প্রেরণা

প্রেরণা

গল্প সেপ্টেম্বর ২০১৪

সাদিয়াতুত তাসনিম

Pronaআসসালাতু খায়রুম মিনান নাওম ... মসজিদ থেকে ভেসে এলো ফজরের আজান। আজান তো নয় যেন অমিয় বাণী। আল্লাহকে কাছে পাওয়ার অকৃত্রিম আহ্বান। শরীফের মনে সুরের ঝংকারের মতো বাজলো এ আহ্বান। আর তখনি সে ঝটপট উঠে পড়ে। তাড়াতাড়ি কলতলা থেকে অজু করে মসজিদে গিয়ে নামাজ আদায় করলো। নামাজ শেষে মসজিদে বসে কুরআন তেলাওয়াত করে বাড়ির পথে পা বাড়ালো আর হারিয়ে গেল হাজারো স্মৃতির ভিড়ে, চোখে ভাসলো গত ১০ বছর আগের কথা, শরীফ তখন সবে ক্লাস টুয়ে পা দিয়েছিল। কতইবা বয়স হয়েছিল তার, কী বা বুঝতো তখন সে? তবুও এটুকু বুঝেছিল যে, বাবা আর নেই! পরে জেনেছিল তাদেরই গ্রামের কেরামত মিয়ার কালোবাজারিতে বাধা দিতেই কেরামত মিয়া তার বাবার নামে মিথ্যা অপবাদ দিলে পুলিশ তার বাবাকে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করে। শরীফ সেদিন শুধু বাবার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়েছিল। আর দাদুকে বলেছিল- দাদু ওরা আমার আব্বুকে মারলো কেন? দাদু সেদিন তার কথার জবাব দিতে পারেনি, শুধু অশ্রু ধোয়া মুখে বলেছিল- বড় হলে সবই বুঝবে। আর সেই দাদুও চিরবিদায় নিলেন চার বছর আগে। বাবা মারা যাওয়ার পর এই দাদুই ছিলেন শরীফের প্রেরণা, বাঁচার শক্তি, আত্মবিশ্বাসের উৎস। দাদু শরীফকে কখনো বাবার অভাব বুঝতে দেননি। আজ দাদুর কিছু কথা শরীফের কানে যেন প্রেরণা হয়ে বাজছে। দাদু প্রায়ই বলতেন, শরীফ- সর্বদা সত্য কথা বলবে, আর জীবন দিয়ে হলেও অন্যায়ের প্রতিরোধ করবে। অন্যায়ের সাথে কখনো আপস করবে না। তোমার বাবা অন্যায় প্রতিরোধ করতে গিয়ে নিজের জীবন দিয়েছেন। মনে রাখবে আজ না হোক কাল সত্যের বিজয় একদিন হবেই হবে। দাদুর অন্তিম সময় দাদু বলেছিলেনÑ শরীফ তোমাকে মানুষের মতো মানুষ হতে হবে। তোমার মায়ের পাশে দাঁড়াতে হবে। মেয়েটি যে বড় একা! শরীফ সেদিন বোকার মতো বলেছিল, দাদু আমি তো মানুষ। - হ্যাঁ এ কথা অস্বীকার করার জো কারো নেই। তবে এই তথাকথিত মানুষ আর আদর্শ মানুষ এক নয়। তোমাকে আদর্শ মানুষ হতে হবে। মনে রাখবে প্রাণ থাকলে প্রাণী হওয়া যায়। কিন্তু মানুষ হতে হলে সাধনা করতে হয়। দেখো, আমাদের জাতীয় কবি নজরুল দরিদ্র ঘরে জন্ম নিয়েছিলেন। কিন্তু তার চেষ্টা ও আত্মবিশ্বাসকে দরিদ্রতা আচ্ছন্ন করতে পারেনি। তোমাকেও সে রকম আত্মবিশ্বাসের অধিকারী হতে হবে। চেষ্টা করবে, সফলতা আল্লাহর হাতে। এভাবে ভাবতে ভাবতে শরীফ বাড়ি পৌঁছে যায়। দেখে মা কুরআন পড়ছেন। ফজরের পর তিনি ১ ঘণ্টা কুরআন পড়েন। এটা তার নিয়মিত রুটিন। আজ শরীফ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিতে যাবে। এই সময় দাদু পাশে নেই। দাদুর সেই কথাগুলো আজও জীবন্ত হয়ে আছে শরীফের কাছে। এ যেন এক জীবন্ত প্রেরণা!

আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ