নাম লেখা ঝরাপাতা

নাম লেখা ঝরাপাতা

কুরআনের আলো জুলাই ২০১৯

নাম লেখা ঝরাপাতাছোটচাচ্চুর সেদিন অফিসে যাওয়ার কথা ছিল না। ছুটিতে ছিলেন তিনি। তবুও বিশেষ প্রয়োজনে গিয়েছিলেন। বলেছিলেন, একটু পরেই ফিরে আসবেন। কিন্তু কই, চাচ্চু তো এখনও ফিরলেন না। ফিরলেন না তো, ফিরলেনই না। সেদিন চাচ্চুর অফিসে আগুন লেগেছিল। তারপর সব ইতিহাস। পোড়া লাশটাও পাওয়া যায়নি। ছাই হয়ে গেছে। ছাই! আহা- এরপর কি আর ভাবা যায় কিছু?
দাদী আজও পথ চেয়ে থাকেন। জানালার পাশে বসে তাকিয়ে থাকেন বাইরে। যতদূর চোখ যায়। চোখ দুটো প্রথম প্রথম ভিজে উঠত। শুধু ভিজতই না, অঝোরে পানি ঝরত ঝরনার মতো। এখন আর ঝরে না। পাথর হয়ে গেছে হয়তো। পাথর গলেও তো পানি ঝরে। কিন্তু চোখ যদি পাথর হয়, সে পাথর কি কখনো গলে? দাদী তো তার এক ছেলে হারিয়েছেন। আর মিরাজ হারিয়েছে একটি পৃথিবী। কলিজার ভেতরে একটা নদী ছিল তার। যে নদীটার ঢেউয়ের দোলায় সে হারিয়ে যেত নতুন স্বপ্নের দেশে। সাহসের মাঠে। ভালোবাসার দারুচিনি দ্বীপে। সে নদীটার নাম ছোটচাচ্চু। আজ সে নদীটার একটু রেখাও নেই। 
দাদীর পাশে বসে কাঁপা গলায় মিরাজ বলল, চাচ্চু যদি সেদিন অফিসে না যেতেন! দাদী তার উদাস দুটো চোখ তুলে তাকালেন মিরাজের দিকে। বললেন, ভাই! সবই আল্লাহর ইচ্ছা। ‘আল্লাহ যার মৃত্যু যেখানে নির্ধারণ করেছেন, সেখানে যাওয়ার জন্য তার কোনো না কোনো প্রয়োজন তৈরি করে দেন।’ (আহমাদ, তিরমিজি) তোমার চাচ্চুর বেলায়ও তা-ই হয়েছে। যার নাম লেখা পাতা ঝরে যায়, তার আর থাকার সুযোগ নেই। নবী সোলায়মান (আ) একবার বৈঠক করছিলেন। মৃত্যুর ফেরেশতা সেখানে গিয়ে একজনের প্রতি দীর্ঘক্ষণ তাকিয়ে থাকলেন। ফেরেশতা বেরিয়ে যাওয়ার পর লোকটি তাঁর কাছে জানতে চাইল- উনি কে? তিনি বললেন, মৃত্যুর ফেরেশতা! লোকটি বলল, আমি দেখলাম উনি আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। যেন আমাকেই চাইছেন। সোলায়মান (আ) বললেন, তুমি কী চাও? সে বলল, আমি চাই- বাতাস আমাকে নিয়ে ভারতবর্ষে দিয়ে আসুক। তিনি বাতাসকে ডাকলেন। বাতাস তাকে ভারতবর্ষে দিয়ে এলো। 
এরপর মৃত্যুর ফেরেশতা সোলায়মান (আ)-এর কাছে এলেন। তখন তিনি বললেন, আমার বৈঠকের একলোকের দিকে আপনি দীর্ঘক্ষণ তাকিয়ে ছিলেন? ফেরেশতা বললেন, তাকে দেখে আমি অবাক হয়েছি। আমাকে আদেশ দেয়া হয়েছে, তার মৃত্যু ভারতবর্ষে দেয়ার জন্য। অথচ সে আপনার এখানে বসা! (কিতাবুয যুহদ : আহমাদ)। দাদী বললেন, কী বুঝলে? মিরাজের চোখে অশ্রু। হাত তুলে বলল, আল্লাহ! আমার চাচ্চুকে শহীদ হিসেবে কবুল করো। দাদী বললেন, আমিন। দাদীর পাথরচোখেও তখন বাঁধভাঙা অশ্রু। যেন বহুদিন পর বৃষ্টি নামল পৃথিবীতে। 

বিলাল হোসাইন নূরী

আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ