বিলুপ্তির পথে ইরাবতি

বিলুপ্তির পথে ইরাবতি

চিত্র-বিচিত্র ইফতেখার মাহমুদ এপ্রিল ২০২৩

পৃথিবীজুড়ে বিপন্নপ্রায় ইরাবতি ডলফিন। আমাদের দেশের উপকূলীয় সমুদ্রসীমায় এদের আবাসস্থল ও বিচরণ। শীতে এই ডলফিনগুলো একেবারেই মিঠা পানির নদীর সংযোগ নদীগুলোতে চলে আসে। 

সুন্দরবন ইরাবতি ডলফিনের বড় অভয়ারণ্য। বিশ্বের সর্বোচ্চ সংখ্যক ইরাবতি ডলফিন রয়েছে বাংলাদেশের এই বনের নদ-নদীতে। বিশ্বখ্যাত ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবনের নদ-নদী, সুন্দরবন উপকূল ও বঙ্গোপসাগরের সোয়াস অব নো গ্রাউন্ডসহ ১২০ কিলোমিটার পর্যন্ত গভীর সমুদ্রে রয়েছে ৫ হাজার ৪০০ ইরাবতি ডলফিন। শুধু ইরাবতি ডলফিনই নয় বাংলাদেশের এ জলসীমায় আরও রয়েছে ৬ প্রজাতির ডলফিন। 

বিশেষজ্ঞদের মতে, ডলফিনের সব প্রজাতির মধ্যে ইরাবতি গুরুত্বপূর্ণ। প্রজাতিগতভাবে স্তন্যপায়ী হলেও এ প্রজাতির ডলফিনের সঙ্গে মানুষের মিল খুঁজে পাওয়া যায়। মানুষের মতোই এদের রক্ত গরম। একটি পরিবারের মতোই এরা নদ-নদী ও সাগরে দলবেঁধে বিচরণ করে। 

মিয়ানমারের উপকূলে ইরাবতি নামের একটি নদী আছে। এই নদীতে ইরাবতি ডলফিনের সহায়তায় জেলেরা মাছ ধরেন। জেলেরা নদীর এক পাশে জাল ফেলে ঘণ্টা বাজাতে থাকেন। ডলফিন এই শব্দ শুনে মাছের দলকে তাড়া করে। পুরো মাছের ঝাঁক জালের কাছাকাছি গিয়ে ছোটাছুটি করতে থাকে। আর কিছু মাছ আবার জালের বাধা পেয়ে পেছন দিকে ফিরে আসে। এসব মাছ শিকার করতে ইরাবতি ডলফিনের সুবিধা হয়। এভাবেই ইরাবতির জেলে ও ডলফিন যুগ যুগ সহাবস্থান করে লাভবান হচ্ছে। ডলফিন নদীর স্বাস্থ্যের ইনডিকেটর। যে নদীতে ডলফিন বেশি থাকে সেখানে মাছও বেশি। 

একটি জরিপের প্রাথমিক তথ্যানুযায়ী নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও বাংলাদেশে ডলফিন টিকে আছে। কিন্তু ডলফিনের বসতি এলাকায় মানুষের বিচরণ বেড়ে যাওয়ায় এতে ভবিষ্যতে ডলফিনের টিকে থাকা কঠিন হয়ে যাবে। বর্তমানে এ দেশের প্রায় সব নদীই ডলফিনের জন্য অরক্ষিত। গত চার বছরে প্রায় এক শ’ ডলফিনের মৃত্যু হয়েছে। বেশির ভাগই কারেন্ট জালে আটকা পড়ে ডলফিন মারা যায়। জলজ প্রাণী হলেও এদের নিঃশ্বাস নেওয়ার জন্য প্রতি তিন-পাঁচ মিনিটের মধ্যে পানির ওপর ভেসে উঠতে হয়। জালে আটকা পড়লে এরা দ্রুতই মারা পড়ে। এক গবেষণায় দেখা যাচ্ছে প্রায় ৭৮ ভাগ ডলফিন মারা পড়ে কারেন্ট জালে আটকা পড়ে।

এদের রক্ষার জন্যই বাংলাদেশ সরকারের বন বিভাগ সুন্দরবনের ৩১ কিলোমিটার নদী ও শাখা নদীকে এদের জন্য অভয়াশ্রম ঘোষণা করেছে। বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় এ অঞ্চলের নদ-নদীতে চরে বেড়ানো ৯ হাজার ডলফিনের জন্য এ অভয়াশ্রম ঘোষণা করেছে। এ অভয়াশ্রম ঘোষণার ফলে এখন সুন্দরবনের তিনটি পয়েন্টের ৩১ কিলোমিটার নদী ও শাখা নদীতে জাল ফেলা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সারা বিশ্ব প্রাণীবৈচিত্র্য রক্ষায় যে  ভূমিকা রাখছে আমাদের সবার জন্যই সেটা কল্যাণকর হবে বলে আশা করা যায়।

আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ