পাখি শিকার    -ফজলে রাব্বী দ্বীন

পাখি শিকার -ফজলে রাব্বী দ্বীন

তোমাদের গল্প ফেব্রুয়ারি ২০১৬

-‘এই সোহান, বিকেল বেলায় ঘুমাচ্ছিস কেন? পাখি শিকার করতে যাবি না?’
জানালার কাছ থেকে কে যেন জোর গলায় সোহানকে ডাক দিল। আচমকায় ঘুম থেকে লাফিয়ে ওঠে তাকিয়ে দেখে তার বন্ধু আরিফ।
-‘একটু দাঁড়া, আমি গুলতিটা সঙ্গে নিয়ে আসছি।’
চারদিকে শীতের কনকনে ঠান্ডা বাতাসের ভেতর জ্যাকেটটা গায়ে জড়িয়ে কংস নদীর ধারে দুই বন্ধু চলে আসে। চোখধাঁধানো এমন সুন্দর প্রকৃতির বুকে হাজার পাখির কলরবে মুখরিত এই কংস নদীকে খুব ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছে সোহান। হিমেল ঠান্ডা বাতাসে তার এলো চুলগুলো কাশফুলের মত দোলছে। হরেক পাখির এপাশ থেকে ওপাশে উড়া দেখে আরিফের গলা বেজে ওঠে-‘কিরে, দাঁড়িয়ে আছিস কেন? গুলতিটা বের করে আমার মতো দু-একটাকে লাগা।’
কথাটা শুনার সাথে সাথেই সোহান তার গুলতিটাকে বের করে। তারপর শক্ত পাথরের টুকরোগুলো গুলতির মাথায় ধরে সোজা কতক পাখির ভিড়ের মধ্যে ছুড়ে মারতে থাকে। একবার এক ঝাঁক পাখির ভেতর থেকে একটা পাখি ছিটকে মাটিতে পড়ে যায়। আনন্দে সোহানের সুখ যেন আর ধরে না! দৌড়ে পাখিটাকে ধরে একটা পিঞ্জিরার ভেতর আটকে রাখে সে। সন্ধ্যার আগে সোহান আর আরিফ মিলে সাতটা পাখি শিকার করে বাড়ির দিকে রওনা দেয়।
বিকেলের ছিটেফোঁটা একটু ঘুমের জন্য কোনভাবেই রাতে তার ঘুম আসছিল না আরিফের। তবুও বিছানায় শুয়ে শুয়ে নানান কথা ভাবতে লাগলো সে। পাখি শিকারের চিন্তায় হঠাৎ সে কাউকে কিছু না বলে নদীর ধারে চলে গেল। গুলতিটাকে তাক করে একটা মা পাখিকে সে মারতে যাবে এমন সময় তার পায়ের কাছে ছোট্ট একটা পাখির ছানা আস্তে করে খোঁচা দিল।
-‘আমার মাকে তুমি মেরে ফেলেছো কেন? তুমি একটা খুনি, অপরাধী, দুষ্টু ছেলে।’
কথাটা শুনার সাথে সাথেই বেশ চমকে উঠল সোহান। ‘ছোট্ট পাখির ছানাটা দেখি মানুষের মত কথা বলতে পারে!’ একটু হকচকিয়ে উঠে ছানাটাকে জিজ্ঞাসা করে সে-
-‘এই যে ছানা, তোমার মাকে আবার আমি কবে মারলাম?’
-‘কেন, ভুলে গেছো নাকি! কালকে আমার মা যখন আমাকে নিয়ে আকাশে উড়াল শিখাচ্ছিল তখন তুমিইতো আমার মাকে গুলতি দিয়ে মেরেছিলে। এখনও কি মনে পড়ছে না?’
-‘ও এই কথা, মেরেছি তো কি হয়েছে?’
-‘কি আবার হবে! তোমার তো মা বেঁচে আছে। যদি না বেঁচে থাকতো না তবে বুঝতে মা ছাড়া কেমন লাগে। আর কোনদিনই তোমাদের এই নদীতে বেড়াতে আসবো না।’
পাহাড়ের মতো হাজারো জমানো দুঃখগুলোকে বুকের ভেতরটায় আটকে ধরে দুচোখের জল মুছতে মুছতে ছোট্ট ছানাটা একা একাই আকাশের দিকে উড়াল দিল।
সোহানও তখন পেছন থেকে অনেকবার করে ছোট পাখিটাকে ডাক দিল। কিন্তু ছানাটা আর ফিরে তাকাল না!
হঠাৎ কে যেন সোহানকে ডাকছে। চোখ খোলে তাকিয়ে দেখে তার মা।
-‘সকাল হয়ে গেছে, আর কত ঘুমাবি এবার উঠ্’।
হতভম্ব হয়ে কিছুক্ষণ দুচোখ কচলাতে কচলাতে সবকিছু বুঝতে পারে সোহান। তার মানে এতক্ষণ সে একটা স্বপ্ন দেখছিল। কিন্তু সেই ছোট্ট পাখিটার জন্য যে সে কাঁদতে কাঁদতে তার বালিশটা ভিজিয়ে ফেলেছে এটা তো একদম-ই বাস্তব।
বিছানার পাশেই গুলতিটাকে নিয়ে নদীর পাড়ে দৌড়ে ছুটে যায় সোহান। তারপর সোজা পানির ভেতর সেটাকে ছুড়ে মেরে মনে মনে শপথ করতে থাকে আর কোনদিন একটা পাখিকেও সে শিকার করবে না। এমনকি অন্য কাউকে করতেও দেবে না।
                        
আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ