পরশ পাথর -মোস্তফা রুহুল কুদ্দুস
নাটিকা ডিসেম্বর ২০১৬
চ রি ত্র লি পি মূল চরিত্র খন্ড চরিত্র ড. সৈকত : গবেষক নুরু মামা : চা দোকানি মি. জিসান : গবেষণা সহকারী শোভন : সাধারণ ছাত্র মি. শৈবাল : গবেষণা সহকারী পিয়ন : স্কুল পিয়ন শিরিন : সৈকতের স্ত্রী ওসি : পুলিশ অফিসার সৌরভ : সৈকতের বিপথগামী ছেলে পুলিশ-১ : কনস্টেবল গৌরব : সৈকতের আদর্শবান ছেলে পুলিশ -২ : কনস্টেবল দিলদার : সৈকতের কাজের লোক ডাক্তার : নামেই পরিচয় প্রধান শিক্ষক : নামেই পরিচয় নার্স : নামেই পরিচয় জুয়েল : খারাপ ছাত্র ১ম ব্যক্তি : পাবলিক পলাশ : খারাপ ছাত্র ২য় ব্যক্তি : পাবলিক রহমত : আদর্শবান ছাত্র ছাত্র-ছাত্রী : সাধারণ শিক্ষার্থী দৃশ্য-১/ইনডোর স্থান : শহরের একটা অভিজাত পরিবারের শোবার ঘর। চরিত্র : ড. সৈকত, দিলদার, মহিলা কণ্ঠ (দেয়াল ঘড়িতে ঢং ঢং করে দুপুর ১২টা বাজে। আড়মোড়া ভেঙে ঘুম থেকে ওঠেন ড. সৈকত। বাথরুম থেকে ব্রাশ নেন। তারপর কিছুক্ষণ পায়চারি করে দিলদারকে ডাকেন) সৈকত : দিলদার (দিলদারের প্রবেশ) দিলদার : জে স্যার। সৈকত : সৌরভ গৌরব ঘুম থেকে উঠেছে? দিলদার : হেরা স্কুলে গেছে। সৈকত : এতো সকালে স্কুল! দিলদার : সকাল কই পাইলেন। অহন বেলা ১২টা বাজে।। হেরা অহনই স্কুল থেইক্যা আইসা পড়বো। সৈকত : ১২টা! (ঘড়ি দেখে) তাইতো। রাত ৩টা পর্যন্ত বই পড়েছি। যা আমার সিগারেটের প্যাকেটটা নিয়ে আয়। (দিলদারের প্রস্থান) সকালের নাস্তা দুপুরে। আজ আর শিরিনকে ঠেকানো যাবে না। দিলদারের প্রবেশ। (সিগারেট দেয়) সৈকত : জানিস, সিগারেট না খেলে ভাল বই লেখা যায় না। স্মার্ট হওয়া যায় না। দিলদার : জে স্যার। সৈকত : কথা বললেই জে স্যার, জে স্যার। বল, স্মার্ট মানে কী? দিলদার : (কিছুক্ষণ ভাবে) পেয়েছি পেয়েছি-ইশ মানে লাঙ্গলের ইশ। আর মাঠ মানে খ্যাত। ইসমাট মানে খ্যাতে লাঙ্গল চষা। কী স্যার, ঠিক বলিনি? সৈকত : (হেসে) স্মার্টের অদ্ভুত অর্থ। (নেপথ্যে শিরিনের কণ্ঠ) শিরিন : দিলদার, ওদের ছুটির সময় হয়েছে। দিলদার : স্যার-আসি। সৈকত : যাবার আগে তোর খালাম্মাকে নাস্তা রেডি করতে বল। (সিগারেট নিয়ে বাথরুমে ঢোকে সৈকত : দৃশ্যান্তর) দৃশ্য-২/আউটডোর স্থান : রাস্তা চরিত্র : দিলদার, সৌরভ ও গৌরব (রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে দিলদার। একটা স্কুল বাস এসে থামে। বাস থেকে নেমে আসে সৌরভ ও গৌরব। দিলদার দু’হাতে দু’জনের ব্যাগ নিয়ে আগে আগে হাঁটে। হঠাৎ থেমে যায়।) দিলদার : আইজ কোন নালিশ নাই? সৌরভ : আছে খুউব বড় নালিশ। দিলদার : কী নালিশ? আমারে কও না? সৌরভ : না, না, তোমাকে বলে কাজ হবে না। আব্বুকে বলতে হবে। গৌরব : আমিই বলি-টিফিনের টাকায় কলা কিনেছিলাম। ওর ভাগে নাকি খারাপটা পড়েছে। সৌরভ : আর ২০ টাকা থেকে ২ টাকা পকেটে ভরেছিস- সেটা বলবে কে? দিলদার : থাক থাক। পথের মাঝে ক্যাঁচাল কইরা লাভ নাই। চলো বাড়ি গিয়া স্যাররে কইবা। (প্রস্থান। দৃশ্যান্তর) দৃশ্য : ৩/ইনডোর স্থান : ডাইনিং রুম চরিত্র : সৈকত, শিরিন, সৌরভ, গৌরব ও দিলদার (টেবিলে নাস্তা সাজায় শিরিন। গামছায় হাত মুখ মুছতে মুছতে প্রবেশ করেন সৈকত) সৈকত : স্যরি, একটু দেরি হয়ে গেল। শিরিন : প্রতিদিন তোমার স্যরি শুনতে ভালো লাগে না। তুমি দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা রিসার্চ করো- তাতে আমার আপত্তি নেই। কিন্তু সকালের নাস্তা দুপুরে আর দুপুরের খাবার রাতে খাবে সেটা আমি সহ্য করবো না। সৈকত : এভাবেই তো এতোগুলো অ্যাওয়ার্ড পেলাম। এবারের গবেষণা সফল হলে আরও বড় অ্যাওয়ার্ড পাবো। শিরিন : নিজে এখনো সিগারেট ছাড়তে পারলে না। আর মাদকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে অ্যাওয়ার্ড নেবে। হয়েছে হয়েছে এবার ধীরে সুস্থে নাস্তাটা সেরে নাও। (কলিং বেল বাজে)... ওই, সোনামণিরা এসে গেছে। (শিরিন দরজা খুলে দেয়। প্রবেশ করে সৌরভ ও গৌরব) সৌরভ : আব্বু, খাওয়া বন্ধ করে কথা শোন- এখন থেকে আমার টিফিনের টাকা আমাকে দেবে আর গৌরবের টাকা গৌরবকে। যে যা ইচ্ছে তাই খাবে। সৌরভ : তাই করো আব্বু। সৈকত : কেন, কী হয়েছে? সৌরভ : কি আর হবে। ২০ টাকার মধ্যে ২ টাকা মারিং। দেখ আব্বু, কাল থেকে আমার টাকা আমাকে না দিলে খবর আছে কিন্তু। সৈকত : বেশ, তাই হবে। (সৌরভ ও গৌরবের প্রস্থান।) শিরিন : সব সময় ঝগড়া। কেউ কারো ছাড় দিতে রাজি নয়। সৈকত : এটা ঝগড়া নয়। দু’ভাইয়ের মান-অভিমান। বড় হলে সব ঠিক হয়ে যাবে। শিরিন, আমার হাতে অনেক কাজ। চার কাপটা লাইব্রেরিতে পাঠিয়ে দিয়ো। (প্রস্থান। দৃশ্যান্তর) দৃশ্য-৪/আউটডোর স্থান : স্কুল মাঠ চরিত্র : জুয়েল, পলাশ, সৌরভ ও গৌরব (বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার প্র্যাকটিসে ব্যস্ত ছাত্র-ছাত্রীরা। মাঠের এক পাশে বসে জুয়েল পলাশ ও সৌরভ) পলাশ : শনিবার ফাইনাল খেলা। আমি হাই জ্যাম্পে নাম দিয়েছি। সৌরভ? সৌরভ : খেলাধুলা আমি মোটেও পছন্দ করিনে। জুয়েল : দৌড়ঝাঁপে কখন কার হাত পা ভাঙে বলা যায় না। তার চেয়ে বরং আসলাম ভাইয়ের কম্পিউটারের দোকানে চল। ভাল ভাল গেম আছে। সৌরভ : ক্লাস ফেলে গেম খেলবি? জুয়েল : স্যারেরা খেলা নিয়ে ব্যস্ত। আজ আর ক্লাস হবে না। পলাশ : তা অবশ্য ঠিক। চল সৌরভ, সময়টা কাজে লাগাই। (সকলে উঠে দাঁড়ায়। মাটির ব্যাংক হাতে প্রবেশ করে গৌরব)। জুয়েল : আরে গৌরব, ওটা কী? গৌরব : মাটির ব্যাংক। সৌরভ : টিফিনের টাকায় ব্যাংক কিনেছিস। ঠিক আছে, আমি আজই আব্বুকে বলে দেবো। গৌরব : আমি প্রতিদিন ২/১ টাকা করে সঞ্চয় করতে চাই। এটা কোনো খারাপ কাজ না। সৌরভ : টিফিনের নামে টাকা এনে সঞ্চয় করা অবশ্যই খারাপ। পলাশ : আহ্ হা, এ নিয়ে ঝগড়া করে লাভ আছে। চল। আসি গৌরব। (প্রস্থান। দৃশ্যান্তর) দৃশ্য-৫/ইনডোর স্কুল : ক্লাসরুম চরিত্র : প্রধান শিক্ষক ও অন্যান্য ছাত্ররা (প্রধান শিক্ষক ক্লাস নিচ্ছেন) প্রধান শিক্ষক : অনেক বেঞ্চ এখনো ফাঁকা। জুয়েল পলাশ, সৌরভ কাউকে দেখছি না। নিশ্চয় প্র্যাকটিসে রয়েছে। মনে রাখবে, এবারের প্রতিযোগিতায় অনেক ইভেন্ট রয়েছে। সকলকে কোন না কোন ইভেন্টে অংশ নিতে হবে। সে জন্য প্র্যাকটিসের কোন বিকল্প নেই ঠিকই, তাই বলে প্র্যাকটিসের নামে ক্লাস ফাঁকি দেয়া চলবে না। আজ যারা আসেনি কাল তাদের জবাবদিহি করতে হবে। এখন থেকে একটানা ৫ পিরিয়ড পর শুরু হবে প্র্যাকটিস। মনে থাকবে তো? সমস্বরে : জি স্যার। (দৃশ্যান্তর) দৃশ্য-৬/ ইনডোর স্থান : লাইব্রেরি চরিত্র : সৈকত, জিসান, শৈবাল, কণ্ঠ (গবেষণায় ব্যস্ত ড. সৈকত। পাশে কম্পিউটার কাজ করছেন দু’জন সহকারী জিসান ও শৈবাল) সৈকত : এবার তোমাদের অভিমত বল। জিসান : এক বছর ধরে আমরা বিভিন্ন পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময় করেছি। তাদের বক্তব্য হচ্ছে, মাদকবিরোধী আন্দোলনে সকলকে সম্পৃক্ত করা। সরকারি কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতা, এনজিও ও জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে টাস্কফোর্স গঠন করা। তাহলে কেউ চোরাচালানে সাহস পাবে না। সৈকত : উত্তম প্রস্তাব। শৈবাল? শৈবাল : কোনো ভিন্নমত নেই। সৈকত : তাহলে আমরা বলতে পারি টাস্কফোর্সের মাধ্যমে মাদকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব। শৈবাল : শিয়োর। (টেলিফোন বাজে) সৈকত : (রিসিভার তুলে) কে? ও-মাস্টার সাহেব। তা বলো, হঠাৎ ফোন করলে কেন? সৌরভ স্কুলে যায়নি! না, না, ও ৯টার আগেই চলে গেছে। কী বললে প্রায়ই যায় না! ঠিক আছে মাস্টার, কথাটা যখন বললে আমি এখনই খোঁজ নিচ্ছি। (উঠে দাঁড়ায়) জিসান, আমি একটু ভেতর থেকে আসি। তুমি কালকেই প্রেস কনফারেন্স করে আমাদের থিউরিটা দেশবাসীকে জানিয়ে দাও। (দৃশ্যান্তর) দৃশ্য-৭/ইনডোর স্থান : রিডিং রুম চরিত্র : সৈকত, গৌরব, শিরিন (গৌরব বই পড়ে। প্রবেশ করে সৈকত) সৈকত : গৌরব, আজ কয়টা ক্লাস হয়েছে? গৌরব : (উঠে দাঁড়িয়ে) চারটা। সৈকত : সৌরভ ক্লাসে যায়নি? গৌরব : না। সৈকত : শিরিন, এদিকে এসো। (শিরিনের প্রবেশ) দেখ, তোমার বড় ছেলের কান্ড! সকাল ৯টায় বাড়ি থেকে বেরিয়েছে। অথচ ক্লাসে যায়নি। শিরিন : তুমিই ওকে আশকারা দিয়ে মাথায় তুলেছো। সেদিন, সামান্য কথায় টিফিনের টাকা ভাগ করে দিলে। এখন একসাথে স্কুলে যায় না। কেউ কারো খোঁজ খবর পর্যন্ত রাখে না। সৈকত : ঠিক আছে, ও বাড়ি ফিরলে আমার কাছে পাঠিয়ে দিয়ো। (সৈকতের প্রস্থান) শিরিন : বাবা, এখন দুপুর বেলা। খেয়ে দেয়ে একটু রেস্ট নে। নইলে শরীর খারাপ করবে। গৌরব : সামনে টেস্ট পরীক্ষা। আমি রেজাল্টে সবার ওপরে থাকতে চাই। রহমত ভাই কি বলেন জান? নিয়মিত লেখাপড়া করলে খারাপ ছেলেরাও ভালো হয়ে যায়। যাও আম্মু আর ডিস্টার্ব করো না। (দৃশ্যান্তর) দৃশ্য ৮/ইনডোর স্থান : লাইব্রেরি চরিত্র : সৈকত, সৌরভ, জিসান ও শৈবাল (কম্পিউটারে কর্মরত জিসান ও শৈবাল। প্রবেশ করে সৈকত) সৈকত : তোমরা বাবা হয়েছো বাট, এখনো বড় ছেলের বাবা হতে পারোনি। তাই বাবা হওয়া কী যে কষ্ট তা বুঝতে শেখনি। সন্তান মানুষ করার যন্ত্রণা আমরা হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করছি। (স্কুল ড্রেসে সৌরভের প্রবেশ) সৌরভ : আব্বু, আমাকে ডেকেছো? সৈকত : এখন কয়টা বাজে? সৌরভ : (ঘড়ি দেখে) ৩টা। সৈকত : সৌরভ ফিরেছে ১২টায় আর তুই ফিরছিস ৩টায়, এতক্ষণ কোথায় ছিলি? সৌরভ : আজ ক্লাস হয়নি। তাই গৌরব আগে ফিরেছে। সৈকত : আর তুমি ফিরলে ৩ ঘণ্টা পর। (সৌরভ মাথা নিচু করে দাঁড়ায়) কী কথা বলছিসনে কেন? আজ ক্লাস হয়নি, তাই না? সৌরভ : আব্বু সত্যি কথা বলবো- আসলাম ভাইয়ের দোকানে কম্পিউটার শিখছিলাম। সৈকত : বাড়িতে এতো কম্পিউটার। অথচ সেখানে বসার সময় নেই। কম্পিউটার শিখতে গেছিস আসলামের দোকানে। মিথ্যে ভাঁওতাবাজির একটা সীমা আছে। যা বের হ এখান থেকে। (সৌরভের প্রস্থান) সৈকত : (স্বগত) এখন বয়স হয়েছে, বুঝতে শিখেছে। তারপরও যদি পাহারা দিয়ে রাখতে হয় তাহলে নিজের কাজ করবো কখন। (দৃশ্যান্তর) দৃশ্য ৯/ আউটডোর স্থান : স্কুল লাইব্রেরি চরিত্র : রহমত, সৌরভ, গৌরব (লাইব্রেরিতে বই পড়ে গৌরব। প্রবেশ করে রহমত) রহমত : গৌরব, এখানে কী করছো, ক্লাস নেই? গৌরব : না ভাইয়া, কাল বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা। সকলে তাই নিয়ে ব্যস্ত। রহমত : নাও, (নোট দেয়) তোমার জন্য নোট এনেছি। এগুলো ফলো করলে রেজাল্ট অবশ্যই ভালো হবে। গৌরব : খুব ভালো হলো ভাইয়া। নোটের জন্য ভীষণ টেনশনে ছিলাম। রহমত : আমি গরিবের ছেলে। ছোটবেলায় মা-বাবাকে হারিয়েছি, কখনো প্রাইভেট পড়ার সুযোগ পাইনি। তাই সব সময় ভালো ছাত্রদের ফলো করতাম। তাদের কাছ থেকে নোট নিতাম। এভাবেই এসএসসিতে গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েছিলাম। আশা করি তুমিও পাবে। গৌরব : দোয়া করবেন ভাইয়া। রহমত : একটা কথা সব সময় মাথায় রাখবে-ক্যারিয়ার গঠনের জন্য ক্লাসের বই আর ভালো মানুষ হবার জন্য ভালো ভালো বই পড়তে হবে। তাহলে তুমি পরিপূর্ণ মানুষ হতে পারবে। আসি ভাইয়া, আবার দেখা হবে। (রহমতের প্রস্থান) (সৌরভের প্রবেশ) সৌরভ : ছেলেটা কে রে? গৌরব : রহমতের নাম শুনিসনি? সৌরভ : শুনেছি। মা-বাবা নেই। মেসে থেকে পরের টাকায় লেখাপড়া করেছে। গৌরব : খুব ভালো ছেলে ভাইয়া। যেমন সৎ তেমন গুণী। এ স্কুল থেকে গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েছিল। সৌরভ : ভালো না হাতি। গৌরব, তুই হলি বড় বাড়ির ছেলে। আব্বু একজন নাম করা গবেষক। তোর বন্ধু-বান্ধবও সে রকম হওয়া উচিত। গৌরব : টাকা দিয়ে মানুষের যোগ্যতা মাপা যায় না। সৌরভ : না না, এটা ঠিক না। আমি কথাগুলো আব্বুকে বলবো। গৌরব : নালিশ করে করে আব্বু-আম্মুর কান ঝালাপালা করে তুলেছিস। যা- যা ইচ্ছে তাই কর। সৌরভ : তুই খুব ভালো মানুষ তাই না। কাল আব্বুর কাছে ঝাড় খেয়েছি তোর কারণে। কথাটা মনে থাকে যেন। (দৃশ্যান্তর) দৃশ্য-১০/আউটডোর স্থান : স্কুল মাঠ চরিত্র : জুয়েল, পলাশ ও সৌরভ (জুয়েল পলাশের আলাপচারিতা) জুয়েল : চিন্তা করিসনে পলাশ। প্রতিযোগিতা মানেই হার-জিত। কেউ পরবে বিজয়ের মালা, আর কেউ পরাজয়ের গ্লানি নিয়ে ঘরে ফিরবে। এতে টেনশনের কী আছে। পলাশ : এভাবে ফাইনাল রাউন্ডে আউট হয়ে যাবো ভাবতেই পারিনি। (সৌরভের প্রবেশ) জুয়েল : ওই যে এসে গেছে। এতক্ষণ কোথায় ছিলি দোস্ত? সৌরভ : লাইব্রেরিতে। ভীষণ ঝামেলায় ছিলাম। পলাশের রেজাল্ট কী? জুয়েল : আউট। সৌরভ : এ জন্য মন খারাপ তাই না। আমি আগেই বুঝেছিলাম। তাই কোন ইভেন্টে নাম দেয়নি। জুয়েল : পকেটে টেনশনের ওষুধ আছে। সৌরভ : দেখি কী ওষুধ। (পকেটে হাত দেয়) এ কী! তোর পকেটে সিগারেট! আমার আব্বু কী বলেন জানিস? সিগারেট না খেলে নাকি লেখা যায় না। রিসার্চে ভালো ফল পাওয়া যায় না। এতে কী যে মজা আল্লাই জানেন। জুয়েল : ত্ইু ক্লাস টেনের ছাত্র। এখনো সিগারেটের মজা বুঝিসনে। তাহলে দুনিয়াকে চিনবি কিভাবে। চল এখুনি শিখিয়ে দেবো। সৌরভ : না, না, আমি না, আমি যাবো না। জুয়েল : আরে, আমরা তো আর নেশা করছিনে। একটু টেস্ট করবো। পলাশ : তা একবার করা যায়। চল সৌরভ। (প্রস্থান দৃশ্যান্তর) দৃশ্য-১১/ ইনডোর স্থান : পারিবারিক লাইব্রেরি চরিত্র : জিসান, সৈকত, দিলদার, শৈবাল ও সৌরভ (লাইব্রেরিতে ড. সৈকত ও জিসান) জিসান : স্যার, আমাদের সুপারিশ অনুযায়ী চোরাচালানবিরোধী টাস্কফোর্স গঠিত হয়েছে। সৈকত : তার মানে আমি একটা বড় ধরনের অ্যাওয়ার্ড পেতে যাচ্ছি। এখনই শৈবালকে ফোন দাও। একটা পার্টির আয়োজন করি। (দিলদারের প্রবেশ) দিলদার : কিছু কইতাছেন স্যার? সৈকত : অ্যাওয়ার্ড চিনিস? দিলদার : হেইডা কি গৃহপালিত জন্তু না বন্য জন্তু? সৈকত : পদকের নাম শুনেছিস? নোবেল? দিলদার : না, না, হেই বেল কহনো খাই নাই। তয় কতবেল খাইচি। লবণ দিয়া খাইতে খুব মজা। সৈকত : এইনে, এক্ষুনি অর্ডার দিয়ে আয়। (টাকা দেয়) দিলদার : স্যার ৫ শ’ টাকা! সৈকত : আজ আর খালাম্মাকে ডিস্টার্ব করবিনে। সোজা চলে যাবি রোজ গার্ডেনে। (দিলদারের প্রস্থান) জিসান : একদম সেকেলে মানুষ। সৈকত : ওকে নিয়ে বাড়িতে খুব মজা হয়। সৌরভ : আসতে পারি আব্বু? (সৌরভের প্রবেশ, আব্বুর কানের কাছে মুখ নিয়ে কী যেন বলে) সৈকত : তারপরও টেস্ট পরীক্ষায় গৌরব তোর চেয়ে বেশি নম্বর পেয়েছে। সৌরভ : আমি কম নম্বর পেয়েছি ঠিকই। কিন্তু দেখ, সেন্টার পরীক্ষায় ভালোই করবো। সৈকত : কোন জাদু জানিস নাকি? না-পড়ে ভালো রেজাল্ট করবি। সৌরভ : তোমরা আগের মানুষ। কিভাবে পরীক্ষায় ভালো করতে হয় বুঝবে না। সৈকত : বুঝতেও চাইনে। আমি দেখতে চাই কে কতটুকু লেখাপড়া করে। গৌরব তো বইয়ের পোকা। আর বইয়ের সাথে তোর কোনো সম্পর্কই নেই। ওর বিরুদ্ধে কিছু বললেই তোমরা উল্টো আমাকে পাকড়াও করো। ঠিক আছে আর বলবো না। (প্রস্থান) সৈকত : জিসান, কিছু বুঝতে পারলে-ভাইয়ের বিরুদ্ধে নালিশ করতে এসেছে। অথচ ছোটবেলায় দু’জনের মধ্যে কী মিল ছিল। এখন দু’জন দু’রকম হয়ে যাচ্ছে। এক হাঁড়ির ভাত খেয়ে, এক খাটে শুয়ে কেন যে এমন হচ্ছে! (একগাদা পেপার নিয়ে শৈবালের প্রবেশ) জিসান : কী ব্যাপার, এতো পেপার? শৈবাল : দেখেন কী লিখেছে। টাস্কফোর্সের অনেক সদস্য নাকি চোরাচালান সিন্ডিকেটের গডফাদার এবং ঘাটমালিক। সৈকত : তাতে হতাশ হবার কিছু নেই। মাদকমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে টাস্কফোর্স কী ভূমিকা রাখে সেটাই আমাদের দেখার বিষয়। (সৌরভের প্রবেশ) সৌরভ : আব্বু, আমার কথা বিশ্বাস হয় না, তাই না? তোমার গুণধর ছেলে পড়ার টেবিলে কী বই পড়ছে স্বচক্ষে দেখে যাও। (হাত ধরে টানে। প্রস্থান।) (দৃশ্যান্তর) [চলবে]
আরও পড়ুন...