পড়ার রাজ্যে রনির সঙ্গে
গল্প আগস্ট ২০১২
জুবাইদা গুলশান আরা.. আপা : আজ সকালে ঘুমটা ভেঙে যেইনা মনে পড়লো! খেলা করবো সবার সাথে, খুশিতে মন ভরলো! মোটা মোটা কাজের বোঝা সব সরিয়ে রেখে, ছোটো সোনা বন্ধুরা মোর; সবাইকে নিই ডেকে। খেলতে হবে, শিখতে হবে, সময় বয়ে যায়! আদর করে ডাক দিয়েছি, আয়রে ছুটে আয়!’ (বাচ্চারা সবাই ছুটে এলো!) দৌড়ে দৌড়ে এসো সবাই, ছুটে ছুটে এসো, সবাইকে একটু ভাল করে দেখি! এবার এসো সবাই মিলে একটা গান গাওয়া যাক! কি রাজি? সবাই : রাজি! (মিষ্টি মধুর বাজনা বেজে উঠলো) গান : দুষ্টু দুষ্টু বুদ্ধিগুলো দূরে থাক, থাক না! ফাঁকি দেবার ফন্দিগুলো পালিয়ে যাক, যাকনা! দুষ্টু দুষ্টু বুদ্ধিগুলো দূরে থাক। আমরা সবাই মিলে খুশির গানটা গাইবো, আমরা সবাই মিলে মনটা ভলো চাইবো, লেখা-পড়া, জানা-শোনা, শেখার দেখার নাইকো মানা, অজানা সব ইচ্ছেগুলো দিচ্ছে ডাক। ও ও হো, দুষ্টু দুষ্টু বুদ্ধিগুলো দূরে থাক। (হাতে তালি দিয়ে ঘুরে ঘুরে গাইবে সবাই) গান আমরা সবাই খেলবো বলে এসেছি, নতুন নতুন সুরের ভেলায় ভেসেছি দেখছি যতো বুঝতে ততো পারছি ভাই, মজার মজার কাণ্ড ভরা জগৎটাই তাইতো বলিÑ খেলার সাথীর হাতটা ধরে চলি, মনের কথা বলি! সবাই মিলে খুশির গানটা গাইবো সবাই মিলে মনটা ভরে চাইব। চলো ও সবাই, খেলার মেলায় যাই (গানে গেয়ে দুলতে দুলতে দাঁড়ালো) আপা : (কাছে দাঁড়িয়ে) এসো দেখি, দুষ্টু বুদ্ধিকে দূর করে অন্য কথা বলি, কেমন। হ্যাঁ মনে পড়েছে। সামনে সবার পরীক্ষা তাই না? সবার মনটা ভয়ে ভয়ে পড়ার কথাই ভাবে। চলোতো দেখি, বন্ধুদের একটু খোঁজ খবর নেয়া যাক। আসল কথা কী জানো? পরীক্ষার আগে লেখাপড়ার সঙ্গে ভাব করাই আসল কথা। চলো না, বন্ধুরা কে কী করছে একটু দেখে আসি? (চুপি চুপি রনি নামের ছোটো ছেলেটার ঘরের বাইরে দল বেঁধে উঁকি দিল সবাই। দেখা যাচ্ছে, রনির মজার কাণ্ড!) রনি : (নিজের ঘরে ঢুকে দেখে টেবিলে বইপত্র ছড়ানো-ছিটিয়ে রাখা) ওরে বাবা! আবার সেই পড়া আর পড়া? (ছড়ার ছন্দে ঘুরে ঘুরে কথা বলবে) পড়তে গেলেই মনটা আমার হয়ে যায় যে ফাঁকা। অঙ্কটা যে বেজায় পাজি যায়না মনে রাখা! ভূগোল? সেতো আরও কঠিন দোষ কি আমার বলো? পাহাড় নদী, মাথার ভেতর সব গুলিয়ে গেল। (বইপত্র নাড়া চাড়া করতে করতে) এই দেখনা, পরীক্ষারই রুটিন খানা দেখে, ভয়ে ভয়ে প্রাণটা আমার কাঁপছে থেকে থেকে। (হাই তুলে) ইস! বেজায় ঘুম পাচ্ছে। একটু ঘুমিয়ে নিই। পরে না হয় পড়াগুলো শেষ করে ফেলবো (ঘুমিয়ে গেল)। (এমন সময় ঘড়ির ছবি হয়ে ঘরে ঢুকলো ঘডি দাদু) (গোঁফ লাগানো ঘড়ি আঁকা) : এই ছেলেটা দুষ্টু বড় (ঘড়ি দাদু রাগী গলায়) ঘুমিয়ে পড়ে পড়ার সময় এক খাতায় ছবি আঁকে বেড়ালছানা। লেখাপড়ায কেবল ফাঁকি। কানটা ধরে টানবো নাকি? (চোখ পাকিয়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে) তার চেয়ে জোর ঘণ্টা দিই, মজার ঘুমটা ভাঙিয়ে দিই, দুষ্টুমিটা ভুলিয়ে দিই ... ঢং.. ঢং.. ঢং... রনির কানের কাছে। (ঘড়ি বাবু ঢুকলো) : ঢং ঢং ঢং ... রনি : (লাফ দিয়ে উঠে) অ্যাই? কে? কি রে বাবা! ঘণ্টা বাজায় কে? ঘড়ি বাবু : আমার দিকে তাকিয়ে দেখ দেখি? রনি : ও ঘড়ি দাদু? তা এমন অসময়ে যে? ঘড়ি বাবু : বা: বা: ছেলেটা তো ভারি মজার! বলে কী? পড়ার সময়ে হল অসময়ে? ঘুমোচ্ছা যে? পড়াটা শিখবে কে শুনি? রনি : বারে! এখন বুঝি পড়ার সময় ঘুমোবো না বুঝি! ঘড়ি বাবু : তোমার পড়ার টেবিলটা ভারী এলামেলো। তোমার ভারী বিশ্রী স্বভাব! কিচ্ছুু গোছানো নেই। (বুকের ওপর ম্যাপ, অঙ্ক, ভূগোলক আঁকা আছে। তেমনি টুপ ও জামা গায়ে দিয়ে ঢুকলো তিনটি ছেলে) ছেলেরা ছেলেরা : ভারী বিশ্রী ভারী বিশ্রী। রনি : একি? তোমরা আবার কে? ছেলেরা : (ছড়ার ছন্দে) বন্ধু হবো আমরা তোমার। শিখতে যদি চাও! শিখিয়ে দেবো কোথায় পাহাড়, কোথায় আছে নদী। রনি : রনি : সত্যি! ইস মজাই না হয় তাহলে! রোজ রোজ আমি কেবল পড়া ভুলে যাই! কিন্তু তোমরা আমায় বিশ্রী বললে যে! ঘড়ি বাবুু : বলবে না তো কী? তোমার টেবিলটা অমন নোংরা কেন? ওটার দিকে তাকালে আমারইতো বারোটার সময় তেরটা বাজাতে ইচ্ছে করে! ঢং ঢং না করে ঘ্যাং ঘ্যাং করতে ইচ্ছে করে। (হি হি করে কারা যেন হেসে উঠবে) রনি : (গাল ফুলিয়ে) এত হাসির কী হল শুনি? অঙ্ক : (সারা গায়ে লেখা অঙ্কের সংখ্যা) : হাসবো না? শোনো ভাই, অঙ্ক যদি না পারোতো পাবে রসগোল্লা, লেখাপড়া না করোতো মিছেই করবে হুল্লা! (তবলার বোল। মজার বাজনা বেজে উঠলো) সবাই : গোল গোল্লা, গোল গোল্লা! অঙ্ক : আমায় যদি শেখো তবে সবাই আদর করবে, পৃথিবীটার যত হিসাব হাতের মুঠোয় ধরবে কি মজাই যে হবে, যদি অঙ্ক শেখো, তবে! ইতিহাস : (এগিয়ে এসে) আর আমি? আমাকে কাছ দিলে চলবে নাকি? রনি : ও বাবা, তুমি আবার এলে কোথা থেকে? ইতিহাস : আমি তোমায় শিখিয়ে দেবো প্রাচীন কালের কথা/বিশ্ব জুড়ে রাজ্য গড়া, রাজ্য ভাঙার কথা! বড় হওয়ার আসল কথা লেখা পড়া করতে হবে। বিদ্যা যদি না হয় তোমার, বোকারাম যে বলবে সবে! সবাই : ছি! ছি! কী লজ্জা! কী লজ্জা কী লজ্জা! রনি : তাহলে তো আমি মিছি মিছি ভয় পেয়েছি। এবার থেকে মন দিয়ে পড়বো। ঠিক বলছি। তোমরা দেখো! সবাই : এইতো হল বুদ্ধিমানের কথা! (রনি বই গোছাতে থাকবে।) ঘড়ি দাদু :ছেলেটা দেখছি চমৎকার বদলে গেল! এবার আমি আমার সুরেলা গলায় গান গাইতে পারি। মনটা বড্ড ভালো লাগছে। (ঢং ঢং ঢং, টুং টাং)! তোমরাও আমার সঙ্গে গলা মিলিয়ে বলো, হ্যাঁ সবাই মিলেই তো ভালো কাজ করতে হয়! তাই না? (সবাই দৌড়ে এসে ছড়ার ছন্দে হাত ধরে দুলতে দুলতে আবৃত্তি) ‘পড়া দেখে ভয় পাওয়া ভালো নয় ভালো নয়! ভয় পেলে বোকা হয়ে ঠকে যায় ঠকে যায়! ভালোবেসে লেখা পড়া করো, হতে পারবে অনেক অনেক বড়ো। হুররে! সবাই বলে সাবাশ! বাহাদুর! আরে বাস্ ! সবাই : সাবাশ, সাবাশ, সাবাশ! (ঢোলকের শব্দ শোনা যাবে, তালে তালে সবাই ঘুরবে) হুররে! হুররে ...হুররে। (ধীরে ধীরে যেতে যেতে হাত নেড়ে বিদায় নেবে)
আরও পড়ুন...