পৃথিবীর পথে পথে

পৃথিবীর পথে পথে

ভ্রমণ সেপ্টেম্বর ২০০৯

ড. মু. শফিকুল ইসলাম মাসুদ

Italy_1অপরূপ সৌন্দর্য্যমণ্ডিত আমাদের এই পৃথিবী। রূপ রস গন্ধ আর সবুজের সমারোহে ভরপুর যেন সবকিছু। সাজানো পৃথিবী আমাদের জন্য মহান রবের পক্ষ থেকে এক বিরাট উপহার। পৃথিবীর এমন একটি জায়গাও নেই যেখানে চোখ ফেললে মনে হবে এসবের কোন কিছুই প্রয়োজন ছিলনা আমাদের। একটু একটু করে সামনে এগুতে থাকলে ক্রমান্বয়ে সৌন্দর্য বাড়তেই থাকে আমাদের এই পৃথিবীর। যা দেখেছি তার চেয়ে অনেক সুন্দর এখন যা দেখছি তাই একথা নিঃসন্দেহে নিশ্চিত করে বলা যায় সামনে যা দেখবো তা যা দেখেছি, যা দেখছি তার চেয়ে অনেক বেশি সুন্দর হবে। দেশপ্রেমের সবটুকু অনুভূতি বুকে ধারণ করেই একটি সত্য প্রকাশ করতে চাই যে, সুজলা-সুফলা শস্য-শ্যামলা আমাদের এই ছোট্ট বসুন্ধরা বাংলাদেশ। এর পরেও যেন সবুজের সমারোহের দেশ খুঁজে পাওয়া সম্ভব। ইটালির মাটিতে পা না ফেললে হয়তো এই অপ্রিয় সত্যটি আবিষ্কারই করা হতো না। তবে সবকিছু মিলিয়ে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ অপরূপ সৌন্দর্য্যমণ্ডিত তা বলা যাবে নিশ্চিত করে। ভেনিসের মাটিতে পা ফেলতেই এক অদ্ভুত অনুভূতির জন্ম হল মুহূর্তের মধ্যেই। সবাই বলে সুন্দর শহর ভেনিস, আমার কাছে মনে হলো নোংরা, ছোট গলি আর পানিপথের এ শহরের রাস্তাঘাটে মানুষের বিষ্ঠা পড়ে আছে, অত্যধিক পর্যটকের কারণেই কিনা জানিনা ঝাঁঝালো (প্রস্রাবের) গন্ধ যত্রতত্র। একদিনের ভেনিস আমার কাছে এটাই ছিল দৃশ্যমান। তবে যা দেখেছি তার তুলনা বইয়ে লেখার চাইতে বেশি। আগের দিন পিসা থেকে মেসরীতে পৌঁছাই, ভেনিসের মেইন ল্যাণ্ড এটা, এখান থেকে ব্রিজ পেরিয়ে ভেনিস যেতে হয়, ২০ মিনিটের রাস্তা, হোটেলের দাম তুলনামূলক কম মেসরীতে। কাউন্টারে পাশে বসা লোকটি সালাম দিয়ে জানালো বাংলাদেশী। আমাদের ফ্রি কফি খাাইয়েছিলেন তিনি। পরে রাতের খাবারের জন্য চাইনিজ রেস্তোরাঁর সন্ধান তার থেকেই পেয়েছিলাম। সে খাবারে মন ভরেনি, পেটও না। পরদিন ভোরে হোটেলে নাস্তা সেরে ভেনিস রওনা দিলাম। গাড়িতে জিপিএস থাকায় ড্রাইভার খুব সহজেই পার্কিং খুঁজে নিয়ে নামিয়ে দিল স্টিমার ঘাটে। বলল, সন্ধ্যায় এসে নিয়ে যাবে। তখনই খেয়াল হলো গাইড ছাড়াই চলে এসেছি, হিসাব মত গাইড এসে হোটেল থেকে তুলে নিয়ে এখানে আরেক গাইডের হাতে তুলে দেবার কথা আমাদের। স্টিমার ঘাটের নাম সম্ভবত সান্তাক্রুজ। ঘাটে ২০টির মত স্যুভেনির শপ, প্রায় সবই বাংলাদেশী, মালিক বাংলাদেশী, কর্মচারী বাংলাদেশী, ইটালিয়ান ভাষায় ভালো দখল, জার্মান আর ফ্রেঞ্চও জানে অনেকে। কিছুক্ষণ গল্প করে সারাদিনের জন্য টিকেট কাটলাম। ১১ ইউরো জনপ্রতি। লন্ডনে আমাদের ট্র্যাভেল এজেন্টকে ভুল বোঝাবুঝির কথা এসএমএস করে জানিয়ে সেন্ট মার্কস স্কোয়ারের উদ্দেশ্যে ফেরিতে চড়লাম। আমরা চৌদ্দ জন সেখানে গাইডের আপেক্ষায় থাকবো। ছোট্ট একটা ক্যানেলের মাঝ দিয়ে একবার এপাড় আরেকবার অন্যপাড় এই করে ১১ নম্বর স্টেশন এই সেন্ট মার্কস স্কোয়ার, ভেনিসের প্রাণ। Italy_2 ফেরির ঠাণ্ডা বাতাসে জড়োসড়ো হয়ে বসে থেকে নিচে নেমে মিষ্টি রোদে প্রাণ জুড়িয়ে গেল। হেঁটে হেঁটে চলে এলাম ডজেস প্যালেসের সামনে। গথিক স্টাইলের এই  বাড়িটি ৬৯৭ থেকে ১৭৯৭ সাল পর্যন্ত ভেনিস শাসন করেছে, একটা মাস্টার পিস, পুরো বাড়িতেই অসম্ভব সুন্দর কারুকাজ। দেখলেই মন জুড়িয়ে যায়। বিখ্যাত ইটালিয়ান শিল্পীদের ছোঁয়া লেগে আছে বাড়ির পুরোটা জুড়ে। এখন মিউজিয়াম। ঢুকতে লাগে ২০ ইউরো। মোটামুটি ঘণ্টা দুয়েক লাগবে যদি সেটা হয় দৌড়ের উপর। বাড়ির সামনে আর পাশে খোলা চত্বর, হাজার হাজার কবুতর, ৩ ইউরো খরচ করে এক মুঠো বুট কিনে কবুতর খাওয়ানোর লোকের অভাব আমাদের মাঝেও ছিল না। এ বাড়িটার পেছনেই বিখ্যাত সেন্ট মার্কস গির্জা, ইটালিয়ান ভাষায় ব্যাসিলিকা। দূর থেকে ডজেস প্যালেসের চূড়া ছাড়িয়ে এর পাঁচ গম্বুজ দেখা যায়। আফ্রিকায় জন্ম নেয়া সেন্ট মার্কস গত হয়েছেন সেই কবে, বিশ্বাস করা হয় তার দেহ সংরক্ষিত ছিল আলেকজান্দ্রিয়ায়, ৮২৮ সালে দুই ব্যবসায়ী মাথা ছাড়া তার দেহ সেখান থেকে চুরি করে ভেনিসে নিয়ে আসে, তারও প্রায় আড়াইশো বছর পর ১০৯৪ সালে এ ব্যাসিলিকা তৈরি হলে তাঁকে এখানে সমাহিত করা হয়। কোন কোন ইতিহাসবিদ মনে করেন এখানে সমাহিত ব্যক্তিটি আসলে আলেকজান্দার দ্য গ্রেট। বাইজেন্টাইন আর্কিটেকচারে তৈরি এ ব্যাসিলিকা সমৃদ্ধ হয় আরো পরে, ১২০৪ সালে তৎকালীন কন্সটানটিনোপল বিজয়ে লুটের মাল হিসাবে প্রাপ্ত মার্বেল দিয়ে। ভেতরে ঢুকলেই যা হবে প্রথমেই চোখ ধাঁধিয়ে যাবে এর সৌন্দর্যে। মেঝেতে মার্বেল, দেয়ালে মার্বেল এমনকি ছাদেও মার্বেল পাথরে সোনালি কাজ, দেয়ালে ফাঁকে ফাঁকে আলো আসার চমৎকার ব্যবস্থা, তাতে সৌন্দর্য ফুটে আসে অদ্ভুতভাবে। আরো আছে ইটালিয়ান ফ্রেসকো। অদ্ভুত এ দেয়াল পেইন্টিংগুলো আজো অমলিন। যে কেউ ইচ্ছা করলে এর ভেতর দিয়ে হেঁটে উপরে ছাদে চলে যেতে পারে, কিংবা সামনের ৯৯ মিটার উঁচু বেল টাওয়ারে উঠে দেখতে পারে ভেনিসের রূপ যা অবশ্যই নীচ থেকে দেখার চেয়ে ভিন্ন। আমরা ঘুরে ঘুরে দেখছি আর চমৎকৃত হচ্ছি। দেখতে দেখতে দু’ঘণ্টা পেরিয়ে গেল, আমাদের গাইডও চলে এসেছে এরই মাঝে। ভেনিসের চিপা গলিতে হাঁটতে হাঁটতে বার্গারের দোকানে ঢুকে খেয়ে নিলাম। এরপর বেরুলাম শহর দেখতে। নিচু গলায় গাইড বিবরণ দিয়ে যাচ্ছে ভেনিসের আর হেঁটে হেঁটে দেখাচ্ছে শহরটাকে। ঘণ্টাখানেক ঘুরে পুরোনো জেলের সামনে এসে যাত্রা বিরতি, এরপর আবার অন্য রাস্তায় ঘুরে ফিরতি পথে সেন্ট মার্কস স্কোয়ার। এ দ্বীপে গাড়ি-ঘোড়া নেই, হাঁটাই সম্বল, আর আছে ক্যানো, প্রতি ঘণ্টার ভাড়া ১২০ ইউরো, পয়সা থাকলে ঘোরা যায়। ক্যানো যারা চালায় জেব্রার মতো ডোরাকটা পোশাক তাদের, মাথায় হ্যাট, ক্লাউন ক্লাউন লাগে। পুরোনো ভেনিসের অনেক কিছুই জানলাম, দেখলমা কিভাবে এ দ্বীপে খাবার পানি জমিয়ে রাখা হতো মাটির নিচে, দিনে দু’বার মাত্র খুলে দেয়া হতো ঢাকনার মুখ। দু’ঘণ্টার মতো এখানে থেকে চলে এলাম মুরানো দ্বীপে, কাঁচ দিয়ে বানানো  কারুকাজময় শোপিসের জন্য মুরানো দ্বীপের নাম আগেই শুনেছি, এবারে দেখলাম কিভাবে তৈরিItaly_3 হয় এসব। অদ্ভুত দক্ষতায় কাঁচ গলিয়ে লম্বা পাইপের মাথায় লাগিয়ে ফুঁ দিয়ে দিয়ে তৈরি হচ্ছে হাতি, ঘোড়া, দেব-দেবী, কানের দুল, মাথার তাজ, ঝাড়বাতি, প্লেট, চামচ আরো কী! আর দাম? না জানাই ভালো, ইউনিক জিনিসপত্রের দাম সম্পর্কে যাদের ধারণা আছে অনুমান শুধু তারাই করতে পারবে। দেখতে দেখতে সূর্য ঢলে আসছে পশ্চিমে। ফেরার জন্য ফেরিতে উঠলাম, ৩০ মিনিটের মাথায় চলে এলাম বাংলাদেশী পাড়ায়। হাতে সময় আছে তখনো, জমে উঠলো আড্ডা বাংলাদেশী ভাইদের সাথে। ড্রাইভার যখন এলো, উঠে আসতে তখন আর মন চাইছিলোনা কারও। মানুষের অকৃত্রিম ভালবাসা প্রকৃতির অপরূপ ভালবাসার মাঝে লীন হয়ে যেতে পারে তার এক জ্বলন্ত নজির ভেনিসের তীর ঘিরে। সৌন্দর্য্য তত্ত্ব নিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সব সংজ্ঞাই ব্যর্থ হতে বাধ্য ইটালির এই সৌন্দর্য্যকন্যা ভেনিসের অপরূপ রূপময়তার কাছে। সকাল ৮টার ট্রেনে চেপে ইটালির রোম শহর থেকে ভেনিসের উদ্দেশ্যে যাত্রা। জানালার পাশে বসে অদ্ভুত সব দৃশ্য অবলোকন করতে করতে পাশে বসা বাংলাদেশী সহযাত্রীকে এই প্রশ্নটি করার লোভ সামলাতে পারলাম না যে সবুজের দিক বিবেচনায় কে প্রথম? আমার বাংলাদেশ নাকি ইটালি? সহযাত্রীর সাফ জবাব, বাংলাদেশের সৌন্দর্য্য শুধু সবুজের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় বরং সবুজ মনের কিছু সহজ-সরল মানুষের সমন্বয়ে তিলোত্তমা বাংলাদেশ। জানতে চাইলাম, ইটালির এই সবুজঘেরা আঞ্চলটি কি সবুজ মনের মানুষ তৈরি করতে সক্ষম হয়নি? ব্যাখ্যা না দিয়েই সহযাত্রীর এবার সরাসরি জবাব, সবুজ কিংবা সজীবতা যাই বলুন না কেন এসব নিয়ে মাতামাতি নেই ইটালির এই অধিবাসীদের। দেশপ্রেমের চেতনায় উজ্জীবিত থেকেই একটি অপ্রিয় কিন্তু প্রকৃত সত্য উপস্থাপন করার লোভ সামলাতে না পেরেই আরো কিছু  কথা আমাদের নিজেদের জন্যেই তুলে ধরা প্রয়োজন। প্রত্যেক মানুষের জীবনে কিছু দায়বদ্ধতা নিয়েই পথ চলা। প্রত্যেকেই তাদের দায়বদ্ধতার জন্য সচেতনতার মাপকাঠিতে চূড়ান্তভাবে যেন উত্তীর্ণ। দায়িত্ববোদের এই অনুভূতিটি তাদের দেশের সবুজের সমারোহকে আরো বেশি সমৃদ্ধ করেছে। প্রত্যেকের এক একটি পদক্ষেপ যেন তাদের দেশকে আরো এক ধাপ এগিয়ে দেওয়ার অফুরন্ত প্রচেষ্টার বহিঃপ্রকাশ। যে যা কিছু করছেন তার সারমর্ম যেন একই সূত্রে গাঁথা। চিন্তা-চেতনা, ধ্যান-ধারণা আর কাজের বহিঃপ্রকাশই যে কোন দর্শককে বলে দেবে আমরা এগুতে চাই এবং  এগিয়ে দিতে চাই আমাদের দেশকে। কি এক একাত্বতা তাদের কর্মকাণ্ডে যা না দেখলে নিজেকেও বিশ্বাস করানো কঠিন। তাদের প্রত্যেকের কথা বলার ভাষা, চলার পথের প্রত্যেকটি কদম, হাতের লেখনির এক একটি শব্দ এমনকি প্রত্যেকের চোখের চাহনী সমন্বিত এক উদ্যোগের নির্মিত রাজপথ। সৌজন্যতাবোধ বলতে কি বুঝায় তা বই পড়ে বুঝতে না চাইলে মানুষের সরাসরি আচরণের প্রতি দৃষ্টি ফেলতে হবে। একটি অদ্ভুত ব্যাপার লক্ষ্য করেছি নিজের মধ্যে। তাদের আচরণে যখন সৌজন্যবোধ, কৃতজ্ঞতাবোধ লক্ষ্য করতাম তখন খুশি হওয়ার পরিবর্তে দুঃখে কষ্টে বুকটা ভেঙে যেতে চাইতো। বারবারই মনে হতো এসব কিছুই তো ছিল আমাদেরই সম্পদ অথচ আজ আমরা অসহায়ত্বের বেড়াজালে অষ্টেপৃষ্টে বাঁধা। আমাদের সবকিছুই ছিল কিন্তু আজ যেন তার অনেক কিছুই নেই। আমাদের কাছ থেকে শিখেছে সবাই অথচ আমরাই এখন অজ্ঞ। জর্জ বার্নার্ড শ’-এর সেই কথাই যেন সত্য Cordova shown like lighthouse on darkness of Europe। অন্ধকার ইউরোপের কার্ডোভা ছিল আলোক নগরী যা আমাদেরই হাতের তৈরি গর্বের সম্পদ। সবকিছুই যেন আজ প্রায় আমাদের হাতছাড়া। জীবন সম্পর্কে উদাসীনতা আমাদেরকে অনেক পিছিয়ে দিয়েছে। এগিয়ে আছে তারা তাদের বিশ্বাস, চিন্তাচেতনা আর উন্নত ধ্যান-ধারণার ভিত্তিতে। আমরা আমাদের লক্ষ্য Italy_4থেকে বিচ্যুত হয়েছি বোধহয় অনেকখানি। ছোট রাষ্ট্র ভ্যাটিকান সিটিতে যেয়ে তা উপলব্ধি করতে পেরেছি হাড়ে হাড়ে। বুঝতে একটুও কষ্ট হয়নি যে ভ্যাটিকান সিটি ছোট রাষ্ট্র বটে কিন্তু বুকের মাঝে এক বিরাট উদারতা আর মমত্ববোধের গভীরতা নিয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। ভেবেছিলাম এই বোধহয় তাদের একমাত্র সম্পদ কিন্তু না, এর চেয়েও অনেক বড় কিছু আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়েছে তারা। সহনশীলতা আর সহমর্মিতার চাদরে পুরো দেহাবয়ব যেন আবৃত।  কোন কিছুতেই যেন পরাজয় নেই তাদের। তাদের এই শক্তির উৎস কোথায়? চিন্তার ঐক্য আর সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছার অক্লান্ত প্রচেষ্টাই তাদের এই শক্তির জন্ম দিয়েছে। অপরকে এগিয়ে দেয়ার এক সুমহান ব্রত নিয়েই পথ চলতে তারা স্বাচ্ছন্দবোধ করে। ফলে যাকে এগিয়ে দেয়া প্রয়োজন তিনি এগিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে এগিয়ে দিতে উদ্যোগী ব্যক্তিও পিছিয়ে থাকেন না কোন অংশেই। একজন আরেকজনকে এগিয়ে দিতে গিয়ে শুধু নিজেরাই এগিয়ে যান না বরং এগিয়ে যায় নিজেদের দেশও। এসব দিকগুলো কোনটিই যে আমাদের নেই তা না বরং অনেক কিছুই আমাদের আছে। এখন শুধু প্রয়োজন সমন্বিত প্রয়াসের। একটি জাতি বিনির্মাণের পিছনে ঐক্যবদ্ধ চিন্তা আর সমন্বিত  উদ্যোগের বিকল্প কি আছে তা আমার জানা নেই। জানার খুব একটা প্রয়োজনীয়তাও বোধ করিনি কখনো। কারণ উন্নত বিশ্বগুলোতে যা দেখেছি তার পিছনে সবচেয়ে বড় শক্তি যুগিয়েছে ঐক্যবদ্ধ চিন্তার প্রতিফলন। এগিয়ে যাওয়ার জন্য তাদের এই প্রক্রিয়া শুধু নিজেদের ক্ষেত্রে নয়, গোটা জাতিসত্তা বিনির্মাণে নজিরবিহীন ভূমিকা পালন করেছে। ইংItaly_6ল্যান্ড থেকেই ইটালি যাওয়র পথে কিংবা হজ্বব্রত পালন শেষে বাংলাদেশে ফেরার সময় যে নিষ্ঠুর অপ্রিয় সত্য অবলোকন করেছি তা বর্ণনা করতে বিবেক বারবার তাড়িত করে। বিমানবন্দরের দৃশ্য দেখে আমি কিংবা আমার মত হতাশ হয়েছে অনেকেই তবে আশার দিকও যে ছিল না তা নয়। পাশাপাশি বেশ কয়েকটি কাউন্টার ছিল যাত্রীদের বিমানে প্রবেশ করার জন্য। একটি কাউন্টারে প্রচণ্ড হৈচৈ এবং হট্টগোলে দৃশ্য দেখে পাশের লাইনের জনৈক ভিন্নদেশের অপেক্ষমান যাত্রীটি সহাস্যে খানিকটা কৌতূহলবশত অনুমাননির্ভর প্রশ্ন করে বসলেন, Are you Bangladeshi? যাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল তিনি আত্মসম্মানবোধ রক্ষার প্রশ্নে কোন জবাব দেননি বটে কিন্তু প্রশ্নকর্তা তার নিজের প্রশ্নের মধ্য থেকেই তার প্রশ্নের জবাব খুঁজে নেওয়ার যে চেষ্টা চালিয়েছেন তা তার প্রশ্নের ধরণ দেখলে যে কেউ উপলব্ধি করতে সক্ষম হবেন।

নিজেদের সম্পর্কে নিজেদের এই নেতিবাচক ধারণা উপস্থাপন করা এই লেখার মুখ্য কিংবা গৌণ উদ্দেশ্য কোনটিই নয় বরং এ থেকে মুক্তির পথ আবিষ্কার করাই একমাত্র লক্ষ্য। আমরা বড় হয়েছি বটে, অন্যকে বড় হতে শিখিয়েছি কিনা বা শেখাতে পেরেছি কিনা বোধকরি তা ভেবে দেখার এখনই উপযুক্ত সময়। আমরা পিছিয়ে আছি বিষয়টি ঠিক তা নয় বরং আমরা পিছিয়ে যাচ্ছি কিনা তা বিশ্লেষণ করা সময়ের অনিবার্য দাবি। আমি কিংবা আমরা কতটুকু বড় হয়েছি তার বিচারের ভার নিজেদের ঘাড়ে না নিয়ে তুলে দিতে হবে অন্যের বিবেকের কাছে। বিদেশের মাটিতে নিজেদের মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার অনেক পথ তৈরি করেছি আমরা কিন্তু আরো অনেক পথ বাকি আছে যে পথে চলতে হবে অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে। তবেই মিলবে মুক্তির পথ যা আমাদের সকলেরই কাম্য।

আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ