প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ

প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ

প্রচ্ছদ রচনা এপ্রিল ২০১৩

মাহবুবুল হক

বৈশাখ, নববর্ষÑ এসব শব্দ শুনলে আমাদের মনটা আনন্দে নেচে ওঠে। মনটা খুশিতে ভরপুর হয়ে যায়। মনের মধ্যে খুশির এক তরঙ্গ সৃষ্টি হয়। উথাল-পাথাল সে তরঙ্গ। আনন্দের এই যে প্লাবন, খুশির এই যে ঝড়, এ কোথা থেকে আসে, কেন আসে, আমরা বুঝতে পারি না। শুধু অনুভব করি আমরা সবাই আনন্দের জোয়ারে ভাসছি। এই তো মাত্র ক’দিন আগে আমরা স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করেছি। আমাদের স্কুল-কলেজে নানা রকম অনুষ্ঠান ছিল। আমরা বন্ধুদের নিয়ে পতাকা উত্তোলন করেছি, দল বেঁধে জাতীয়সঙ্গীত গেয়েছি, কাগজের পতাকা দিয়ে আমাদের বাড়িগুলো সুন্দর করে সাজিয়েছি। শুধু কি তাই, আমরা নিজেও সেজেছি অন্যদেরও সাজানোর চেষ্টা করেছি। আজকাল স্বাধীনতা দিবসকে লক্ষ্য করে কতজন কত কিছু তৈরি করে। অল্প দামের শার্ট, গেঞ্জি, শাড়ি, সালোয়ার, কামিজ, জামা, কোর্তা কত কিছু পাওয়া যায়, টিফিনের পয়সা জমিয়ে রেখে আমাদের অনেক বন্ধু স্বাধীনতার গেঞ্জি, জামা একে অন্যকে পুরস্কার দিয়েছে। ফুল তো বিলিয়েছে সাধারণভাবে, সারাদিন ঘুরে ঘুরে আমরা দল বেঁধে আনন্দ করেছি, দল বেঁধে আমরা আলোচনা সভা, সেমিনার ও গানের আসরে যোগ দিয়েছি। এসব অনুষ্ঠান থেকে আনন্দের মাঝেও আমরা অনেক কিছু শিখেছি, জেনেছি। দেশের গান শুনতে শুনতে তন্ময় হয়ে গেছি। দেশটা যেন আমাদের কলিজা, আমাদের হৃদয়, বড় যতেœর ধন, বড় ভালোবাসার ধন। এ যেন এক হারানো তুলতুলে মানিক। লাখো শহীদের বিনিময়ে এই মানিকটি আমরা পেয়েছি। একে যতœ করতে হবে, সংরক্ষণ করতে হবে। আমাদের অবজ্ঞার কারণে, আমাদের অবহেলার কারণে এ যেন হারিয়ে না যায়। আমরা যদি আমাদের স্বাধীনতাকে যতœ করে সংরক্ষণ না করি, যদি লালন-পালন না করি, তাহলে সাপ যেমন পাখির বাসায় হানা দেয়, চিলও যেমন পাখির নীড়ে ঝাঁপটা মারে, তেমনি আমাদের স্বাধীনতার স্বপ্ননীড়ও আক্রান্ত হতে পারে। কিন্তু না, অনেক অভয়ের বাণীও আমরা শুনেছি। শুনেছি বাঙালিরা বা বাংলাদেশীরা স্বাধীনতা হারাতে চায় না। আমাদের এক কবির কণ্ঠে বহুকাল আগে উচ্চারিত হয়েছিল ‘স্বাধীনতা হীনতায় কে বাঁচিতে চায়?’ সত্যই তাই, স্বাধীনতা হীনতায় কেউ বাঁচতে চায় না। ‘বন্যেরা বনে সুন্দর শিশুরা মাতৃক্রোড়ে’Ñ এই হলো স্বাধীনতা। এই স্বাধীনতার জন্য পশু-পাখি জীবন দেয়, জীবন দেয় মানুষ। স্বাধীনতার জন্য আমরা অনেকবার জীবন দিয়েছি, প্রয়োজনে আরও দেবো। কিন্তু স্বাধীনতাকে আমরা কাউকে হরণ করতে দেবো না। বৈশাখের কথা বলতে গিয়ে স্বাধীনতার কথা বললাম। কেন বললাম জানো? মাত্র ক’দিন আগেই তো আমরা স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করেছি, তাই এর রেশ এখনো আমাদের মন থেকে ধুয়ে-মুছে যায়নি। সেদিনও আমরা আনন্দ করেছিলাম, আজও আমরা আনন্দের মধ্যেই আছি। কিন্তু এই আনন্দের মধ্যে নানা অনুভবে আমাদের সাঁতার কাটতে হয়, নানা চিন্তায় আমাদের অবগাহন করতে হয়, সীমাহীন আনন্দে বা বল্গাহীন আনন্দে আমরা তো ভেসে যেতে পারি না। স্বাধীনতার আনন্দে লুটোপুটি খেতে খেতে যেমন এর উৎসের কথা আমরা ভাবি, এর কারণ ও পরম্পরা জানতে যেমন আমরা উদ্বেলিত হয়ে উঠি, ঠিক তেমনি বৈশাখে এই যে আমরা আনন্দ করছি, খুশির দুল ও মালা বিলাচ্ছি তাও তো আমাদের জানতে হবে। আমরা মূর্খ বা অশিক্ষিত জাতি নই। না জানার ঝুঁকিও আমরা নিতে পারি না। যে কারণেই এত কথা। প্রতিটি জাতির নববর্ষ আছে। আমাদেরও আছে নববর্ষ। যেমন আছে ইরানিদের, আরবদের এবং খ্রিষ্টান জগতের। ইরানিরা বা ইরান দেশের মানুষ প্রায় আড়াই-তিন হাজার বছর ধরে নওরোজ পালন করছে। নওরোজ মানে নতুন দিন। নও মানে নতুন, রোজ মানে দিন। প্রায় পনের শত বছর আগে থেকে তারা নওরোজ দিবস পালন করে আসছে। তবে পূর্বে যে ঢঙে ও যে মাত্রায় তারা নওরোজ উদযাপন করতো তার মধ্যে ব্যতিক্রম হয়েছে। উৎসব ও আনন্দ অনুষ্ঠান থেকে ধীরে ধীরে তারা শিরক ও বিদাতকে দূর করার চেষ্টা করেছে। এখনও করে যাচ্ছে। তারা আনন্দ উৎসবকে শুদ্ধ ও পরিচ্ছন্ন করার চেষ্টা করছে সেটাই বড় কথা। ইসলাম প্রতিষ্ঠা পাওয়ার পর থেকে আরবে নববর্ষ পূর্বের মতো পালিত হয় না। মহররম মাস থেকে আরবি মাস শুরু। মহররমের ১ তারিখ থেকে ১০ তারিখ পর্যন্ত ধর্মীয় অনেক উৎসব থাকে। ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যকে আরবরা অনেক গুরুত্ব দেয়। সে কারণে নববর্ষের প্রথম দিনে তারা অন্য জাতির মতো হইচই করে না, নীরবে, নিভৃতে সামাজিকভাবে ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলো পালনের চেষ্টা করে। কারণ তারা মনে করে তাদের জাতির নববর্ষের প্রথম দিনটি আরও অনেক কারণে গুরুত্বপূর্ণ। দুনিয়ার সৃষ্টি, আদম (আ)-এর সৃষ্টি, বিশ্ব ইতিহাসের অনেক ঘটনা, নবী-রাসূলদের স্মরণীয় অনেক ঘটনা, যেসব ঘটনার মাঝে লুকিয়ে রয়েছে আনন্দ ও বিষাদের অনেক বিষয়। যে কারণে আরবরা বছরের নতুন দিনে আনন্দের আতিশয্যে মেতে ওঠে না। মেতে ওঠে খ্রিষ্টান জগৎ। আমরা যাকে ইংরেজি সাল বলি, এটা আসলে ইংরেজি সাল নয়। এটাকে বলা হয় খ্রিষ্টাব্দ। অর্থাৎ খ্রিষ্টসাল। খ্রিষ্টান জগৎ, যীশু খ্রিষ্টের নামে এই সাল প্রবর্তন করেছিল। খ্রিষ্টানদের যীশু খ্রিষ্টকে আমরা বলি ঈসা (আ)। তিনি আমাদের অন্যতম নবী ও রাসূল। আল্লাহতায়ালা তাঁর কাছে ধর্মগ্রন্থ ইঞ্জিল অবতীর্ণ করেছিলেন, যাকে তারা বাইবেল বলে, যেমন অবতীর্ণ করেছেন আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সা) এর ওপর আল কুরআন। প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা)-এর মতো হজরত ঈসা (আ)ও আমাদের প্রিয় নবী ও রাসূল। যাক সেসব, খ্রিষ্টান জগতের নববর্ষকেই আমরা ইংরেজি নববর্ষ হিসেবে দুনিয়াব্যাপী পালন করে থাকি। কারণটা আমাদের সবার জানা। এই ঈসায়ী সালকে কেন্দ্র করে দুনিয়ার সকল কাজ-কর্ম এখন আবর্তিত হচ্ছে। গ্রামের কৃষিকাজ ছাড়া আমাদের জীবনের সকল কাজ আবর্তিত বা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে ঈসায়ী সালকে সামনে রেখে। এ কারণে পহেলা জানুয়ারিও আমাদের দেশে উৎসাহ উদ্দীপনার সাথে পালিত হয়। তবে তার সাথে আমরা একাত্ম হয়ে যাই না। বিলীন হয়ে যাই না। সমাজের উচুঁতলার কিছু মানুষ একাত্ম হয়। তারা ৩১ ডিসেম্বরকে ‘থার্টিফার্স্ট নাইট’ হিসেবে পালন করে এবং ১লা জানুয়ারিকে খ্রিষ্টান জগতের মতো ধুমধাম করে উদযাপন করে। আমাদের সমাজের সাধারণ মানুষ ওপরতলার মানুষের এসব কাজকে পছন্দ করে না। এসব কাজকে তারা আমাদের বিশ্বাস ও সংস্কৃতিবিরোধী কাজ বলে গণ্য করে। তারা এসবের নিন্দা করে। তারা বলে, আমরা মুসলিম, আমরা খ্রিষ্টানদের উৎসব কেন পালন করবো? সাধারণ মানুষের এসব কথার মধ্যে যুক্তি আছে। নিজের বিশ্বাস ও আদর্শের প্রতি, নিজের সংস্কৃতির প্রতি এবং নিজের ঐতিহ্যের প্রতি তাদের ভালোবাসা প্রবল। তারা অন্যের সংস্কৃতি নিয়ে লাফালাফি করতে চায় না। নিজের সংস্কৃতির মধ্যে আনন্দের সাথে বসবাস করতে চায়। এই যে চাওয়া, এটাই ঠিক। তথাকথিত শিক্ষিত ও ওপরতলার কিছু মানুষ আমাদের নিজস্ব চিন্তা-চেতনা এবং বোধ ও বিশ্বাস থেকে ছিটকে পড়ে। এই ছিটকে পড়ার জন্য তাদেরকেও এক তরফাভাবে দায়ী করা যায় না। তারা স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ধরনের শিক্ষা ও জ্ঞান লাভ করে এবং বাস্তবজীবনে সমাজের ওপরতলার মানুষের যে জীবন যাপন দেখে, তাই তারা অনুকরণ করে। এসো এবার ১লা বৈশাখের কথা বলি। দিনটি আমাদের দেশের সাধারণ মানুষ বহুকাল থেকে পালন করে আসছে। তারা কিভাবে পালন করতো জানো? মুসলিমরা একভাবে এবং সনাতন ধর্মের লোকেরা অন্যভাবে দিবসটি পালন করতো। তবে মূল অনুষ্ঠানগুলোর মধ্যে ধর্মের প্রভাব থাকতো। যেমন মুসলিমরা মিলাদ, কুরআন খতম, দোয়া, শিরনি বিতরণ এবং মেলায় অংশগ্রহণ করতো। সনাতন ধর্মের মানুষ ১লা বৈশাখের পূর্বে চৈত্রসংক্রান্তির পূজা, অর্চনা এবং ১লা বৈশাখেও পূজা ও আনন্দ উৎসবসহ মেলায় যোগ দিতো। সনাতন ধর্মের ব্যবসায়ীরা নতুন খাতা খুলতো। একে তারা বলতো ‘হালখাতা’। ‘হালখাতা’ মানে বর্তমান খাতা। পুরনো খাতার লেনদেন তারা ১লা বৈশাখে শেষ করতে চাইতো। এ জন্য তারা উৎসবের আয়োজন করতো। পাওনাদার ও দেনাদার নির্বিশেষে এলাকার সকলকে নিমন্ত্রণ করতো। যারা অংশগ্রহণ করতো, তাদেরকে পেটভর্তি মিষ্টি খাওয়াতো। গান-বাদ্যের ব্যবস্থাও থাকতো এসব অনুষ্ঠানে। সকাল থেকে শুরু করে গভীর রাত পর্যন্ত চলতো হালখাতার আনন্দঘন অনুষ্ঠান। দেখা যেত ১০ হাজার টাকা আদায় করতে যেয়ে পাঁচ হাজার টাকা খরচ হয়ে গেছে! খরচ নিয়ে কেউ তেমন একটা ভাবতো না। বছরের শুরুতে কিছু টাকা আদায় হবে, সে টাকা পুঁজি হিসেবে ব্যবসায়ে বিনিয়োগ করা যাবে এবং সবার সাথে আনন্দঘন পরিবেশে মেলামেশা করা যাবে, এসবের জন্যই হালখাতার আয়োজন। সনাতন ধর্মের লোকদের দেখাদেখি মুসলিম ব্যবসায়ীরাও হালখাতার অনুষ্ঠান শুরু করেন। এখনও এই অনুষ্ঠান উভয় জাতির লোকেরা জাঁকজমকের সঙ্গে পালন করে। এতে একটা সামাজিক বন্ধন তৈরি হয়। পূর্বে ১লা বৈশাখে মেলা ছিল না। মেলা ছিল চৈত্রসংক্রান্তির। চৈত্র মাসের শেষ সপ্তাহে এই মেলা বসতো। গ্রামীণ জীবনের হরেক রকম জিনিস মেলায় কেনাবেচা হতো। মাটি, কাঠ, সুতা, পাট, পাটখড়ি, টিন, সোলা ও কাপড় দিয়ে নানাধরনের গৃহস্থালি জিনিস গ্রামের পুরুষ ও মহিলারা বানাতেন। সেসব জিনিস চৈত্রসংক্রান্তির মেলায় বিক্রি করতেন। চিনি, গুড় ও মধু দিয়ে নানা রকম মিষ্টান্ন তৈরি করা হতো, তৈরি করা হতো চাল ও চালের গুঁড়ি দিয়ে নানা কিসিমের খাদ্যÑ যেমন খই, মুড়ি, মুড়কি, মুড়ির মোয়া, চিঁড়া, চিঁড়ার মোয়া ইত্যাদি। বাতাসা, খাজা, গজা, নাড়–, তিলের খাজা এবং আরো কত কী? তিলের মিষ্টান্নও ছিল বহু রকম। পিঠা-পুলির আয়োজনও কম ছিল না। পাপর জাতীয় খাদ্যেরও রমরমা উপস্থিতি ছিলো। এসব মেলায় নানারকম খেলাধুলা, বাইস্কোপ, সার্কাস ও মিনি চিড়িয়াখানার আয়োজনও থাকতো। সারি, জারি, মুর্শিদি, ভাটিয়ালি, ভাওয়াইয়া, কবি, পালা এবং যাত্রাগানও থাকতো এসব মেলায়। মুসলিমরা পালা বা যাত্রাগানে খুব বেশি অংশগ্রহণ করতো না। তারা পুঁথি পাঠের আসরে অংশগ্রহণ করতো। পুঁথির মধ্যেই তারা জীবনের ছবি দেখতো, দেখতো আনন্দের ছবি। কবি গানেও তাঁরা মাঝে মাঝে অংশগ্রহণ করতো। বেশ জমে উঠতো চৈত্রসংক্রান্তির এসব মেলা। পরবর্তীতে এই মেলা বৈশাখী মেলায় রূপান্তরিত হয়। মুসলিম অধ্যুষিত মেলাকে কেউ এখন আর চৈত্রসংক্রান্তি মেলা বলে না। বলে বৈশাখী মেলা। যে অঞ্চলে সনাতন ধর্মের অধিবাসীরা বেশি, সে অঞ্চলের মেলাকে এখনও চৈত্রসংক্রান্তির মেলা বলে। হিন্দু ও মুসলিমের মধ্যে সদ্ভাব থাকা সত্ত্বেও এক ধর্মের অনুষ্ঠানে আরেক ধর্মের লোকেরা সাধারণত অংশগ্রহণ করতো না। মিলাদে হিন্দুরা অংশগ্রহণ করতো না, পূজায় অংশগ্রহণ করতো না মুসলিমরা। নিজ নিজ ধর্মের অনুষ্ঠানে তারা সন্তুষ্ট থাকতো। উভয় জাতির মিলনমেলা হতো হালখাতা ও মেলাগুলোতে। মূলত খাজনা প্রদান করার কারণে ১লা বৈশাখের উৎপত্তি। মুঘল সম্রাট আকবর হিজরি সনের সাথে খাপ খাইয়ে বাংলা সনের প্রবর্তন করেন। চৈত্র মাসের মাঝামাঝি থেকে শেষ অংশে বাংলার কৃষকরা জমি থেকে ধান তুলে আনে, সে ধান বিক্রি করে যাতে খাজনা প্রদান করতে পারে, সে কারণেই বাংলা সনের শুরু করা হয় বৈশাখ মাস থেকে। তখনকার দিনে ধানই ছিল প্রধান খাদ্য বা শস্য। সারা বছরের খাবারের জন্য ধান রেখে দিয়ে অতিরিক্ত ধান কৃষকরা বিক্রি করতো। এই বিক্রয়লব্ধ টাকা দিয়ে হালের গরু লাঙল কিনত। কিছু জমি-জিরাত কট-বন্ধক নিতো। নিজের আঙিনায় রবিশস্য ফলাতো। পুকুর ও খানাখন্দকের পাড়ে গাছ লাগাতো। পরিজনের চিকিৎসা করাতো। মেয়ের বিয়ে দিতো। নাইওরি আনতো। বেহাই-বেহান খাওয়াতো। শ্বশুরবাড়ি বেড়াতে যেত। জামা-কাপড়, শাড়ি-ব্লাউজ কিনতো। হাতে টাকা থাকত বলে জীবনের যত প্রয়োজন, সব প্রয়োজন নবান্নের সময় মেটানোর চেষ্টা করতো। কৃষকের হাতে এই সময় খুব একটা কাজ থাকে না। অথচ হাতে কিছু অর্থবিত্ত থাকে। এ কারণেই বৈশাখ মাসে বাংলার কৃষক আনন্দ করতে পারে। করেও। মুঘল আমলের আগে বৈশাখ মাসে বাংলা সনের শুরু ছিল না। মুঘলরাই বাংলা সন বা ১লা বৈশাখের প্রবর্তক। এ কারণে মুসলমানরা এই দিবসটি আনন্দের সাথে পালন করে আসছে। এখন তো দিবসটি গ্রাম ছাড়িয়ে নগর-বন্দর ও শহরে বিপুলভাবে পালিত হচ্ছে। ১লা বৈশাখের দিবসটি এখন জাতীয় দিবসে পরিণত হয়েছে। মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান সবাই নিজ নিজ দৃষ্টিভঙ্গিতে জাঁকজমকের সাথে পালন করে থাকে। এখন অবশ্য গ্রাম থেকে শহরে বন্দরেই বিপুল উদ্দীপনার সাথেই ১লা বৈশাখ পালিত হয়। কিন্তু দিবসটি পালন করতে গিয়ে অনেক সময় আমরা আমাদের আদর্শ, বিশ্বাস, সংস্কৃতি, ঐতিহ্যের কথা ভুলতে বসেছি। আমাদের পূর্বপুরুষরা ধর্ম-বর্ণ ও দলমত নির্বিশেষে একই পরিবেশে বসবাস করলেও নিজস্ব ধর্ম ও সংস্কৃতির বাইরে তাঁরা যেতেন না। অন্য ধর্ম ও সংস্কৃতির পথ তারা মাড়াতেন না। নিজস্ব ধর্ম নিয়ে তারা গৌরব বোধ করতেন। দুঃখের বিষয় হলো, আমরা মুসলিমরা যেন এই বোধ ও ধারণা থেকে এখন দূরে সরে পড়ছি। জাতির জন্য বিষয়টি সত্যি লজ্জাজনক। আমরা যেন এ ব্যাপারে সচেতন থাকি। বিপুল উৎসাহ ও উদ্দীপনার সাথে পহেলা বৈশাখ আমরা পালন করবো। পালন করবো, আপন ঐতিহ্য ধর্ম ও সংস্কৃতিকে সঙ্গে রেখে।

আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ