পরশ পাথর -মোস্তফা রুহুল কুদ্দুস
নাটিকা ফেব্রুয়ারি ২০১৭
চ রি ত্র লি পি মূল চরিত্র খন্ড চরিত্র ড. সৈকত : গবেষক নুরু মামা : চা দোকানি মি. জিসান : গবেষণা সহকারী শোভন : সাধারণ ছাত্র মি. শৈবাল : গবেষণা সহকারী পিয়ন : স্কুল পিয়ন শিরিন : সৈকতের স্ত্রী ওসি : পুলিশ অফিসার সৌরভ : সৈকতের বিপথগামী ছেলে পুলিশ-১ : কনস্টেবল গৌরব : সৈকতের আদর্শবান ছেলে পুলিশ-২ : কনস্টেবল দিলদার : সৈকতের কাজের লোক ডাক্তার : নামেই পরিচয় প্রধান শিক্ষক : নামেই পরিচয় নার্স : নামেই পরিচয় জুয়েল : খারাপ ছাত্র ১ম ব্যক্তি : পাবলিক পলাশ : খারাপ ছাত্র ২য় ব্যক্তি : পাবলিক রহমত : আদর্শবান ছাত্র ছাত্র-ছাত্রী : সাধারণ শিক্ষার্থী দৃশ্য-২১/ আউটডোর স্থান : রাস্তা চরিত্র : প্রথম ব্যক্তি ও দ্বিতীয় ব্যক্তি (রাস্তায় মানুষের ভিড়। হৈ হুল্লোড়। স্কুল বাস এসে আটকে যায় সেখানে) ১ম ব্যক্তি : এবার দেখি আরেক লোক ধরা খাইছে। ২য় ব্যক্তি : দেখি এই লোকের কি সাজা হয়। ১ম ব্যক্তি : না, না, হেরা মানুষ না, হেরা অমানুষ। (দৃশ্যান্তর) দৃশ্য-২২/ ইনডোর স্থান : ড্রয়িং রুম চরিত্র : সৈকত, সৌরভ, জিসান (পেপার পড়ে সৈকত। স্কুল ড্রেসে প্রবেশ করে সৌরভ) সৌরভ : আব্বু- সৈকত : (মাথা তুলে) কী কম্পিউটার শেখা এখনো শেষ হয়নি? সৌরভ : আব্বু (কান ধরে) এই কান ধরে বলছি কোথাও আড্ডা দেয়নি। সৈকত : তাহলে এতো দেরি হলো কেন? সৌরভ : ফেনসিডিলসহ এক লোক ধরা পড়েছে। তাই দেখতে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায়। আমাদের গাড়ি সেখানে আটকা পড়েছিল। সৈকত : ফেনসিডিলসহ! ঠিক বলছিস তো? সৌরভ : বিশ্বাস না হয় এখনই খোঁজ নিয়ে দেখ। সৈকত : (জিসানকে ফোন করে) জিসান, দেরি করছো কেন? এখনই চলে এসো। জরুরি খবর আছে। সৌরভ : আব্বু, কাল আমাকে ৫ শ’ টাকা দিতে হবে। খুব জরুরি। সৈকত : যখন প্রয়োজন হয় তখন বলবি। যা ভেতরে যেয়ে খেয়ে নে। (সৌরভ প্রস্থান) ও জিসানের প্রবেশ) ফেনসিডিলের খবর শুনেছ? জিসান : জি স্যার। সেটা নিশ্চিত হওয়ার জন্য অফিসে আসতে লেট হলো। সৈকত : সে ধরা খেল কিভাবে? জিসান : ডিবি পুলিশ ধরেছে। স্যার, আপনার মনে আছে- কয়েকদিন আগে ফেনসিডিল বহনের দায়ে আরেক জনের জেল হয়েছিল। সৈকত : সেটা একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা। একজন পথভ্রষ্ট একজনকে দিয়ে সবকিছু মূল্যায়ন করা ঠিক হবে না। তবে এসব ঘটনা প্রমাণ করে আমাদের এবারের থিউরিটাও ভুল ছিল। শুধু সাজা দিয়ে মাদকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব না। আমাদের এত দিনের পরিশ্রম, কোটি কোটি টাকা সব পানিতে গেছে। জিসান : তাহলে কি রিসার্চ বন্ধ করে দেবেন? সৈকত : রিসার্চ বন্ধ হলে ডোনারদের টাকাও বন্ধ হয়ে যাবে। কাজেই রিসার্চ আমাদের চালাতেই হবে। তবে আর দেশি ফর্মুলা নয়। মাদক থেকে রক্ষা পেতে বিদেশি জার্নাল, আইনজ্ঞ ও বড় বড় মনীষী কী বলেছেন দেখ। জিসান : থ্যাংক ইউ স্যার। আমি আজই কাজ শুরু করছি। আসি স্যার। (প্রস্থান) সৈকত : ভেবেছিলাম মাদকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার থিউরি দিয়ে একটা অ্যাওয়ার্ড নেবো। কিন্তু যেখানে যাচ্ছি সেখানেই হোঁচট খাচ্ছি। কি যে হলো- (স্কুল ড্রেসে গৌরবের প্রবেশ) গৌরব : (আব্বুর পদধূলি নিয়ে) আব্বু সেদিন তোমার সাথে বেয়াদবি করেছি। আমাকে ক্ষমা করে দাও। সৈকত : পাগল ছেলে। এই বয়সে ভুল একটু হতেই পারে। কোনো মা-বাবা সেটা মনে রাখে না। তবে আমার একটাই কথা-আগেও বলেছি, এখনও বলছি- ছাত্র নং অধ্যয়নং তপ। পড়ার টেবিলে যেন বাজে বই না দেখি। (দৃশ্যান্তর) দৃশ্য-২৩/ইনডোর স্থান : ড্রেসিং রুম চরিত্র : শিরিন ও সৌরভ (সৌরভ আয়নার কাছে দাঁড়িয়ে বার বার নিজকে দেখে। জামা প্যান্ট ক্যাপ চশমা পরে। প্রবেশ করে শিরিন) শিরিন : সেজে গুজে কোথায় যাচ্ছিস? সৌরভ : আজ ১লা বৈশাখ। আব্বু ৫ শ’ টাকা দেবে। তুমি দেবে না? শিরিন : (বিস্ময়ে) ৫ শ’ টাকা! এতো টাকা কী করবি? সৌরভ : ওই, জেরা শুরু হয়ে গেল। বলেইতো বিপদে পড়লাম। থাক আম্মু, তোমাকে আর টাকা দিতে হবে না। (দৃশ্যান্তর) দৃশ্য-২৪/ ইনডোর স্থান : ড্রয়িং রুম চরিত্র : সৈকত, সৌরভ, ও প্রধান শিক্ষক (সৈকত পেপার পড়ে। প্রবেশ করে সৌরভ) সৈকত : না, কোনো ভালো খবর নেই। (সৌরভের প্রবেশ) সৌরভ : আব্বু, টাকা দাও। সৈকত : কী করবি? সৌরভ : স্কুলে ফাংশান আছে। শিগগির দাও- ১০টার আগেই পৌঁছাতে হবে। সৈকত : শিরিন, আলমারি থেকে সৌরভকে ৫ শ’ টাকা দাও। (সৌরভের প্রস্থান। কলিং বেল বাজে) সৈকত : দিলদার দেখ তো কে এলো। (প্রধান শিক্ষকের প্রবেশ) সৈকত : আরে মাস্টার যে। তা এখানে কেন? ফাংশান করছে কে? প্রধান শিক্ষক : ফাংশান! কোথায়? সৈকত : বাহ, গাছ থেকে পড়লে যেন। আজ স্কুলে ফাংশান হচ্ছে না? প্রধান শিক্ষক : নাতো। সামনে পরীক্ষা। ভাই এবার আর ফাংশান করছি না। কেন, কিছু হয়েছে নাকি? সৈকত : উত্তরটা মুখে না দিয়ে প্র্যাকটিক্যাল দিই। তুমি একটু ৫ মিনিটের জন্য দরোজার আড়ালে যাও। সিগন্যাল দিলেই চলে আসবে। (প্রধান শিক্ষক বাইরে যান) সৈকত : সৌরভ (সৌরভের প্রবেশ) ফাংশান কোথায় হচ্ছে রে? সৌরভ : স্কুলে। সৈকত : কে আয়োজন করেছেন। সৌরভ : হেড স্যার নিজেই। জানো আব্বু, স্যার, খুব পরিশ্রমী। আজ সারাদিন স্কুল থেকে নড়েননি। বাড়ি ফিরবেন ফাংশান শেষ হলে। (সৈকত ইশারা করে। প্রবেশ করেন প্রধান শিক্ষক) সৈকত : স্কুলে ফাংশান-স্যার নড়েননি, তাই না? কী কথা বলিস নে কেন? প্র: শিক্ষক : হয়েছে। এবার ওকে যেতে দিন। (সৌরভ মাথা নিচু করে বেরিয়ে যায়) সৈকত : এই হলো আমার বড় ছেলে। ফাংশানের কথা বলে একখানা ৫ শ’ টাকার কড়কড়ে নোট নিয়েছে। আপনি না এলে তো কিছুই বুঝতে পারতাম না। প্র: শিক্ষক : সুন্দর একটা নাটক দেখালেন। সৈকত : এভাবে আমাদের চোখের আড়ালে কত নাটক যে মঞ্চস্থ হচ্ছে-তার ঠিক ঠিকানা নেই। এবার বল, কী মনে করে এলে? প্র: শিক্ষক : এসেছিলাম সৌরভের বিরুদ্ধে নালিশ নিয়ে। কিন্তু যা দেখলাম তাতে নালিশের কথা ভুলে গেছি। সৈকত : গৌরবের খবর কী? প্র: শিক্ষক : টেস্ট পরীক্ষার রেজাল্ট দেখেছেন। আশা করি সেন্টার পরীক্ষায় সকলের মুখ উজ্জ্বল করবে। আসি স্যার। (দৃশ্যান্তর) দৃশ্য-২৫/ইনডোর স্থান : পাঠাগার চরিত্র : সৈকত, জিসান, শৈবাল ও দিলদার (টেবিলে বড় বড় ভলিউম বই। পড়তে পড়তে বইয়ের ওপর মাথা রেখে ঘুমিয়ে গেছেন সৈকত। চা নিয়ে প্রবেশ করে দিলদার) দিলদার : স্যার- সৈকত : (মাথা তুলে) ও দিলদার! ঘুম এসেছিল। কাল সারারাত বই পড়েছি। ২-১ ঘণ্টা পড়ে মার্কস তত্ত্ব বুঝা যায় না। দিলদার : আপনার চা। সৈকত : (চা নিয়ে) বুঝলি দিলদার, মার্কস তত্ত্ব বড় কঠিন জিনিস-সব মাথায় ঢোকে না। দিলদার : জে স্যার। সৈকত : আবার জে স্যার জে স্যার। বল, তত্ত্ব মানে কী? দিলদার : একদম পানির মতো সোজা। তত্ত্ব মানে গরম। যেমন ঘটি গরম। ত্যাল গরম, আপনে গরম। সৈকত : আমি গরম! দিলদার : ওই যে পুলাপানগো কথায় হঠাৎ কইরা চেইতা যান। হেই ডাই হইলো তত্ত্বকথা। স্যার, বুঝাইতে পারছি? সৈকত : চমৎকার ব্যাখ্যা। দিলদার : আসি স্যার। (দিলদারের প্রস্থান। জিসান ও শৈবালের প্রবেশ) সৈকত : এসেছো, আর তোমাদের কষ্ট করতে হবে না। মাদকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার থিউরি পেয়ে গেছি। জিসান : বলেন স্যার। সৈকত : সামাজিক আন্দোলন। এ আন্দোলন ছাড়া পৃথিবীর কোন আন্দোলন সাকসেসফুল হয়নি। শৈবাল : ঠিক বলেছেন স্যার। সৈকত : সুতরাং আজই বিষয়টা মিডিয়াকে জানিয়ে দাও। জিসান : এতদিন পর আপনার শ্রম সার্থক হয়েছে। সৈকত : এবার আমরা মাদকবিরোধী আন্দোলনে সফল হবোই হবো এবং একটা বড় অ্যাওয়ার্ড পাবো। শৈবাল : স্যার এবার কিন্তু ঘরোয়া পার্টিতে কাজ হবে না। সৈকত : অবশ্যই আমার বন্ধু-বান্ধবের জন্য রোজ গার্ডেন ফ্রি করে দেবো। (দৃশ্যান্তর) দৃশ্য-২৬/ ইনডোর স্থান : প্রধান শিক্ষকের কক্ষ চরিত্র : প্রধান শিক্ষক, সৌরভ ও পিয়ন (অফিসে ঢুকে পিয়নকে ডাকেন প্রধান শিক্ষক। প্রবেশ করে পিয়ন) প্র: শিক্ষক : ক্লাস টেনের সৌরভকে ডেকে দাও তো। (পিয়নের প্রস্থান) ড. সৈকত আমার ডাইরেক্ট স্যার। এখন তার ছেলে যদি আমার কাছে পড়ে অমানুষ হয়ে যায়। তাহলে জবাব দেবো কী করে। (সৌরভের প্রবেশ। মাথা নিচু করে দাঁড়ায়) নাটক তো ভালই দেখালে। বল, এত টাকা কিসে লাগে? সৌরভ : স্যার- প্র: শিক্ষক : থেমে গেলে কেন? সৌরভ : এখন আমরা বড় হয়েছি। বন্ধু-বান্ধব রয়েছে। তাদের সাথে মিশতে গেলে- প্র: শিক্ষক : তাই বলে প্রতারণা করে টাকা নেবে? তোমার বাবা আমার টিচার। তাই শত অপরাধের পরও তোমাকে টিসি দেইনি। ফারদার এমন অভিযোগ কানে এলে আমাকে সেটাই করতে হবে। সৌরভ : স্যার- প্র: শিক্ষক : রাত পোহালে পরীক্ষা। এখন বাজে চিন্তা বাদ দিয়ে মনোযোগ দিয়ে লেখাপড়া কর। যাও। (প্রস্থান : দৃশ্যান্তর) দৃশ্য-২৭/ আউটডোর স্থান : চা স্টল চরিত্র : জুয়েল, পলাশ, সৌরভ ও নূরু জুয়েল : মামা, চা দাও। নুরু : বাকি টাহা। জুয়েল : এক সাথে দেবো। নুরু : পরীক্ষা শেষ অইলে কাউরে খুইজ্যা পাওয়া যাবে না। টাহাটা আগেই দিয়া দিয়ো। (চা দেয়) পলাশ : এখনো সৌরভ এলো না। জুয়েল : ওর সব কাজে হেলামি। এতো করে বলে এলাম- অথচ এখনো খোঁজ নেই। পলাশ : ফোন দে। (জুয়েল ফোন দিতেই সৌরভের প্রবেশ) সৌরভ : হেড স্যার ডেকেছিলেন। কী যে লজ্জা। সত্যি জুয়েল, এমন বিপদে আমি কখনো পড়িনি। জুয়েল : মামা, আরেক কাপ। চিনি একটু বেশি হবে। শোন, এতো শরম নিয়ে দুনিয়ায় বাস করা যায় না। বলতো সেদিনের টাকাটা কি পানিতে গেছে? সৌরভ : না, না, তা যায়নি। চল, আরেক দিন ঘুরে আসি। জুয়েল : দূরের পথ। ভ্যান রিকশা পাওয়া যায় না। তারচেয়ে রেল কলোনিই ভালো। পলাশ : আমরা রাত ৯টা পর্যন্ত ওখানে কাটাই। সৌরভ : ঠিক আছে, জাস্ট ৫টায় চলে আসবি। তোকে সন্ধ্যার আগেই ছেড়ে দেবো। জুয়েল : (কানের কাছে মুখ নিয়ে) এই, স্যার কী বললো রে? সৌরভ : লেখাপড়ায় মনোযোগী না হলে টিসি দেবেন। জুয়েল : তাহলেতো ভালোই হয়। স্বাধীনভাবে ঘুরতে পারবি, সবার সামনে আর কানমলা খেতে হবে না। পলাশ : নো চিন্তা ডু স্ফূর্তি। (গানের ভঙ্গিতে) খাও দাও স্ফূর্তি কর। সৌরভ : নারে, ব্যাপারটা অতো সহজ না। তোদের বাবারা হয়তো কিছু বলবে না। কিন্তু আমার আব্বু সহজে ছাড়বে না। জুয়েল : ওকে। চা পর্ব এখানেই শেষ। বিকেল ৫টার কথা যেন ভুলে জাসনে। সাথে কিছু টাকা আনিস। পলাশ : আড্ডা দিতে গেলে কিছু খরচতো হবেই। সৌরভ : টাকার কোন অভাব হবে না। কিন্তু আড্ডাটা যেন সেদিনের মতো জমজমাট হয়। জুয়েল : চল ওঠা যাক। নূরু মামা চিন্তা করো না। তোমার পাওনা কালকেই দিয়ে দেবো। (প্রস্থান। দৃশ্যান্তর) (আগামী সংখ্যায় সমাপ্য)
আরও পড়ুন...