পোড়োবাড়ি রহস্য

পোড়োবাড়ি রহস্য

উপন্যাস ফেব্রুয়ারি ২০১৫

এনায়েত রসুল #

[দ্বিতীয় পর্ব]

ট্রেন থেকে নেমে এখন সকাল সাড়ে আটটা। সারারাত দু’জন গল্প করেছি। ঘুম আমার ধারে-কাছেও আসতে পারেনি। কিন্তু খিদের জ্বালায় পেট চোঁ চোঁ করছে। ব্যাগ খুলে তাই মামণির দেয়া স্যান্ডউইচটা বের করে ঝটপট খেয়ে নিলাম। তা দেখে ডক্টর নিপু বললেন, খিদে পেয়েছিলো বুঝি? অপ্রস্তুত হয়ে বললাম, সকাল থেকে কিছু খাইনি তো, পেটটা মোচড়াচ্ছিলো। ও হ্যাঁ, একটা কথা কিন্তু জানা হয়নি! আপনি কোথায় যাচ্ছেন, নিপু কাকু? ডক্টর নিপু বললেন, নিশাপুর। ২৭ তারিখে ওখানে একটা কলেজ ওপেনিং হবে। প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দিতে যাচ্ছি। নিশাপুর আর দুর্গাপুর দুটো পাশাপাশি গ্রাম। আমি ওখানকার ডাকবাংলোয় উঠবো। সময় করে এসো একদিন। একসাথে বেড়ানো যাবে। আমার কাক্সিক্ষত স্টেশনে ট্রেন থামতেই সাইড ব্যাগ কাঁধে ঝুলিয়ে ডক্টর নিপুর পাশাপাশি বাস স্টপেজের খোঁজে ছুটলাম। নাফিস বলেছিলো দুর্গাপুর যেতে ট্রেন থেকে নেমে মাইল দশেক বাসে চড়ে যেতে হবে। কিন্তু বাসের নামে ওখানে যে আমার জন্য এক বিস্ময় লুকিয়ে আছে, আমি তা বুঝতে পারিনি! স্টপেজে পা দিতেই আমি ভূত দেখার মতো চমকে উঠলাম। বাস তো দূরের কথা- একটা মিনিবাসেরও পাত্তা পেলাম না সেখানে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার জিপের বডিতে টুল বসিয়ে বাসের রূপ দেয়ার চেষ্টা করেছে এরা! কোনোটির ছাদ বানানো হয়েছে ত্রিপল টাঙিয়ে- কোনোটির ভাগ্যে তাও জোটেনি। রোদ ঝকঝক করছে জিপের গা জুড়ে। যাত্রীরা কিন্তু তাতেই বসে আছে রাজসিক চালে! এদের অবস্থা দেখে বুঝে নিতে অসুবিধে হলো না, আমাকে যদি নাফিসদের বাড়ি যেতে হয় তবে ওই জিপে চড়েই যেতে হবে। বিকল্প ব্যবস্থা করা সম্ভব নয়। সুতরাং বুদ্ধিমান ছেলের মতো আর একটুও সময় নষ্ট না করে ডক্টর নিপুর পিছুপিছু ত্রিপল ঢাকা একটা জিপে উঠে বসলাম। তার পরপরই জিপের পথচলা শুরু হলো। সে এক বিভীষিকাময় অভিজ্ঞতা। বুনো শূকরের মতো ঘোঁৎ ঘোঁৎ শব্দ করে ছুটে চলার কয়েক মিনিটের মধ্যেই ইট বিছানো পথটি ফুরিয়ে গেলো। এবার আমাদের জিপটি আঁকাবাঁকা এক মেঠোপথে গিয়ে নামলো। প্রতি ইঞ্চি পথ ঝাঁকুনি খেতে খেতে এগিয়ে চললাম আমরা। আচমকা জিপটি এমনি এক লাফ মারলো যে, টাল সামলাতে না পেরে আমি হাউইবাজির মতো উপর দিকে উঠে গেলাম- পরক্ষণেই ত্রিপলের সাথে ঠোক্কর খেয়ে নিচে আছড়ে পড়লাম। লজ্জায় চোখ-কান লাল হয়ে গেলো। সবাই ভাববে কি! নিশ্চয়ই ভাববে আমি বোকার হদ্দ ছাড়া আর কিছু নই। একঝাঁক লজ্জা নিয়ে আমি যাত্রীদের দিকে তাকালাম। দেখতে পেলাম যাত্রীরা চোখ বুজে ঝিমোচ্ছে। দু’-একজন বিড়ি টানছে উৎকট গন্ধ ছড়িয়ে- তাও চোখ বুজে! এই উঁচুনিচু পথের ঝাঁকুনি কোনো প্রতিক্রিয়ারই সৃষ্টি করেনি তাদের মাঝে! আমি ভেবেছিলাম আমার এই নাজেহাল অবস্থাটা কারো চোখে পড়েনি। কিন্তু মুহূর্তেই সেই ভুল ভেঙে গেলো। ডক্টর নিপু চোখ বুজে থাকলেও দৃশ্যটা দেখতে পেয়েছিলেন। তিনি বললেন, সামান্য পথের ঝাঁকুনিতেই কাবু হয়ে পড়েছো! তোমার বয়সী ভুটানের ছেলেরা কি করে জানো? বুনো মহিষের পিঠে চড়ে সারাটা দেশ ঘুরে বেড়ায়। শুধু ওদের কথাই বা বলি কেন? এই আমাদের পার্বত্য চট্টগ্রামের চাকমা কিশোরদের কথাই বলি- ওরা পাহাড় কেটে চাষ করে। পাগলা হাতির সাথে যুদ্ধ করে খেতের ফসল বাঁচিয়ে রাখে। অজগরের পিঠে বসে গল্প করে নির্ভয়ে। : অজগরের পিঠে বসে গল্প করে? এতো সাহস ওদের? অবাক হয়ে জানতে চাইলাম আমি। আমার পিঠে হাত রেখে ডক্টর নিপু বললেন, হ্যাঁ, তাই করে ওরা। আসলে দুর্দান্ত সাহসী আর কষ্টসহিষ্ণু সেই পাহাড়ি মানুষগুলো। নিজের পায়ে দাঁড়াতে হলে তোমাকেও তেমনি সাহসী আর কষ্টসহিষ্ণু  হতে হবে। আর নিজের ওপর প্রচন্ড বিশ্বাস রাখতে হবে। মনটাকে এভাবে গড়ে তুলবে, যেনো অপরের দুঃখ-বেদনাকে নিজের বলে মেনে নিতে পারো। তবেই না তুমি মানুষের মতো মানুষ হবে। ডক্টর নিপুর কথাগুলো আমার এতোই ভালো লাগলো যে, সম্মোহিতের মতো আমি তার দিকে তাকিয়ে রইলাম। মনে হলো যেনো বিশ্বের সবচেয়ে জ্ঞানী মানুষটির পাশে বসে আছি আমিÑ যিনি এ পৃথিবীর অবিশ্বাস্য ঘটনাগুলো ছবির মতো দেখতে পান। এদিকে ধুলোর কুয়াশা ছড়িয়ে বাসটি ছুটে চলেছে তো চলেছেই। ধুলোয় ঢেকে যাচ্ছে আমাদের চোখমুখ। আর সে সাথে রয়েছে পথের ঝাঁকুনিÑ বিরক্তি ছড়াচ্ছে বিড়ির বিচ্ছিরি গন্ধ। এসব সহ্য করে আমরা যখন দুর্গাপুর বাজারে এসে পৌঁছলাম, নিমিষে সারা পথের ক্লান্তি দূর হয়ে গেলো। হাড়-জিরাজিরে জিপ থেমে যেতেই ডক্টর নিপু বললেন, দুর্গাপুর এসে গেছে। তোমাকে এখানেই নামতে হবে, তবে আমাকে আরো কিছুটা পথ যেতে হবে। সুযোগ পেলে তোমার বন্ধুকে নিয়ে এসো একবার। আসবো বলে নেমে দাঁড়াতেই জীব ছুটে চললো। ফলে ধুলোয় ছেয়ে গেলো চারদিক। সেই ধুলোর দেয়াল সরে যেতেই আমি তাকালাম এদিক-ওদিক। কিন্তু নাফিসকে দেখতে পেলাম না। ব্যাপার কি? তবে কি নাফিস বুঝতে পারেনি আমি আজই আসবো? তাহলে উপায়? উপায় খুঁজে আমি যখন দিশেহারা, তখনই আমার চোখে পড়লো একটি মিষ্টির দোকানের ওপর। মনে হলো ওখানে গিয়ে আমার সমস্যার কথাটা জানালে কেউ কেউ নিশ্চয়ই সাহায্য করবে। অনেক আশায় বুক বেঁধে অবশেষে সেই দোকানে গিয়ে ঢুকলাম। দোকানে কেউই ছিলো না তখন। শুধু একটি লোককে দেখতে পেলাম ভাঙা চৌকির ওপর বসে খবরের কাগজ দিয়ে হাওয়া খাচ্ছে। আমি সেই লোকটিকে বিনয়ের সাথে বললাম, নাফিস নামে এক বন্ধুর বাড়ি বেড়াতে এসেছি। ওর বাবার নাম আবুল খায়ের। কোন এক কলেজে পড়ান তিনি। আপনি জানেন তার বাড়িটা কোথায়? বিরক্তি মেশানো কণ্ঠে দোকানদার বললো, না, জানি না। জানার দরকারও নাই। এই গেরামের পোলা। শিক্ষিত হইয়া ঢাকা শহরে পাইড়া রইছে। আমাগো কি দায় পড়ছে তাগো খবর রাখোনের? তুমি বাবা অন্য কাউরে জিগাও। নাকি কিছু খাইবা? খাঁটি ছানার মিষ্টি আছে। দইও আছে। একবার খাইলে স্বাদ ভুলতে পারবা না। সত্য কথা বলতে কি, অমন ডাসা ডাসা মিষ্টি দেখে আমার জিভে যে পানি এসে পড়েছিলো, তা অস্বীকার করার উপায় নেই। কিন্তু নাফিসের বাবা সম্পর্কে অমন মন্তব্য শুনে আমার মন বিতৃষ্ণায় ছেয়ে গেলো। তার দোকান থেকে খেতে ইচ্ছে হলো না। তাই বললাম, নাহ্, আজ কিছু খাবো না। আগে দেখি কারো কাছ থেকে নাফিসদের বাড়ির খোঁজটা পাওয়া যায় কিনা। স্বরটাকে আরো কর্কশ করে লোকটি বললো, আইচ্ছা আইচ্ছা, ওই খোঁজই নেও। এখন পথ ছাড়ো তাড়াতাড়ি। মিছা ঝামেলা ভালো লাগে না। দোকানদারের ব্যবহারে ভীষণ অসহায় মনে হলো নিজেকে। মন খারাপ করে বেরিয়ে এলাম দোকান থেকে। আর সঙ্গে সঙ্গেই নাফিস পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো আমাকে। কণ্ঠে উচ্ছ্বাস ছড়িয়ে বললো, ভালো আছিস তো? আমি জানতাম তুই আসবি। তাইতো সেই সকাল থেকে ঘাঁটি গেড়ে বসে আছি। নাফিসের কথা শুনে আমি তো অবাক। সেই সকাল থেকে সে নাকি এখানে  বসেছিলো! কিন্তু আমি তো চারদিকে তাকিয়েও ওকে দেখতে পাইনি! সেই কথাটা নাফিসকে জানাতেই নাফিস বললো, বসেছিলাম সেই সকাল থেকেই। কিছুক্ষণ আগে পরিচিত এক লোকের সাথে কথা বলতে গিয়েছিলাম। সেই ফাঁকে গাড়ি এসে তোকে নামিয়ে গেছে। যা হোক, চল্ এবার বাড়ি যাই। রোদ উঠলে হেঁটে যেতে কষ্ট হবে।

চোখে সরষে ফুল

কোড়াল বনে পা দিতেই মন খুশিতে নেচে উঠলো। কি অপূর্ব পরিবেশ! সার বেঁধে দাঁড়িয়ে আছে চেনা-অচেনা গাছের সারি। উপরে তাকালে আকাশ দেখা যায় না। মনে হয় সবুজ চাঁদোয়া দিয়ে কে যেনো সারাটা আকাশ ঢেকে রেখেছে! তার ফাঁকে ফাঁকে ঝুলছে লাল-হলদে ফলের থোকা। নিচে হীরে-কাঞ্চনের মতো ঝলমল করছে নাম না জানা বনফুলের ঝাড়। পাতার মর্মর শব্দ। লাল-নীল পাখির কলকাকলি। আহ্! এমন স্বর্গরাজ্যে যদি সারাটা জীবন কাটিয়ে দিতে পারতাম! নাফিস কখনো বনে ঢোকেনিÑ আমিও না। আজ কোড়াল বনে পা দিয়ে মনে হলো আমরা যেনো কোনো এক রূপকথার দেশে এসে গেছি। এখানে ছড়িয়ে আছে চোখ ধাঁধানো সৌন্দর্য। আর এ সৌন্দর্যকে অবহেলা করার মতো কোনো শক্তিই নেই আমাদের। দু চোখ ভরে বনের সৌন্দর্য দেখতে দেখতে এগিয়ে চললাম সামনেÑ আরো সামনে। এক রোমাঞ্চকর আকর্ষণে প্রজাপতির মতো এদিক-ওদিক ঘুরে বেড়াতে লাগলাম আমি আর নাফিস। কখনো আমাকে ঘাবড়ে দেয়ার জন্য নাফিস লুকিয়ে রইলো স্বর্ণলতায় ছাওয়া ঝোপ-ঝাড়ের আড়ালেÑ কখনো দু লাফে আমি চড়ে বসলাম কাঠবাদাম গাছের মগডালে। এভাবে অনেকটা পথ এগিয়ে যাবার পর নাফিসের মনে পড়লো বনতিতিরের কথা। নাফিস বললো, দেখেছিস তন্ময়, তিতিরের কথা আমি ভুলেই গিয়েছিলাম! শুনেছি ওরা গভীর বনে ঘুরে বেড়ায়। যদি তিতির শিকার করতেই হয় তবে আমাদের আরো গভীরে যেতে হবে। নইলে মিশনটাই ব্যর্থ হয়ে যাবে। বনের ভেতর ঘুরে বেড়ানো যে এতোটা রোমাঞ্চকর, এতোটা আকর্ষণীয়Ñ আমার তা জানা ছিলো না। তাই নাফিস যখন জানালো তিতিরের খোঁজ পেতে হলে আমাদের আরো ভেতরে যেতে হবে তখন বললাম, মিশন ব্যর্থ হবে কেনো? এসেছি বনতিতিরের খোঁজেÑ প্রয়োজন হলে আফ্রিকার বনে ঢুকে পড়তেও পিছপা হবো না। আমার সমর্থন পেয়ে নাফিসও বেশ চাঙ্গা হয়ে উঠলো। আমরা তখন বিপুল উৎসাহে কোড়াল বনের গভীরে এগিয়ে চললাম। গাছ গাছালি আর ঝোপা ঝাড় পেছনে ফেলে এক সময় এক ধরনের অদ্ভুত গাছের সামনে এসে দাঁড়ালাম। সারা শরীরে কাঁটা ছড়ানো সেই গাছের ডালগুলো একটি দুর্ভেদ্য দেয়াল হয়ে চারদিকে ছড়িয়ে আছে। এই অচেনা গাছগুলোর দিকে তাকিয়ে কেনো যেনো আমার বুকের ভেতরটা মুচড়ে উঠলো! তাছাড়া একটু রাগও হলো আমার। তাই আমি বললাম, দেখেছিস! গাছগুলো কেমন অভদ্রের মতো দাঁড়িয়ে আছে? ওদের মাড়িয়ে যে সামনে এগোবো, তারও উপায় নেই! চল্ ডান দিকে যাই। ডান দিক দিয়ে বনের অনেকটা গভীরে ঢুকে পড়েও কিন্তু বনতিতিরের দেখা পেলাম না। এভাবে আরো কিছুটা সময় এদিক-ওদিক ঘুরে বেড়াবার পর সারাটা বন যখন আলো-আঁধারে একাকার হয়ে গেলো, নাফিস আর আমি তখন একই সাথে চমকে উঠলামÑ হায় আল্লাহ! কোড়াল বন যে অন্ধকারে ডুবে যাচ্ছে! এক্ষনি আমাদের ফিরে যাওয়া উচিত। আচমকা একঝলক অজানা আশঙ্কা আমার মনের পর্দায় ঝলসে উঠলো। আমি তখন নাফিসকে নিয়ে উল্টো দিকে ছুটে চললামÑ যেদিক থেকে এসেছিলাম সেদিকে। এভাবে অনেকটা পথ পেরিয়ে আসার পর সামনে পড়লো এক বিশাল দিঘি। সেদিকে তাকিয়ে থমকে দাঁড়ালাম আমি। দিঘির বুকে থরেথরে রক্তশাপলা ফুটে আছে। শান্তির দূতের মতো ধবধবে রাজহাঁস ভেসে বেড়াচ্ছে সেই ফুলগুলোর চারপাশে। আমি মুগ্ধ চোখে উপভোগ করে চললাম সেই সৌন্দর্য। নিজের অজান্তেই আমার মুখ দিয়ে বেরিয়ে এলো এক বিস্ময়ধ্বনিÑ অপূর্ব! অপূর্ব লাগছে হাঁসগুলোকে! সপ্তডিঙার মতো কেমন ভেসে বেড়াচ্ছে দেখেছিস? নাফিস বললো, ওসব দেখে হবেটা কি? আমার মাথা এখন বোঁ বোঁ করে ঘুরছে। : কেনো? মাথা ঘুরছে কেনো? অবাক হয়ে জানতে চাইলাম আমি। নাফিস বললো, ঘুরবে না? সম্ভবত আমরা ভুল পথে এগোচ্ছি। আসার সময় কোনো দিঘি দেখিনিÑ তোর মনে পড়ে তন্ময়? এবার আমার কাছে পুরো ব্যাপারটা পরিষ্কার হলো। তাই তো, বনে ঢোকার সময় তো এই দিঘিটা চোখে পড়েনি! তাহলে কি আমরা সত্যিই ভুল পথে এগোচ্ছি? আমি বললাম, দিঘির সৌন্দর্য দেখে অভিভূত হয়ে গিয়েছিলাম। তাই পথের ভুলটা আমার চোখে পড়েনি। ভাগ্যিস তোর চোখে ধরা পড়েছিলো। চল্ এবার বাঁ দিকে যাই। দুর্গাপুর মনে হচ্ছে ওদিকেই হবে। বিকেল হবার সাথে সাথেই বনের ভেতর আলো-ছায়ার একটা আল্পনা সৃষ্টি হয়েছিলো। এখন সেই আল্পনা মুছে গিয়ে সারাটা বনে হালকা অন্ধকার ছড়িয়ে পড়েছে। নাফিস আর আমি বাঁ দিকে এগিয়ে চললাম সেই অন্ধকার ছিঁড়ে ছিঁড়ে। কিন্তু কিছুদূর এগোতেই আমাদের পথ আগলে দাঁড়ালো উঁচু একটা মাটির ঢিবি। তার ওপর চক্রাকারে সাজানো রয়েছে দশ-বারোটি তালগাছ। প্রকৃতির অদ্ভুত খেয়াল দেখে বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেলাম। অবহেলায় বেড়ে ওঠা গাছগুলো এমন বৃত্ত রচনা করলো কেমন করে? মনে হচ্ছে কোনো শিল্পী যেনো পরম যতেœর সঙ্গে গাছগুলোকে নিখুঁত এক বৃত্তের মাঝে রোপণ করেছেন! আমার ইচ্ছে হলো, যুগ যুগ ধরে আমি বিধাতার সেই অপূর্ব সৃষ্টি তাকিয়ে তাকিয়ে উপভোগ করি। কিন্তু উপভোগ করবো কি! পরক্ষণেই আমি সম্বিত ফিরে পেলামÑ এ আমরা কোথায় চলেছি? বনে ঢোকার পথে তো ওই গাছগুলো চোখে পড়েনি! তবে কি এবারো আমাদের ভুল হচ্ছে? ততক্ষণে বনের ভেতরটা আরো অন্ধকার হয়ে এসেছে। যা করতে হয় খুব তাড়াতাড়িই করতে হবে। আমি তাই নাফিসকে বললাম, আমার মনে হচ্ছে আমরা পথ হারাতে বসেছি। তবে ঘাবড়াবার প্রয়োজন নেই। ঘাবড়ে গেলে কোনো সমস্যার সমাধান হবে না। আমরা বরং নাক বরাবর এগিয়ে যাই। কপালে যা আছে তাই হবে। নাফিস বললো, আমি দু চোখে সরষে ফুল দেখছি। তোর যেদিকে ইচ্ছে নিয়ে চল্। আমি শুধু ভয়ঙ্কর এ বেড়াজাল থেকে মুক্তি পেতে চাই। আবার নতুন আশায় বুক বেঁধে গাছগুলোর ফাঁকে ফাঁকে পা ফেলে ছুটে চললাম। কাঁটাগাছের ঝোপ আর লতাপাতায় জড়িয়ে গিয়ে আমার শরীর থেকে রক্ত বেরোতে লাগলো। তবুও মরণপণ করে ছুটে চললাম আমরা। এভাবে অনেকটা সময় ছুটে চলার পর দুজনা একটা খালের পাড়ে এসে দাঁড়ালাম। কোড়াল বনটাকে দু’ভাগে ভেঙে তিরতির করে তার স্রোতধারা ছুটে চলেছে অজানার পথে। দু’পাশে দাঁড়িয়ে আছে হোগলা আর নলখাগড়ার ঝোপ। তার ফাঁক দিয়ে চোখে পড়ে খালটির মসৃণ শরীর। সেদিকে তাকিয়ে নাফিসের মন একেবারে ভেঙে গেলো। ভাঙা মন নিয়ে আচমকা ধপাস করো বসে পড়লো বেচারা। আমি বললাম, কি রে, বসে পড়লি যে? এগোবি না? আমার কথায় রেগে গিয়ে চেঁচিয়ে উঠলো নাফিসÑ এবার কোন্ দিকে এগোবো? কবরের দিকে? নাফিসকে ওভাবে কথা বলতে দেখে এটুকু বুঝতে পারলাম, নাফিস নার্ভাস হয়ে পড়েছে। অবশ্য এ অবস্থায় পড়লে নার্ভাস হওয়াটাই স্বাভাবিক। তবে একটি কথা ঠিকÑ দুজনাই যদি সাহস হারিয়ে ফেলি, তাহলে বাঁচার শেষ আশাটুকুও নিঃশেষ হয়ে যাবে। তাই দৃঢ়তার সাথেই ওকে বললাম, সত্যকে মেনে নিলে সমস্যা অনেক কমে যাবে। আমার মনে হচ্ছে আমরা পথ হারিয়ে ফেলেছি। এমন অবস্থায় ছোটাছুটি না করে বরং নির্ভুল সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আমার কথা শুনে আবারো রেগে গেলো নাফিসÑ নির্ভুল সিদ্ধান্ত মানে? কি সিদ্ধান্ত নিতে বলিস? হাত-পা ভেঙে বসে থাকতে বলিস? আমি বললাম, বসে থাকতে বলবো কেনো? বলছি ছোটাছুটি না করে বরং রাতটা কোনো একটা গাছে চড়ে কাটিয়ে দিই। ভোর হলে আবার পথ খোঁজা যাবে। এবার আরো ভেঙে পড়লো নাফিস। বললো, রাতটা এখানে কাটাবো? এই বনের ভেতর? আচ্ছা, তোর যা ইচ্ছে তাই কর। আমার মাথায় কিচ্ছু আসছে না। জিম করবেটের বইয়ে পড়েছি, রাতে বন্যপ্রাণীরা নদী-নালার সামনে পানি খাবার জন্য এসে জড়ো হয়। তাই যদি হয়, তবে বলতে হবে এ জায়গাটা মোটেও নিরাপদ নয়। যে কোনো সময় হিংস্র জন্তুরা এসে ঝঁাঁপিয়ে পড়তে পারে। তাই সময় থাকতে সরে যেতে হবে। আর একটুও সময় নষ্ট না করে আমরা দ্রুত পেছনে সরে যেতে লাগলাম। ঘুটঘুটে অন্ধকারে হোঁচট খেতে খেতে দু তিনশো গজ পিছুতেই একটা জিনিস দেখে আমি অবাক হলাম। আমার মনে হলো দূরে দাঁড়িয়ে থাকা গাছগুলোর গায়ে হালকা একটা আলোর প্রলেপ যেনো জ্বলজ্বল করছে! এ কি অদ্ভুত কাণ্ড! তীব্র কৌতূহল নিয়ে আমি ধীরে ধীরে সেই গাছগুলোর দিকে এগিয়ে গেলাম। এবার নিশ্চিন্ত হলাম, আমি ভুল দেখিনি। সত্যি সত্যিই প্রতিটি গাছের শরীরে শরীরে একটা আলোর আভা লেপটে আছে। আলোটার ব্যাপারে নাফিসকে জানাবো ভেবে পেছনে তাকালাম! কিন্তু নাফিসকে দেখতে পেলাম না। এই অদ্ভুত কাণ্ড দেখে একটা অজানা ভয়ে আমার বুকের ভেতরটা কেঁপে উঠলো। আমি চিৎকার করে ডাকলাম না... ফি... স... আমার ছ’সাত গজ পেছন থেকে ভেসে এলো নাফিসের কণ্ঠস্বরÑ এই যে আমি এখানে। তুই ওদিকে যাস না তন্ময়Ñ চলে আয় এদিকে। একটা বিশাল গাছের আড়াল থেকে বেরিয়ে এলো নাফিস। আর বেরিয়ে আসতেই ওকে দেখে রাগে ফেটে পড়লাম আমি। বললাম, কি ব্যাপার বল্ তো? ছুটে আসতে আসতে আবার লুকিয়েছিলি কেন? নাফিস বললো, লুকিয়েছি কি আর সাধে? অদ্ভুত ওই আলোগুলো দেখার পর থেকে এগোতেই আর সাহস পাচ্ছি না। হাত-পা ভেঙে আসতে চাইছে। আচ্ছা তন্ময়, ওসব ভূত-প্রেতের কাণ্ড নয় তো? গাছের গায়ে আলো দেখার পর থেকে নাফিসের মতো আমার শরীরও ছমছম করছিলো। একটা আজানা আশঙ্কায় দুরুদুরু করছিলো বুক। কিন্তু সে কথা তো আর নাফিসকে বলা যায় না। তা ছাড়া ওকে চাঙ্গা রাখাটাও প্রয়োজন ছিলো আমার জন্য। তাই বললাম, ভূত-প্রেতের কাণ্ড মানে? ভূত-প্রেত বলে কিছু আছে নাকি? ওসব তো হাঁদারামদের কল্পনা! আসলে আলো আসছে কোনো সাধু-সন্ন্যাসীর আস্তানা থেকে। চল, আরো একটু এগিয়ে যাই। তাহলেই বুঝবি আমার কথা সত্য না মিথ্যা। আর একটি কথাও না বলে আমি সামনে এগিয়ে চললামÑ উপায় না দেখে নাফিসও আমাকে অনুসরণ করলো। আমরা যতোই এগোচ্ছিলাম গাছের গায়ে লেপটে থাকা আলোর রংটা ততোই গাঢ়ো হচ্ছিলো। আর অজানাকে জানার কৌতূহল ততোই দ্রুত আমার শিরায় শিরায় ছড়িয়ে পড়ছিলো । এভাবে বেশ কিছুক্ষণ চলার পর একেবারে অপ্রত্যাশিতভাবেই আমাদের সামনে ইট-সুড়কি খসে পড়া একটা প্রকা- দালান এসে পড়লো। ওটার ভেতর থেকেই আলো বেরোচ্ছে। বট-পাকুড়ে ঢেকে থাকা সেই দালানটির সামনে থামকে দাঁড়াতেই পেছন থেকে সার্টের কোণ খামচে ধরলো নাফিস। ভয়ার্ত কণ্ঠে সে বললো, এই সেরেছে! আমরা মনে হয় পোড়োবাড়ির সামনে এসে পড়েছি। : পোড়োবাড়ি? পোড়োবাড়ি আবার কি? অবাক হয়ে জানতে চাইলাম আমি। নাফিস বললো, পোড়োবাড়ি মানে, অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকা বাড়ি। ছোড়দার কাছে শুনেছি, কোড়াল বনের ভেতর একটা জমিদারবাড়ি আছে। যে সব প্রজারা খাজনা দিতে পারতো না, অথবা যারা জমিদারের অন্যায় আচরণের প্রতিবাদ জানাতো, জমিদার নীলকান্ত রায়চৌধুরী সে সব প্রজাকে এ বাড়িতে ধরে এনে হত্যা করতো। কাউকে আবার পাতালঘরের কড়িকাঠে ঝুলিয়ে রাখতো। তারপর এক দরবেশ বাবার অভিশাপে সেই নীলকান্ত রায়চৌধুরী পাগল হয়ে কোথায় যেনো চলে গেছে। সেই থেকে জমিদারবাড়িটি অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে। নীলকান্ত রায়চৌধুরী নেই, অথচ আজও মানুষ তার ফেলে যাওয়া বাড়িটিকে যমের মতো ভয় করে। আমরা মনে হয় সেই পোড়োবাড়ির সামনেই এসে পড়েছি।

পোড়াবাড়ি অভিযান চিঠি পাঠাবার এক ঘণ্টার মধ্যেই ফোর্স ভর্তি দুটো জিপ নিয়ে ডক্টর নিপু মজিদ হালদারের বাড়ি এসে হাজির হলেন। জিপ থামতেই সবার আগে নেমে দাঁড়ালো মজিদ হালদার। আমি গিয়ে দাঁড়ালাম ডক্টর নিপুর পাশে। আমাকে দেখেই ডক্টর নিপু চেঁচিয়ে উঠলেনÑ এই যে তন্ময়! হয়েছে কি বলো তো? আমি তখন ডক্টর নিপুকে সব খুলে বললাম। সে কথা শুনে ডক্টর নিপুর বললেন, ওহ্ মাই গড!। দারুণ ব্যাপার ঘটিয়ে ফেলেছো দেখছি! আমি কিন্তু এতোটা ভাবিনি। সে যাক, হাতে মোটেও সময় নেই। আমাদের এক্ষনি বেরোতে হবে। পথটা দেখিয়ে দিতে পারবে তো? বললাম, পারবো। ডক্টর নিপু বললেন, তা যে পারবে তা আমি জানি। দারুণ স্মার্ট আর সাহসী ছেলে তুমি। নিজের প্রশংসা শুনলে সব সময়ই আমি নার্ভাস হয়ে পড়ি। আজ কিন্তু তা হলাম না। বরং সাহস করেই বললাম, ওই পথটা আমার মুখস্থ হয়ে গেছে। এবার মজিদ হালদার আর ময়নার কাছে বিদায় নিয়ে জিপে উঠে বসলাম। তীব্র গতিতে জিপ দুটো কোড়াল বনের দিকে ছুটে চললো। মাত্র ত্রিশ মিনিটের মধ্যেই আমরা বনের সীমানায় পৌঁছে গেলাম। ওসি সাহেবের নির্দেশে এবার জিপ দুটো থামানো হলো। ওসি সাহেব বললেন, ঝটপট বলো তো ভাই, পোড়োবাড়িটা বনের কোন্ কোণে? কোন্ দিক দিয়ে এগোতে হবে আমাদেরÑ উত্তর না দক্ষিণ? ওসি সাহেব আমাকে ঝটপট বলতে বললেও ঝটপট একটা কিছু বলে দেয়া কঠিন ছিলো আমার জন্য। তাই একটু ভেবে নিয়ে বললাম, সর্টকাট যেতে হলে দক্ষিণ দিকে এগোতে হবে। এবার আমার নির্দেশ মতো নানা বাঁক ঘুরে উঁচুনিচু পথ মাড়িয়ে জিপ দুটো  অতি সাবধানে এগিয়ে চললো। কিন্তু তবুও কখনো সামনের চাকা উঠে যেতে লাগলো পাথরের চাঁইয়ের ওপরÑ কখনো বা নরম মাটিতে দেবে যেতে লাগলো পেছনের চাকা। এভাবে হাজারো প্রতিবন্ধকতা জয় করে আমরা একটি সমতলভূমিতে উঠে এলাম। এবার আমার মন খুশিতে নেচে উঠলো। কারণ আর মাত্র কয়েক শো গজ এগোলেই আমরা পোড়াবাড়ি পৌঁছে যাবো। ততোক্ষণে সারাটা বন অন্ধকারে ঢেকে গেছে। রেডিয়াম ডায়াল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে ওসি সাহেব বললেন, ঠিক ঠিক পথ চিনতে পেরেছো তো? আর কতো দূর? পথ আমি ঠিকই চিনতে পেরেছিলাম। তাই দৃঢ়তার সাথেই বললাম, খুব বেশি দূর নয়। আমরা পোড়োবাড়ি পৌঁছে গেছি প্রায়। আমার মনে হচ্ছে এখন আর জিপ নিয়ে এগোনো ঠিক হবে না। আপনি কি বলেন স্যার? আমার বিচক্ষণতায় ওসি সাহেব চমৎকৃত হলেনÑ হোয়াট এ গুড আইডিয়া। শুধু সাহসই নয়, তোমার বুদ্ধিও আছে দেখছি! তুমি ঠিকই বলেছো ভাই, বাকি পথটুকু আমাদের হেঁটেই যাওয়া উচিত। নইলে ওরা জিপের শব্দ শুনে এ্যালার্ট হয়ে যাবে। দুুপুরের অভিযান ব্যর্থ হওয়া সত্ত্বেও কেনো যেনো মনে হচ্ছিলো নাফিস আর শুভ্রকে এখানেই খুঁজে পাবো। তাই পুলিশ ফোর্স নিয়ে দ্বিগুণ উৎসাহে এগিয়ে চললাম। তারপর এক সময় যখন পোড়োবাড়ির সামনে গিয়ে পৌঁছলাম, ওসি সাহেব তখন কালবিলম্ব না করে কয়েকজন সেপাই নিয়ে সেই বাড়ির ভেতর ঢুকে পড়লেন। বাম হাতে টর্চ আর ডান হাতে পিস্তল বাগিয়ে সার্চ করে চললেন একের পর এক প্রতিটি ঘর। কিন্তু এবারো কাউকে খুঁজে পাওয়া গেলো না! পুলিশদের ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসতে দেখে হঠাৎ ধৈর্য হারিয়ে ফেললেন ডক্টর নিপু। তিনি বললেন, গতরাতে তোমরা এখানেই এসেছিলে তো, না অন্য কোথাও? এখানে তো ছেলেধরাদের কোনো চিহ্ন খুঁজে পাচ্ছি না! আমি বললাম, কি যে বলেন নিপু কাকুÑ ভুল হবে আমার? মজিদ হালদারকে নিয়ে আমি আজ দুপুরেও একবার এখানে এসেছিলাম। তখন কিন্তু হলরুমটাতে অনেক কিছুই পড়ে থাকতে দেখেছিÑ কিন্তু এখন কিছুই দেখছি না। সবকিছু যেনো কর্পূরের মতো উবে গেছে! আমার কথা শুনে যেনো আকাশ থেকে পড়লেন ডক্টর নিপুÑ বলো কি? তুমি যে এখানে এসেছিলে সে কথা তো বলোনি! অপ্রস্তুত হয়ে বললাম, বলিনি অন্য কথা ভেবে। তখন মনে হয়েছিলো ব্যর্থ অভিযানের কথাটা গোপন রাখাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। এখানে এসেও ছেলেধরাদের কাউকে খুঁজে পাইনি, এ কথাটা জানতে পারলে হয়তো পুলিশ বাহিনী আমাদের সাহায্যই করবে নাÑ তাই। আমার কথা শুনে এতো টেনশনের মাঝেও ওসি সাহেব অট্টহাসিতে ফেটে পড়লেন। হাসতে হাসতে বললেন, তোমার বুদ্ধির আবারো তারিফ করছি। তবে একটা কথা ঠিকÑ আমাদের এতোটা দায়িত্বহীন ভাবাটা তোমার উচিত হয়নি। সে যাক, এখানে কাউকে না পেলেও কিন্তু আমি নিরাশ হইনি। : সত্যি? ব্যাকুল কণ্ঠে জানতে চাইলাম আমি। ওসি সাহেব বললেন, হ্যাঁ। কারণ তোমার কথা থেকে অন্তত এটুকু বুঝতে পেরেছি, আমাদের আসার ব্যাপারটি টের পেয়েই ওরা সব চিহ্ন মুছে ফেলেছে। এ থেকে বোঝা যাচ্ছে, ওরা আমাদের কাছাকাছিই কোথাও রয়েছে। : তার মানে আমাদের মিশন সফল হবে? ওসি সাহেব বললেন, সে ব্যাপারে কোনো নিশ্চয়তা দেয়া সম্ভব নয়। তবে ওরা যদি এ বনের কোথাও লুকিয়ে থাকে, তবে নির্ঘাত ধরা পড়বেই পড়বে। চলো বেরিয়ে পড়া যাক। সারাটা বন তোলপাড় করে খুঁজে দেখবো এবার।     (চলবে)

আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ