প্রথম দুঃসাহসী অভিযান   -মুস্তাহিদ মুকাররমী

প্রথম দুঃসাহসী অভিযান -মুস্তাহিদ মুকাররমী

তোমাদের গল্প নভেম্বর ২০১৫

অনেক দিন আগের কথা। তখন ব্রাজিলের মানুষ অ্যাডভেঞ্চার করতে ভালবাসতো। অ্যাডভেঞ্চার ছিল তাদের এক ধরনের শখ। ব্রাজিলের মানুষ ধীরে ধীরে দুঃসাহসী হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। সে সময় ব্রাজিলের অন্যতম সেরা দুঃসাহসী ছিলেন উইলিয়াম মার্টিনো। তিনি কোন কিছুতে ভয় পেতেন না। জলে ও স্থলে উভয় জায়গায় তাঁর ছিল বিরাট অভিজ্ঞতা। সমুদ্রে তিনি অনেকবার যাত্রা করেন। অনেক বন ও পাহাড় পাড়ি দেন। কিন্তু তাঁর ছেলে উইলিয়াম জোকোভিচ তেমনটি ছিলেন না। তিনি ছিলেন পড়ালেখা ও জ্ঞানচর্চার প্রতি তীব্র অনুরাগী। মার্টিনোর আক্ষেপ তিনি তার ছেলেকে তার মতো বানাতে পারেন নি। কিন্তু তিনি সিদ্ধান্ত নেন তার আদরের দাদুভাইকে নিজের মতো করে গড়ে তুলবেন। কিন্তু সেটা আর সম্ভব হয় না। কারণ ছেলে জোকোভিচের বিয়ের পর তিনি বৃদ্ধ হয়ে পড়েন। জোকোভিচের বিয়ের এক বছর পর তার স্ত্রী উইলিয়াম লিন্ডার কোলজুড়ে একটি পুত্রসন্তান আসে। মার্টিনো নিজে তার নাম রাখে উইলিয়াম পোকো। কিন্তু তার স্বপ্ন পূরণ করতে পারলেন না। কারণ ছোট পোকোর বয়স যখন মাত্র ৩ তখন মার্টিনো মারা যান। বাবার এ মৃত্যুতে গভীর শোকাহত হয় জোকোভিচ। কিন্তু দিন যেতে থাকে, ছোট পোকো বড় হতে থাকে। প্রকৃতির সাথে তার হয় গভীর মিতালি। পোকো যখন ক্লাস সেভেনে, তখন তার বন্ধুরা যখন মাঠে খেলা করত, তখন সে গাছের পরিচর্যা করে মনে মনে গাছের সাথে কথা বলত। সে ছিল অন্য সবার থেকে আলাদা। সবসময় দুঃসাহসী চেতনায় মগ্ন থাকত। ঠিক যেমনটি ছিলেন তার দাদু মার্টিনো, বাবা জোকোভিচ তো বলেই ফেললেন, ‘তুই ঠিক তোর দাদুর মতো হয়েছিস।’
পোকোর বয়স যখন ১৭, সে পর্বতারোহী হিসেবে ব্রাজিলেরই একটি পাহাড়ে ওঠে। সেই পাহাড়ে সে সহজেই আরোহণ করে ফিরে আসে। এর কিছুদিন পর সে জাহাজে যাওয়ার জন্য আবদার করে বাবার কাছে। বাবা জোকোভিচ তো কিছুতেই রাজি নন। বাবাকে অনেক বুঝিয়ে শেষে রাজি করালো পোকো। কিছুদিন পর পোকো উইটার্ন নামে একটি জাহাজে করে ছুটলো ওয়েস্ট ইন্ডিজের দিকে। যাওয়ার সময় জোকোভিচ ও লিন্ডার চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরলো দ্বিগুণ পরিমাণ। অবশেষে জাহাজ চলল। চলার পথে নতুন অনেক কিছু দেখলো পোকো। পথে বিশ্রামের জন্য একটি নির্জন দ্বীপে জাহাজ থামলো। সেখানে তারা রান্না-বান্না করে খেয়ে নিল এবং বাকিটা জাহাজে নিল পরে খাওয়ার জন্য। সেখানে সবাই একটু ঘোরাঘুরিও করে নিল। কিন্তু পোকোর গাছপালার প্রতি বিশেষ টান থাকায় সে একটু বেশি দূর চলে গেল। ফলে জাহাজ যাওয়ার সময় হুইসেল বাজালে সে শুনতে পেল না। জাহাজও চলে গেল। এদিকে পোকো তো দ্বীপটা ঘুরে দেখেই যাচ্ছে। এরপর দুই ঘন্টা পর যখন তার জাহাজের কথা মনে পড়ল সে সঙ্গে সঙ্গে ছুটে গেল। কিন্তু জাহাজ যে চলে গেছে। পোকো বুঝতে পারল তার ভুলটা। কিন্তু এখন যে কাঁদলে চলবে না। তাই সে খাবারের খোঁজে বের হলো। সে দ্বীপে কিছু ফল পেল যা সে রাতের জন্য রাখলো এবং বাসস্থান খুঁজতে লাগল। ভাগ্যের জোরে একটি গুহাও পেয়ে গেল। রাতটা ভালোই গেল। সকালে সে আগুন জ্বালানোর চেষ্টা করল যাতে করে সে উদ্ধারকারী হেলিকপ্টারের দৃষ্টি আকর্ষণ করাতে পারে। সেদিন একটি হেলিকপ্টারও গেল সেখান দিয়ে কিন্তু পোকোর আগুন দেখতে পেল না। এভাবে তিন দিন সে দ্বীপে ফল ও সমুদ্রের পানি ফুটিয়ে খেয়ে অতিবাহিত করল। চতুর্থ দিন, সূর্যের আলো ফোটার সাথে সাথে সে একটি জাহাজ দেখতে পেল। সে তখনই আলো জ্বালিয়ে ধোঁয়া বের করল। জাহাজের এক নাবিক দেখতে পেয়ে নাবিককে বললো। আর সেই জাহাজেই পোকো ব্রাজিলে পৌঁছালো। ব্রাজিলে গিয়ে সে বাবা-মাসহ সবাইকে তার এ চরম অভিজ্ঞতার কথা বলল; সামান্য তিন দিন তার জীবনে অনেক বড় প্রভাব ফেলে। সে সমুদ্র থেকে দূরে থাকতে চাইলেও পারে না। কারণ যে সমুদ্রে একবার যায় সমুদ্র তাকে বারবার নিজের দিকে আকর্ষণ করে। সে আবার সমুদ্রে যায় এবং অনেক অভিযান করে। এভাবে একের পর এক অভিযান করল এবং সফলতা অর্জন করতে লাগল।
                        
আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ