ফেসবুকের গল্প   -আলফাজ হোসেন

ফেসবুকের গল্প -আলফাজ হোসেন

আইটি কর্নার মার্চ ২০১৬

আজকে ফাহিমের মনটা কেমন যেন করছে। বারবার মনে হচ্ছে কত শত কাজ করা যায় ফেসবুক দিয়ে। জন্মদিনের ছবি উঠিয়ে ফেসবুকে আপলোড করলে সবাই দেখতে পারে আবার ছবিগুলোও চিরজীবনের জন্য আর্কাইভ হয়ে থাকে। যখন ইচ্ছা তখন দেখা যায় আবার ডাউনলোড করে বিভিন্ন কাজে লাগানো যায়। আবার এই ছবিগুলোর ফিডব্যাকও পাওয়া যায়, কে কে ছবিগুলোতে লাইক দিলো আবার কে কী কমেন্টস করলো। সব কিছু ম্যানেজ করে এই ফেসবুক। কত বড় ক্ষমতা এই ফেসবুকের। আবার সেদিন ভাইয়া তার এক বন্ধুকে ফেসকুকের মাধ্যমে ফোন দিয়ে ক্লাসের সব নোটপত্র চাইছে।
কী না হয় এই ফেসবুকে? সব হয় সব। আরো কী কী হয় এই ফেসবুকে এবং কবে, কোথায়, কে এই ফেসবুক নিয়ে এলো সেটা জানতে পারলে ভালো লাগতো ফাহিমের। তাই সে তার ছোট মামা কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার মামুনের কাছে গেলো এবং মনের ভেতর জমে থাকা প্রশ্নগুলো করলো এক এক করে-
ছোট মামা মামুন মুচকি হেসে বললেন, ঠিক আছে সব প্রশ্নের উত্তর দেবো। কিন্তু একটা শর্ত আছে।
ফাডিাইনহম বললো, কী শর্ত বলো মামা?
মামা বললেন, ফেসবুকের চিন্তা বেশি না করে, সামনে তোমার পরীক্ষা সেটাকে নিয়ে বেশি চিন্তা করতে হবে। এবং পরীক্ষায় এ প্লাস পাওয়ার কথা দিলেই আমি আজকেই তোমাকে ফেসবুকের আদ্যোপান্ত সব বলবো।
ফাহিম খুশি হয়ে বললো, মামা আমি কথা দিলাম মন দিয়ে পড়ালেখা করবো এবং এ প্লাস পাবো ইনশাআল্লাহ, তুমি শুধু দোয়া করো। এখন ফেসবুকের গল্প শোনাও।
মামুন বললেন, ঠিক আছে মন দিয়ে শোন তা হলেÑ
ফেসবুক বা এফবি হলো একটা সোস্যাল নেটওয়ার্ক-ভিত্তিক ওয়েবসাইট যা ২০০৪ সালের ফেব্রুয়ারির ৪ তারিখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মার্ক জাকারবার্গ নামক ব্যক্তি প্রতিষ্ঠিত করেন। এখন অবশ্য ফেসবুক ইনক হলো এর মালিক। মার্ক জাকারবার্গ হার্ভার্ড এ তার দ্বিতীয় বর্ষ চলাকালীন সময়ে, অক্টোবর ২৮, ২০০৩ এ তৈরি করেন ফেসবুকের পূর্বসূরি সাইট ফেসম্যাস। এতে তিনি হার্ভার্ডের ৯টি হাউজের শিক্ষার্থীদের ছবি ব্যবহার করেন। তিনি দু’টি করে ছবি পাশাপাশি দেখান এবং হার্ভার্ডে সব শিক্ষার্থীকে ভোট দিতে বলেন। কোন ছবিটি সুন্দর আর কোনটি সুন্দর নয়। মানে ‘হট অর নট’। এ জন্য মার্ক জুকারবার্গ হার্ভার্ডের নিজস্ব সাইট হ্যাক করে ছাত্রছাত্রীদের ছবি এনে ফেসম্যাসে দেন। এই হ্যাক করার খবর জানতে পেরে হার্ভার্ড কর্তৃপক্ষ মার্ক জাকারবার্গকে ছয় মাসের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাসপেন্ডও করে। তবে মজার ব্যাপার হলো মার্ক জাকারবার্গ এর ফেসম্যাস সাইট মাত্র ৪ ঘণ্টায় ৪৫০ জন ভিজিটর ২২০০০ ছবিতে অন লাইনের মাধ্যমে ভোট দেন। এই খবর চারিদিকে ছড়িয়ে পড়লে মার্ক জাকারবার্গ হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে তার রুমমেট কম্পিউটার বিজ্ঞান বিষয়ের ছাত্র এডওয়ার্ডো সেভারিন, ডাস্টিন মস্কোভিত্স এবং ক্রিস হিউজেসের যৌথ প্রচেষ্টায় ফেসবুক তৈরি করেন। ওয়েবসাইটটির সদস্য প্রাথমিকভাবে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল, কিন্তু পরে সেটা বোস্টন শহরের অন্যান্য কলেজ, আইভি লিগ এবং স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত সম্প্রসারিত হয়। আরো পরে এটা সব বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, হাইস্কুল এবং ১৩ বছর বা ততোধিক বয়স্কদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। সারা বিশ্বে বর্তমানে এই ওয়েবসাইটটি ব্যবহার করছেন ৩০০ মিলিয়নেরও বেশি সদস্য।
২০০৮ সালের ২০ জুলাই ফেসবুক ‘ফেসবুক বেটা’ নতুন সূচনা শুরু করে। মিনি-ফিড, ওয়াল এবং প্রোফাইল তৈরি করতে দেয়া হয়। ১১ ডিসেম্বর ২০০৮ সালে ঘোষণা দিয়ে ফেসবুক আমার যে লগইন করি বা সাইনআপ বা রেজিস্ট্রেশন পেজটা তৈরি করে ব্যবহারকারীদের ব্যবহার করতে দেয়া হয়।
২০০৭ সালে শেষের দিকে নতুন করে তৈরি করা হয় প্রোফাইল সেটাপ পেজ বা টাইমলাইন। যার কারণে আমরা প্রোফাইল ছবি চেঞ্জ, যোগাযোগ ঠিকানা, ব্যক্তিগত আগ্রহ, জীবনের স্মরণীয় ঘটনা, জন্ম তারিখ এবং অন্যান্য ব্যক্তিগত তথ্য যেমন চাকরি, পড়ালেখা ও পারিবারিক তথ্যসমূহ সবাইকে দেখাতে পারি, আবার ইচ্ছা করলে গোপন করে রাখতে পারি। ফেসবুকের সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো এখানে গ্রাফিক্যালভাবে কাজ করা যায় প্রোগ্রামিং না জেনেও এই ফেসবুক সহজে ব্যবহার করা যায়। তা ছাড়া ছবি আপলোড করে অ্যালবাম তৈরি করা যায়। এতে আছে ওয়াল যাতে ব্যবহারকারী নিজে এবং তার বন্ধুরা তাতে বার্তা প্রকাশ করতে পারে যাতে ব্যবহারকারী তা দেখে। আর স্ট্যাটাসের মাধ্যমে ব্যবহারকারী তার বন্ধুদের সাথে বিভিন্ন কর্মকান্ড ভাগাভাগি করে নিতে পারেন। এবং কোন কিছু গোপন করতে চাইলে সেটিংয়ের ওপর ভিত্তি করে গোপন রাখতে পারবেন আবার দেখতেও পারবেন।
২০০৬ সালে খবর বা নিউজ ফিড এর কার্যক্রম শুরু করে যা প্রতিটি ব্যবহারকারীর হোমপেজে আসে এবং বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরে যেমন প্রোফাইলে কোন পরিবর্তন হয়েছে কি না, আগত কোন ইভেন্ট বা বন্ধুদের জন্মদিনের খবর আছে কিনা ইত্যাদি। ২০০৬ সালের আগস্টের ২২ তারিখ ফেসবুক নোট চালু করা হয়, যা মূলত একটি ব্লগিংয়ের মতো। এটিতে ট্যাগ এবং ছবি যোগ করা যায়। ব্যবহাকারীরা পরে তাদের বিভিন্ন ধরনের ব্লগ থেকে সেবা নিতে এবং দিতে পারে। ২০০৮ সালের ৭ এপ্রিলের কমেন্টস বা মেসেজিং অ্যাপ্লিকেশন চালু করে যা চ্যাট নামে পরিচিত। বিভিন্ন জায়গায় থাকা ব্যবহাকারীর বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ করা যায়। ২০০৭ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি ফেসবুক উপহার সেবাটি চালু করে, যাতে ব্যবহারকারী বিভিন্ন উপহার তাদের বন্ধুদের নিকট পাঠাতে পারেন। প্রতিটি উপহার এক ডলার করে দাম এবং এর সাথে প্রেরকের নিজস্ব কথাবার্তা লিখে দেয়া যায়। ২০০৭ সালে ফেসবুক তাদের বাজার বা মার্কেটপ্লেস চালু করে। এতে ব্যবহারকারীরা ফ্রি শ্রেণী বিশেষ বিজ্ঞাপন দিতে পারে। একটি নতুন বার্তার পথ যার নাম প্রজেক্ট টাইটান চালু করা হয় ১৫ নভেম্বর ২০১০ সালে। এই নতুন প্রদ্ধতির ফলে ব্যবহারকারীরা সরাসরি যোগাযোগ করতে পারে বার্তা পাঠাতে পারে ছবি, ভিডিও, অডিও, টেক্স ইত্যাদি একেবারে জিমেইলের মতো। এই কারণে যখন এটা চালু করা হয় তখন ফেসবুককে অনেক কোম্পানি জিমেইল হত্যাকারী বলেছিলো। ফেসবুক ওয়েবসাইট ছাড়াও বার্তাগুলো মোবাইল অ্যাপস দিয়েও ব্যবহার করা যায়। এর জন্য ফেসবুকের একান্ত একটি অ্যাপস রয়েছে যা ফেসবুক ম্যাসেঞ্জার নামে পরিচিত। এ ছাড়া ভিডিও দেখা ভয়েজ কল করা ইত্যাদি ২০১১ সালে চালু করা হয়েছে। আশা করা হচ্ছে এই ফেসবুক দিয়ে অনেক কিছু করা যাবে ভবিষ্যতে। ফেসবুক দিয়ে কত শত সমস্যা আমরা এক নিমিষেই সমাধান করতে পারি।
আবার এই ফেসবুকই বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার আয় করছে।
ফাহিম বললো, মামা ফেসবুক কিভাবে আয় করে। মামা বললেন, শোন, ফেসবুকে মূলত বিজ্ঞাপন থেকে। আমরা যখন ফেসবুকের কোন পেজে যাই তখন বিভিন্ন কোম্পানির বিজ্ঞাপন দেখি। এই কোম্পানিগুলো ফেসবুককে ডলার দেয়। ফাহিম বললো, মামা ফেসবুকের আর কোন অ্যাপ্লিক্যাশন নাই। মামা বললেন, হাঁ আছে ইন্সটাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ, ওকুলাস ভিআর, প্রাইভেট কোর ইত্যাদি হলো ফেসবুকের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান।
ফাহিম বললো, মামা ফেসবুক কিভাবে বানানো হয়েছে? মামা বললেন, শোন ফাহিম, কম্পিউটার সায়েন্সে প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ বলে একটা বিষয় আছে। এই প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ দিয়ে মূলত এই সব ভার্চুয়াল অ্যাপ্লিকেশন বানানো হয়। তাই ফেসবুক বানানো হয়েছে কয়েকটি প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ দিয়ে।
ফাহিম বললো, মামা সেই প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজের নাম কী যা দিয়ে ফেসবুক বানানো হয়েছে।
মামুন মামা বললেন, এটা মূলত্ব সি++, পিএইচপি (এইচএইচভিএম হিসেবে) এবং ডি প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ দিয়ে বানানো হয়েছে। এতো সব শুনে ফাহিম জোরে নিঃশ্বাস নিলো। বুঝা গেলো প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ নাম শুনে হাঁফিয়ে গেছে। ফাহিমকে সান্ত্বনা দেয়ার জন্য মামুন তাকে কাছে ডাকলেন এবং কানে কানে বললেন, জানো ফাহিম এখন একটা মজার কথা বলবো। তোমার এই ফেসবুক নিয়ে একটা সিনেমা আছে। তাই নাকি- বলে চিৎকার করে উঠলো সে। মামা বললেন, সিনেমাটা আমার কাছে বাংলা সাব টাইটেলসহ আছে।
ফাহিমের চোখ দেখে বোঝা যাচ্ছে ফেসবুক সম্পর্কে জানতে পেরে বেশ খুশি হয়েছে সে। মনে হলো নতুন দিগন্ত খুলে গেলো ফাহিমের সামনে। অজানা আর কঠিন সব বিষয় জেনে।
                        
আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ