পাগল   -মুহাম্মদ ইব্রাহিম বাহারী

পাগল -মুহাম্মদ ইব্রাহিম বাহারী

গল্প আগস্ট ২০১৫

kk-pপৃথিবীর বিভিন্ন দেশের হাট-বাজারের খোঁজ খবর রাখি না তবে বাংলাদেশের অধিকাংশ হাট-বাজারের বিভিন্ন প্রকৃতির পাগলের সংখ্যা যে দিন দিন বৃদ্ধি পাইতেছে, তাহা পাগলদরদিরা ছাড়াও অদরদিদের চোখও যেনো এড়াইয়া যাইতেছে না। বাজারের নোংরা গলিতে দোকানের বারান্দায় কাঠের টপ, দোকানের তলায়, রাস্তার ধারে বিভিন্ন ভঙ্গিমায় উহাদের দেখা যায়। উহাদের মধ্যে কেহ আকাশের দিকে চাহিয়া কি যেন মন্ত্র পাঠে বিব্রত। কেউ বিড় বিড় করিয়া নিবিড় মনে তাহার স্বজনের সাথে যেনো কথা বলিতেছে। বিরাট মাঠের অসংখ্য দর্শক শ্রোতার মাঝে যেনো নাচ-গানে মত্ত রহিয়াছে। কেউ সহস্র শ্রোতার মাঝে যেনো গলা ফাটাইয়া বক্তৃতা দিতেছে। কেহ বা আবার বিকট মূর্তিতে বিকট আওয়াজে পথিকদের আতঙ্কগ্রস্ত করিতেছে। কাহাকেও আবার ভগ্ন হৃদয়ে বসিয়া থাকিতে দেখা যায়। কেউ কেউ পরম শান্তিতে যেনো বসিয়া উকুন খোঁজে। কেউ কেউ রাস্তার এ মাথায় ও মাথায় সৈনিকদের মতো কুইক মার্চে ব্যস্ত থাকে। কেউ বা ফুঁপিয়ে কাঁদে আবার কেউ কেউ অকারণে খিল খিল করিয়া হাসে। একেক পাগলের একেক রকমের কান্ড। একেক রকমের ধরন।
মানুষের দয়া অনুকম্পার ওপর উহাদের জীবিকা নির্বাহ। তবে অধিকাংশ পাগল খাওয়ার ব্যাপারে উদাসীন। ইহাদের মধ্যে অনেকেই হাত পাতিয়া চাহিয়া খায়। অনেকেই আছে চেয়ে খায় না। আল্লাহর ওয়াস্তে যে যাহা হাতে দিয়ে যায় তাহাতেই খুন্নিবৃত্তি নিবারণ, রাত্রিতে নারী-পুরুষ উভয় পাগলকে মশার উপদ্রব সহ্য করতে হয়। যেহেতু কোনো পাগলকে মশারি টাঙাইয়া শুইতে দেখা যায় না। দিবা রাত্রি উহার সর্বদা ঘুরিয়া বেড়ায়। অথচ অদ্যাবধি শোনা যায়নি যে কোনো পাগলকে ভূত-পেতিœতে চাপিয়া মারিয়াছে বা কুকুরের কামড়ে কোনো পাগলকে আহত করিয়াছে, কিন্তু দিনের বেলায় ছেলেপুলেদের হাত হইতে উহারা কোনো মতেই পরিত্রাণ পায় না।
শত নির্যাতন চাপিয়া রাখিয়া উহারা ঘুরিয়া বেড়ায়। কোনো বাদ প্রতিবাদ নাই। আজ এই শহরে কাল ঐ শহরে। সরকারি চাকরিজীবীদের মতো কেউ যেনো উহাদের পোস্টিংয়ের ব্যবস্থা করিয়া দেয়। তুলে খাওয়ার অপরাধে বাজারের দোকানদাররা উহাদের খুবই মারপিট করে। অনেক সময় বিনা কারণেও অনেক সময় শারীরিক নির্যাতনের শিকার হইতে হয়। কেউ কেউ আবার ছেলেপুলেদের মতো শখ করিয়া পাগলের ওপর ঢিল খোলা ছুড়িয়া মারিয়া থাকে। অত্যাচার আছে অথচ প্রতিবাদ নেই। শরীরের আঘাতপ্রাপ্ত একটু হাত বুলানো ও দু’চোখ বাহিয়া কয়েক ফোঁটা তপ্ত অশ্রু গড়াইয়া যাওয়া ছাড়া প্রতিবাদের আর কোন পন্থা উহাদের জানা নাই।
এই ধরনের একজন পাগল সাতক্ষীরার নতুন বাজারে প্রায়ই দেখা যাইতো। তার সারা দিনের কাজ ছিলো বাজারের অলিগলি প্রদক্ষিণ করা। পাগলটা মাঝে মাঝে কোথায় যেনো হারাইয়া যাইতো। সারা দিন তার দেখা না মিললেও ভোরবেলা তাহাকে নির্ধারিত স্থানে দেখা যাইতো। সে সারা দিন না খাইয়া থাকিতো অথচ কাহারো কাছে কিছুই চাহিতো না। স্কুল ফিরতি ছেলেমেয়েরা তাহার পিছে লাগিতো এবং ইট খোয়া মারিয়া তাহাকে উত্ত্যক্ত করিতো। মাস তিনেক হইয়াছে পাগলটি যেনো শহরে পোস্টিংয়ে আসিয়াছে।
এই শহরের বিশিষ্ট ধনী কাদের মিয়া একদিন বিনা কারণে ঢিল ছুড়িয়া মারিল। তাহাতে পাগলটির মাথার চামড়া থেঁতলাইয়া সামান্য পরিমাণে রক্তপাত হইলো। সে কিন্তু তখনো লক্ষ্য করে নাই যে তাহার মাথা দিয়া রক্ত গড়াচ্ছে। বোধ করি পাগলটি বেশ ব্যথা পাইয়া নতুবা সে সজল নেত্রে কাদের মিয়ার দিকে অমন করিয়া তাকাইয়া থাকিবে কেন? ওদিকে কাদের মিয়া পাগলের অমন দৃশ্য দেখিয়া থমিয়া থামিয়া উচ্চস্বরে হাসিতে লাগিলো। ঠিক যেনো আষাঢ়ে ব্যাঙের ওপর বালকদের ঢিলের মতো। সজল চোখে তাকাইয়া সে যেনো কাদের মিয়াকে ব্যাঙদের মনের কথাগুলো বোঝাইতেছিল যে, ‘তোমাদের আনন্দ আর আমাদের মৃত্যু’। পাগলটিকে মারিয়া কাদের মিয়া যেনো বালকদের ব্যাঙ মারার আনন্দ অনুভব করিল। আর সেই আনন্দের শিহরণে উৎফুল্ল হইয়া সে বাড়ির দিকে রওনা হইল।
সে দিন রাত্রিতে কাদের মিয়ার একমাত্র ছেলে রফুর সারা শরীরে পাঁচড়া ঘায়ে ভর্তি হইয়া গেলো। ইহাতে বাড়ির সকলে দুর্ভাবনায় নিমজ্জিত হইলো। সংশয় বাড়ির সকলকে আতঙ্কগ্রস্ত করিয়া তুলিল। রাতারাতি এ কেমন রোগ। কাদের মিয়া দিশেহারা হওয়ার আগে পুত্রকে শহরের নামীদামি ডাক্তার দ্বারা চিকিৎসা করাইলো। পাঁচ-ছয় দিন এই ভাবে গত হইয়া কিন্তু রোগের কোনো উপশম হইলো না। মিয়া পরিবারের শোকের ছায়া নামিয়া আসিল। বিষণœ বেদনা কাদের মিয়াকে অনেক পুরানো পাপের মাঝখানে নতুন পাপের কথাটি স্মরণ করাইয়া দিল। হঠাৎ তার মানসপটে পাগলের সেই সজল চোখের করুণ দৃশ্য পশ্চিম আকাশের লালিমার মতো ভাসিয়া উঠিল। সাগরের মাঝখানে খাবি খাওয়ার সময় খড় বিচালিকে মানুষ যেমন অবলম্বন হিসাবে ব্যবহার করে ঠিক তেমনই কাদের মিয়া পাগলকে রোগগ্রস্ত পুত্রের অবলম্বন ভাবিয়া নিজে পাগল হইয়া পাগলের সন্ধানে হন্যে হইয়া খুঁজিতে লাগিলো। চারিদিকে লোক ফিট হইয়া গেলো। সারা শহর তন্ন তন্ন করা হইলো। শুধু এক-আধ দিন নয়, একাধারে দশদিন খুঁজিয়াও লাভ হইলো না। কত নতুন পাগল চোখে পড়িল কিন্তু সেই কাক্সিক্ষত পাগলের সন্ধান কোথাও মিললো না।
ক্রমে রফুর রোগ প্রবল হইয়া উঠিলো। বাড়ির সকলে তাহার আশা ছাড়িয়া দিয়াছে। দুই মাসে তাহার পিছে যাহা খরচা হইয়াছে তাহাতে তাহার ওজনের চাইতে কোন অংশে কম হইবে না। এতো খরচা করার পরও যখন আরাগ্যের চিহ্ন দেখা গেলো না তখন তাহার পিছনে খরচ করার মানসিকতা মিয়া সাহেবের লোপ পাইলো।
যন্ত্রণায় কাতর রফুর গায়ের মাংস পঁচিয়া খসিয়া পড়িতেছে। তাহার পাশে থাকা তো দূরের কথা ধার দিয়া অতিক্রম করাও দুঃসহ হইয়া পড়িয়াছে। বাড়িসংলগ্ন পাশের লোকেরা বিরক্ত বোধ করিতেছে। দিনে দিনে রফুর মাও অতিষ্ঠ হইয়া উঠিয়াছে। দেহের জ্বালা, মনের জ্বালা, বাড়ির লোকদের ঘৃণা পিতা-মাতার অতিষ্ঠতা সব কিছুই মিলিয়া রফুকে দূরে কোথাও যাওয়ার সঙ্কল্প বদ্ধমূল করিলো। পিতা-মাতার কষ্ট লাঘব করার এই ছাড়া আর কোনো পথ সে খুঁজিয়া পাইলো না। তাই অযথা সময়ক্ষেপণ করাটা সে প্রয়োজন বোধ করিলো না।
সকাল হইতে রফুকে কোথাও দেখা গেলো না। মায়ের বুকখানা শূন্যতায় হাহাকার করিয়া উঠিলো। বাড়ির কেউ তাহাকে খুঁজিতে আগ্রহী হইলো না। মানবতার কারণে এদিকে ওদিকে ধার আদায়ের মতো দেখিয়া শুনিয়া সকলে বাড়ি ফিরিলো। পাড়ার সকলে বলাবলি করিতে লাগিলো যাক ভালোই হইয়াছে। তাহা না হইলে সংক্রামক ব্যাধি যে, গ্রামে গ্রামে ছড়াইয়া যাইতো। সকলে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলিলেও কাদের মিয়ার মনটা বেদনায় ভরিয়া গেলো। ধুমধামের সাথে একমাত্র পুত্রের বিবাহের কার্য সম্পন্ন হইবে। নাতি-নাতনীতে ঘর ভরিয়া যাইবে, স্বজনদের কোলাহলে বাড়িটা মুখর হইয়া উঠিবে, তৎপরিবর্তে বাড়িটা শূন্য হইয়া গেলো। কোথায় খাইবে, কোথায় গিয়া দাঁড়াইবে, কেবা তাহার পরিচর্যা করিবে, হাত পাতিলে লোকে দূর দূর করিয়া তাড়াইয়া দিবে। অবস্ত্রে অনাহারে ফুটপাথে মরিয়া থাকিবে এই সব কথা ভাবিয়া কাদের মিয়ার হৃদক্রিয়া বন্ধ হওয়ার উপক্রম হইলো। কেন এমন হইলো! এ কথা ভাবিতেই বিগত দিনের পাপরাশিরা তাহার মনমন্দিরে হাজির হইয়া তাকে পীড়া দিতে লাগিলো। পিতার পাপের কারণে পুত্রের অমঙ্গল ডাকিয়া আনে এই কথা স্মরণ করাইয়া কাদের মিয়াকে কে যেনো শঙ্কিত করিলো। তাই যথা নিয়মে অজু গোসল সারিয়া মসজিদের এক কর্নারে স্থান করিয়া লইলো। ওদিকে রফুর পাঁচ দিন গত হইলো বাড়ি ছাড়িয়াছে। দূরবর্তী একটা শহরের একটা নোংরা গলিতে তার রাত্রি অতিবাহিত হইতেছে। যাহার পাশে যাইতেছে দূর দূর বলিয়া তাড়াইয়া দিতেছে। দু’মুঠো ভাত খাওয়ার জন্য কার না দ্বারে যাইতেছে। পরিবর্তে শুধু বের হ, সরে যা, হাত উঠিয়ে, লাঠি উঠিয়ে বাহির করিয়া দেওয়া হইতেছে। পাগল দেখিলে তা লোকেরা ঘৃণা করে তার পর আবার পচা ঘা। দূর ছাই করা ছাড়া লোকের বা কি করার থাকিতে পারে।
ক্ষুধার জ্বালায় ও ঘায়ের টাটানি তাকে দুর্বিষহ করিয়া তুলিয়াছে। তাই সে এগুলো ছাড়িয়া দিয়া মাছের গলিতে হাজির হইয়াছে। আজ সে বড্ড ক্লান্ত। তাই সে একটা দেওয়ালে ঠ্যাস দিয়া লোকের দ্বারে হাত পাতিয়াছে। অনেকে নাক ধরিয়া দু-এক টাকা দিয়া যাইতেছে। আবার অনেকেই মুখ ভ্যাংচাইয়া ঘৃণা বর্ষণ করিয়া যাইতেছে। ছেলের শোকে বিহবল রফুর মা এক প্রকার খাওয়া ছাড়ান দিয়াছে। একমাত্র পুত্র সন্ত্রানটি লোকের দ্বারে হাত পাতিয়াছে এ কথা স্মরণ হইতে মা জননী সংজ্ঞা হারাইতেছে। ধন ঐশ্বর্যে পরিপূর্ণ বাড়িটার যেনো উজ্জ্বলতা নষ্ট হইয়া আসিতেছে। সদ্য শোকের কালো ছায়া বাড়িটাকে আস্তে আস্তে ঘিরিয়া ফেলিতেছে। দাসী-বান্দী পাড়া পড়শিরা মাকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য মুখে হাহুতাস করিতেছে, কিন্তু ঐ পোকানো ঘাসহ রফু ফিরিয়া আসুক তাহা কেউ কামনা করিতেছে না। স্বজনদের বিলাপ রফুর মার কানে সুচের মত বিঁধিতে লাগিলো। তাহাকে খুঁজিয়া বাহির করিবার জন্য স্বজনদের মধ্যে একটা লোকও প্রস্তুত হইলো না।
মাছের গলিতে রফুর আরো পাঁচটি রাত অতিবাহিত হইলো। এখান থেকে সে অন্যত্র চলিয়া যাইবে বলিয়া উঠিয়া কয়েক পা হাঁটিতে তাহার চোখে একটি পাগল পড়িলো। তিনখানা ইটের ওপর হাঁড়ি রাখিয়া পাগলটি কি যেনো পাকাইতেছে। রফুর চোখে চোখ পড়িতে পুরানো পাগলটি সাগ্রহে রফুকে বলিল “এসো বাবা এসো” বসো আমার পাশে। আজ তোমাকে নতুন একটা খাদ্য খাওয়াইবো। তোমার গায়ে ঘায়ের জন্য পরিবারের লোকেরা তোমাকে অবহেলা করিয়াছে বুঝি? পাগলের দরদমাখা কথায় রফুর মন শান্ত হইলো। সে পাগলের পাশে জানু পাতিয়া রফুর সাথে কথা বলিতে বলিতে তখনো হাঁড়িতে জ্বাল দিতেছিল। পাগলের হাঁড়ির মধ্য হইতে পচা দুর্গন্ধমুক্ত খাদ্যের ঘ্রাণ বাহির হইতেছিল। পাগল বলিল, “বাবা আমার পাকানো খাবার তুমি খাইতে পারবেতো? রফু উত্তর করিল তুমি যদি খাইতে পারো তাহা হইলে আমার খাওয়ার আপত্তি কিসে?
মুখে বলিল ঠিকই কিন্তু রুচিতে বাধিলো। এই মুহূর্তে তাহার বোঝার বয়স হইতে অদ্যাবধি অনেক কথা স্মরণে আসিলো। তাহার জন্ম অবধি সে কখনো বাসি খাবার খায় নাই। সোনার চামচ মুখে নিয়া তাহার জন্ম হইয়াছিলো। দাস-দাসীতে কোলাহলপূর্ণ মোজাইক করা দোতলা বাড়ি। বড় বড় ব্যবসা তাহাদের। অনেক জায়গা জমি। খুব সুখে তাহাদের দিন কাটিতো। সে বাড়ির দাস-দাসী পর্যন্ত এমন খাদ্য খায় না। রফুকে মানুষের দ্বার হইতে তাহার চাইতে নিম্নমানের খাবার খাইতে হইতেছে। আবার নিয়মিত তাহা জুটিতেছে না। দামি খাবারে পরিপুষ্ট এবং উন্নতমানের পোশাকে সজ্জিত রফুর এই অবস্থা হইবে কে জানিতো। স্মৃতিরা তাহাকে অস্থির করিয়া তুলিলো।

এতক্ষণে পাগল তাহার পাকানো খানা রফুর হাতে তুলিয়া দিল। খাও বাছা খাও। তোমার ভালো হইবে। রফু তো প্রকৃতই পাগল না। ঘা তাকে পাগল সাজাইয়াছে। তার রুচির তো আর পরিবর্তন হয় নাই। দুর্গন্ধযুক্ত পাগলের অনুরোধ ও ভক্তি তাহার রুচি বাধা মানিলো না। খানা খাওয়া শেষ হইলে রফু সেখানে শুইয়া পড়িলো। ঘুমলোকেরা তাহাকে আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধিয়া ফেলিলো। এতোদিন পরে সে পূর্ণ ঘুমের মাঝে ডুবিয়া গেলো। অকাতরে ঘুম। সারা রাত্রির খবর সে কিছুই বলিতে পারিলো না। অসুস্থ হওয়ার পূর্বে সে যে ভাবে তোশকের ওপর ঘুম ভাঙিয়া পা ফেলাইয়া বসিতো ঠিক আজ যেনো তাহা অনুভূত হইলো। সে আস্তে আস্তে চোখ মেলিয়া দেখিলো তাহার গায়ে ঘায়ের কোন চিহ্ন নাই। মনে হইতেছিল তাহার কোন কিছু হয় নাই। সে উল্লাসে চিৎকার করিয়া উঠিলো। তাহার চিৎকারে দু-একজন লোক সেখানে জড়ো হইলো। চিৎকারের কারণ জিজ্ঞাসা করিলে রফু তাহাদের বোঝাইলো কিন্তু কেউ তাহা বুঝিলো না। পাগল খাওয়াইয়া যে যাহার কাজে চলিয়া গেলো। রফু তখন নিজেকে সামলাইয়া নিলো। রাত্রির সমস্ত ঘটনা তাহার মানসপটে উদ্ভাসিত হইলো। সে ধড়ফড় করিয়া উঠিয়া মহান রাব্বুল আলামিনের দরগাহে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করিল। সবই আল্লাহর ইচ্ছা। আল্লাহর প্রতি ভক্তি শ্রদ্ধা বহু গুণে বাড়িয়া গেলো। যাহার মাধ্যমে সে মুক্তি পাইলো। তাহাকে খুঁজিয়া খুঁজিয়া না পাইয়া সে বাড়ি ফিরিবার সিদ্ধান্ত নিলো। দূরবর্তী শহর হইতে সে কিভাবে বাড়ি ফিরিবে পথ খরচ বা কোথায় পাইবে এই চিন্তায় সে বিচলিত হইয়া পড়িলো। এখন তো আর তাহাকে পাগল ভাবিয়া কেহ পয়সা দিবে না। পূর্বের সংগৃহীত সামান্য টাকা সম্বল করিয়া সে সাতক্ষীরাগামী একটা গাড়িতে উঠিয়া পড়িলো। রাজপুত্রের মতো চেহারা অথচ ময়লা ছিন্ন বস্ত্র যাত্রীরা মিলাইতে পারিলো না। যাত্রীদের চাহনিতে তাহা ধরিয়া নিতে রফুর দেরি হইলো না। কুরআনের কথা না জানিলেও তাহার মনে হইলো আল্লাহ মুহূর্তের মধ্যে সব কিছু করিতে পারেন। গাড়ি দিগন্তে ছুটিয়াছে। রোগ তাহাকে মুক্তি দিয়াছে। অনেক দিন পর সে বাড়ি ফিরিতেছে। অনেক দিন পর সে মাকে দেখিবে এই সব ভাবিতে ভাবিতে রফু ঘুমাইয়া পড়িলো। ঘুমের ঘোরে সে স্বপ্নে দেখিতে পাইলো সেই পাগলটি রফুর মাথায় হাত বুলাইতে বুলাইতে বলিল, হে বৎস তুমি অনেক সুখী হও। অতিরিক্ত ধনসম্পদ মানুষকে শান্তি দিতে পারে না। তোমার আব্বাকে বলিও পাগলদের সাথে সদয় ব্যবহার করিতে। পাগলের হৃদস্পর্শে রফুর ঘুম ভাঙিয়া গেলো। সে হুড়মুড় করিয়া উঠিয়া দেখিল সাতক্ষীরায় পৌঁছাইয়া গিয়াছে।
                        
আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ