ফুল পাখিদের দেশে

ফুল পাখিদের দেশে

তোমাদের গল্প মার্চ ২০১৫

আল জাবিরী #

পিতা-মাতার একমাত্র সন্তান মাহমুদ। সে একটি ফুলের বাগান করেছে। তাতে গোলাপ, পলাশ, হাসনাহেনা, রজনীগন্ধা, জুঁই, চামেলি, গাঁদা, রক্তজবাসহ আরো অনেক ফুলগাছ লাগিয়েছে। সে প্রতিদিন বাগানে গিয়ে ফুলের গন্ধ শুঁকে এবং বাগানে আসা পাখিদের গান শোনে, তাদের সাথে কথা বলে। আর পাখিরা তাকে ভালোবেসে গান শুনায়। মাঝেমাঝে লুকিয়ে থেকে ফুল, পাখি আর প্রজাপতির মিতালি দেখে। প্রজাপতি বিচিত্র পাখায় একটু উড়ে, একটু থেমে ফুলের কাছে যায়, কথা বলে, গন্ধ শুঁকে মধু খায়, নানা ভঙ্গিমায় ফুলের সাথে মিতালি করে। এসব দেখে তার মন আনন্দে ভরে যায়। কিন্তু তাদের বাগানে কোনো পরী আসে না। তাই খুব খারাপ লাগে। তার আম্মু বলেছেন পরীরা নাকি ফুলের বাগানে থাকে। তাহলে তাদের বাগানে নেই কেন! একদিন বিকেলবেলা সে ফুলপাখিদের গান শুনছে, হঠাৎ একটি পরী এলো। মাহমুদ দেখে ভয় পেল। পরী বলল, মাহমুদ, তুমি ভয় পেয়ো না। তোমার আম্মু যে বলেছেন আমি সেই পরী। আজ থেকে তুমি আমার বন্ধু। তুমি আজ আমার সাথে আমাদের দেশে চল, তোমাকে মজার সব ফল খাওয়াব। আর নতুন নতুন পাখিদের কথা শুনাব। মাহমুদ ফুলপাখিদের কথা শুনে রাজি হয়ে গেল তার সাথে যেতে।  পরী মাহমুদকে তার পিঠে নিয়ে রওনা হলো নদ-নদী আর পাহাড়ঘেরা বন-বনানীর ওপর দিয়ে। যেতে যেতে মাহমুদ দেখল আর কোনো নদী-সাগর দেখা যায় না, শুধু পাহাড় আর পাহাড়; একটু পরেই তারা  পৌঁছে গেল পরীর দেশে। হাজার হাজার পাখির আনাগোনা এ এক অনাবিল পরিবেশ এবং সুরেলাকণ্ঠের মায়াময় জগতের সন্ধান পেল মাহমুদ। পরী মাহমুদকে ফুল ও পাখিদের সঙ্গে পরিচয় করয়ে দিল এবং বলল, মাহমুদ এসব পাখপাখালি তোমার বন্ধু, তুমি এদের সাথে কথা বল, গান কর, আর ইচ্ছেমতো এই বাগান থেকে ফল খাও। মাহমুদের আনন্দের সীমা নেই। এরূপ হাজার রকমের পাখি সে আর কখনও দেখেনি। কতই না চমৎকার এখানকার ফুলগুলো! মাহমুদ পাখিদের বলল, তোমরা আমাদের দেশে যাও না কেন? তোমরা যদি যেতে আমাদের পৃথিবী কত সুন্দর হতো! পাখিরা বলল, এক সময় আমরা সবাই তোমাদের পৃথিবীতে ছিলাম। তাহলে এখানে এলে কেন? পৃথিবীর মানুষগুলো এখন আর আগের মতো নেই। আগের মানুষগুলো ছিল খুব নম্র, ভদ্র। কোন মারামারি করত না। আর এখনকার মানুষগুলো সবসময় হানাহানি, মারামারিতে লিপ্ত। এসব আমাদের একদম পছন্দ না। আর একটা কথা হলো আগে আমরা বাসা তৈরির জন্য অনেক জায়গা পেতাম, খাবারও পেতাম প্রচুর। আর এখন বাসা বানানো তো দূরের কথা, খাবার  পেতেও অনেক কষ্ট হয় তোমাদের পৃথিবীতে। মানুষ যে হারে গাছপালা উজাড় শুরু করেছে কিছুদিন পর একটা পাখিও তোমাদের পৃথিবীতে দেখতে পাবে না। এসব শুনে মাহমুদের মন একদম খারাপ হয়ে গেল। সে বলল, আর যদি আমরা গাছ উজাড় না করে আরো নতুন নতুন গাছপালা লাগাই? তাহলে দেখবে  আমরা সবাই আবার তোমাদের পৃথিবীতে যাবো, তোমাদেরকে মিষ্টি সুরে গান শুনাবো। মাহমুদ বড় এক স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল এবং বলল, আমি আমাদের পৃথিবীতে গিয়ে সবাইকে বলব নতুন নতুন গাছ লাগাতে। তোমরা সবাই আমাদের পৃথিবীতে এসো। এই বলে মাহমুদ তাদের থেকে বিদায় নিল।

আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ