বিজ্ঞানীর কবলে বিজ্ঞান

বিজ্ঞানীর কবলে বিজ্ঞান

উপন্যাস জানুয়ারি ২০১৪

এনায়েত রসূল।Upponnass

সকাল-সন্ধ্যা নিয়মিত পড়তে বসা কখনোই হয়ে ওঠে না অপুর। পরশু না তরশু, কবে শেষবারের মতো বই ধরেছিলো সে, অপুর তা মনে নেই। আজও ঘুম থেকে উঠে মাত্র বই নিয়ে বসেছে, এমন সময় ঘরে এসে ঢুকলেন মামী। অপু পড়তে বসার জন্য তৈরি হচ্ছে দেখে বিরক্তিতে ছেয়ে গেলো তার চোখমুখ। মামী বললেন, আর পড়তে বসে কাজ নেই। তোকে এখন হাটে যেতে হবে। সকাল সকাল না গেলে টাটকা শাক-সবজি, তাজা মাছ পাওয়া যায় না। তাছাড়া গরম ভাত খেয়ে শফি স্কুলে যাবে। আমাকে তো আবার রেঁধে-বেড়ে শেষ করতে হবে। যা, এক্ষুনি যা। মামীর এতো সব যুক্তির পর আর দেরি করা চলে না। সেই দুঃসাহসও নেই অপুর। তাই খোলা বইটি বন্ধ করে অপু বেরিয়ে এলো মামীর পেছন পেছন। সপ্তাহে দু’দিন হাট বসে অপুর মামাদের গ্রামে- শুক্র আর মঙ্গলবার। আজ মঙ্গলবারের হাট। অপু যখন হাটে গিয়ে পৌঁছলো তখনো হাট জমে ওঠেনি। বাবুরহাট থেকে এসে যে জায়গাটাতে লুঙ্গিওয়ালারা বসে, সে জায়গাটা এখনো খালি পড়ে আছে। গুড়পট্টির দোকানগুলো খুলেছে, তবে ক্রেতা নেই সেখানে। ধীরেন ডাক্তারের ডিসপেনসারির দরজা এখনো বন্ধ। মাটির পুতুল আর হাঁড়িওয়ালারা নিজ নিজ জায়গায় গোছগাছ করে বসছে। টুংটাং টুংটাং শব্দ ভেসে আসছে কামারশালা থেকে। কিন্তু লোকজন নেই সেখানেও। শুধু মানুষ গিজগিজ করছে মাছের বাজারে। মাছঅলাও এসেছে বেশ কয়েকজন। নদীর পাড়ে হাট বলে মাছঅলাদের আনাগোনা থাকে প্রায় সারাটা দিন। সারাটা বাজার চক্কর দিয়ে মাছের বাজারে ঢুকলো অপু। শোল, বোয়াল, গজার, ইলিশ তো উঠেছেই, আরো চেনা-অচেনা জাতের মাছ উঠেছে বাজারে। কিন্তু মামী যা টাকা দিয়েছেন আজ, তা দিয়ে কি করে যে কেনাকাটা শেষ করবে, ভেবে কূল পেলো না অপু। সুতরাং মাছের জন্য নির্দিষ্ট জায়াগাটাতে কয়েকবার চক্কর খেলো সে। তারপর এসে দাঁড়ালো এই আলাদা হয়ে বসা এক মাছঅলার সামনে। বড়ো বড়ো পোয়া মাছ নিয়ে বসেছে লোকটি। অন্য মাছের তুলনায় দামও বেশ কম চাইছে। অপু মাছঅলাকে বললো, আমি ভাই মাছ-টাছ ভালোমন্দ বুঝি না। আপনার ওপর ভার দিচ্ছি। আপনি বেছে আমাকে দশটা পোয়া মাছ দেন। মাছঅলা কিছু মাছ সাজিয়ে রেখেছিলো ডালার ওপর। সেখান থেকে মাছ না দিয়ে ডালার ভেতর থেকে দশটি মাছ তুলে একটি ব্যাগে ভরে দিলো। তারপর বললো, যাও খোকা, নিশ্চিন্ত মনে বাড়ি যাও। তোমাকে বড়ো বড়ো মাছ দিয়েছি। মাছ কেনার পর মাছের উপযোগী তরকারিও কিনলো অপু। তারপর পা বাড়ালো বাড়ির পথে। এ পৃথিবীতে যতো রকম কাজ আছে, তার ভেতর বাজার করাটাকে সবচেয়ে কঠিন কাজ মনে হয় অপুর। এতো দেখে-শুনে জিনিসপত্র কেনে, অথচ মামা-মামীর তা পছন্দই হয় না! আজ সম্ভবত মামী মাছগুলোকে অপছন্দ করতে পারবেন না। কারণ মামী যে পোয়া মাছ খেতে খুব ভালোবাসেন, অপু তা জানে। আর মাছঅলাও নিজ হাতে বেছে বেছে বড়ো মাছগুলো দিয়েছে ওকে। দুই. উঠোনে পা দিয়েই অপু চেঁচিয়ে উঠলো, দেখে যাও মামী, তোমার জন্য কী এনেছি। ঘরে বসে আয়েশ করে পান চিবুচ্ছিলেন মামী। অপুর ডাক শুনে মামী ঘরের ভেতর থেকেই বললেন, ষাঁড়ের মতো চেঁচাচ্ছিস কেনো? বাজার এনেছিস,     রান্নাঘরে নিয়ে যা। আমি আসছি। অপু রান্নাঘরে ঢোকার পরপরই অবশ্য মামী এলেন সেখানে। বললেন, ঝটপট সব বের কর তো। আমাকে আবার রান্না চড়াতে হবে। গরম ভাত খেয়ে শফি স্কুলে যাবে। অপু তরিতরকারি, ডাল-মরিচ বের করে শেষমেশ বের করলো মাছগুলো। তারপর বললো, এ মাছ তোমার জন্য এনেছি। তুমি খুব পছন্দ করো, তাই। মামী বললেন, খুব ভালো করেছিস। মরিচ-পেঁয়াজ দিয়ে ভুনা করলে খেতে খুব ভালো লাগে। দে বাবা, মাছগুলো এদিকে দে। কোটার ঝামেলা আগে শেষ করি। মামীর চোখমুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে মাছগুলো দেখে তিনি খুব খুশি হয়েছেন। তারপর একটা ভালোলাগার অনুভূতি নিয়ে রান্নাঘর থেকে বেরোবার জন্য ঘুরে দাঁড়ালো। ওকে এখন পড়তে বসতে হবে। অপু কিন্তু পড়ার ঘরে ঢুকতে পারলো না, তার আগেই ভেসে এলো মামীর কণ্ঠ, কোথায় গেলি অপু? শুনে যা। অপু আবার এসে দাঁড়ালো মামীর সামনে। মামী তখন লেজ ধরে একটা পোয়া মাছ অপুর নাকের কাছে এনে বললনে, গন্ধ পাচ্ছিস? মাছগুলো পঁচে ভর্তা হয়ে গেছে। অপুও বাজে একটা গন্ধ পেলো। বুঝতে পারলো মামী ঠিক কথাই বলছেন। কিন্তু এমন হলো কেনো? লোকটি তো নিজ হাতে বেছে বেছে ভালো মাছ দিয়েছে। অপু বললো, গন্ধ তো পাচ্ছি। কিন্তু এতো তাড়াতাড়ি মাছগুলো পঁচে গেলো কেমন করে? মাছঅলা তো নিজ হাতে বেছে দিয়েছে। মামী অবাক চোখে তাকালেন অপুর দিকে, মাছঅলা বেছে দিয়েছে মানে? তুই বেছে আনিসনি? অপু বললো, না। আমি বলেছি বেছে দিতে। মাছঅলা মোটা মোটা মাছ বেছে দিয়েছে। মামীর রাগ আরো বেড়ে গেলো অপুর কথা শুনে। মামী বললেন, থাকিস পরের বাড়িতে, বাজারে গিয়ে দেখাস নবাবীপনা! কেনো, নিজে টিপে-টুপে মাছ কিনলে কি সম্মান নষ্ট হতো? কী যে জ্বালায় পড়েছি তোকে নিয়ে। বাবা-মাকে তো খেয়েছিসই, এখন এসেছিস আমাকে খেতে। যা দূর হ, যা সামনে থেকে। মন খারাপ করে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এলো অপু। ওর মন খারাপ হলো যতটা না মামীর বকুনি খেয়ে, তার চেয়ে বেশি হলো নিজের অসহায়ত্বের কথা ভেবে। মামা আছেন, মামী আছেন, মামাতো ভাই আছে অপুর চারপাশে, অথচ সব সময় নিজেকে ভীষণ নিঃসঙ্গ, অসহায় আর হতভাগ্য মনে হয়। মায়ের কাছে শুনেছে, অপু হওয়ার মাত্র একমাস আগে মারা গিয়েছিলেন ওর বাবা আমিনউদ্দিন মাস্টার। জন্মাবার পর থেকে মা-ই বড়ো করে তুলেছিলেন ওকে। সেই মা ছিলেন রাজকন্যার মতো সুন্দর। অপু যখন ঘুমোতে চাইতো না, মা তখন ছড়া কেটে, গান গেয়ে শোনাতেন অপুকে। জোছনা রাতে উঠোনে বসে রূপকথার গল্প বলতেন। স্কুলের পড়া তৈরি করায় সাহায্য করতেন। বছর চারেক আগে অপুর যখন দশ বছর বয়স, তখন হঠাৎই মারা যান অপুর মা। সেই থেকে মামার বাড়িতেই রয়েছে অপু। সারাদিন মামীর ফাই-ফরমাশ খাটে আর নিজে নিজে লেখাপড়া করে । সপ্তম শ্রেণীর বই পড়ে অপু, তবে এখনো কোনো স্কুলে ভর্তি করে দেননি মামা। মামীর কাছে বকুনি খেয়ে পড়ার ঘরে এসে বসেছিলো অপু। কিন্তু পড়তে ইচ্ছে করছে না। মামী তো রোজই বকাঝকা করেন। অন্য দিন তেমন মন খারাপ হয়নি অপুর। কিন্তু আজ খুব মন খারাপ হলো। পড়তে না বসে বই বন্ধ করে বেরিয়ে এলো বাইরে। তারপর আনমনে হাঁটতে হাঁটতে এসে দাঁড়ালো নদীর পাড়ে। নদীর পানিতে শিকড় ডুবিয়ে দাঁড়িয়ে আছে একটা বটগাছ। অপু গিয়ে বসলো সেই গাছের নিচে। এ নদীটার নাম পদ্মা। ঢেউ উছল নদীটা এঁকেবেঁকে চলে গেছে লৌহজং বন্দর ছাড়িয়ে আরো অনেক অনেক দূর। অপু ভাবে, ও যদি এই নদীতে ভেসে অন্য কোথাও চলে যেতে পারতো, তাহলে নিত্যদিন মামা-মামীর বকুনি খেতে হতো না। কথায় কথায় মামী বলেনÑ অপু ওর বাবা-মাকে খেয়ে এসেছে। এ কথাটা খুব কষ্ট দেয় অপুকে। যখনই অপুর মন খারাপ হয়, কোনো কারণে কান্না পায়, তখনই মনে পড়ে মাকে। যেমন এখন। মন খারাপ করে নদীর তীরে এসে বসতেই ওর মনে পড়লো মায়ের কথা। মা খুব শখ করে ওর নাম রেখেছিলেন অপু। মাঝে মাঝে যখন অপুর মন খারাপ হয়, অপু তখন কোটি তারার ভিড়ে ওর মাকে খুঁজে ফেরে। যে কোনো একটি তারাকে স্বাতি তারা ভেবে নিয়ে অনর্গল সুখ-দুখের কথা বলে সেই তারার সাথে। অপু তাকালো আকাশের দিকে। নীল আকাশের বুকে আলোর কণা ঝলমল করছে। সেই আলোর কণাগুলোর দিকে তাকিয়ে অপুর মনে হলো, আহা রে, এখন যদি রাত হতো, তাহলে মায়ের সঙ্গে কথা বলা যেতো। কিন্তু রাত হতে তো এখনো অনেক বাকি! তিন. মায়ের কথা ভাবতে ভাবতে কখন যে দিনটা শেষ হয়ে এসেছে, অপু তা বুঝতে পারেনি। যখন খেয়াল হলো, তখন সন্ধ্যা নেমে আসছে প্রায়। উঠে দাঁড়ালো অপু। সব অভিমান ঝেড়ে ফেলে এবার বাড়ির পথে পা বাড়ালো। যেতে যেতে যখন শিব মন্দিরের কাছাকাছি এলো, ঠিক সে সময় অপু শুনতে পেলো এক অসহায় কণ্ঠÑ এই ছেলে! এই যে খোকা! আমাকে একটু সাহায্য করবে? বাড়ি ফেরার জন্য দ্রুতপায়ে হাঁটছিলো অপু। হঠাৎ ডাক শুনে থমকে দাঁড়াতেই ওর চোখ পড়লো এক অচেনা ভদ্রলোকের ওপর। শিব মন্দিরের ভাঙা সিঁড়ির ধাপে বসে আছেন তিনি। বয়স পঞ্চাশ-একান্ন হবে। হাঁটু ছুঁইছুঁই লম্বা কোট আর পুরো লেন্সের রিমলেস চশমায় তাকে রহস্যময় লাগছে। এমনিতেই এ জায়গাটায় এলে গা ছমছম করে। তার ওপর আধো আলো আধো অন্ধকারে বসে রয়েছেন এক অচেনা আগন্তুক। ফলে একটু ভয়ই পেলো অপু। এগোবে না পিছুবে, চিৎকার দেবে না ছুটে পালাবে, ভেবে পেলো না সে। তবে ভাবার আর সময়ও পেলো না অপু। এ সময় আবার ভেসে এলো সেই রহস্যময় ভদ্রলোকের কণ্ঠÑ এই ছেলে! শুনতে পাওনি, আমি ডেকেছি! নাকি আমার কাছে আসতে ভয় পাচ্ছো? ভয় পাবার মতো কি উদ্ভট চেহারা আমার? অপু বললো, না না, তা নয়। আসলে হঠাৎ ডেকেছেন তো... কথাটা অসমাপ্ত রেখেই থেমে গেলো অপু। ভদ্রলোক বললেন, শুধু হঠাৎ ডাকিনি। অচেনা লোক আমি, তার ওপর জায়গাটাও নির্জন, তাই না? হ্যাঁ, গা ছমছম করে এখানে এলে। ভীত কণ্ঠে বললো অপু। ভদ্রলোক বললেন, গ্রামের পথে সন্ধ্যা নামলে সবারই গা ছমছম করে। আর আমি তো এ গাঁয়ের মানুষ নই। একটু ভয় পাওয়ারই কথা। আমার নাম নিপুণ আহমেদ। ডক্টর নিপু নামেই সবাই ডাকে। গতকালই প্রথম তোমাদের গ্রামে এসেছি। ওহ্। সে জন্যই আপনাকে অচেনা লাগছে। তো, এ গ্রামে কাদের বাড়িতে এসেছেন? জিজ্ঞেস করলো অপু। ডক্টর নিপু বললেন, খানবাহাদুর আসাদউল্লাহ্ খানের বাড়িতে। অপু অবাক হলো ডক্টর নিপুর কথা শুনে। আসলেই তিনি এ কথাটা বলেছেন কিনা তা যাচাই করার জন্য বললো, আপনি কোন্ খানবাহাদুর আসাদউল্লাহ্ খানের কথা বলছেন? যিনি এ এলাকার জমিদার ছিলেন? হ্যাঁ। তার বাড়ির নাম তো নূপুর ভিলা। আপনি কি নূপুর ভিলায় উঠেছেন? হ্যাঁ, গতকাল উঠেছি। আজ বিকেলের দিকে একটু বেড়াতে বের হয়েছিলাম। ফেরার পথে পথঘাট কেমন যেনো গোলমেলে লাগছে। নূপুর ভিলাটা যে কোন্ দিকে বুঝতে পারছি না। খুব সহজভাবে কথাগুলো বললেন ডক্টর নিপু। কিন্তু নিজ কানে শোনার পরও কথাটা বিশ্বাস করতে মন থেকে সায় পাচ্ছিলো না অপু। তাই মরিয়া হয়েই জিজ্ঞেস করলো, কাল রাতে আপনি নূপুর ভিলাতেই ছিলেন? ডক্টর নিপু বললেন, অফকোর্স। গতরাত আর আজ বিকেল পর্যন্ত। কেনো বলো তো? মনে হচ্ছে কথাটা তোমার বিশ্বাস হচ্ছে না! অপু বললো, কী করে বিশ্বাস হবে! নূপুর ভিলায় রাত কাটিয়েও কেউ বেঁচে থাকতে পারে, এ আমরা ভাবতেই পারি না। কেনো? ভাবতে পারো না কেনো? জিজ্ঞেস করলেন ডক্টর নিপু। অপু বললো, কারণ ওটা অভিশপ্ত বাড়ি। নূপুর ভিলায় মাত্র দশ দিনের ভেতর আসাদউল্লাহ্ খানের স্ত্রী, দুই ছেলে আর এক মেয়ে মারা গিয়েছিলেন। জমিদার সাহেব তাই নূপুর ভিলা ছেড়ে গেছেন। আর কোনো দিন ফিরে আসেননি। এখন তো ওই বাড়িটাতে শুধু ভূত-পেতœী বাস করে। ডক্টর নিপু ভয় পাওয়ার ভান করে বললেন, তাই? তুমি ঠিক জানো ওই বাড়িটাতে শুধু ভূত-পেতœী থাকে? অপু বললো, জানবো না কেনো! এ কথা তো এ গ্রামের সবাই জানে। সবাই তাই বাড়িটাকে এড়িয়ে চলে। অপুর এই শেষ কথাটি শুনে ডক্টর নিপু নিজের ভেতর একটা স্বস্তি খুঁজে পেলেন। তিনি বললেন, বাড়িটাকে সবাই এড়িয়ে চলে বুঝি? তাহলে তো মনে হচ্ছে বাড়িটার ভেতর কেউ হুটহাট ঢুকে পড়ে না? অপু বললো, কেউ ঢোকে না। এ গ্রামের মানুষ তো নয়ই, অন্য গ্রামের মানুষও না। সবাই জানে ওখানে ভূতেরা থাকে। অথচ আপনি বলছেন কাল রাতে নূপুর ভিলায় ছিলেন। কথাটা অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে। ডক্টর নিপু বললেন, অবিশ্বাস্য মনে হলেও কথাটা সত্য। এখন মনটা হালকা লাগছে। এ ফাঁকে একটা কথা বলে রাখি, নূপুর ভিলায় যে কেউ যায় না, এ জন্য ভাগ্যবানই মনে হচ্ছে নিজেকে। কেনো জানো? ওখানে... কথা না শেষ করে ঘড়ির দিকে তাকালেন ডক্টর নিপু। তারপর বললেন, এই যাহ্! কথায় কথায় অনেকটা সময় পেরিয়ে গেছে। আমাকে এখন যেতে হবে। কিন্তু কোন্ দিকে যাবো? হাত তুলে ডানের পথটা দেখিয়ে দিয়ে অপু বললো, এই পথে যান। এ পথে কিছুদূর গেলে হাতের ডানে পড়বে পদ্মঝিল। পদ্মঝিলের ডানে জেলেপাড়া আর বামে কুমোরপাড়া। কুমোরপাড়া পেছনে ফেলে একটু এগোলেই নূপুর ভিলায় পৌঁছে যাবেন। ডক্টর নিপু ওর মাথায় হাত রেখে বললেন, খুব উপকার করলে বাবা। তোমাকে না পেলে সমস্যাই হতো পথ খুঁজে পেতে। অপু বললো, আমার কিন্তু ঠিক উল্টো কথা মনে হচ্ছে। নূপুর ভিলা খুঁজে না পেলেই বরং ভালো হতো আপনার জন্য। ডক্টর নিপু বললেন, শোনো তবে আসল কথাটা। নূপুর ভিলা একটা পরিত্যক্ত বাড়ি। সে কথাটা জেনেই আমি ওই বাড়িটা কিনেছি। কারণ অমন একটা নির্জন বাড়ির খুব প্রয়োজন ছিলো আমার। কেনো যে প্রয়োজন ছিলো তা হয়তো তোমাকে বুঝিয়ে বলতে পারবো না। ওসব অনেক জটিল ব্যাপার। শুধু জেনে রাখো, অত্যন্ত প্রয়োজন আছে বলেই ভাঙাচোরা ওই বাড়িটা আমি কিনেছি। আমি একজন বিজ্ঞানী। এখানে এসেছি নিরিবিলিতে কিছু এক্সপেরিমেন্ট করার জন্য। এক্সপেরিমেন্ট মানে জানো? এক্সপেরিমেন্ট মানে হলো কোনো কিছু আবিষ্কার করার জন্য বারবার চেষ্টা করাÑ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা। আমার সেই পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে যাওয়ার জন্য নিরিবিলি একটা জায়গার প্রয়োজন ছিলো। খুঁজে খুঁজে নূপুর ভিলাকে পেয়েছি। আমার আর চিন্তা নেই। তা, তোমার নাম কী? নামটা কিন্তু বলোনি এখনো। অপু বললো, আপনি তো জিজ্ঞেস করেননি। আমার নাম সাজেদুল করিম। সবাই ডাকে অপু। ডক্টর নিপু বললেন, সুন্দর নাম। আমিও তোমাকে অপু বলেই ডাকবো। আচ্ছা, এই যে আমি তোমাকে দেরি করিয়ে দিলাম, তোমার মা বকবেন না? অপু বললো, মা থাকলে তো বকবেন! মা-বাবা কেউ নেই আমার। আমি মামাবাড়িতে থাকি। মায়ের কথা মনে হলে খুব কষ্ট হয়। ডক্টর নিপু বললেন, তা তো হবেই। মা-বাবার চেয়ে আপন কেউ হয় না জীবনে। তবে যেদিন প্রতিষ্ঠিত হতে পারবে, সেদিন সব দুঃখ মুছে যাবে। আর সে জন্য লেখাপড়া শিখে তোমাকে নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে। কিন্তু মামা তো আমাকে স্কুলে ভর্তি করে দেননি। বাড়িতে বসে ক্লাস সেভেনের বই পড়ি। ডক্টর নিপু বললেন, আমি তোমাকে স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেবো। তো অপু, আমি এখন যাই। অন্ধকার নেমে এলে আবার নূপুর ভিলাটা খুঁজে পাবো না। চার. সারাদিন অপু আজ বাড়িতে ফেরেনি। কাজ থেকে ফিরে এ কথাটা জানতে পেরে আর ঘরে বসে থাকতে পারেননি ওর মামা সুবিদ আলি। সঙ্গে সঙ্গেই বেরিয়ে পড়েছিলেন অপুর খোঁজে। কোথাও যখন ওকে খুঁজে পেলেন না, তখন চিন্তিত মনে বাড়ির পথ ধরলেন। এ সময় প্রথম তিনি শুনতে পেলেন অপু প্রসঙ্গ। পশ্চিম পাড়ার আজর শেখ বললো, তোমার ভাগ্নে অপুর কাছে শুনলাম, আমাদের গ্রামে এক রহস্যময় মানুষ এসেছে। সে নাকি নূপুর ভিলায় থাকে। সুবিদ আলি বললেন, তোমরা হয়েছো যেমন বোকা, আমার ভগ্নেটা হয়েছে তেমন ত্যাঁদড়। সেই সকালে বের হয়েছে, এখনো বাড়িতে ফেরেনি। পথে পথে গুজব ছড়িয়ে বেড়াচ্ছে। আজর শেখ বললো, প্রথম তো আমিও গুজব মনে করেছিলাম। কিন্তু অপু যেভাবে জোর দিয়ে লোকটার কথা বললো, কেমন একটা ধন্দে পড়ে গেলোম। সুবিদ আলি আর কথা বাড়ালেন না। একরাশ বিরক্তি নিয়ে বাড়ির পথে পা বাড়ালেন। সুবিদ আলি বাড়ি ফেরার আগেই অপু বাড়ি ফিরে এসেছিলো। আর সুবিদ আলি যখন বাড়িতে ফিরে এলেন সে তখন পড়তে বসার জন্য তৈরি হচ্ছিলো। কিন্তু বই খোলার সময় পেলো না। তার আগেই সুবিদ আলি চেঁচিয়ে উঠলেন, এই বদমাশ! গুজব ছড়িয়ে বেড়াচ্ছিস কেনো? মিথ্যা কথা বলতে তোর মুখে আটকায় না? হঠাৎ আক্রমণে হকচকিয়ে গিয়ে অপু বললো, কী মিথ্যা কথা বলেছি? আমি তো মিথ্যা কথা বলি না। সুবিদ আলি বললেন, না না, তুই মিথ্যা কথা বলবি কেনো? মিথ্যা বলে গ্রামের লোকে। তুই নাকি বলেছিস কোন্ এক হতচ্ছাড়া নূপুর ভিলায় এসে উঠেছে? অপু বললো, ও হ্যাঁ। এ কথা আমি বলেছি। কারণ সেই লোকটার সাথে আমার কথা হয়েছে। ডক্টর নিপু তার নাম। গতরাতে তিনি নূপুর ভিলায় ছিলেন। এখন থেকে সেখানেই থাকবেন। সেখানেই থাকবেন! বলছিস কী? এতো জায়গা থাকতে লোকটার ওই ভুতুড়ে বাড়িটার ওপর নজর পড়লো কেনো? সুবিদ আলি অবিশ্বাস নিয়ে তাকালেন অপুর দিকে। যেনো ডক্টর নিপুকে অপুই নূপুর ভিলায় পাঠিয়েছে। অপু বললো, নজর পড়ার কারণ আছে মামা। তিনি নাকি বৈজ্ঞানিক। কি সব গবেষণা করার জন্য নিরিবিলি জায়গা দরকার। নূপুর ভিলাটায় মানুষজন থাকে না। দিন-রাত ফাঁকা পড়ে থাকে। তাই তিনি নূপুর ভিলা কিনে নিয়েছেন। এখন থেকে তিনি সেখানেই থাকবেন। বাড়িটা তার খুব পছন্দ হয়েছে। একদমে অনেকগুলো কথা বলে থামলো অপু। অমনি ব্যঙ্গ ঝরে পড়লো সুবিদ আলির কণ্ঠে, পছন্দ হয়েছে? বেরিয়ে যাবে পছন্দ হওয়ার মজা। রাতে যখন ভূতেরা ব্যাটার টুঁটি চেপে ধরবে, তখন বুঝবে পছন্দ কাকে বলে। বাপ বাপ করে নূপুর ভিলা ছেড়ে পালাবে। যা হোক, সারাদিন তো ঘুরেছিস। এখন পড়তে বোস। এই প্রথম সুবিদ আলি তার ভাগ্নেকে পড়তে বসার জন্য তাগিদ দিলেন। এটা অপুর কাছেও ধরা পড়লো। আর অমনি একরাশ ভালো লাগায় ভরে গেলো অপুর মন। মামা ঘর থেকে বেরিয়ে যাবার আগেই বই হাতে নিলো সে। পাঁচ. সূর্য তখন অনেক উপরে উঠে গেছে। চারদিক আলোয় আলোয় ঝলমল করছে। নিজ নিজ বাসা ছেড়ে পাখিরা উড়ে গেছে খাবারের খোঁজে। খেতখোলায় চাষীরা আপন মনে কাজ করে যাচ্ছে। সেই খেতখোলার পাশ দিয়ে এঁকেবেঁকে গঞ্জের দিকে চলে গেছে যে মেঠোপথ, সেই পথ দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন সুবিদ আলি আর খবির মুন্সি। অন্য দিন চলতি পথে থেমে থেমে এর-ওর সঙ্গে কথা বলা অভ্যাস সুবিদ আলির। কিন্তু আজ কারো দিকে ফিরে তাকাবার অবসরও নেই তার। মল্লিকদের কবরস্থানটা গ্রামের শেষপ্রান্তে অবস্থিত। সেদিকে দ্রুতবেগে হেঁটে চললেন সুবিদ আলি। আর তাকে অনুসরণ করে চললো খবির মুন্সি। যেতে যেতে অনবরত কথা বলেই চললো সে। সব কথার বক্তব্য একটিইÑ অচেনা যে লোকটি এসেছে, তাকে গ্রাম থেকে তাড়াতে হবে। কারণ লোকটি একটা অভিশপ্ত বাড়িতে উঠেছে। তার আচরণ সন্দেহজনক। সুবিদ আলি সন্দিহান থাকলেও গোরস্থানে ঢুকেই ডক্টর নিপুর দেখা পেলেন। ডক্টর নিপু তখন শিমুলগাছের নিচে দাঁড়িয়ে গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা বলছিলেন। ডক্টর নিপুর দিকে ইশারা করে খবির মুন্সি বললো, ওই যে দেখছো বক্তৃতা দিচ্ছে, ওই লোকটার কথাই অপু বলেছে। দেখতে তো ভালোই মনে হয়। মনের ভেতর কোন্ প্যাঁচ আছে কে বলতে পারে। সুবিদ আলি বললেন, ভালো মতো জেরা করলেই মারপ্যাঁচ বেরিয়ে আসবে। এ নিয়ে চিন্তা করবেন না। গ্রামের লোকজন সুবিদ আলি আর খবির মুন্সিকে শ্রদ্ধার চোখেই দেখতো। তারা যখন দেখতে পেলো সেই দুজন একসঙ্গে এসেছেন, তখন শুধু অবাকই হলো না, রীতিমতো বিস্মিতও হলো। কেউ কেউ সরে গিয়ে দুজনকে সামনে এগোবার পথ করে দিলো। সুবিদ আলি লোকজনের পাশ কাটিয়ে ডক্টর নিপুর মুখোমুখি গিয়ে দাঁড়ালেন। তারপর কোনো ভনিতা না করে সরাসরি প্রশ্ন করলেন, গ্রামের সরল-সোজা মানুষগুলোর সঙ্গে নিশ্চয়ই অনেকক্ষণ ধরে কথা বলছেন। তো সাহেব, আপনার মতলবটা কী? ডক্টর নিপু বললেন, মতলব খুব একটা খারাপ না। আপনাদের সঙ্গে পরিচিত হওয়া, একটু বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে তোলা, ব্যস। সুবিদ আলি ঠোঁটের কোণে বিদ্রƒপের হাসি ফুটিয়ে বললেন, বন্ধুত্ব গড়ে তোলা? ভালো। বন্ধুত্ব গড়ে তোলা খুব ভালো কাজ। তা মিয়া সহেব এসে উঠেছেন কোথায়? ডক্টর নিপু বললেন, নূপুর ভিলায়। নিঝুম নিরালা চমৎকার বাড়ি। ভাবছি জীবনের বাকি দিনগুলো এখানেই কাটিয়ে দেবো। কী বলছেন আপনি! যেনো এর চেয়ে আর অবিশ্বাস্য কোনো কথা হতে পারে না, এমনভাবে বিস্ময় প্রকাশ করলেন সুবিদ আলি। তা শুনে মুচকি হেসে ডক্টর নিপু বললেন, যা বলেছি তা তো শুনেছেনই। বাকি জীবনটা আমি নূপুর ভিলায় কাটিয়ে দিতে চাই। আপনাদের কাছাকাছি থেকে আপনাদের একজন হতে চাই। খবির মুন্সি এতোক্ষণ ধৈর্য ধরে দু’জনার কথা শুনেছিলো। এবার তার সেই ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেলো। ডক্টর নিপুর কথার জবাবে সুবিদ আলি কিছু বলবার আগেই সে বললো, তুমি তো মিয়া অন্য জেলার মানুষ। হঠাৎ আমাদের একজন হওয়ার ইচ্ছে হলো কেনো? ডক্টর নিপু বললেন, আমি এ জেলার মানুষ নই সত্য। তবে এখন থেকে এখানেই থাকবো বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আর যাদের সঙ্গে থাকবো, তাদের সঙ্গে মিলেমিশে থাকার ইচ্ছা হওয়াটাই তো স্বাভাবিক। মজিদ ডাক্তারের কম্পাউন্ডারও ছিলো উপস্থিত লোকজনের মাঝে। সে বললো, মিলেমিশে থাকায় কোনো দোষ নেই। দোষ হলো মনের গোপন কথা খুলে না বলা। ঝরু সেন বললো, আপনাকে খুব রহস্যময় মানুষ বলে মনে হচ্ছে। আসলে আপনি মানুষ কিনা, তাই বুঝতে পারছি না। ডক্টর নিপু মিটিমিটি হেসে বললেন, এ কথাটা ঠিকই বলেছেন। কোনো মানুষকেই সহজে চেনা যায় না। আমাকে চিনবেন কেমন করে! আমি নিজেই নিজেকে চিনি না। নিজেই নিজেকে চেনেন নাÑ এ আবার কেমন কথা? আবার বিস্ময় প্রকাশ পেলো সুবিদ আলি কণ্ঠে। ডক্টর নিপু বললেন, যা সত্য তাই বলেছি। আপনি বুঝতে পারুন আর না পারুন, কথাটা সত্যÑ আমি নিজেই নিজেকে চিনি না। শুধু আমি কেনো, বেশির ভাগ মানুষই নিজেকে চেনে না। আপনি আপনার নিজেকে চেনেন? ডক্টর নিপুর কথা শুনে রীতিমতো রেগে গেলেন সুবিদ আলি। প্রায় চিৎকার করে বললেন, চিনবো না কেনো? আমি পাগলও না, চোর-ডাকাত-বদমাশও না। আমার নাম সুবিদ আলি। আমার বাবার নাম সুজাত আলি। এক নামে দশ গ্রামের মানুষ আমাকে চেনে। কিন্তু আপনাকে কে চেনে? আপনার কী নাম, কী পরিচয়, দেশ কোথায়, বাড়ি কোন্ গ্রামে, কিছুই তো জানি না আমরা! ডক্টর নিপু বললেন, আমার নাম-পরিচয় কেউ জিজ্ঞেস করেননি, তাই আমিও তা বলিনি। আমার নাম নিপুÑ নিপুণ ইসলাম। মুন্সিগঞ্জ জেলার বিক্রমপুরে আমার বাড়ি। যে গ্রামে আমার জন্ম হয়েছিলো সে গ্রামটা এখন আর নেই। পদ্মায় নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। বুঝলাম নদীভাঙা মানুষ তুমি। তা বাপু, কী কাজ করো? নিশ্চয়ই কোনো বেআইনি কাজ করো না? বললো খবির মুন্সি। ডক্টর নিপু বললেন, না না, বেআইনি কাজ করবো কেনো? আমি একজন সায়েটিস্ট। নানান বিষয় নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করি। কিছুদিন ধরে একটা জটিল বিষয় নিয়ে কাজ করছি। এখন প্রায় ফাইনাল স্টেজে পৌঁছে গেছি। দু-চার মাসের মধ্যেই পুরোপুরি সফল হবো আশা করছি। ডক্টর নিপুর কথা উপস্থিত মানুষগুলো বুঝেছে কিনা বোঝা গেলো না। একজন অন্যজনের দিকে চাওয়াচাওয়ি করতে লাগলো। আর সেই অবসরে আবার মুখ খুললেন সুবিদ আলি। আগের চেয়ে কঠিন স্বরে বললনে, দেখুন নিপু সাহেব, আমাদের সাফ কথা,  এ গ্রামে কোনো রকম গোপন কাজকর্ম চলতে দেয়া হবে না। ডক্টর নিপু বললেন, আপনারা আমাকে ভুল বুঝছেন। আমি কোনো গোপন কাজ করছি না। তাহলে নূপুর ভিলার মতো অভিশপ্ত বাড়িতে বসে কী করছেন? ভিন জেলার লোক হয়ে আমাদের গ্রামে আশ্রয় নিয়েছেন। ভুতুড়ে বাড়িতে আস্তানা গেড়েছেন। কোনোটাই আমাদের জন্য স্বস্তিকর নয়। সে যা হোক, সাবধানে থাকবে। গ্রামের সরল-সোজা মানুষজনকে নয়-ছয় বুঝিয়ে হাত করতে চেষ্টা করবেন না। তাহলে আপনার হাত আমরা ভেঙে দেবো। কথাটা আগেভাগেই জানিয়ে গেলাম। চলো ভাইসব, যার যার কাজে যাও। আসুন মুন্সি সাহেব, আমারা যাই। যেনো যুদ্ধ জয়ী কোনো সেনাপতি, এমনভাবে বুক টান করে মল্লিকদের কবরস্থান থেকে বেরিয়ে এলেন সুবিদ আলি। তাকে অনুসরণ করলো অন্য সবাই। শুধু জনশূন্য কবরস্থানে স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন ডক্টর নিপু। ছয়. ডক্টর নিপু বিজ্ঞানের নানা শাখা নিয়ে কাজ করছেন। কিন্তু মনস্তত্ত্ব বলে যে বিজ্ঞানের একটি সূক্ষ্ম আর জটিল শাখা আছে, তা নিয়ে কাজ করেননি। তাই মানুষের মন যে কতো জটিল, তা তিনি ভাবতেও পারেননি। এ কারণেই তিনি মনে করেছিলেন, তাকে নিয়ে গ্রামবাসীর মনে যে ভুল ধারণার সৃষ্টি হয়েছে, ধীরে ধীরে তা মুছে যাবে। সত্যের জয় হবে। ডক্টর নিপু ভেবেছিলেন, কয়েক দিন মানুষজনের সঙ্গে মেলামেশা করে তাদের মন জয় করতে চেষ্টা করবেন তিনি। চেষ্টা করেছিলেনও। কিন্তু তা কোনো সুফল বয়ে আনেনি। বরং সুবিদ আলি আর খবির মুন্সির অনুসারীরা তাকে নিয়ে মিথ্যা রটনা করেছে। সহজ-সরল গ্রামবাসীদের ভুল বুঝিয়েছে। বলেছে, লোকটির মতলব ভালো নয় বলেই সে গায়ে পড়ে মানুষজনের সাথে কথা বলে। ডক্টর নিপুর কাছ থেকে আমাদের সাবধান থাকতে হবে। আর তাকে কোনোভাবেই সহযোগিতা করা চলবে না। সহযোগিতা কারো কাছ থেকে কখনো চাননি ডক্টর নিপু। কিন্তু মানুষের বিশ্বাস আর ভালোবাসা চেয়েছিলেন। মানুষের বন্ধু হতে চেয়েছিলেন। আপদে-বিপদে তাদের পাশে দাঁড়াতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তা যখন শত চেষ্টা করেও সম্ভব হলো না, ডক্টর নিপু তখন গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা বলা আর যোগাযোগ রক্ষা করা বন্ধ করে দিলেন। প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বেরোনোও বন্ধ হয়ে গেলো। এতে তার বন্ধুবৎসল মনটা আহত হলো। নিজেকে একা মনে হতে লাগলো। কিন্তু সম্পূর্ণ অপরিচিত এক গ্রামে, প্রতিকূল মানসিকতায় গড়ে ওঠা মানুষদের তিনি নিজের পক্ষে আনবেনই বা কেমন করে? এমনই যখন চারপাশের অবস্থা, অন্য কোনো মানুষ হলে হয়তো পাগল হয়ে যেতো অথবা কাজকর্ম গুটিয়ে নিয়ে গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যেতো। কিন্তু ডক্টর নিপু ছিলেন অন্য প্রকৃতির মানুষ। তিনি বিশ্বাস করতেন, একদিন মানুষের ভুল ভাঙবেই। তারা বুঝতে পারবে, কোনো অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে তিনি এ গ্রামে আসেননি। বিশাল এ পৃথিবীর মাঝে ছোট্ট এই গ্রামটিকে তিনি বেছে নিয়েছেন শুধু নীরবে-নিভৃতে কাজ করে যাওয়ার সুবিধার জন্য। কথায় বলে, চোখের আড়াল হলে ধীরে ধীরে মানুষ মনের আড়াল হয়ে যায়। ডক্টর নিপু হয়েছিলেনও প্রায় তাই। যত্রতত্র যখন-তখন তার সাথে গ্রামবাসীদের দেখা-সাক্ষাৎ না হওয়ার কারণে তারা প্রায় ভুলেই যাচ্ছিলো ডক্টর নিপুর কথা। সেই অবসরে ডক্টর নিপুও পরিপূর্ণভাবে নিজেকে নিয়োজিত করেছিলেন গবেষণার কাজে। কিন্তু গবেষণার সূত্র ধরেই তিনি আবার চলে এলেন সেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। আবার গ্রাম জুড়ে তোলপাড় শুরু হলো ডক্টর নিপুকে নিয়ে। সুবিদ আলি আর খবির মুন্সির মতো অসহিষ্ণু মানুষেরা আবার তাদের ক্ষমতা দেখাবার মওকা পেয়ে গেলো। ব্যাপারটা তেমন কিছু নয়। গবেষণার প্রয়োজনে কয়েক ধরনের আলোক বিচ্ছুরক পদার্থ নিয়ে কাজ করছিলেন ডক্টর নিপু। এ ধরনের পদার্থের বিকিরণ রক্তকণিকা আর প্রাণিকোষের ওপর কী ধরনের প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে, তা দেখাই ছিলো তার উদ্দেশ্য। তিনি যখন পদার্থগুলোকে বিদ্যুৎ অথবা এসিড দিয়ে বিশ্লেষণ করতেন, তখন নানা রঙের রশ্মি ছড়িয়ে পড়তো চার দিকে। সেই রশ্মিই হলো সমস্যার মূল। সাত. আলোক বিচ্ছুরক পদার্থ নিয়ে কিছুদিন ধরে কাজ করলেও সমস্যার শুরু যে রাতে, সেই রাতটি ছিলো নিকষ কালো এক অন্ধকার রাত। সেই রাতে নদীতে মাছ ধরছিলো জেলেরা। নদীতে জাল ফেলতে ফেলতে নবীন জেলের মনে হলো হঠাৎ যেনো আকাশের কোণটা ঝলসে উঠেই আবার অন্ধকারে ডুবে গেলো। এ ব্যাপারটাকে নিজ চোখে দেখেও খুব একটা গুরুত্ব দিলো না নবীন জেলে। সে নিজের কাজে মন দিলো। এখনই নদীতে জাল ফেলার উপযুক্ত সময়। অন্য দিকে মন দেয়ার মতো সময় কোথায় তাদের! কিন্তু এক মুহূর্ত পরে উত্তর কোণের আকাশটা যখন আবার ঝলসে উঠে নিথর হয়ে গেলো, তখন আর এদিকে মন না দিয়ে পারলো না নবীন জেলে। সে ভাবলো, আকাশে কি বিজলি চমকে উঠেছিলো? তেমনই তো মনে হলো। কিন্তু আকাশে বিজলি চমকাবে কেনো? এখন তো ঝড়-বৃষ্টির দিন নয়। মেঘও নেই আকাশে। মেঘ কি চুপিসারে এসে সেখানে জড়ো হয়েছে? চকিতে নবীন ঘুরে তাকালো আকাশের দিকে। সারাটা আকাশে অগণিত তারা জ্বলজ্বল করছে। তাদের মাঝে সম্্রাজ্ঞীর মতো ধবধব করছে রূপালি চাঁদ। মেঘের ছিটেফোঁটাও নেই কোথাও। বিজলি চমকাবে কেমন করে? সম্ববত তেমন কিছুই ঘটেনি। পুরোটাই চোখের ভুল। মনের কোণে জেগে ওঠা প্রশ্নটাকে ধামাচাপা দিয়ে আবার কাজে মন দিলো নবীন জেলে। আজ একাই ওকে কাজ করতে হচ্ছে। সঙ্গে এসেছে জলিল। কিন্তু কাজ করতে পারছে না সে। সন্ধ্যার পর থেকেই জলিলের শরীরটা নাকি ম্যাজম্যাজ করছে। নতুন করে কাজে মনোযোগ দেয়ার পর দু মিনিট কেটেছে কি কাটেনি, আবার আকাশটা ঝলসে উঠলো। আর এবারও তা নবীনের চোখে পড়লো। নবীন দেখতে পেলো, আকাশের উত্তর কোণটা ঝলসে উঠেই অন্ধকারে ছেয়ে গেলো! ব্যাপার কী? এবার তো চোখের ভুল বলা যাবে না। হোক তা সেকেন্ডেরও কম সময়ের জন্য, কিন্তু নবীন তো স্পষ্টই দেখেছে আকাশটাকে আলোকিত হয়ে উঠে অন্ধকারে ডুবে যেতেÑ যেমন হয় বিজলি চমকালে। তবে কি বিজলিই চমকেছে? তাই বা কী করে হয়? বিজলি চমকালে তো আকাশে মেঘ থাকার কথা। এ মুহূর্তে নিজেকে খুব অসহায় মনে হলো নবীনের। নবীন তাকালো পেছন দিকে। পেছনের গলুইয়ে মাথা রেখে শুয়ে ছিলো জলিল। জলিলের গায়ে হাত দিয়ে ডেকে তুললো। তারপর বললো, কিছুক্ষণ পরপর একটা রহস্যময় আলো ঝলসে উঠছে আকাশে। জলিল বললো, তাতে তোর সমস্যা কোথায়? নবীন বললো, আলোটাকে আমার স্বাভাবিক আলো মনে হচ্ছে না। তাই ভয় করছে। জলিল বললো, ভয় করছে কেনো? তুই কি ভাবছিস আকাশে ভূতেরা মশাল জ্বালাচ্ছে? আকাশে যে বিজলি চমকায়, বিজলি চমকালে আকাশ ঝলসে ওঠে, জানিস না? নবীন বললো, তা তো জানি। কিন্তু ওটা বিজলির আলো নয়। বিজলির আলো নয়? আচ্ছা মেনে নিলাম বিজলির আলো নয়। তাতে তোর সমস্যা কোথায়? চোখটা সবে একটু লেগে এসেছিলো। তুই ঘুমটা ভেঙে দিলি। আমি এখন ঘুমোবো। জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে। তুই মাছ ধর। জাল তো এখনো নৌকাতে পড়ে আছে। ঘুম থেকে ডেকে তোলায় জলিলের মেজাজটা এলোমেলো হয়েছিলো। তারই প্রকাশ ঘটালো সে তার কথায়। নবীনও আর কথা বাড়ালো না। কাজে হাত লাগালো। তবে মন লাগাতে পারলো না। ওর অবচেতন মনটা ভেতর থেকে যেনো কোনো এক অশুভ কিছুর ইঙ্গিত দিচ্ছিলোÑ যা অনুভব করা যায়, কিন্তু ব্যাখ্যা করা যায় না। আনমনে জাল ছাড়ছিলো নবীন আর বারবার আকাশটার দিকে তাকাচ্ছিলো। এভাবে বড়ো জোর পাঁচ মিনিট কেটেছে। কিন্তু তারপরই ঘটলো সেই রহস্যময় ঘটনা। আকাশটা ঝলসে উঠে মুহূর্তেই অন্ধকার হয়ে গেলো। আর সেই সঙ্গে নবীনের বুকটাও মুচড়ে উঠলো। নবীন তাকালো জলিলের দিকে। মাঝরাতে ঘুম ভেঙে যাওয়ায় আর ঘুম আসেনি জলিলের চোখে। তাই জলিলও দেখেছিলো আলোটাÑ একটা সবুজ আলো। বিজলির আলো কি কখনো সবুজ হয়? প্রশ্নটা নবীনকে না করে পারলো না জলিল। জিজ্ঞেস করলো, আকাশে একটা আলো জ্বলছিলো। কেমন যেনো সবুজ আলো। তুই দেখেছিস? নবীন বললো, আমি তো এ আলোটার কথাই বলেছি। তবে শুধু সবুজ নয়, কখনো কখনো লাল-নীল আলোও জ্বলতে দেখেছি। জলিল বললো, লাল-নীল, সবুজ-হলুদ কি কখনো বিজলির আলো হতে পারে? বুঝতে পারছি না। নবীন বললো, সে জন্যই আলোটাকে স্বাভাবিক মনে হয়নি। রহস্যময় মনে হয়েছে। আর তাই তোকে ঘুম থেকে ডেকে তুলেছি। রাতের আকাশে বিজলির আলো জ্বলাটাই স্বাভাবিক বলে তখন মনে হয়েছিলো আমার। কিন্তু এখন তো মনে হচ্ছে ব্যাপারটা অন্যরকম। যেনো এর ভেতর কোনো... কথাটা শেষ করতে পারলো না জলিল। তার আগেই পরপর দু’বার আকাশের উত্তর কোণ জ্বলে উঠলো। নবীন বললো, এবার দেখেছিস? জলিল বললো, হ্যাঁ, দেখেছি। পরপর দু’বার জ্বলেছে। আমার মন বলছে তুই ঠিকই ভেবেছিস। এর মাঝে অশুভ কিছু আছে। এটা বিজলির আলো নয়। বিজলি তো শুধু আকাশের একটি কোণ বেছে নিয়েই চমকায় না। আর আমরা তো কোনো শব্দই শুনতে পাইনি। শুধু নানার রঙের আলো দেখেছি। তুই কি শব্দ শুনেছিস? নবীন ডানে-বামে মাথা ঘোরালোÑ শোনেনি। বললো, আজম চাচার নৌকাটা যে কখন কোথায় চলে গেলো, বুঝতেই পারলাম না। চল্, আমরা তাকে খুঁজে বের করি। ব্যাপারটা ভালো লাগছে না। সব শুনে আজম চাচা বললেন, আলোটা তোরাও দেখেছিস? আমি আরো কয়েক দিন দেখেছি। কিন্তু অন্য কেউ দেখেছে বলে শুনিনি, তাই কাউকে বলার সাহস হয়নি। ভেবেছি ওসব চোখের ভুল। বয়স হয়েছে, চোখে ছানি পড়েছে। অস্পষ্ট আর ঝাপসা তো সব সময়ই দেখছি। ভেবেছি এটাও তেমন কিছু। নবীন বললো, চোখের ভুল নয় চাচা, আলোটা রহস্যময়। আমি দেখেছি। জলিল দেখেছে। আপনি দেখেছেন। হয়তো আরো অনেকেই দেখেছে। এতো লোকের দেখা জিনিস কখনো চোখের ভুল হতে পারে না। পারে, বলুন? আজম চাচা মাথা নেড়ে বললেন, না, এতো লোকের দেখা ভুল হতে পারে না। সবুজ হলুদ নীল আলো। কিন্তু আলোটা কিসের হতে পারে বল্ তো? জলিল বললো, ওসব ভেবে বের করা আমাদের কাজ নয়। ভোর তো হয়েই এলো। আজ আর মাছ ধরা হবে না। চলুন ফিরে যাই। নবীন সায় দিলো জলিলের কথায়। বললো, হ্যাঁ চাচা, চলুন ফিরে যাই। সবাইকে গিয়ে সব কথা বলি। দেখি তারা কী বলে। আট. সকাল হতে না হতেই গতরাতের কথা ছড়িয়ে পড়লো চারদিকে। গ্রামের লোকজন বিপুল আগ্রহ নিয়ে শুনতে লাগলো নবীন আর আজম চাচার অভিজ্ঞতার কথা। জলিলও ঘটনা বর্ণনায় পিছিয়ে রইলো না। একবার বলা শেষ হলে আবার নতুন অনুরোধে নতুন করে বলতে হলো নবীন আর জলিলকে। যতোবার আলোর কথা বললো ততোবারই তার বর্ণনা গেলো পাল্টেÑ ভয়াবহতা গেলো বেড়ে। সঙ্গে সঙ্গে বেড়ে গেলো অহেতুক উত্তেজনা। শেষমেশ গ্রামের বয়োজ্যেষ্ঠরা এলেন আজম চাচার কাছে। তারা জানতে চাইলেন তার দেখা আলোর বর্ণনা। জবাবে আজম চাচা বললেন, জানো তো বয়স আমার কম হয়নি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় দুই বছর বয়স ছিলোÑ এখন সত্তর চলছে। পঞ্চাশ বছর ধরে মাছ ধরছি। ঝড় দেখছি, তুফান দেখছি, ঘূর্ণি স্রোতেও পড়েছি কয়েকবার। কিন্তু নানা রঙের বিজলির আলো দেখিনি। কী চমৎকার সেই আলোর রং! কতো যে রঙের ধরন, না দেখলে বুঝবে না। গ্রামের যুবকরা বললো, একেকজন একেক কথা বলছেন আপনারা। আসলে যে কী দেখেছেন, তাই বুঝতে পারছি না। আজম চাচা বললেন, আমরা যারা আলো দেখেছি তারাই বুঝতে পারছি না, তোমরা বুঝবে কেমন করে? সুবিদ আলি অনেকক্ষণ ধরেই ধৈর্য ধরে সবার কথা শুনছিলেন। এবার তিনি বললেন, বাজে কথা বলে জটলা বাঁধাবার কোনো মানে হয় না। আর চিলে কান নিয়ে গেছে শুনেই চিলের পেছনে ছোটারও কোনো অর্থ নেই। আসলেই আকাশে অমন আলো দেখা যায় কিনা, আগে তার খোঁজ-খবর নিতে হবে। এটা বিজলির আলো না ভুতুড়ে আলো, ভালো মতো তা খতিয়ে দেখতে হবে। তারপর অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নিতে হবে। সুবিদ আলির প্রস্তাব কমবয়সী গ্রামবাসীরা লুফে নিলো। ওরা বললো, ঠিক বলেছেন চাচা মিয়া। সত্য সত্যই আকাশের উত্তর কোণে নীল সবুজ আলো জ্বলে কিনা, তা নিজেদের চোখে দেখতে হবে। আর তা দেখার জন্য রাত জেগে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকবো আমরা। একদল নবীন ভাইদের সঙ্গে নৌকা নিয়ে নদীতেও যাবো। আপনারা কী বলেন? মজিদ শেখ বললো, তোমরা হলে আমাদের ভবিষ্যৎ। তোমরা যা করবে, তাতে আমাদের সম্মতি আছে। কী বলো সুবিদ? সুবিদ আলি বললেন, কী বলবো বলেন! মাথায় কিছুই আসছে না। যা ভালো হয় এ গ্রামের জন্য, তাই করতে হবে আমাদের। তার গবেষণার একটি অংশ নিয়ে গ্রামে যে এতো কিছু ঘটে গেছে, ডক্টর নিপুর তা জানা ছিলো না। তাই নিজের কাজের ব্যাখ্যা দেয়ারও সুযোগ ছিলো না তার। প্রতিদিনের মতো সে রাতেও গবেষণার টেবিলে বসলেন ডক্টর নিপু। মাঝখানে কাজ বন্ধ করে ঝটপট কিছু খেয়ে নিয়ে আবার কাজে বসলেন। রাত দুটোর দিকে এলো সেই আলোক বিচ্ছুরক পদার্থ নিয়ে কাজ করার পালা। অন্যদিনের মতো আজও নানা রঙের আলো ছড়িয়ে পড়লো চারদিকে। গ্রামের যুবকরা ছোট ছোট দল বেঁধে ছড়িয়ে পড়েছিলো সবখানে। ওরাও সেই আলো দেখতে পেলো। আর আলো দেখে বুঝলো, জেলেরা ভুল দেখেনি, সত্য সত্যই সবুজ-নীল আলোতে ক্ষণে ক্ষণে ঝলসে উঠছে আকাশের উত্তর কোণ। রহস্যময় আলো ক্ষণে ক্ষণে রং বদলালেও দিক বদলায়নি। তাই সবাই চোখ রাখতে লাগলো উত্তর দিকে। অনেকক্ষণ পরপর হঠাৎ হঠাৎ আলোর ছটা আছড়ে পড়ছিলো আকাশের কোণে। সেদিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে কারো কারো মনে হলো, আলোটা আকাশে জ্বলছে নাÑ বরং নিচ থেকে জ্বলে আকাশে ছড়িয়ে পড়ছে। তাই শুধু আকাশে নয়, এ গ্রামের প্রতিটি বাড়ির ওপর নজর রাখতে হবে। সেই নজর রাখতে গিয়েই আলোর উৎস খুঁজে পেলো গ্রামের যুবকরা। ওরা দেখতে পেলো নূপুর ভিলার ভাঙাচোরা জানালার ফাঁক-ফোকড় আর ভেনটিলেশনের ভেতর দিয়ে ছিটকে ছিটকে নীল-সবুজ আলো বেরুচ্ছে। এটি ছিলো যুবকদের জন্য এক বিরাট আবিষ্কার। তাই সেই রাত দুপুরেই ওরা সারা গ্রামে সাড়া ফেলে দিলো। এক এক করে ঘুম ভাঙা চোখে বাড়ির বাইরে এসে দাঁড়ালো সবাই। দেলোয়ার মাস্টার বললেন, আমাদের গ্রামে ডক্টর নিপু নামে যে বিজ্ঞানী এসেছেন, তিনি নাকি আতঙ্ক ছড়াচ্ছেন। কিন্তু একজন বিজ্ঞানী আতঙ্ক ছড়াবেন কেনো বুঝতে পারছি না। নতুন করে আবার ডক্টর নিপুর বিরোধিতা করার সুযোগ পেলেন সুবিদ আলি। নূপুর ভিলা থেকে যখন আলো ঝলসে উঠছে, অবশ্যই তা সে ছড়াচ্ছে। না না, আমরা আর তার এসব ভোজবাজি বরদাস্ত করবো না। সবাই মিলে এর একটা বিহিত করতেই হবে। নয়. দিন পনেরো আগে শহরে গিয়ে টিনজাত খাবার কিনে এনেছিলেন ডক্টর নিপু। অন্য কিছু তেমন প্রয়োজন হয়নি। তাই এ ক’দিন তিনি বাইরে বের হননি। তবে দু’দিন ধরে একটা খোলা হাওয়ায় ঘুরে বেড়াবার জন্য তার মনটা আকুলি-বিকুলি করছিলো। তাই পুব আকাশে আলোর রেখা ফুটে ওঠার পরপরই নূপুর ভিলা থেকে বেরিয়েছিলেন ডক্টর নিপু। ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন নদীর পাড়ে। সে সময় করিম মিয়ার সঙ্গে দেখা হলো তার। গরুকে ঘাস খাওয়াতে এসেছিলো করিম মিয়া। ডক্টর নিপু তার সামনে গিয়ে বললেন, আস্সালামু আলাইকুম চাচা মিয়া। ভালো আছেন তো? মাঠের নরম মাটিতে গরুর খুঁটি পুঁতছিলো করিম মিয়া। হঠাৎ আস্সালামু আলাইকুম শুনে সে সোজা হয়ে দাঁড়ালো। কিন্তু সালামের জবাব দিতে পারলো না। তার আগেই তার চোখ পড়ল ডক্টর নিপুর ওপর। অমনি বুকের ভেতর কম্পন শুরু হলো। কণ্ঠনালী শুকিয়ে গেলো। নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে রইলো সে। ডক্টর নিপু অবশ্য সালামের জবাব পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করলেন না। তিনি আরো সামনে এগিয়ে হাত রাখলেন করিম মিয়ার পিঠে। তারপর আন্তরিকতার সঙ্গে বললেন, আপনাদের সবার সঙ্গে পরিচিত হতে ইচ্ছে করে। কিন্তু সময় হয়ে ওঠে না। করিম মিয়া দ্রুত নিজেকে সামলে নিয়ে বললো, আপনারা কাজের মানুষ। সময় না হওয়ারই কথা। তো বাবা আমি এখন যাই। যাই বলেই মাঠ ছেড়ে দ্রুত পথে উঠে গেলো করিম মিয়া। ডক্টর নিপু একটু অবাকই হলেন তার আচরণে। তার মনে হলো, কেউই যেনো তাকে সহজভাবে নিতে পারছে না। সকাল হওয়ার পরপরই একজন দু’জন করে মানুষ এসে জড়ো হচ্ছিলো সুবিদ আলির উঠোনে। তারা নূপুর ভিলায় যাবার জন্য তৈরি হচ্ছিলো। কিছু কথাবার্তা সেরে নিয়ে সবাই মাঠের দিকে ছুটে চললো। তবে সে পর্যন্ত যাওয়ার প্রয়োজন পড়লো না। তার আগেই ডক্টর নিপুর সঙ্গে দেখা হলো। ডিস্ট্রিক্ট বোর্ডের পথ ধরে নূপুর ভিলার দিকে যাচ্ছিলেন তিনি। গ্রামের উঠতি বয়সের ছেলেরা চোখের পলকে তাকে ঘিরে ধরলো। গ্রামবাসীদের দিকে তাকিয়েই ডক্টর নিপু বুঝতে পারলেন কোথাও একটা কিছু গোলমাল হয়েছে। কিন্তু এরা তাকে ঘিয়ে ধরেছে কেনো? তার সঙ্গে তো কোনো সমস্যা সৃষ্টি হওয়ার কথা নয়! কয়েক মাস তো বলতে গেলে এদের সঙ্গে যোগাযোগই নেই তার। ডক্টর নিপুকে বিব্রত ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মজনু লস্কর বললো, হাওয়া খেতে বেরিয়েছিলেন বুঝি? ডক্টর নিপু বললেন, হ্যাঁ। ঘরে বসে থাকতে থাকতে একেবারে হাঁপিয়ে উঠেছিলাম। তাই ভাবলাম সূর্যের তেজ বাড়ার আগেই একটু ঘুরে আসি। তা আপনারা দল বেঁধে কোথায় যাচ্ছেন? মজনু লস্কর বললো, আপনার খোঁজে। করিম চাচার কাছে শুনলাম গাঙের পাড়ে হাওয়া সেবন করছেন। তাই আর নূপুর ভিলায় গেলাম না। চলে এলাম গাঙের পাড়ে। ডক্টর নিপু বললেন, আমি নূপুর ভিলায় যাচ্ছি। চলুন, সেখানে বসে কথা বলা যাবে। মজনু লস্কর এ কথার জবার দেয়ার আগেই আরেকজন বললো, না না, ওই রাক্ষুসে বাড়িতে যাওয়ার দরকার নেই। এখানেই কথাবার্তা শেষ হয়ে যাক। কী কথা? শঙ্কিত কণ্ঠে জানতে চাইলেন ডক্টর নিপু। লোকটি বললো, ঝামেলার কথা শর্টকাটে শেষ করা যাবে না। কথাবার্তার এ পর্যায়ে সামনে এসে দাঁড়ালেন সুবিদ আলি। তিনি বললেন, আপনার কাছে আমাদের কিছু প্রশ্ন আছে। যা জানতে চাইবো ঠিক ঠিক জবাব দেবেন। ডক্টর নিপু বললেন, তা তো নিশ্চয়ই। প্রশ্নের জবাব জানা থাকলে ভুল জবাব দেবো কেনো! কী জানতে চান বলুন। সুবিদ আলি বললেন, মিয়াভাই তো ডাক্তার মানুষ, তাই না? তাই যদি হয় তবে কোনো ওষুধের দোকানে বসেন না কেনো? মানুষের অসুখ-ব্যাধিতে ওষুধপথ্য দেন না কেনো? এর কারণটা কী? প্রশ্নের ধরন দেখে এমন নাজুক মুহূর্তেও ডক্টর নিপুর হাসি পেলো। কিন্তু হাসলেন না ডক্টর নিপু। নিজেকে সামলে নিয়ে তিনি তাকালেন সুবিদ আলির দিকে। তারপর বললেন, আমি তো ডাক্তার নইÑ ডক্টর। ডাক্তার হলে অবশ্যই ডিসপেনসারি সাজিয়ে বসতাম। মানে? কথাটা সহজ করে বলুন। বললেন সুবিদ আলি। ডক্টর নিপু বললেন, বলছি। আমার নামের সঙ্গে যে ডক্টর শব্দটা রয়েছে, ওটার কারণে আপনারা আমাকে ডাক্তার ভাবছেন। কিন্তু আমি ডাক্তার নই। আমি বিজ্ঞানী। ডক্টরেটটা আমার একাডেমিক ডিগ্রি। মজনু লস্কর বললো, রাখেন আপনার ডিগ্রি। ওসব ডিগ্রি-ফিগ্রির কথা জেনে আমাদের লাভ নেই। আমরা জানতে চাই আমাদের পেছনে আপনি এমন উঠেপড়ে লেগেছেন কেনো? উঠেপড়ে লেগেছি! আপনাদের পেছনে? এ কী বলছেন আপনি? আমি আপনাদের পেছনে উঠেপড়ে লাগতে যাবো কেনো? বিস্ময় ঝরে পড়লো ডক্টর নিপুর কণ্ঠে। খবির মুন্সি বললো, এ প্রশ্নের জবাব তো আমরা দিতে পারবো না। কেনো আমাদের পেছনে লেগেছেন, তা আপনিই ভালো জানেন। সুবিদ আলি বললেন, আপনার কাজ-কারবার প্রথম থেকেই আমাদের মাঝে সন্দেহের সৃষ্টি করেছে। আমরা এই গ্রামের মানুষ। আমরা নূপুর ভিলার দিকে চোখ তুলে তাকাতে সাহস পাই না। আর আপনি সেখানে দিব্যি আস্তানা গেড়ে বসেছেন। আপনি নূপুর ভিলায় বসে সারা গ্রাম দখল করার ষড়যন্ত্র করছেন। গ্রামকে জনশূন্য করে তোলার পাঁয়তারা করছেন। ডক্টর নিপু বললেন, অদ্ভুত কথা তো! সারা গ্রাম জনশূন্য করার পাঁয়তারা করছি, হঠাৎ এমন ধারণা হলো কেনো? সুবিদ আলি বললেন, ধারণা হয়েছে এ কারণে যে, আপনি গ্রামের সাধারণ মানুষদের নানাভাবে ভয় দেখাচ্ছেন। ছেলে-বুড়ো সবার মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে দিচ্ছেন। আতঙ্কিত মানুষ ধীরে ধীরে গ্রাম ছেড়ে চলে যাবে। তখন আপনি এ গ্রাম দখল করবেন। ডক্টর নিপু বললেন, অদ্ভুত চিন্তাধারা আপনাদের । খবির মুন্সি বললো, আর তার চেয়েও অদ্ভুত কাজকারবার আপনার। তাই? আমার কাজকারবার অদ্ভুত? বেশ তো, কোন্ কাজটা অদ্ভুত বুঝিয়ে বলুন। বললেন ডক্টর নিপু। খবির মুন্সি বললো, যে জেগে থেকে ঘুমের ভান করে, তাকে জাগানো যায় না। আর যে বুঝেও না বোঝার ভান করে, তাকে বোঝানো যায় না। আমরা তো না বোঝার মতো কোনো কথা বলিনি। আপনি ভুতুড়ে আলো ছড়িয়ে আমাদের জীবন অতিষ্ট করে তুলেছেন। ওসব কিসের আলো? ডক্টর নিপু জবাব দেয়ার আগেই মফলু লস্কর বললো, আপনি জানেন না মুন্সি সাহেব ওগুলো কিসের আলো। তবে আমি জানি। ডাক্তার সাহেব ভূত-পেতœীর পূজা করে। ধূপ-ধুনো জ্বালায়। ওগুলো তার আলো। এতোক্ষণ যাবত অথৈ সমুদ্রে ছিলেন, এবার যেনো তীরের দেখা পেলেন ডক্টর নিপু। কেনো যে সবাই তার ওপর মারমুখো হয়ে আছে, তা বুঝতে পারলেন। অমনি স্বস্তির নিশ্বাস বেরিয়ে এলো তার ভেতর থেকে। তিনি বললেন, এবার আমি বুঝতে পেরেছি আপনাদের ক্ষোভের কারণ। নূপুর ভিলা থেকে যে আলো বেরিয়ে আসে, তা দেখেই আপনারা আমাকে ভুল বুঝেছেন। ভুল বুঝেছি মানে? ভুল বুঝবো কেনো? নূপুর ভিলা থেকে নানা রঙের আলো বেরোতে আমরা নিজ চোখে দেখেছি। নূপুর ভিলায় এখন আপনি থাকেন। আপনি তো সেই ভূতুড়ে আলোর দায়িত্ব অস্বীকার করতে পারেন না। দায়িত্ব আমি অস্বীকার করছি না। আমি শুধু বলতে চাইছি, আপনারা যাকে ভুতুড়ে আলো ভেবে ভয় পাচ্ছেন, তা আসলে ভুতুড়ে কিছু নয়। তাই ভয়েরও কিছু নেই। ওই আলোগুলো আমার এক্সপেরিমেন্টেরই একটা অংশ। আমি প্লান্টিমেল গেলো উদ্ভাবনের চেষ্টা করছি। এই গেলো উদ্ভাবন করতে পারলে মানব সভ্যতা কয়েক হাজার বছর এগিয়ে যাবে। এ কথাটাই বোঝাতে পারছি না আপনাদের। প্রচণ্ড আবেগ নিয়ে কথাগুলো বললেন ডক্টর নিপু। আর সেই আবেগকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে চেঁচিয়ে উঠলেন সুবিদ আলিÑ থাক থাক। আপনাকে আর বুঝিয়ে বলতে হবে না। আমরা সরল-সোজা চাষাভূষা মানুষ। আমরা ওসব এক্সপেরিমেন্ট-টেক্সপেরিমেন্টের কথা বুঝবো না। বুঝে আমাদের কোনো লাভও নেই। ডক্টর নিপু বললেন, লাভ নেই এ কথা ঠিক নয়। আমার এক্সপেরিমেন্ট সফল হলে শুধু আপানদেরই নয়, সমগ্র মানবজাতির লাভ হবে। যখন হবে তখন দেখা যাবে। গাছে কাঁঠাল রেখে গোঁফে তেল মেখে তো লাভ নেই। আজেবাজে কথা শোনার মতো সময়ও নেই আমাদের। কর্কশ স্বরে বললেন সুবিদ আলি। সে কথা শুনে ডক্টর নিপু বললেন, আপনাদের সময় নষ্ট করার মতো ধৃষ্টতা আমার নেই। কিন্তু আপনারা যে আমাকে ভুল বুঝছেন, সে কথাটা বোঝাবার জন্য তো কিছু বলতে হবে। আমি তো এমন কিছু... আপনি এমন কিছু করেননি যাতে আমরা আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলতে পারি, এই তো? শুনুন ভাই, আমরা সাদাসিধে মানুষ। আমাদের সাদাসিধে কথা, এখানে ওসব এক্সপেরিমেন্ট-টেক্সপেরিমেন্ট চলবে না। আমাদের সাফ সাফ কথা, কাল সূর্য ওঠার আগেই আপনাকে গ্রাম ছেড়ে চলে যেতে হবে। একদমে কতোগুলো কঠোর কথা শোনালেন সুবিদ আলি। আর তা শুনে ডক্টর নিপুর মাথার ভেতর ঝিমঝিম করে উঠলো। কপালের ওপর ভেসে উঠলো বিন্দু বিন্দু ঘাম। হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে ঘামের বিন্দুগুলো মুছে নিলেন তিনি। তারপর লম্বা একটা শ্বাস টেনে বললেন, আমি এখানে আগন্তুক। অধিকার তেমন নেই বললেই চলে। সে যা হোক, আপনারা বললে তো চলে যেতেই হবে। তবে এ কথা সত্য, আপনাদের সঙ্গে মিলেমিশেই থাকতে চেয়েছি আমি। কিন্তু তা আর হলো না। খবির মুন্সি বললো, আর মিলেমিশে থেকে কাজ নেই। সুবিদ আলি কী বলেছে শুনেছেন তো? সকাল হওয়ার আগেই মানে মানে কেটে পড়েন। সুবিদ আলি বললেন, এ নিয়ে কোনো গড়িমসি করবেন না। অমন অবস্থা দেখলে আমরাও কঠোর ব্যবস্থা নেবো। সুবিদ আলি বললেন বটে প্রয়োজন হলে তারা কঠোর ব্যবস্থা নেবেন, কিন্তু ব্যবস্থা নেয়ার মতো অনিশ্চয়তার মধ্যে যেতে রাজি হলো না কেউ কেউ। তারা বললো, একে আর সময় বেঁধে দেয়ার দরকার নেই। আমাদের গ্রাম। এখানে আমরা বাইরের কাউকে আর এক মুহূর্তও থাকতে দেবো না। এ লোককে এক্ষুনি, এ মুহূর্তে এখান থেকে চলে যেতে হবে। ডক্টর নিপু বললেন, এটা আপনাদের গ্রাম। আপনারা যখন চাইছেন, তখন অবশ্যই আমি চলে যাবো। তবে আমাকে দুটো দিন সময় দিতে হবে। নূপুর ভিলায় আমার নানা ধরনের যন্ত্রপাতি... মাত্র এটুকু বলেছেন ডক্টর নিপু। পুরো কথা শেষ করারও সুযোগ পেলেন না তিনি। ভিড়ের মধ্য থেকে এক যুবক প্রায় উড়ে এসে পড়লো ডক্টর নিপু ওপর। সেই অতর্কিত ধাক্কা সামলে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা সম্ভব হলো না তার পক্ষে। চোখের পলকে তিনি ছিটকে পড়লেন। সেই সঙ্গে নাকের ডগা থেকে ছিটকে বেরিয়ে গেলো তার রিমলেস চশমাটা। মানুষজন, গাছপালা আর আলোয় ভরা নীল আকাশ তার চোখে ঝাপসা হয়ে এলো।    (চলবে)

আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ