প্রজাপতি

প্রজাপতি

তোমাদের গল্প মে ২০১৩

প্রজাপতি রীনা তালুকদার

শিহাব ক্লাস টু-তে পড়ে। প্রতিদিন রুটিন মতো চলার খুব চেষ্টা করে। কিন্তু সকালে এক রকম চিন্তা করলে বিকালেই তার প্ল্যান করা রুটিন এলোমেলো হয়ে যায়। রোজ সকালে ঘুম থেকে উঠবে বলে রাতে একটু আগে আগেই শুয়ে পড়ে। কিন্তু তবুও সে ঠিক সময়ে ঘুম থেকে উঠতে পারে না। দেরি তার হয়েই যায়। প্রতিদিনই দেখা যায় মা এসে তার রুমের দরোজায় জোরে জোরে টোকা দিতে থাকেন। এক সময় টোকাগুলো কিল-ঘুষি আকারে দরজায় ধুপ-ধাপ পড়তে থাকে। তারপর শিহাব হকচকিয়ে তড়িঘড়ি দরোজা খুলে বড় বড় চোখ করে মায়ের দিকে তাকায়। মা রাগে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে চোখ লাল করে তাকিয়ে শিহাবকে বলেন, শিহাব, প্রতিদিনই তোমাকে চেঁচামেচি করে ডাকতে হয় কেনো? শিহাব বলে, আ.. আ...। ভয়ে আর কিছুই মুখে উচ্চারণ করতে পারে না। মা তখন বলেন, থাক, আর বলতে হবে না। দ্রুত তৈরি হও। সবাই অপেক্ষা করছে। ভয়ে কোনো কথা না বলে শিহাব তাড়াতাড়ি বাথরুমে ঢুকে যায় তৈরি হতে। কেন যে ঘুম থেকে উঠতে পারে না সে কিভাবে বলবে। চেষ্টা করে তবুও ঠিক সময়ে স্কুলের ভ্যানে উঠতে পারে না। ভ্যান তার জন্য দেরি করলে অন্য ছাত্ররা ভ্যানচালকের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে। শিহাব ভাবে যে আজ স্কুল থেকে এসে ঠিক সময়ে হোমওয়ার্ক শেষ করে ঘুমিয়ে পড়বে। যেনো পরদিন সকালে ঠিক সময়ে স্কুল ভ্যানে উঠতে পারে। স্কুল থেকে বাসায় এসে দুপুরের খাবার খেয়ে খানিকটা ঘুমিয়ে নিয়ে শিহাব নিচে নামে। মাঠে খেলতে যাবে। কিন্তু গেট দিয়ে বের হবার সময় চোখ আটকে গেলো সুন্দর একটা প্রজাপতি দেখে। ছোট্ট কামিনী ফুল গাছে সুন্দর হলুদ-কালচে রঙের প্রজাপতি। বিকালের ছায়াময় রোদ্দুর চিক্ চিক্ করছে মোথাঘাসের উপর পড়ে। শিহাব প্রজাপতিটার পিছু নিলো। বার বার ধরতে যায়। অমনি প্রজাপতিটা উড়ে গিয়ে অন্য গাছে বসে। অনেকক্ষণ দৌড়াতে দৌড়াতে হাঁপিয়ে ওঠে। ধপাস করে বসে পড়ে সবুজ ঘাসের বিছানার উপর। মালী দূর থেকে দেখে দৌড়ে আসে। বলে, কী হয়েছে শিহাব বাবু? শিহাব হাঁপাতে হাঁপাতে বলে, দেখো তো মালী চাচা, ওই প্রজাপতিটা কিছুতেই ধরতে পারিনি। ও খুবই দুষ্টু। মালী বলে, না শিহাব বাবু। ও দুষ্টু নয়। তুমি তো ওকে তাড়া করছিলে। সেজন্য ও প্রাণ বাঁচাতে দৌড় দিচ্ছে। শিহাব মালীর কথা শুনে অবাক হলো। বলল, হ্যাঁ তাই তো মালী চাচা। আমি ওকে তাড়া করছিলাম। ওকে তাড়া করলে ও আর এখানে কখনও আসবে না। বলে মালী। ও, আমি তাড়া করলে ও আর এখানে আসবে না? না। তাড়া করলে আর আসবে না। ঠিক আছে, তাহলে আর তাড়া করব না। তাহলে চলো তোমাকে আরও অনেক প্রজাপতি দেখাই। চলো মালী চাচা। মালী চাচা শিহাবকে নিয়ে এগিয়ে যায়। এই দেখো বলে শিহাবের দোতলার ঘর বরাবর নিচে ঝোঁপঝাড়ের পাশে বেলি আর কসমস ফুল গাছে প্রজাপতি দেখালো। প্রজাপতিগুলো বিভিন্ন রঙের। দেখেই আনন্দে ওয়াও বলে চিৎকার করে উঠল। মালী মুখে হাত দিয়ে চুপ করতে বলল। শিহাব চুপ হয়ে দেখতে লাগল। রাতের খাবার খাওয়ার সময় শিহাব খাবার টেবিলে বাবাকে প্রজাপতি দেখার গল্প বলে। বাবা শিহাবকে আরো অনেক অজানা গল্প শোনালেন। বাবা বললেন, শোনো শিহাব, পৃথিবীর সবচেয়ে বড় প্রজাপতি মথের নাম এটলাস। এই মথের পাখার দৈর্ঘ্য ২৫-৩০ সেন্টিমিটার। এরা সাধারণত এশিয়া অঞ্চলের দক্ষিণ চীন, মালয় দ্বীপপুঞ্জ, থাইল্যান্ড এবং ইন্দোনেশিয়ার গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ও নাতিশীতোষ্ণ বনাঞ্চলে বাস করে। বুঝলে শিহাব, এদের পাখা মানচিত্রের মতো দেখতে। এদের দেহ অনেক লোমে আবৃত থাকে। গায়ের রঙ পিঙ্গল ও তামাটে বর্ণের। বাবার গল্প শুনতে শুনতে শিহাব খাবার শেষে টেবিলেই ঘুমে জড়িয়ে যায়। হাই তোলে। বাবা বললেন, তোমার ঘুম আসছে, যাও ঘুমাও গিয়ে। শিহাব ঘুম জড়ানো কণ্ঠে ঠিক আছে বাবা বলেই আড়মোড়া দিয়ে উঠে দাঁড়ায়। শিহাব নিজের ঘরে গিয়ে সোজা ঘুমিয়ে পড়ে। ঘুমের ভেতর সে হারিয়ে যায় প্রজাপতিদের রাজ্যে। ছুটছে প্রজাপতিদের পিছে পিছে। নিচে সারা বাগানে লাল-হলুদ-কালো-গোলাপি-বেগুনি-সবুজ আর নীল রঙের অনেক অনেক প্রজাপতি। একটাকেও ধরতে পারছে না শিহাব। দৌড়াচ্ছে তো দৌড়াচ্ছেই। তারপর ক্লান্ত হয়ে বসে মাঠের এক কোণে। তখন সব প্রজাপতি উড়ে এসে বসে শিহাবের চারপাশ ঘিরে। দেখে শিহাব খুব খুশি হলো। প্রজাপতিদের বলল, তোমরা এতক্ষণ আমাকে কষ্ট দিয়েছো। তোমাদের ধরতে অনেক দৌড়াচ্ছিলাম। কিন্তু তোমরা একটাও আমার হাতের নাগালে আসোনি। প্রজাপতিরা বলল, দেখো শিহাব, তুমি আমাদের ধরলে আমরা আহত হতাম। এক সময় তোমার হাতের ঘষায় মরে যেতাম। তাহালে আমাদের বংশ বিস্তার হতো না। আমাদের বংশ বিস্তার না হলে তোমরা মানুষেরা অনেক বিপদে পড়তে। তোমাদের প্রকৃতির অনেক ক্ষতি হতো। শিহাব বুঝতে না পেরে জিজ্ঞেস করল, সেটা কেমন করে? প্রজাপতিরা বুঝিয়ে দিল, আমরা গাছের বংশ বৃদ্ধিতে সহায়তা করি। গাছের বংশ বিস্তার না হলে প্রকৃতি রুক্ষ হয়ে যাবে। বৃষ্টির পরিমাণ কমে যাবে। আর পৃথিবীতে গাছ কমে যাবে। মানুষেরা গাছ থেকে যে অক্সিজেন গ্রহণ করে বেঁচে থাকে তা পাবে না। শিহাব প্রজাপতিদের কথা শুনে শিউরে উঠল। বলল, কী বলছো তোমরা! আমি তো এসব কিছুই জানি না। এসব জানলে তো আমি তোমাদের দৌড়ে ধরতে যেতাম না। প্রজাপতিরা তখন বলল, তাহলে ভেবে দেখো তোমাদের কত উপকার হয় আমাদের দ্বারা। অথচ তোমরা আমাদের তাড়া করে ধরে মেরে ফেলো। এটা কি ঠিক শিহাব? শিহাব দু’পাশে মাথা নেড়ে বলে, না, মোটেও ঠিক নয়। আমি খুবই দুঃখিত। আর কোনোদিন তোমাদের তাড়া করব না। তোমরা আমাদের বাগানে নিশ্চিন্তে বসবাস করতে পারো। প্রজাপতিরা শিহাবকে অনেক ধন্যবাদ দিল। তারপর চলে যেতে লাগল। প্রজাপতিরা একটু একটু করে শিহাবের জানালা থেকে উড়ে সরে যাচ্ছে, শিহাব হাত বাড়িয়ে ওদের বিদায় জানালো। ওরা দূরে চলে গেলো। বিদায়ের কষ্টে শিহাব হঠাৎ ঘুম থেকে জেগে উঠল। দেখল, খোলা জানালায় অনেক সোনালি রোদ। জানালায় উঁিক দিতেই দেখল বাইরে বাঁশের ঝোঁপে অনেক প্রজাপতি বসে আছে। দেখেই শিহাবের মন ভালো হয়ে গেলো। তাড়াতাড়ি স্কুলে যাবার জন্য তৈরি হয়ে গেলো। এখনো স্কুলের ভ্যান আসেনি। ভালোই হলো। হ

আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ