদিকে নাজমুলের জন্য তার মা নানান রকম খাবার তৈরি করেন। অবশেষে নাজমুল ৪-৫ দিন থাকার পর বাড়ি থেকে মাদ্রাসার উদ্দেশে ঢাকা রওনা দেয়। আর নাজমুলের মা নাজমুল যাওয়ার সময় তাকিয়ে থাকেন। কিছুদূর যাওয়ার পর নাজমুল দৌড়িয়ে এসে তার মাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে। তারপর তার মার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে মাদ্রাসার উদ্দেশে আবার রওনা দেয়। মাদ্রাসায় কিছুদিন থাকার পর তার বাড়ি থেকে চিঠি আসে। তার মা অসুস্থ, তাকে বাড়ি যাওয়ার জন্য। নাজমুল তার বন্ধুকে কথাটা বলল। তার বন্ধু তাকে বলল, দেখ আর কিছুদিন এখানে থাক, তার পর বাড়ি যেয়ো। বাড়ি থেকে আবার চিঠি এলো, বাবা নাজমুল বাির্ষক পরীক্ষা দিয়ে বাড়ি এসো। এলে কথা হবে। আল্লাহ হাফেজ। আমার আর বাড়ি যাওয়া হলো না। ভাবলাম মায়ের অসুখ হয়তবা ভালো হয়ে গেছে। মার অসুখ ভালো হবে না তা আমি বুঝতে পারিনি। ৮ মাস পর বার্ষিক পরীক্ষা হলো খুব ভালোভাবে বার্ষিক পরীক্ষা দিলাম। আর দুই দিন পর বার্ষিক পরীক্ষা শেষে বাড়ি যাবো, মাকে দেখব, মার হাতের খাবার খাবো, মা দেখে বুকে জড়িয়ে ধরে আদর করবেন, কত কী আনন্দ! এমন কিছু ভাবছিলাম। হঠাৎ দেখি চাচাতো ভাই শফিক এলো এবং বলল তোকে নিতে এলাম। দুদিন পর বার্ষিক পরীক্ষা শেষে আমি আর শফিক বাড়ির দিকে রওনা দিলাম। বাড়ির পথ যেন আর ফুরায় না। কখন মাকে দেখব, আমাকে দেখে মা আদর সোহাগ করবেন এবং বুকে জড়িয়ে ধরে চুমু দেবেন।
অবশেষে বাড়ি এলাম। বাড়িতে দেখি কোনো সাড়া শব্দ নেই। কেউ তেমন কথা কয় না আমার সাথে। মনে মনে বুঝলাম অনেক দিন পর আসছি বলে সবাই আমার সাথে রাগ করছে। তারপর আমি বড় আপাকে জিজ্ঞেস করলাম, মা কোথায় গেছে। বড় আপা বলল, মা আমাদের ছেড়ে চলে গেছে। আমি বড় আপাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলাম। কিন্তু কাঁদতে পারলাম না।
আমার শরীর ঠান্ডা হয়ে গেল। এখন কে আমাকে সোহাগ করবে? কে আমাকে নাজমুল বলে ডাকবে। নাজমুল ও রিফাত দু’জন দু’জনকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগল। আর মাগরিবের নামাজের পর তার মার জন্য দোয়া করল।
                        
আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ