পরীর মোবাইল ফোন

পরীর মোবাইল ফোন

গল্প এপ্রিল ২০১৫

অঞ্জন শরীফ#

তাসনিয়াদের বাড়ির সামনে ছোট্ট একটা বাগান। নানা রকম ফুল ফোটে বাগানে। আর জোছনা রাত হলেই পরীরা উড়তে উড়তে এই বাগানে চলে আসে। আজ জোছনা রাত। তাসনিয়া পরীদের জন্য অপেক্ষা করছে। ওর খেলার সাথী মিমিয়াও এসেছে। মিমিয়াদের বাড়ি তাসনিয়াদের বাড়ির পাশে। পরীরা ওদের পরম বন্ধু। মিমিয়া বাগানের ভেতর পায়চারি করছে। আর আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে তাসনিয়া। লাখ লাখ তারা জ্বলছে আকাশে। তাসনিয়া তারার দিকে তাকিয়ে বললো, এই মিমিয়া আমার পাশে বসো। মিমিয়া তাসনিয়ার পাশে এসে বসে। তারপর বলে, - দ্যাখো তাসনিয়া কী সুন্দর চাঁদ! - হ্যাঁ, চাঁদ দেখতে খুব ভালো লাগছে, তবে পরীরা এলে আরও ভালো লাগবে। - এসে পড়বে, ওই দ্যাখো, ওই নারকেল গাছটার আড়ালে পরীরা ভেসে আসছে। তাসনিয়া মনে মনে খুশি হলো। পরীরা ঠিক ওদের সামনে এসে দাঁড়ায়। লালপরী আর নীলপরী। লালপরী বলে, তোমরা কেমন আছো? তাসনিয়া ও মিমিয়া একসঙ্গে উত্তর দেয়, আমরা খুব ভালো আছি। এবার নীলপরী হাসিমুখে ওদের দিকে তাকায় Ñ তোমাদের জন্য আজ আমরা একটা উপহার নিয়ে এসেছি। - কী উপহার। বলল মিমিয়া। পরী হাসিমুখে বলল, তোমাদের জন্য মোবাইল ফোন এনেছি। তোমাদের যখন ইচ্ছা আমাদের সঙ্গে কথা বলতে পারবে। তাসনিয়া আনন্দিত হয়ে বললো, তোমরাও কি মোবাইল ব্যবহার কর? - হ্যাঁ আমরাও মোবাইল ব্যবহার করি তবে আমাদের কোন ফ্লেক্সি বা বিল দিতে হয় না। - তাই! তাহলে তো খুব মজা হবে। আমরা তোমাদের সঙ্গে ফ্রি কথা বলতে পারবো। - হ্যাঁ তোমাদের অনেক সুবিধা হবে, এই নাও মোবাইল। নীলপরী মোবাইল সেটটা তাসনিয়ার দিকে এগিয়ে দেয়। সোনালি রঙের মোবাইলটা তাসনিয়ার খুব পছন্দ হলো। সে অবাক চোখে মোবাইল দেখছে। লালপরী তাড়া দেয়Ñ বন্ধুরা এখন আমাদের বিদায় নিতে হবে। আমরা আমাদের রাজ্যে চলে যাবো। তোমরা আমাদের মোবাইলে ফোন করবে কেমন? লালপরী আর নীলপরী ডানা মেলে চলে যায়। তাসনিয়া এবং মিমিয়া কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে পরীদের দিকে। হঠাৎ মিমিয়া বলে ওঠে, - এই, পরীর মোবাইল নাম্বারতো নেয়া হলো না। তাসনিয়া বললো, তাইতো ফোন নাম্বার ছাড়া ওদের সাথে কথা বলব কিভাবে? ওরা দু’জন আবারও অবাক চোখে পরীদের গমন পথে তাকিয়ে থাকে। তাসনিয়ার মন খারাপ হয়ে যায়। মিমিয়া সান্ত¡না দিয়ে বলে, মন খারাপ করিস নাতো, ওরা আবার যখন আসবে তখন ফোন নাম্বার নিয়ে নেবো। এরপর অনেকদিন কেটে যায়। কিন্তু পরীরা আর আসে না। তাসনিয়া সময় পেলেই বাগানে ছুটে আসে। পায়চারি করে আর মনে মনে ভাবে কবে যে পরীরা আসবে! ওদের দু’জনের কিছুই ভালো লাগে না। পড়ায় মন বসে না। খাবার-দাবারের প্রতিও তেমন কোনো আগ্রহ নেই। তাসনিয়া ভীষণভাবে পরীদের শূন্যতা অনুভব করে। ওর এইসব খামখেয়ালি দেখে ওর বাবা একদিন জিজ্ঞেস করেন, - কিরে মা, তোর কী হয়েছে। কয়েক দিন ধরেই দেখছি তুই ঠিকমতো খাস না, পড়াশোনা করিস না। তোর কী হয়েছে বলতো? তাসনিয়া আহ্লাদে বাবার কোলে উঠে বলে, বাবা আমাদের বাগানে পরীরা এসেছিল। ওরা একটা মোবাইল দিয়ে গেছে। কিন্তু ওদের নাম্বার নিতে ভুলে গেছি, এখন ওদের সাথে কথা বলতে পারছি না। ওরাও আর আসে না। আমার কিছুই ভালো লাগে না। বাবা মুচকি হেসে বললেন, দুর বোকা! পরীরা কী মোবাইল ব্যবহার করে? তুই ভুল দেখেছিস। বাবা কোল থেকে তাসনিয়াকে নামিয়ে দিয়ে আবার বলেন, তুই কল্পনায় ওদের দেখেছিস। ওসব কিছু না। ওসব চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেল। যা এখন পড়তে বস। তাসনিয়া স্বভাবসুলভভাবে বই নিয়ে পড়তে বসে। স্কুল থেকে অনেক হোমওয়ার্ক দিয়েছে। সেগুলো করতে হবে। কিন্তু পড়ায় ওর মন বসে না। ও আবার বাগানে যায়। বাগানে নুতন নুতন ফুল ফুটেছে। দেখতে খুব সুন্দর লাগছে। কিন্তু পরীদের ছাড়া তাসনিয়ার এখন এক মুহূর্তও ভালো লাগে না। ও আকাশের দিকে তাকায়। মেঘেরা লুকোচুরি খেলছে। না, সেখানেও পরীরা নেই। তাহলে পরীরা গেল কোথায়? তাসনিয়া আবারও আকাশের দিকে তাকায় আর মনে মনে ভাবে, একদিন না একদিন পরীরা আসবেই, এই বিশ^াস নিয়েই তাসনিয়া অপেক্ষা করছে।

আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ