পিকনিক ও আরিজের ভাবনা

পিকনিক ও আরিজের ভাবনা

গল্প সীমান্ত আকরাম এপ্রিল ২০২৩

আজ আরিজের মনটা ভালো নেই। চেহারাটাও মলিন ও ধূসর। বারান্দায় দাঁড়িয়ে অপলক দৃষ্টিতে বাহিরে তাকিয়ে কি যেন ভাবছে! সকালে শরীর চর্চা করে আসার পর থেকেই ওর মনটা এমন। অন্য দিনের মতো সে আজ প্রফুল্ল নয়। বিষম চিন্তামগ্ন। ভাবনায় বিভোর। 

আরিজ ভাবতে থাকে আমরা কতই না আনন্দের সাথে বসবাস করছি। নামী এলাকায় বসবাস করি। দামি ফ্ল্যাটে থাকি। ব্যান্ডের গাড়ি নিয়ে চলাফেরা করি। দামি পোশাক পরিধান করি। সবসময় উন্নতমানের খাবার খাই। আব্বু-আম্মুর নিকট যা চাই তাই পেয়ে যাই। কখনো না করেন না। আমাদের কখনো কষ্ট দেন না। সর্বদায় আদর-যত্নে রাখেন। আমাদের জন্য কাজের লোক, বাসায় একাধিক কাজের বুয়া, বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকের ব্যবস্থা। বাসার খাবার দাবার ভালো না লাগলে চাইনিজ রেস্টুরেন্টে নিয়ে যান। এসব বিষয়গুলো সকাল থেকে আরিজের মাথায় ঘোরপাক খাচ্ছে। 

আরিজের এই বিষণœতা ও চিন্তামগ্নের কারণ সকালে পার্কে শরীর চর্চা করতে গিয়ে একটি বিষয় তাকে ভাবিয়ে তুলে। পার্ক থেকে ফেরার পথে পাশের বস্তির ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদের কষ্টগুলো সে উপলব্ধি করতে থাকে। সে ভাবতে থাকে, এ কনকনে শীতের মধ্যে ওদের গায়ে শীতের জামা নেই। পাতলা মলিন আর নিম্নমানের জামা পরে আছে। শীতে জুবথুব হয়ে কাঁপছে। 

আরিজ ক্লাস এইটে পড়ে। ফাইনাল পরীক্ষা দেয়ার পর শীতকালীন ছুটি চলছে। ছুটির দিনগুলিতে সে সকালে শরীর চর্চা, বিকালে খেলাধুলা আর সন্ধ্যার পর আব্বু-আম্মুর সাথে বাহিরে ঘুরাফিরা করে সময় কাটাচ্ছে। এ বছরও স্কুল খোলার পর প্রতি বছরের ন্যায় স্কুল থেকে পিকনিকে যাবে। এ নিয়ে আরিজ ও তার বন্ধুদের অনেক পরিকল্পনা। সে বিকেলে খেলাধুলা শেষে বন্ধুদের সাথে এ বিষয়ে প্রতিদিন আলাপ-আলোচনা করে থাকে। পিকনিকে কী কী করবে? কী কী আয়োজন থাকবে? কী কী খেলাধুলা থাকবে এবং কিভাবে যাবে? -এসব বিষয় বন্ধুদের সাথে প্রতিদিন শেয়ার করে থাকে।

কিন্তু আজ সকাল থেকেই আরিজ চিন্তিত। পাশের বস্তির ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদের কষ্টগুলো দেখে সেও ব্যথিত। বেদনাহত। বিষয়টি নিয়ে গভীর চিন্তামগ্নে থাকে। আর ভাবে, আমাদের সমাজে এতো ব্যবদান কেন? এতো বৈষম্য কেন? ধনী ও গরিবের মাঝে এত অসঙ্গতি কেন?

আরিজ সিদ্ধান্ত নিলো এ বছর পিকনিকে না গিয়ে টাকাগুলো দিয়ে গরিব-দুঃখী ছেলে-মেয়েদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করবে। বিকালে খেলাধুলা শেষে বিষয়টি তার বন্ধুদেরকে বুঝানোর চেষ্টা করে। প্রথমে সবাই নাকচ করে দিলেও দু’একজন বিষয়টি বুঝতে পারে। পাশের দু’একজন বলেই উঠলো, বলিস কী? তোর মাথা ঠিক আছে? বছরে একটা মাত্র পিকনিক হয় আর তাতে যাওয়া হবে না! 

আরিজ মাথা ঠাণ্ডা রেখে সবাইকে বুঝানোর চেষ্টা করে। দুঃখী মানুষের দুঃখগুলো সে সবার সাথে শেয়ার করে। সমাজের এতো এতো বৈষম্য, ব্যবধান- এই বিষয়গুলো আরিজ তার বন্ধুদের বুঝাতে সক্ষম হয়!

প্রথমে দু’একজন নাকচ করলেও ধীরে ধীরে সবাই বুঝতে সক্ষম হয়। তারা সকলে পণ করে, পিকনিকে না গিয়ে সকলের টাকাগুলো একত্রে করে বস্তির দুঃখী ছেলে-মেয়েদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করবে। সকলে আরিজে নিকট টাকা জমা রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। 

আরিজ এ বিষয়টি তার আব্বু-আম্মুকে বুঝিয়ে বললে, তারাও খুশি হয়। তার আব্বু-আম্মুও তাদের এ কাজে আরো কিছু টাকা সহযোগিতা করে। আরিজ তার দাদুকে সাথে নিয়ে বন্ধুদের সহযোগিতায় মার্কেট থেকে অনেকগুলো শীতের জামা-কাপড় কিনে আনে। বস্তিতে গিয়ে সবাইকে জানিয়ে দেয়া হলো, আগামীকাল পার্কের সামনে তারা শীতবস্ত্র বিতরণ করবে। 

পরদিন পার্কের সামনে রীতিমতো সবাই হাজির। সবার চোখে-মুখে খুশির বারতা। আরিজ ও তার বন্ধুরা সবাইকে লাইনে দাঁড়িয়ে এক এক করে শীতের জামা উপহার দিতে থাকে। শীতের জামা পেয়ে দুঃখী ছেলে-মেয়েদের মুখে হাসি ফুটে উঠলো। ওদের হাসি দেখে আরিজ ও তার বন্ধুরাও খুশি। এর মাঝেই তারা পিকনিকের আনন্দ অনুভব করলো।

আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ