ফুল চিরন্তন সৌন্দর্যের প্রতীক

ফুল চিরন্তন সৌন্দর্যের প্রতীক

প্রচ্ছদ রচনা মে ২০১০

সেই প্রাচীনকাল থেকেই পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে, বিভিন্ন সভ্যতায় ফুল সৌন্দর্য ও অন্যান্য বিষয়ে প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ফুল যেন সংস্কৃতির অন্যতম অঙ্গ, আর তাই ফুলের ব্যবহার সর্বত্র। ফুলের ব্যবহার শুরু হয়েছে প্রাচীন বিভিন্ন ধর্মের মাধ্যমে, আর তারপর মধ্যযুগের শিল্পচর্চায়, ইউরোপের রেনেসাঁ পার হয়ে সর্বোচ্চ উচ্চতায় উঠেছে ভিক্টোরিয়ান যুগে, সাহিত্যের অন্যতম অঙ্গ হিসেবে যুক্ত হয়ে।

বর্তমান সময়েও ফুলের ব্যাপক ব্যবহার দেখা যায়। অবশ্য পূর্বের তুলনায় এর প্রতীকী অর্থ অনেক কমে গিয়ে সাধারণ রূপ লাভ করেছে। ফুল দিয়ে কিছু বলার মাধ্যমে ফুলের ব্যবহার বিভিন্ন রূপ লাভ করেছে। প্রাচীনকালে বিভিন্ন প্রকার ফুল যে সকল প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হতো তার অনেকই আজ সময়ের আবর্তনে হারিয়ে গেছে, কিছু টিকে আছে অস্তিত্বের সঙ্কটে। এরকম কিছু ফুল এবং তার প্রতীকী অর্থ তুলে ধরার চেষ্টা করা হলো।

গোলাপ

লাল গোলাপ ভালোবাসা, স্মৃতিচিহ্ন, গভীর আবেগের প্রতীক। অন্য দিকে, সাদা গোলাপ পবিত্রতা, গোলাপি গোলাপ সুখ, হলুদ গোলাপ বিশ্বাসঘাতকতার প্রতীক হিসেবে সুপরিচিত। এশিয়ার বাগানগুলোতে প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগে থেকে গোলাপের চাষাবাদ হয়ে আসছে। কনফুসিয়াস লিখেছেন, চীনের সম্রাটের নিকট গোলাপ চাষাবাদের পদ্ধতি সংক্রান্ত ৬০০-এর বেশি বই ছিল। রোমান সাম্রাজ্যের সময় গোলাপ ইউরোপে পরিচিতি লাভ করে এবং তারপর থেকে অলঙ্কারিক কাজকর্মে ব্যবহৃত হওয়া শুরু হয়। ইংল্যান্ড এবং নিউইয়র্ক শহরের প্রতীক গোলাপ।

সূর্যমুখী ফুল ভক্তির প্রতীক হলো সূর্যমুখী ফুল। সূর্যের দিকে মুখ ফিরিয়ে রাখে বলে এর নাম সূর্যমুখী। গ্রিক সূর্যদেবতা হেলোসের নাম থেকে সূর্যমুখী ফুলের নামকরণ করা হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। আমেরিকার স্থানীয় ফুল এই সূর্যমুখী এবং কানসাস রাজ্যের জাতীয় প্রতীক।

টিউলিপ ফুল খ্যাতি এবং সত্যিকারের ভালোবাসার সাথে টিউলিপ ফুলের সম্পর্ক। রঙ পরিবর্তনের সাথে সাথে টিউলিপ ফুলের প্রতীকী অর্থও পরিবর্তন হয়। যেমন- লাল টিউলিপ ফুলের মানে হলো ‘আমাতে বিশ্বাস রেখো’, বিভিন্ন রঙের ছোপ দেয়া টিউলিপের অর্থ ‘তোমার চোখ খুব সুন্দর’, হলুদ টিউলিপের অর্থ, ‘তোমার হাসিতে যেন সূর্য ওঠে’ ইত্যাদি। টিউলিপ হল্যান্ডের জাতীয় ফুল।

তারাফুল তারাফুলকে ভালোবাসা আর চমৎকার সৌন্দর্যের প্রতীক হিসেবে ধরা হয়। তারাফুলের ইংরেজি ‘অ্যাস্টার’ শব্দ এসেছে তারার গ্রিক শব্দ থেকে। বিশ্বাস করা হয়, তারাফুলের মাধ্যমে এর অন্তর্নিহিত গুণাবলির কারণে অসুস্থতা থেকে আরোগ্য লাভ করা সম্ভব।

বেবিস ব্রেথ ফুল এই ফুলের সাথে হৃদয়ের পবিত্রতা, নিষ্পাপের সম্পর্ক। বেবিস ব্রেথ ফুল প্রকৃতপক্ষে সাদা ঘন ও সূক্ষ্ম ফুলের গুচ্ছ। এই ফুলের জন্মস্থান ইউরোপ হলেও বর্তমানে আমেরিকায়ও দেখতে পাওয়া যায়। সাধারণত ফুলের তোড়া তৈরিতে এই ফুল বেশি ব্যবহৃত হয়।

বার্ড অব প্যারাডাইজ ফুল স্বাধীনতা, ভালো দৃষ্টিভঙ্গি, বিশ্বাস প্রভৃতির সাথে বার্ড অব প্যারাডাইজ ফুলের সম্পর্ক। বার্ড অব প্যারাডাইজ পাখির সাথে খুব মিল থাকায় এর এমনটি নামকরণ করা হয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকায় এটি ‘ক্রেন’ ফুল হিসেবে বেশি পরিচিত। এর পাতাগুলো বেশ বড়, প্রায় ৩০-২০০ সেন্টিমিটার লম্বা এবং ১০-৮০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত চওড়া হয়ে থাকে, অনেকটা কলাপাতার মতো। তবে আরও লম্বা হয়ে এর বৃন্তগুলো একটা সবুজ বৃত্ত তৈরি করে।

বিগৌনিয়া ফুল বিগৌনিয়া ফুল সতর্কতা এবং কাল্পনিক অর্থে ব্যবহৃত হয়। বিগৌনিয়া বিশাল আকৃতির ঝোপে এবং ট্রপিক্যাল আর্দ্র জলবায়ু অঞ্চলে জন্মে। পাশাপাশি দক্ষিণ আমেরিকা এবং মধ্য আমেরিকা, আফ্রিকা, দক্ষিণ এশিয়ায় এই ফুল দেখা যায়। এর সাদা, হলুদ, বেগুনি এবং গোলাপি রঙ এবং সুন্দরাকৃতির পাতার কারণে কৃত্রিম উপায়ে এর বিভিন্ন সঙ্কর চাষাবাদ করা হয়।

নীল অপরাজিতা ফুল নম্রতা, কৃতজ্ঞতা, স্থিরতা এ বিষয়গুলো ফুল দিয়ে প্রকাশ করতে হলে বোধহয় নীল অপরাজিতার বিকল্প নেই। নীল অপরাজিতাকে রূপকথার পরীদের গল্পের সাথে এত বেশি পাওয়া যায় যে নীল অপরাজিতা পরীদের আংটি হিসেবে পরিচিত। যেখানে পরীদের সমাবেশ ঘটে সেখানে নীল অপরাজিতা থাকবে না এমনটা ভাবাই যায় না।

ঝুমকা ফুল ঝুমকা ফুল নম্রতা, পরিচ্ছন্নতা, শিশুসুলভ চপলতা প্রভৃতি অর্থ বহন করে। এটি প্রায় ৪ প্রকার দেখতে পাওয়া যায়। সাধারণত এপ্রিল এবং মে মাসে ফুটলেও এই ফুল সারা গ্রীষ্মেই দেখতে পাওয়া যায়। আমেরিকাসহ প্রশান্ত মহাসাগরের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে এই ফুল ‘কয়োটের চোখ’ নামে পরিচিত। এর পেছনে রয়েছে একটি অসাধারণ সুন্দর কাহিনী। কয়োট নাকি তার চোখ শূন্যে ছুড়ে দিত, কিন্তু ঈগল কখনো কখনো শূন্য থেকেই সে চোখ ছিনিয়ে নিত। উপায় না পেয়ে দেখার জন্য কয়োট ঝুমকা ফুল থেকেই তার চোখ বানিয়ে নিত।

চেরি ফুল চেরি ফুল দিয়ে শিক্ষা, জ্ঞান ইত্যাদি বোঝানো হয়। চীনে চেরি ফুল নারী দিয়ে নারীর ধর্ম এবং ভালোবাসা বোঝানো হয়। জাপানে চেরি ফুল দিয়ে জীবনের স্বল্পস্থায়িত্ব বোঝানো হয় কারণ চেরি ফুল খুব ক্ষণস্থায়ী। ঝরে যাওয়া ফুল সেসব সৈনিকের কথা বহন করে যারা যুদ্ধক্ষেত্রে খুব সাহসিকতার সাথে মৃত্যুকে বরণ করে নিয়েছেন।

কচুরিপানা খেলাধুলার সাথে সম্পর্ক কচুরিপানা ফুলের। কচুরিপানা ফুল দেখতে খুবই সুন্দর এবং কোমল। আমাদের  দেশের গ্রামাঞ্চলে এই ফুল খুবই সহজলভ্য।

ক্যাকটাস ফুল ক্যাকটাস ফুলের সাথে ধৈর্য আর ভালোবাসার কারণে সৃষ্ট অন্তর্বেদনার সম্পর্ক। এর দ্বারা মায়ের প্রতি ভালোবাসাও প্রকাশ পায়। ক্যাকটাস খুব ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের গাছ। খুব রুক্ষ্ম এবং গরম পরিবেশে এই গাছ জন্মায় এবং মানিয়ে নিতে পারে। এর শাখাগুলো পানি সঞ্চয় করে রাখে। এর প্রশাখাগুলো বেশ রসালো হয় এবং অনেক লম্বা হয়, এই প্রশাখাগুলোতে বেঁচে থাকা এবং বেড়ে ওঠার জন্য প্রয়োজনীয় ক্লোরোফিল থাকে এবং এর পাতাগুলো কাঁটায় পরিণত হয়। ক্যাকটাসের কাঁটা তার ভিন্নতার জন্য সবার পরিচিত।

ক্যালেন্ডুলা ফুল ক্যালেন্ডুলা ফুল মর্মপীড়া, নৈরাশ্য, দুঃখ ইত্যাদির প্রতীক। ক্যালেন্ডুলা ফুল এবং গাছ কিছু পানীয় হজমে সহায়ক। এর পাপড়ি চামড়ার চুলকানি, জন্ডিস, চোখের ঘা এবং দাঁতের ব্যথা দূর করার মলম তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।

ক্রিসেনথামাম ফুল শীতকালে এবং হেমন্তে এই ফুল ফোটে। ক্রিসেনথামাম ফুল দিয়ে প্রাচুর্য, সম্পদ, উৎফুল্লতা, আশা, বিশ্রাম, চমৎকার বন্ধুত্ব¡ বোঝায়। অবশ্য সাদা ফুল দিয়ে সত্য, লাল দিয়ে পছন্দ করি এবং হলুদ দিয়ে ভালোলাগা বোঝায়। জাপানিরা তাদের পানীয় গ্লাসের নিচে একটি ক্রিসেনথামাম ফুলের পাপড়ি পরিবেশন করে- এর অর্থ হলো দীর্ঘ এবং সুস্থ জীবন কামনা করা। জাপানি সম্রাট ক্রিসেনথামামের সিংহাসনে বসেন। কিন্তু ইতালিতে ক্রিসেনথামাম মৃত্যুর সাথে সম্পৃক্ত।

ক্রোকাস ফুল বসন্তের প্রথম দিকে এই ফুল ফোটে। আনন্দময়, প্রফুল্লতা ইত্যাদি প্রকাশ করার জন্য ক্রোকাস ফুলের বিকল্প নেই। ক্রোকাস এক প্রকার সাদা রঙের ঘাসফুল। বড় খোলামাঠ এবং চারণভূমিতে এই ফুল বেশি দেখতে পাওয়া যায়। এই ফুলগুলো অনেকদিন বেঁচে থাকে।

ড্যাফোডিল ফুল ড্যাফোডিল ফুল শ্রদ্ধা, বীরত্ব ও বিনয়, হাসিখুশি, প্রতিদানহীন ভালোবাসা ইত্যাদির প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে বহুদিন ধরেই। যদিও সাধারণভাবে এবং কবিতা, সাহিত্যে ও মাঠে ড্যাফোডিলের রঙ হলুদ অথবা সোনালি হলুদ, বর্তমানে বিভিন্ন রঙের ড্যাফোডিল দেখতে পাওয়া যায়। গবেষকরা দুই তিন কিংবা তারও বেশি রঙের ড্যাফোডিল উৎপাদনের ব্যবস্থা করেছেন। এমনকি, একই ফুলের বিভিন্ন পাপড়ির বিভিন্ন রঙও দেখতে পাওয়া যায়।

ডালিয়া ফুল মর্যাদা, সুরুচিপূর্ণতা ইত্যাদি মনোভাব প্রকাশের জন্য ডালিয়া ফুল প্রচলিত। মৃগীরোগের চিকিৎসার জন্য ডালিয়া ফুলকে ব্যবহার করেছিলেন দক্ষিণ মেক্সিকোর স্থানীয় অ্যাজটেক জাতি। ইউরোপের বিজ্ঞানীরা ডালিয়াকে খাবারের উৎস হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন ১৮৪০ সালে যখন রোগের কারণে ফ্রেঞ্চ পটেটো শস্য নষ্ট হয়ে গিয়েছিল।

ডেইজি ফুল ডেইজি ফুলের সাথে পবিত্রতা, নিষ্পাপতা, সৌন্দর্য, ধৈর্য এবং সরলতা প্রতীক হিসেবে পরিচিত। মধ্যযুগের চিত্রকলায় ডেইজি ফুল তৃণভূমির ফুল হিসেবে ব্যাপক ব্যবহৃত হয়েছে। ডেইজি ফুল চার হাজার বছরের পুরনো এমনটি বিশ্বাস করা হয় এবং ক্রিট দ্বীপে মাইনোন প্রাসাদ খননের সময় ডেইজি ফুলকে চুলের কাঁটা হিসেবে ব্যবহারের প্রমাণ পাওয়া যায়। আরও প্রাচীনকালে, মিসরীয় সভ্যতায় সিরামিকের বিভিন্ন সামগ্রী ডেইজি ফুল দ্বারা সাজানো হতো।

ড্যানডেলিয়ন ফুল আপনার প্রতি যে স্নেহ করা হয়েছে তার কৃতজ্ঞতা জানাতে চাইলে, ড্যানডেলিয়ন ফুলই আপনার পছন্দ হওয়া উচিত। কারণ ড্যানডেলিয়ন ফুল হলো আকাক্সক্ষা, সমবেদনা, বিশ্বাস, সুখ ইত্যাদির প্রতীক। ইউরোপ এবং এশিয়ার স্থানীয় ফুল ড্যানডেলিয়ন, তবে বর্তমানে অনেক জায়গায়ই দেখা যায়। উত্তরাঞ্চলের এলাকাগুলোতে যেখানে ড্যানডেলিয়ন সাধারণভাবে জন্মায় না, এই ফুল আগাছা হিসেবে গণ্য করা হয়।

শিয়ালকাটা ফুল শিয়ালকাটা ফুল যৌবন এবং মর্যাদার প্রতীক। এই ফুলের ভালো এবং মন্দ উভয় প্রতীকী প্রয়োগই রয়েছে। এই ফুল কখনো কষ্ট দেয়, কখনো কষ্ট লাঘব করে। এর বৈজ্ঞানিক নাম ডিজিটালিস। এই নাম দিয়ে জানা যায়, হৃদযন্ত্রের যন্ত্রণা উপশম করতে এর প্রয়োগ রয়েছে আবার বেশি পরিমাণ প্রয়োগ ব্যবহারকারীর মৃত্যুও ঘটাতে পারে। সুতরাং এই ফুল একই সাথে আনন্দের এবং বেদনার প্রতীক।

জিরানিয়াম ফুল দেখতে চাতকের ঠোঁটের মতো সরু এই ফুল সত্যিকারের বন্ধু, বোকামি এবং একত্রিত হওয়ার প্রতীক। এর নামকরণ করা হয়েছে গ্রিক শব্দ জিরানস থেকে যার অর্থ ‘ক্রেন’। বোধহয় এর আকারের কারণেই এই নামকরণ।

জেসমিন ফুল লাজুকতা, অনুগ্রহ, মাধুর্য প্রভৃতি বিশেষণ বোঝানোর জন্য জেসমিন ফুলের বিকল্প নেই। এই ফুল বাগানের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য কিংবা ঘরে সাজানোর জন্য প্রচুর চাষাবাদ হয়। দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মেয়েরা তাদের চুলে জেসমিন ফুলের মালা পরে। বলা হয়ে থাকে, জেসমিন চা ক্যান্সার রোধে সহায়ক।

গন্ধরাজ ফুল গন্ধরাজ ফুল পবিত্রতা, ভদ্রতা প্রভৃতির প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। সকল ফুলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সুগন্ধির জন্য গন্ধরাজকে পুরস্কার দেয়া যায়। গন্ধরাজ ফুল আকারে অনেক বড় হতে পারে।

বোধহয় এমন লোক খুঁজে পাওয়া যাবে না যে ফুল ভালোবাসে না। আমরা প্রকৃতিগতভাবেই ফুলকে পছন্দ করি, ভালোবাসি; তাদের সৌন্দর্য, রূপ, গন্ধ আমাদের মুগ্ধ করে। এই ভালোবাসা কোনো বয়সের ওপর নির্ভর করে না ছোট-বড়-ধনী-গরিব সবাই ভীষণভাবে ফুল ভালোবাসে।

লিখেছেন: নাইমুল হামিদ

আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ