বিলুপ্ত তিমি

বিলুপ্ত তিমি

চিত্র-বিচিত্র মাহফুজ হাসান ফেব্রুয়ারি ২০২৪

সাহারা মরুভূমির মিসর অংশে প্রাগৈতিহাসিক যুগের একটি তিমির জীবাশ্ম আবিষ্কার করেছেন বিজ্ঞানীরা। ধারণা করা হচ্ছে চার কোটি ৩০ লাখ বছর আগের একটি বিলুপ্ত হওয়া তিমির জীবাশ্ম এটি।

ওয়েস্টার্ন ডেজার্টের মাটি খুঁড়ে ১০ বছরেরও বেশি সময় আগে জীবাশ্মটি বের করে আনা হয়েছিল। কিন্তু এটি কোন প্রাণীর দেহাবশেষ তা এতদিন ছিল অজানা।

কায়রো থেকে প্রায় দেড়শ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে ফায়ুম মরূদ্যানে অবস্থিত ওয়াদি আল-হিতান, যা তিমির উপত্যকা নামে পরিচিত। এটি ইউনেসকো ঘোষিত বিশ্বের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী স্থান, যেখানে তিমির প্রাচীনতম প্রজাতির শত শত জীবাশ্ম পাওয়া গেছে।

মিসরের জীবাশ্ম বিজ্ঞানীরা এই প্রজাতির নাম দিয়েছেন মিসরীয় ফারাও তুতেনখামেনের নাম অনুসারে তুতসিটাস রায়ানেনসিস। মিসরের ওয়াদি আল-রায়ান সংরক্ষিত এলাকার মরূদ্যান ফায়ুমে এই জীবাশ্ম পাওয়া যায়।

বার্তা সংস্থা এপির প্রতিবেদনে বলা হয়, কালের বিবর্তনে বর্তমানে সমুদ্রের সর্ববৃহৎ বাসিন্দা হিসেবে যে তিমির রাজত্ব, সেই তিমিরই পূর্বসূরি ছিল এই প্রাণী।

ডাঙা আর সাগর- দুই জায়গাতেই বিচরণ করত বলে প্রাগৈতিহাসিক তিমিটি আধা-জলজ প্রাণী হিসেবে পরিচিত।

গবেষণায় নেতৃত্ব দেওয়া জীবাশ্মবিদ হাশেম সালাম জানান, এটি পুরোপুরি শিকারি প্রাণী ছিল বলে এর বৈশিষ্ট্য থেকে প্রমাণ মিলেছে।

গবেষক দলের প্রধান এবং আমেরিকান ইউনিভার্সিটি অব কায়রোর অধ্যাপক হেশাম সালাম বলেন, ‘যখন থেকে এই প্রজাতির প্রাণীরা পরিপূর্ণরূপে পানিতে বাস করা শুরু করল, সেই সময়কার নিদর্শন বা তথ্য-প্রমাণ হিসেবে এই আবিষ্কার অনেক গুরুত্বপূর্ণ।’

সালাম বলেছেন এই সময়টাতে এই প্রজাতির তিমির আগের প্রজাতির তিমিরা মাছের মতো বৈশিষ্ট্য অর্জন করে। বিশেষ করে সুবিন্যস্ত দেহ, শক্ত লেজ, পাখনা এবং পুচ্ছ পাখনা এই সময়েই অর্জিত হয়। পায়ের মতো দেখতে অঙ্গ যা হয়তো প্রজননের কাজে সহায়তা করত।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, তিমিটির দৈর্ঘ্য ছিল আড়াই মিটার বা ৮ ফুট এবং এর ওজন ছিল আনুমানিক ১৮৭ কেজি। এটি তিমির সবচেয়ে ছোটো প্রজাতিগুলোর একটি।

এর দৈহিক বৈশিষ্ট্যের মধ্যে দীর্ঘ খুলি ও নাক উল্লেখযোগ্য। এ থেকে ধারণা মেলে, তীক্ষè শ্রবণশক্তির অধিকারী ছিল প্রাণীটি। এরা শিকারকে আঁকড়ে ধরে চিবিয়ে খেত।

বিজ্ঞানবিষয়ক সাময়িকী প্রসিডিংস অফ দ্যা রয়্যাল সোসাইটিতে প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, যে অঞ্চলে জীবাশ্মটির সন্ধান মিলেছিল, প্রাগৈতিহাসিককালে সে অঞ্চলে ছিল গভীর সাগর। আজ থেকে ৫ কোটি ৬০ লাখ থেকে ৩ কোটি ৪০ লাখ বছর আগে ইওসিন যুগে এই জায়গায় একটি সমুদ্র ছিল।

গবেষকদের মতে, তিমির বিবর্তন নিয়ে গবেষণার পথ খুলে দিয়েছে এ জীবাশ্ম। ডাঙার তৃণভোজী স্তন্যপায়ী থেকে তিমিরা কেন, কীভাবে এখনকার মাংসাশী ও পুরোপুরি সামুদ্রিক প্রাণীতে পরিণত হলো, সেটাই জানতে চান তারা। ধারণা করা হচ্ছে, ১ কোটি বছরেরও বেশি সময় ধরে তিমিদের এ বিবর্তন ঘটেছে।

বিজ্ঞানীদের ধারণা, তিমি কখন, কীভাবে, কেন ডাঙা থেকে আলাদা হয়েছে, সে বিষয়ে আভাস মিলতে পারে মিসরের যে এলাকায় জীবাশ্মটি পাওয়া গেছে সেখান থেকে। 

বিশ্বে এখন পর্যন্ত যত তিমির জীবাশ্ম আবিষ্কার হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে প্রাচীন জীবাশ্মটি প্রায় ৫ কোটি বছরের পুরোনো। পাকিস্তান ও ভারতের কোনো এলাকায় সেটি জন্মেছিল বলে ধারণা করা হয়।

কিন্তু ডাঙা থেকে কীভাবে সমুদ্রের স্থায়ী বাসিন্দায় পরিণত হলো তিমি, সে বিষয়ে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেননি গবেষকরা।

মিসরের ওয়েস্টার্ন ডেজার্ট অঞ্চল আগে থেকেই আরবি ভাষায় ‘ওয়াদি আল-হিতান’ নামে পরিচিত, যার বাংলা করলে দাঁড়ায় তিমির উপত্যকা। জনপ্রিয় এই পর্যটনকেন্দ্র মিসরের একমাত্র প্রাকৃতিক বিশ্ব ঐতিহ্য, যেখানে প্রাগৈতিহাসিক তিমিদের জীবাশ্ম রয়েছে।

আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ