বই পড়ার আনন্দ । সামছুল আরেফীন
প্রচ্ছদ রচনা জানুয়ারি ২০১৯
বই! বই-ই হতে পারে আমাদের ভালো বন্ধু এবং নিত্যসঙ্গী। আবার নতুন বছরের প্রথম দিকেই হাতে আসবে নতুন বই। নতুন বই মানে আনন্দ! নতুন বই মানে উৎসব! মানুষ যা শিখেছে, জেনেছে, বুঝেছে এবং ভেবেছে- সবই প্রামাণ্য হয়ে আছে তাদেরই লেখা অজস্র বইয়ে। জ্ঞানসমুদ্রের তরঙ্গধ্বনি শোনা যায় বইয়ের পাতায় পাতায়। যুগে যুগে অনুসন্ধিৎসু মানুষ যে বিচিত্র জ্ঞান আহরণ করেছে, তারই লিখিত রূপ বই। সভ্যতার অগ্রসরতার পথপ্রদর্শক বই। বই পরিতৃপ্ত করতে পারে মানুষের আত্মা। বইকে মানুষের সবচেয়ে কাছের বন্ধু বলা হয়। কারণ অনেক। তবে যেটি সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য, সেটি হলো বই থেকে অর্জিত জ্ঞান আমাদের আত্মবিশ্বাসী করে, ব্যক্তিত্ব গঠনে সাহায্য করে। চিন্তা ও কল্পনায় গতি সঞ্চার করে। অবিকশিত মানবসন্তান পূর্ণাঙ্গ মানুষ নয়। মানুষের আকার ও পরিচয় সে বহন করে মাত্র। জ্ঞান তাকে এই দশা থেকে মুক্তি দেয়। মানুষের ইতিহাস জ্ঞানের ইতিহাস। জ্ঞানচর্চার মধ্য দিয়েই মানুষ হিসেবে তার বিকাশ ঘটেছে। ইতিহাস-পূর্ব কালে কেবল অভিজ্ঞতাই ছিল মানুষের সম্বল; বর্ণমালা আয়ত্তের বহুকাল পর যখন মুদ্রণযন্ত্রের আবিষ্কার হলো, তখন থেকে সভ্যতার আমূল বদল ঘটলো। বই হয়ে উঠলো তার বিকাশের প্রধান সূচক। মানুষ বই পড়ে মনের খোরাকের জন্য, অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য এবং নিজেকে জ্ঞানের আলোয় আলোকিত করার জন্য। মানবজীবনের বিচিত্র অভিজ্ঞতার সংরক্ষণাগার হচ্ছে বই। মানুষের চিরন্তন অভিপ্রায় হলো অজানাকে জানা। বই মানুষের সেই অতৃপ্ত বাসনাকে পূর্ণ করে। বিশ্বপ্রকৃতির আদি-অন্তহীন রহস্যের উন্মোচনে সাহায্য করে একমাত্র বই। দেয় নতুন তথ্যের জোগান, নতুন আনন্দ। আসলে চেতনার বিপ্লবে বইয়ের কোনো বিকল্প নেই। একজন সৃষ্টিশীল মানুষ পৃথিবীতে বইয়ের বিকল্প কিছুই চিন্তা করতে পারেন না। সমাজ বদলাতে হলে বই পড়ার বিকল্প নেই। বই মানুষের জীবনসঙ্গী। বই অবসরের প্রিয় বন্ধু। বইপাঠ মানুষকে সত্যপথে চলতে, মানবতার কল্যাণে অনুপ্রাণিত করে। বই সুখের সময় মানুষের পাশে থাকে। দুঃখের সময়ও মনোবল বাড়াতে সাহায্য করে। আদিকাল থেকে তাই বইয়ের প্রতি এত কদর, এত ভালোবাসা। এক সময় লাইব্রেরিগুলোতে পাঠকের উপচেপড়া ভিড় লেগে থাকত। যদিও এখন অধিকাংশ লাইব্রেরি প্রায় পাঠকশূন্য। প্রযুক্তির কারণে বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ সাইটের মোহ আর অনলাইনে পাঠসামগ্রীর প্রাচুর্যে পাঠক এখন কিছুটা বইবিমুখ। বইয়ের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করতে পাঠাগার এবং পাঠচক্র বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে। পাঠাগারকে শুধু শহরে সীমাবদ্ধ না রেখে গ্রামেগঞ্জেও ছড়িয়ে দিতে হবে। এই কাজে সরকারের পাশাপাশি সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসতে হবে। আজকাল দেখা যায়, পাঠাগার মানেই শুধু চুপচাপ বই পড়া। সঙ্গে যদি তরুণদের আড্ডার ব্যবস্থাও করা যায়, তাহলে তারা সুন্দর ও সমৃদ্ধ একটা সময় কাটাতে পারে। এতে পড়ার পাশাপাশি বই নিয়ে মুক্ত আলোচনা করার সুযোগও পাবে। পাঠাভ্যাস গড়ে তোলার সহায়ক মাধ্যম হতে পারে পাঠচক্র। তা স্কুল-কলেজ, সংগঠন বা মহল্লাভিত্তিক হতে পারে। এর মাধ্যমে বই পড়া এবং বই নিয়ে আলোচনা- দু’টিই হয় বলে জ্ঞানচর্চা বিনিময়মূলক ও গতিশীল হয়। প্রকৃত মানুষ হতে হলে... বই আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যকে ভালো রাখে ও অনুভূতিকে করে তোলে সতেজ। বিভিন্ন ধরনের বই বিভিন্ন ধরনের জ্ঞানের সমারোহ। বর্তমানে বাংলাদেশ সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে পড়ালেখায় অনেক নতুন নতুন পদ্ধতি চালু করেছে কিন্তু কার্যত কোন উপকার পাওয়া যাচ্ছে না। এ সমস্যার কারণ আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় অনেক ত্রুটি রয়েই গেছে। এখনো পাঠ্যবইয়ের বাইরে কিছু শিক্ষা দেয়া হয় না। আমরা শুধু পাঠ্যবই পড়ি পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করার জন্য আবার পরীক্ষা শেষ হলে কী পড়েছি তা ভুলেও যাই। তাই আমাদের জ্ঞানের পরিধি সীমাবদ্ধ থেকে যায়। এ জন্য আমাদের পাঠ্যপুস্তকের পাশাপাশি জ্ঞানমূলক কিছু পড়া উচিত, যা আমাদের জ্ঞানকে প্রসারিত করতে সাহায্য করবে। শুধু মানুষ হলেই চলবে না প্রকৃত মানুষ হতে হবে। আর নিজেকে মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে পড়ার বিকল্প কিছু নেই। এটি পড়লে শুধু জ্ঞানই বাড়বে না বরং তুমি ভালো বন্ধুও পেয়ে যাবে নিজেকে সময় দেয়ার। যে তোমাকে কখনো ছেড়ে যাবে না। বই কেন পড়বে? মানুষকে শীতল করে : খুব দুশ্চিন্তায় আছো? একটা বই হাতে নাও। ইউনিভার্সিটি অব সাসেক্স পরিচালিত একটি গবেষণায় দেখানো হয়, বইপড়া হচ্ছে চাপ মোকাবেলার সর্বোত্তম পন্থা। চাপ ঠেকানোর অন্যান্য পন্থা যেমন: গান শোনা, এককাপ চা কিংবা কফি পান অথবা একটু হেঁটে আসার চেয়েও কার্যকর হলো বইপড়া। টেলিগ্রাফ সাময়িকীতে ওই প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছিল। গবেষণায় দেখা যায়, কোনো অংশগ্রহণকারী বইয়ের পাতা উল্টানো শুরুর ছয় মিনিটের মধ্যেই তার উত্তেজনা প্রশমিত হয়ে যায় বা তিনি শীতল হয়ে যান। ওই গবেষণার গবেষক ড. ডেভিড লুইস বলেন, ‘এটা যেকোনো বই-ই হতে পারে, আপনি আপনার প্রাত্যহিক চাপ থেকে বইয়ের জগতে হারিয়ে যেতে পারেন, লেখকের কল্পনার জগৎকে আবিষ্কার করতে পারেন।’ মস্তিষ্ককে সচল ও ধারালো রাখে : ‘নিউরোলজি’ সাময়িকীতে একটি গবেষণায় বলা হয়, দীর্ঘ সময়ের বই পড়ার অভিজ্ঞতা বৃদ্ধ বয়সে মস্তিষ্ককে সচল রাখতে সাহায্য করে। ওই গবেষণাটি পরিচালিত হয়েছিল ২৯৪ জন অংশগ্রহণকারীর মধ্যে মৃত্যুকালে যাদের গড় বয়স ছিল ৮৯। দেখা যায়, তাদের মধ্যে যারা অনেক বছর ধরে বই পড়া ধরে রেখেছিলেন, তাদের স্মৃতিশক্তি হারানোর হারটা অন্যদের চেয়ে কম যারা বই কম পড়েছেন। ইমোরি বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা যায়- বইপড়া আমাদের দিনে দিনে আরো বেশি তীক্ষ্ণ ও চটপটে করে তোলে। একটা পড়ে শেষ করার পর বহুদিন পর্যন্ত বইটির ইতিবাচক প্রভাব থেকে যায়। বিজ্ঞানীরা বলেছেন, কিছু পড়ার সময় মানুষের মস্তিষ্ক এমনভাবে কাজ করে যে তা নিউরোলজিক্যাল পরিবর্তন ঘটায় ও মেমোরি মাসলকে উজ্জীবিত করে। ভালো ঘুমে সহায়ক : ঘুমানোর আগে মন থেকে চাপ দূর করে ফেলা ও মনকে দুশ্চিন্তামুক্ত রাখার সুপারিশ করে থাকেন ঘুম বিশেষজ্ঞরা। ল্যাপটপ বা উজ্জ্বল আলো থেকে দূরে থেকে টেবিল ল্যাম্প বা বিছানার পাশের বাতিতে একটা বই হাতে নিয়ে পড়া শুরু করলে ঘুম এসে যাবে অল্পতেই। তবে বইটি যেন রহস্য উপন্যাস বা ক্রাইম ফিকশন না হয়! আত্মনির্ভরশীল এবং বিষণ্ণতা দূরে রাখে: সবাইকে জীবনের কোনো না কোনো সময় বিষণ্ণতা আক্রমণ করে। কেউ এটা থেকে দাঁড়াতে পারে আবার অধঃপতিত হয়ও অনেকে। আত্মনির্ভরশীল হওয়ার কিছু বই আছে যেগুলো তোমাকে এক্ষেত্রে সাহায্য করবে। বিষন্নতা কাজ করার ক্ষমতাকে কমিয়ে দেয়। এটা কাটিয়ে ওঠার ক্ষেত্রে ডাক্তারি চিকিৎসার চেয়েও বই পড়া অনেক কার্যকর মহৌষধ। বিশ্বাস হচ্ছে না? পরীক্ষা করে দেখুন না! প্রকাশক্ষমতা বাড়িয়ে দেয় : বিভিন্ন ধরনের বই পড়লে ভাষাগত দক্ষতা বেড়ে যায়। এ জন্য পাঠকের বলার ও লেখার ক্ষমতায় আকর্ষণীয় পরিবর্তন চলে আসে। লেখালেখির সাথে যাদের পেশাগত সংশ্লিষ্টতা আছে তাদের জন্য বই পড়া অবশ্য কর্তব্য। আর যেসব শিক্ষার্থী পরীক্ষায় ভালো লিখতে চান তারা বই পড়ে জ্ঞান লাভ করার সাথে সাথে ভালো লেখার হাতও নিয়ে আসতে পারবেন। মানুষ নিজেকে প্রকাশ করে তার কথার মাধ্যমে। মানুষকে সাধারণত তার কথাবার্তার মাধ্যমে মেপে ফেলা যায়। নিজেকে পরিপূর্ণভাবে এবং সুন্দরভাবে প্রকাশ করার জন্য বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞান রাখা অবশ্য পালনীয়। এ ক্ষেত্রে বই হচ্ছে সবচেয়ে বড় সহায়ক। এ জন্য বই পড়ার মাধ্যমে নিজের প্রকাশ ক্ষমতা বাড়িয়ে নিন। কল্পনাশক্তি বাড়ায় : একটা বই একটা দুনিয়া এবং প্রত্যেক লেখক তার আপন দুনিয়া সৃষ্টি করেন তার লেখনীর মাধ্যমে। একেকটা বই আমাদেরকে একেকজন লেখকের দুনিয়ায় নিয়ে যায়। এর মাধ্যমে আমাদের কল্পনাশক্তি সমৃদ্ধ হয়। বিশ্লেষণ ক্ষমতা বাড়ায় : কখনো কোনো রহস্য গল্প বা উপন্যাস পড়া শুরু করার প্রথম দিকে কি প্রধান রহস্যটা ধরতে পেরেছিলে? পড়া শেষে নিজের ধারণা করা সমাধানের সাথে মিল দেখে বিস্মিত হয়েছো এমন ঘটনা ঘটেছে কি? তাহলে বলা যায় তোমার বিশ্লেষণ ও অনুমান করার ক্ষমতা অসাধারণ। আবার যদি রহস্যের কূলকিনারা খুঁজে নাও পেয়ে থাকো তাহলেও কোনো সমস্যা নেই। কারণ এই টান টান উত্তেজনা তোমাকে গল্প বা উপন্যাসের শেষ পর্যন্ত নিয়ে যাবে এবং গল্প শেষে তুমিও একজন কঠিন ধাঁধাঁর সমাধানকারী হিসেবে নিজেকে মনে করতে পারবে। এই সব চর্চার মাধ্যমে তোমার অজ্ঞাতেই তোমার বিশ্লেষণ ক্ষমতার অসাধারণ উন্নতি ঘটে যাবে। বোঝার ক্ষমতা : বই পড়ার ফলে তোমার চোখ খুলে যাবে। তুমি সহজে মানুষ ও আশপাশের সব বুঝতে পারবে ও স্পষ্ট ধারণা পোষণ করতে পারবে। নতুন কোনো স্থান, প্রাণী কিংবা ঐতিহ্য সম্পর্কে খুব সহজ একটি ধারণা পেতে পারো বই পড়ে। যে কোনো বিষয়ের সত্যতাও খুব সহজে উপলব্ধি করতে পারবে বই ঘেঁটে। জীবনের যে কোনো নিয়মকানুন, আচার-ব্যবহার জানতে পারবে এর মাধ্যমে। জ্ঞান আহরণ : তথ্যসমৃদ্ধ যা কিছুই পড়ো না কেন তা মস্তিষ্কে রয়ে যাবে। তুমি নিজেও জানো না কখন কোন তথ্য তোমার কাজে লাগবে। তুমি যত বেশি তথ্য জানবে, জীবনে তত বেশি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে তুমি পারবে না। জীবনে এমন কোন অধ্যায় আসতে পারে যখন হয়ত তোমার পাশে তোমার পরিবার, বন্ধু বা চাকরি কিছুই থাকবে না। কিন্তু একমাত্র জ্ঞানই আছে যা কখনো তোমাকে ছেড়ে যাবে না। মুক্ত আনন্দ : চারপাশে আমরা আনন্দ খুঁজে বেড়াই। অধিকাংশ সময়ে আনন্দ ব্যাপারটা আমাদের হাতের মুঠোয় থাকে না। কিন্তু তুমি চাইলে খুব অল্পের ভেতরেই নির্মল আনন্দ খুঁজে নিতে পারো। তোমার আশপাশে খুঁজলেই তুমি কোন না কোন লাইব্রেরি পেয়ে যাবে। সময় পেলেই সেখানে চলে যাও। প্রিয় লেখকের যে কোন বই অথবা যে কোন ধরনের ম্যাগাজিন হাতে নাও। অথবা সেটা সম্ভব না হলে ডাউনলোড করে নাও বই পড়ার ফ্রি অ্যাপসগুলো। বই পড়ার জন্য একেক মানুষের একেক রকম ধারা আছে। কারও পছন্দ সাহিত্য, কারও কবিতা, কারও হয়ত উপন্যাস, কারও বা ফ্যাশন ম্যাগাজিন, আবার কেউবা পছন্দ করেন জীবনী, ধর্মসংক্রান্ত বই অথবা কিশোর সাহিত্য। যার পছন্দ যেমনই হোক না কেন শুধু পড়ার অভ্যাসটা বজায় রাখতে হবে। এতে যেমন বাড়বে আপনার আগ্রহ তেমনি বাড়বে কল্পনাশক্তিও। [caption id="attachment_12474" align="aligncenter" width="211"] ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্[/caption] বই পড়া নিয়ে কিছু অমিয়বাণী পবিত্র কোরআনের সর্বপ্রথম যে বাণী হযরত মুহাম্মদ (সা) শুনতে পেয়েছিলেন তাতে আছে ‘আল্লামা বিল কালাম’ অর্থাৎ আল্লাহ মানুষকে জ্ঞান দান করেছেন, ‘কলমের মাধ্যমে’। আর কলমের আশ্রয় তো পুস্তকে। পবিত্র কোরআন মজিদে আরও বলা হয়েছে, ‘পড় তোমার রবের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন। পড়, আর তোমার রব মহামহিম।’ (সূরা আলাক : ১-৩) সনাতন ধর্মের কঠোপনিষদের ৪ নং শ্লোকে লেখা হয়েছে ‘দুরমেতে বিপরীতে বিষুচি অবিদ্যা যা চ বিদ্যেতি জ্ঞাতা’ অর্থাৎ-বিদ্যা বলতে এখানে জ্ঞানকে বুঝানো হয়েছে। যে জ্ঞান মানুষের চরম লক্ষ্য। আর এই চরম লক্ষ্যে পৌঁছাতে গেলে বিদ্যা শিক্ষা অর্থাৎ বইয়ের কোনো বিকল্প নেই। অন্যদিকে বাইবেল শব্দের অর্থই হলো ‘বই’। আল্লামা শেখ সা’দী বলেন, ‘জ্ঞানের জন্য তুমি মোমের মতো গলে যাও। কারণ জ্ঞান ছাড়া তুমি খোদাকে চিনতে পারবে না।’ বারট্রান্ড রাসেল বলেছেন, ‘সংসারে জ্বালা-যন্ত্রণা এড়ানোর প্রধান উপায় হচ্ছে, মনের ভেতর আপন ভুবন সৃষ্টি করে নেয়া এবং বিপদকালে তার ভেতর ডুব দেয়া। যে যত বেশি ভুবন সৃষ্টি করতে পারে, ভবযন্ত্রণা এড়ানোর ক্ষমতা তার ততই বেশি হয়।’ সৈয়দ মুজতবা আলী ‘বই পড়া’ প্রবন্ধে লিখেছেন, ‘বই কিনে কেউ তো কখনো দেউলে হয়নি। বই কেনার বাজেট যদি আপনি তিন গুণও বাড়িয়ে দেন, তবুও তো আপনার দেউলে হওয়ার সম্ভাবনা নেই।’ বই পড়া নিয়ে বিল গেটস বলেন, ‘আমি প্রথমে একজন সাধারণ উদ্যোক্তা ছিলাম। এরপর কোটিপতি হয়েছি। আর এখন মানবাধিকারকর্মী হিসেবে কাজ করছি। আমার সামাজিক পরিচিতি বদল হওয়ার পাশাপাশি জীবনযাপনে ও অভ্যাসেও কমবেশি পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু একটি অভ্যাস আজও অপরিবর্তিত থেকে গেছে। সেটা বই পড়ার অভ্যাস। আমি যখন শুধু একজন উদ্যেক্তা ছিলাম, তখন প্রতি সপ্তাহে একটি করে বই পড়তাম। যখন উদ্যোক্তা থেকে কোটিপতি বনে গেলাম, তখনো সপ্তাহে একটি করে বই পড়তাম। যখন মানবাধিকারকর্মী হলাম, তখনো সপ্তাহে একটি করে বই পড়ি।’ মনীষী স্পিনোজা বলেছিলেন, ‘ভালো খাদ্যবস্তু পেট ভরায়, কিন্তু ভালো বই মানুষের আত্মাকে পরিতৃপ্ত করে।’ দার্শনিক দেকার্তে বলেছিলেন, ‘ভালো বই পড়া মানে গত শতাব্দীর সেরা মানুষদের সঙ্গে কথা বলা।’ নেপোলিয়ন বলেছিলেন, ‘অন্তত ষাট হাজার বই সঙ্গে না থাকলে জীবন অচল।’ জন মেকলের মতে, ‘প্রচুর বই নিয়ে গরিব হয়ে চিলেকোঠায় বসবাস করবো, তবু এমন রাজা হতে চাই না যে বই পড়তে ভালোবাসে না।’ নরমান মেলর বলেন, ‘আমি চাই পাঠরত অবস্থায় যেন আমার মৃত্যু হয়।’ ফরাসি ঔপন্যাসিক জ্যঁ-মারি গুস্তাভ ল্য ক্লেজিও বলেছিলেন, ‘বই হচ্ছে সেই মহামূল্যবান ধন, যা যেকোনো স্থাবর সম্পত্তি কিংবা টাকা-পয়সার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ।’ মার্টিন এফ টুপার বলেছিলেন, ‘একটি ভালো বই হচ্ছে সর্বশ্রেষ্ঠ বন্ধু, আজ এবং চিরকালের জন্য।’ রুশ কথাসাহিত্যিক ম্যাক্সিম গোর্কি বলেছেন, ‘আমাদের মধ্যে যদি উত্তম বলে কিছু থাকে, তার জন্য আমরা বইয়ের কাছে ঋণী। বই আমাদের জন্য অতীত আর ভবিষ্যতের মধ্যে সাঁকো বেঁধে দেয়।’ লিও টলস্টয় বলেছেন, ‘জীবনে তিনটি জিনিস প্রয়োজন- বই, বই এবং বই।’ ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ বই পড়ার প্রতি এত বেশি মনোযোগী ছিলেন যে লাইব্রেরি কক্ষে কর্মচারীরা তাঁর উপস্থিতি পর্যন্ত টের পেতেন না। তাই বহুবার তিনি লাইব্রেরি কক্ষে তালাবন্দি হয়ে থাকতেন। বই পাঠের প্রতি মনোযোগী ছিলেন বলেই তিনি হয়ে উঠেছিলেন অগাধ পাণ্ডিত্য ও বহুমুখী জ্ঞানের অধিকারী।
আরও পড়ুন...