ফারাজের স্বপ্ন

ফারাজের স্বপ্ন

তোমাদের গল্প মে ২০১৫

ফাতেমা আক্তার রিমি#

সকালে সূর্যের সোনালি আলোয় ঝলমল করছে চার দিকে। ফারাজ তার বাবার সাথে স্কুল যাচ্ছিল। হঠাৎ সে বলে উঠল, বাবা! দেখ ওগুলো কিসের পোস্টার? পোস্টারগুলোর দিকে তাকিয়ে বাবার মুখটা শুকিয়ে গেল। সেখানে কয়েকজনের লাশের ছবি। মনে হলো ওরা সবাই ছাত্র। রক্তে লাল হয়ে গেছে ওদের মুখগুলো। মুখটা শক্ত করে বাবা শুধু বললেন, ওরা জানোয়ারের মতো পিটিয়ে মেরে ফেলেছ ঐ ছাত্রদের বুঝলে! স্কুলের সময়টা একরকম অস্থিরতার মধ্যে কাটল। বাড়ি ফিরে বিশ্রামের পর কম্পিউটার অন করল, কিন্তু আজ কম্পিউটারেও মন দিতে পারছে না সে। শুধু ওই ছাত্রদের কথাই মনে পড়ছিল তার। বাড়িতে ওদের মা বুঝি কাঁদছেন ওদের জন্য। খোকা খোকা বলে বুঝি চিৎকার করছেন আর বুক চাপড়াচ্ছেন। আমার বাবার মতো ওদের বাবাও বুঝি খুব ভালোবাসতেন ছেলেকে। এশার নামাজ পড়ে ঘুমোতে যায় ফারাজ। কিন্তু ঘুম আসছিল না কিছুতেই। বারবার শুধু হৃদয়পটে ভেসে উঠছিল পোস্টারের সেই নির্মম দৃশ্য। কত বর্বর ওই লোকগুলো। ওরা বুঝি ওদের সন্তানদেরকে ভালোবাসে না। তাই এতো নিষ্ঠুর হয়ে মেরে ফেলল ছাত্রদেরকে। কেন পৃথিবীটা আজ এত বড় নিষ্ঠুর! আজ শুক্রবার, সকালবেলা রাস্তার গাছের সারির নিচ দিয়ে হাঁটছে ফারাজ। রাস্তাটা নিরিবিলি। পাতার শোঁ শোঁ বাতাসের শব্দ শোনা যাচ্ছে। আর সেই বাতাসের দাপটে ফারাজের মনের দুঃখের মুকুলগুলো বোঁটা থেকে ঝরে পড়ছে। ফারাজের বাগানে ফুটেছে সাদা বেগুনি নয়নতারা। গোলাপ আর লাল রক্তজবাও দোল খাচ্ছে বাতাসে। এরই মাঝে হকার এসে দিয়ে গেল আজকের দৈনিক পত্রিকাটি। পত্রিকা খুলেই ফারাজ দেখতে পেল কিছু মানুষের অবিরাম কান্না। ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে গোটা শহর। আগুনে পুড়ছে অসহায় ফিলিস্তিনিরা। বোমা আর আগুনের ধোঁয়ায় ঝাপসা হয়ে গেছে চারপাশ। ফারাজ ইন্টারনেট অন করল। দেখতে পেল এক মর্মান্তিক দৃশ্য। অসংখ্য ফিলিস্তিনির লাশ পড়ে আছে মাটিতে। নিষ্পাপ, নিরপরাধ শিশুদের আর্তনাদ আর কলিজার টুকরো সন্তানকে হারিয়ে বাবা-মায়ের আহাজারিতে যেন আকাশ বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। সন্ধ্যা নেমে এলো। নামাজ শেষে ফারাজ মহান রবের কাছে দুই হাত তুলল, ‘হে মহান রাব্বুল আলামিন, বারুদের গন্ধে নয় ফুলের সুরভিতে ভারিয়ে দাও আমাদের এই পৃথিবীর আকাশকে। রক্তে রাঙানো এই জমিনকে হেফাজত কর। আর ফারাজের গাল বেয়ে অঝোর ধারায় অশ্রু ঝরছে। এক সময় রাত হয়। ফারাজ ঘুমিয়ে পড়ে। ঘুমের মধ্যে সে শুনতে পায় কেউ যেন তাকে ডেকে বলছে, ভেঙে পড়ো না না ফারাজ। আল্লাহ আমাদের সাথে আছেন। আমরা জালিমের জুলুম বন্ধ করব। অত্যাচারীর খড়গকৃপাণ ভেঙে দেবো। যেদিন বিশ্বে শান্তি আসবে, মজলুমের আর্তনাদ বন্ধ হবে সেদিন আমরা ক্ষান্ত হবো।’ ঘুম ভেঙে যায় ফারাজের। গভীর রাত, নিস্তব্ধ প্রকৃতি। রুপোলি চাঁদ আর তারায় ঝলমল করছে আকাশ। জোৎস্নার উজ্জ্বল আলোতে চিকচিক করছে দিগন্ত বিস্তৃত মাঠ। ফারাজ শুনতে পাচ্ছে সেই নিপীড়িত মানুষের হাহাকার, নিষ্পাপ ফুলকলিদের আর্তনাদ। ওরা সবাই বুঝি তাকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে। আর সে সেই ডাকে সাড়া দিতে আড়মোড়া ভেঙে জেগে ওঠে ফারাজ। সে দেখতে পাচ্ছে তার মতো লাখো কিশোর আজ মুষ্টিবদ্ধ হাতে শপথ নিচ্ছে একটি শান্তিময় পৃথিবী গড়ার, যেখানে থাকবে না আর কোনো হাহাকার। ফারাজের কানে বাজতে থাকে স্বপ্নের সেই অমিয় বাণীটি। ফারাজ প্রতীক্ষার প্রহর গুনতে থাকে কবে মুসলমানদের রক্তে ভেজা জমিন উর্বর হয়ে উঠবে আর তার স্বপ্ন পূরণ হবে।

আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ