ফুলের জন্য ভালোবাসা

ফুলের জন্য ভালোবাসা

নাটিকা মার্চ ২০১৪

সাদমান সাদী

Natika(মৌমাছিদের আজ খুব বিপদ। জীবিকা নির্বাহের একমাত্র মাধ্যম ফুল আজ ধ্বংসের পথে। মৌমাছির শত্রুরা বাগানের পর বাগান ধ্বংসের খেলায় মেতে উঠেছে। মৌমাছিদের রানী খুব চিন্তিত। বাঁচাতে হবে ফুলকে, বাঁচাতে হবে বাগানকে। আর তাই মৌচাকের সকল শ্রমিক ও পুরুষ মৌমাছি নিয়ে জরুরি সভায় বসেছে স্বয়ং মৌমাছির রানী।)

রানী মৌমাছি :     প্রিয় মৌমাছিরা! আজ এক ভয়াবহ বিপদের সম্মুখীন মৌমাছি জাতি। তোমরা জান, ফুল থেকে মধু আহরণ করেই আমরা আমাদের জীবিকা নির্বাহ করি, আমাদের খাবার জোগাড় করি। এই মধু জমা করে দুর্দিনের জন্য আমাদের খাবার জমা রাখি। ফুলই হলো আমাদের কাছে আরাধ্য এবং খাবার সংগ্রহের একমাত্র মাধ্যম। (ভয়ে ভয়ে একটি শ্রমিক মৌমাছি দাঁড়ালো) শ্রমিক মৌমাছি-১ :     রানী। অনুমতি দিলে আমি একটি কথা বলতে পারি ! রানী মৌমাছি :     ভয়ে নয়, নির্ভয়ে এবং আন্তরিকতার সাথে তুমি বলতে পারো। আমাদের জাতি আজ ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। এই ক্রান্তিলগ্নে সকলের পরামর্শ প্রয়োজন। শ্রমিক মৌমাছি-১ :     ধন্যবাদ মহারানী। আমার বক্তব্য হচ্ছে, আমরা শুধু ফুল থেকে মধুই আহরণ করি। কিন্তু ফুল আবাদ এবং রক্ষার জন্য কাজ করি না। আমার মনে হয়, ফুল যেহেতু আমাদের আবাসস্থল এবং একমাত্র সেখান থেকেই আমরা আহার সংগ্রহ করি, সুতরাং ফুলকে বাঁচানোর জন্য আমাদের মেধা, বুদ্ধি ও শক্তির সর্বস্ব ব্যবহার করা উচিত। রানী মৌমাছি : আমাদের জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে সবাইকে ভাবতে হবে। পরামর্শ দিতে হবে কিভাবে ফুলকে, ফুলের গাছকে বাঁচানো যায়। মনে রাখতে হবে এই কঠিন মুহূর্তে আমাদের এক হওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই। শ্রমিক মৌমাছি-২ : এই মুহূর্তে আমাদের পাশাপাশি পুরুষ মৌমাছিরাও যদি শুধুমাত্র মৌচাকে বসে না থেকে ফুল পরিচর্যার কাজ করত তাহলে শত্রুদের হাত থেকে ফুলকে বাঁচাতে পারতাম এবং আমাদের শক্তি আরো বৃদ্ধি পেত। পুরুষ মৌমাছি-১ : আমাদের আপত্তি নেই রানী। পুরুষ মৌমাছি-২ : আমার মনে হয় প্রথমে আমাদের শত্রু চিহ্নিত করা উচিত। আমাদের মধ্যেই কোনো শত্রু আছে কি না। শ্রমিক মৌমাছি-৩ : এটা কী করে সম্ভব! শ্রমিক মৌমাছি : হ্যাঁ, সম্ভব! মীরজাফর, ঘসেটি বেগমÑ এরা ঘরের শত্রুই ছিল। এদের কারণেই পলাশী প্রান্তরে নবাব সিরাজউদ্দৌলাহর পরাজয় ঘটেছিল। ফলে দুইশত বছরের গোলামির শৃঙ্খলে আবদ্ধ হতে হয়েছিল বাঙালি জাতিকে। (বয়োবৃদ্ধ একটি শ্রমিক মৌমাছি কাশতে কাশতে দাঁড়ালো) শ্রমিক মৌমাছি-৪: হ্যাঁ, প্রবাদ আছে ‘ঘরের শত্রু বিভীষণ’। রানী মৌমাছি : তুমি ঠিকই বলেছ। সর্ষের মধ্যে ভূত থাকলে সেই ভূত ছাড়ানো কঠিন। দেশের খেয়ে দেশের পরে যারা বহিঃশত্রুর সাথে সখ্য গড়ে তুলে, তারা আর যাই হোক অন্তত আমাদের বন্ধু হতে পারে না। সময় এখন বড় কঠিন। ফুলকে বাঁচানোর জন্য আমাদের প্রতিটি বাগানে পাহারা বসাতে হবে। (দ্রুতগতিতে একটি শ্রমিক মৌমাছির প্রবেশ। হাঁপাতে হাঁপাতে বলতে লাগলো) শ্রমিক মৌমাছি-৫ : রানী! এইমাত্র খবর পেলাম দক্ষিণ-পশ্চিমের সকল কানন ধ্বংস করার জন্য শত্রুরা দলবেঁধে আজ রাতের শেষ প্রহরে আক্রমণ করবে। (নড়ে চড়ে ওঠে সবাই। গুঞ্জরণ শুরু হয়। রানী দৃঢ়চিত্তে উঠে দাঁড়ায় ) রানী মৌমাছি :     বন্ধুগণ! আজ আমাদের অস্তিত্বের লড়াই। আমাদের সম্মানের লড়াই। সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করো। এই বাগান আমাদের। রক্ষা করতে হবে আমাদেরকেই। আমাদের আর দ্বিতীয় কোনো ভূমি নেই। মরতে হয় এখানেই মরবো, বাঁচতে হয় এখানেই বাঁচবো । বন্ধুগণ! আমরা আমাদের বিষাক্ত হুল দিয়ে ওদের ঘাড়ে আক্রমণ করব। ওদের চোখে মুখে আক্রমণ করবো। আক্রমণে আক্রমণে ওদের শরীরকে আমরা বিষাক্ত করে তুলব। যাতে ওরা আমাদের বাগান আক্রমণের ইচ্ছা ভুলে গিয়ে পালাতে বাধ্য হয়। আমাদের আক্রমণের মূল লক্ষ্য হলো এই সুন্দর সুবাসিত ফুলের বাগান রক্ষা করা। আমাদের জন্য আমাদের অনাগতদের জন্য। শ্রমিক মৌমাছি-৬ :     ওরা বাগানে প্রবেশের আগেই ওদের আক্রমণ করা উচিত, রানী। রানী মৌমাছি :     অপ্রস্তুত অবস্থাই আমরা ওদেরকে ধরাশায়ী করব। আজকে আমাদের সম্মানের প্রশ্ন। আমাদের আহারের উৎস রক্ষার প্রশ্ন। আমি মনে করি সকল দ্বিধা ভুলে শকুনের হাত থেকে এই সুকোমল, সুবাসিত বাগান আমাদের রক্ষা করতে হবে। সম্মিলিত ঐক্যই হবে আমাদের মূল শক্তি। বিজয় ছাড়া আমরা কখনো পিছপা হবো না। চলো-আল্লাহর নামে চলো, এই বসুন্ধরাকে বাঁচাতে চলো..।

আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ