বসন্তের গান । জাকির আবু জাফর

বসন্তের গান । জাকির আবু জাফর

বিশেষ রচনা ফেব্রুয়ারি ২০১৯

বসন্ত এক আনন্দের ঋতু। এক সুন্দরের ঋতু। মন দুলিয়ে দেয়ার ঋতু। পাতাঝরা শীতের ঘর ছেড়ে উড়ে আসে সে। উড়ে আসে আমাদের প্রকৃতির বুকে। বসন্ত ডানা মেলে যখন আমাদের চারিদিকে আহা ফুলের আনন্দ কী মায়াবী। কী সুন্দর রূপ তার। তীব্র শীতের শেষে উষ্ণতার আরাম নিয়ে আসে বসন্ত। গাছে গাছে ফুল আর ফুল। চারিদিকে ফুলের সমাহার। বনে। বাগানে। বৃক্ষে ফুটে থাকে নিষ্পাপ ফুল। ফুলে ফুলে মৌমাছি গুঞ্জন তোলে। প্রজাপতি ঘুরে বেড়ায়। ভোমর উড়ে বেড়ায়। এরা ফুলের কানে কানে কী যেনো বলে। কী যেনো করে।


ভোমর গান করে ফুলে ফুলে। কালো ভোমর। ধলা ভোমর। প্রায় বাদামি ভোমরও আছে। এরা সবাই ফুলের আনন্দে গান গেয়ে বেড়ায়
প্রজাপতির শরীরে কত রঙ। কত রূপ কত যে আনন্দের ডালি। এমন রূপে লাবণ্য এবং সুন্দর নিয়ে যখন ফুলের পাপড়িতে বসে-আহা সে কি সুন্দরের জমানো রূপ। মনে হয় তখন আহা জীবন কী সুন্দর। কী মায়াবী। কী আনন্দের। প্রজাপতি ফুলের সাথেই থাকে। ফুলের কাছেই থাকে। ফুলের আনন্দেই ঘুরে বেড়ায়। উড়ে বেড়ায়। মৌমাছি ফুল থেকে মধু খায়। ফুলের শরীর থেকে মিষ্টি রস মৌমাছির পেটে গেলে মধু হয়ে যায়। যে মধুর কথা বলি আমরা সে মধু মৌমাছি ফুল থেকে নেয়। কোনো বৃক্ষের ডালে অথবা মৌমাছির পছন্দের কোনো উচ্চ জায়গায় মৌচাক গড়ে তারা। তারপর ছোটে ফুলের বনে। ফুলের কাছে। যেখানে ফুল সেখানেই মৌমাছি। ফুল ফুটলেই উড়ে যায় মৌমাছির দল। আর ফুলের হৃদয় থেকে চুষে নেয় রস। সে রসই মৌচাকে জমা করে মৌমাছি। ধীরে ধীরে মৌচাক ভরে যায় মৌমাছির রসে। মৌচাকের এ রসই মধু হয়ে আসে আমাদের কাছে। আমরা মজা করে খাই।

বসন্তের গান জাকিরভোমর গান করে ফুলে ফুলে। কালো ভোমর। ধলা ভোমর। প্রায় বাদামি ভোমরও আছে। এরা সবাই ফুলের আনন্দে গান গেয়ে বেড়ায়। মানুষের মধ্যে যারা প্রকৃতির সুন্দর দেখে। বোঝে। তারা ভোমরের মায়াময় গুনগুনানী শুনে দারুণ আনন্দ পায়। ভোমরের পাখার কম্পনে ফুলের পাপড়িও কাঁপে। মনে হয় ফুল বুঝি ভোমরের গান শোনে। শুনে নাচে। আনন্দ করে। উৎসব জমায়। বসন্তের মায়াবী বাতাসে ভোমর, প্রজাপতি আর মৌমাছির উড়ে যাওয়া সেও এক ভীষণ আনন্দের। এ নিয়ে কবিতাও লেখা যায়। এসো আমরা লিখেই ফেলি দু-চার লাইন-

ভোমর যেনো বলছে কথা ফুলের কানে বলছে কথা আনন্দময় গানে গানে। মৌমাছিরা মধুর খোঁজে ফুলের কাছে ফুলের আসর জমছে বনের গাছে গাছে। প্রজাপতির রঙিন পাখা দুলছে দেখো এসব নিয়ে মজার মজার কাব্য লেখো।

এইতো বসন্ত ঋতু। এইতো আমাদের মায়াবী বসন্তের দিন। আমরা এ ঋতুর সুখে উজ্জীবিত হই। প্রাণবন্ত হই। হই সক্রিয়। শীতের মনমরা প্রকৃতি বসন্ত বাতাসে হয়ে যায় তরতাজা। চকচকে। উজ্জ্বল। এক ধরনের খুশি খুশি ভাব। প্রাণের দোলায় দুলতে থাকে। প্রকাশ করতে থাকে আনন্দের সুখ। মানুষের মতো প্রকৃতিরও থাকে এক ধরনের অনুভব। অনুভূতি। যে কারণে ঋতুর বদল হলে প্রকৃতিও বদলে যায়। কোকিলের গান কার না ভালো লাগে। কার না পছন্দ! এমন মধুর কণ্ঠের ধ্বনি সবার কানে বাজে। সকলের প্রাণে কাজে। সবাই অনুভব করে। সুযোগ পেলেই কান পাতে কোকিলের দিকে। কোকিলও ফুলের বনে ডাকে। উঁচু কোনো বৃক্ষের ডালে বসে যায়। ঘন পাতার বৃক্ষের ডালে বসে একটানা গেয়ে যায় বসন্তের গান।বসন্তের গান জাকিরকোকিল বসন্ত আনে। নাকি বসন্ত কোকিল নিয়ে আসে। কে জানে। তবে বসন্ত এলেই কোকিল ডাকে। কোকিল ডাকলেই হয়তো এসে যায় বসন্তের দিন। কোকিলের গানের সাথে দুলে ওঠে বন। আমাদের মন তো দোলেই। দোলে প্রকৃতির মনও। বাংলাদেশের গ্রামের কথা কি আর বলি। সবুজে জমাট দ্বীপ যেনো। যখন দুপুর নামে তখন কী নিঝুম চারিদিকে। আকাশের গায়ে একাকী ঘুরে বেড়ায় চিল। চাতকী। অথবা আয়েশি কোনো ঈগল। ঠিক এমন নিঝুম দুপুরে যখন মিষ্টি সুর ঢেলে ডেকে ওঠে কোকিল- আহা কী মধুর পরিবেশ নামে তখন বনের বুকে। মন উদাস। বন উদাস। উদাস দুপুর ডানা ছড়ায় চারিদিক। মনে হয় প্রকৃতির সমস্ত সৌন্দর্য উজাড় করা স্বর। বন তার হৃদয় থেকে ছড়িয়ে দেয় সমস্ত দুপুরের গায়ে। বসন্তের বাতাস অন্যরকম। অন্য মায়ার আবেশে শীতল। খানিকটা আউলানো। দক্ষিণের দিগন্ত থেকে ছুটে আসে। শীতের উত্তরীয় বাতাস সহসা বদলে যায়। হয়ে যায় দক্ষিণের ঢেউ। হয়তো বঙ্গোপসাগর ছুঁয়ে ছুটে আসে আমাদের লোকালয়ে। আমাদের প্রকৃতিতে। আমাদের প্রাণের বাংলাদেশে। আমরা বুক পেতে অনুভব করি বাতাসের ঢেউ। শরীর জুড়িয়ে ধেয়ে যায় বাতাস। হঠাৎ বাতাসে ফুলের গন্ধ। ফুলের গন্ধে ফুরফুরে হয়ে ওঠে মন। চনমনে হয়ে ওঠে ভেতরটা। নাসিকা খুঁজতে থাকে কোন ফুলের গন্ধ নিয়ে ছুটে গেলো বাতাসের দল।বসন্তের গান জাকিরনাতিশীতোষ্ণ কথাটি আমাদের খুব পরিচিত। বাংলাদেশ নাতিশীতোষ্ণ পরিবেশের একটি। এ নাতিশীতোষ্ণ ঋতু হলো বসন্ত। আর হেমন্ত। এ দুই ঋতুতে বাংলাদেশে না গরম না ঠাণ্ডার সুখ থাকে। থাকে আরামদায়ক বাতাসের দোলা। পোশাক পরিচ্ছদ ও বেশ আরাম। চলা ফেরায় আরাম। আরাম খাওয়া দাওয়ায়। ভ্রমণেও দারুণ সুখ। যদিও তুলনায় হেমন্তে বেড়ানো বেশি আরামের। কিন্তু বসন্তেও কম যায় না। হেমন্তে যেমন ছোটে মানুষ। বসন্তেও ছোটে। সদ্য শীত থেকে উঠে আসা ঋতু বসন্ত সত্যিই সতেজ করে তোলে সকলের প্রাণ। মানুষের। এবং প্রকৃতির। জীব এবং জীবনের। প্রাণ এবং প্রাণের। জীবন থেকে জীবন ছড়িয়ে দেয়ার ঋতু বসন্ত। আনন্দ থেকে ছড়ায় আরও আনন্দের সুখ। সুরের তানে জাগে যে গান তাকে মানুষ গ্রহণ করে প্রকৃতির বিশালত্ব থেকে। প্রকৃতি আমাদের জীবন জাগিয়ে রাখে নানা আয়োজনের ভেতর। বিভিন্ন ঋতুর বৈশিষ্ট্য আমাদের ছুঁয়ে যায়। আমরা ঋতুর বৈচিত্র্যে দারুণ বৈচিত্র্য অনুভব করি। ঋতুর বদলে আমাদের আকাশ বদলে যায়। বাতাস বদলে যায়। বদলে যায় গাছগাছালির চেহারা। সবুজও বদল হতে থাকে। শীতে ধূসর হয়ে যায় প্রকৃতি। গাছালির দিকে দেখলেই দেখি কী বিমর্ষ চেহারা গাছের। পাতার। বসন্ত এসে যখন বুলিয়ে দেয় রাতারাতি হয়ে ওঠে প্রাণবন্ত। খানিকটা বৃষ্টি এসে ধুয়ে দেয় পাতার শরীর। বৃক্ষের দেহ। আ বনানীর সমস্তটা। কী যে চকচক করে তখন। পাতায় গাছে যেনো টলমল করে লাবণ্য। হঠাৎ যেনো জমে ওঠে নতুন সবুজ। বসন্তের গান জাকিরশীতের টানে নদীগুলো ক্ষীণ হয়ে যায়। সামান্য জলের ধারা নদীর বুকে রূপোলি রেখা হয়ে থাকে। বসন্ত যখন আনে বৃষ্টির দোল নদীও ধীরে ধীরে জেগে ওঠে যৌবনের দিকে। বর্ষা এলেই ফিরে আসে নদীর জীবন। নদী তার দু’কূল ছাপিয়ে তোলে ঢেউয়ের কল্লোল। পৃথিবীর শরীর ভেঙে বিশাল করে নিজের উদর। যার সূচনা ঘটে আনন্দময় বসন্তে। শীতের ঘোলা আকাশ হঠাৎ বৃষ্টির ছাঁটে কী দারুণ ফর্সা! কী স্বচ্ছতায় উদ্ভাসিত। কী ঘন নীল। সারা আকাশে নীলের জমজমাট আয়োজন। শুরু হয় মেঘের আনাগোনা। তাপ বাড়তে থাকে রোদের। বড় হতে থাকে দিনের পরিধি। ধীরে ধীরে কমতে থাকে রাতের সময়। শীতে কুয়াশাময় হঠাৎ স্বচ্ছ। আলো ঝলমল। এভাবে বসন্ত আমাদের জীবনকে বদলে দেয়। আমাদের পরিবেশ বদল করে। বদল করে আমাদের কর্মের পরিবেশ। এভাবে বসন্ত আসে আমাদের কাছে। আমাদের আঙিনায়। আমাদের চারিদিকে। নতুন স্বপেড়ব উজ্জীবন জাগে। আমরা পথ চলি নতুন করে। নতুন পরিকল্পনায় পথ চলি আমরা। শিমুল পলাশ আর কৃষ্ণচূড়ার লাল আমাদের বসন্ত আনে। হিজল তমালের ছায়া ঘন হতে থাকে। পলাশের আগুনরাঙা ডাল ফাগুনেই জাগে। রক্তাক্ত শিমুলে গাছের ডাল জ্বলতেই থাকে। হঠাৎ কোকিল এমন লাল ডালে বসে যখন কুহু কুহু সুর টানে তখন চোখ আটকে যায় শিমুল ডালে। মন উড়ে যায় আরো দূরের কোনো অজানায়। যেখানে জীবন হয়তো পৌঁছে না কোনোদিন।
আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ