বুদ্ধি    -আবদুল্লাহ আল নাবিল

বুদ্ধি -আবদুল্লাহ আল নাবিল

তোমাদের গল্প অক্টোবর ২০১৬

আগের দিনে কোনো ইঞ্জিনচালিত গাড়ি ছিল না। তাই মানুষকে কোথাও যেতে হলে হেঁটেই যেতে হতো। দূরের পথ হলে মানুষ প্রয়োজনীয় কাপড়, খাদ্য ও টাকা নিয়ে যেত। আর রাত হলে কোন বাড়িতে আশ্রয় নিত। এদের বলা হতো মুসাফির।
কারো ঘরে কোন মুসাফির আশ্রয় নিলে তারা খুশি হতো। তাকে ভালোভাবে আপ্যায়ন করত। তাদেরকে বারান্দায় ঘুমাতে দিত। একে বলতো মুসাফিরখানা।
একবার এক ব্যক্তির বরিশাল যাওয়ার দরকার হলো। তার বাড়ি ছিল পটুয়াখালী। সে প্রয়োজনীয় কাপড়-চোপড় নিয়ে রওনা হলো। সাথে নিলো খাদ্য ও টাকা-পয়সা। তারপর আল্লাহর ওপর ভরসা করে রওনা দিল বরিশালের উদ্দেশে। হাঁটতে হাঁটতে দুপুর হয়ে এলে একটি স্বচ্ছ পুকুর ও তার পাশে একটা বড় বটগাছ দেখে সেখানেই যাত্রাবিরতি করলো। পুকুর থেকে অজু করে তারপর গাছের ছায়ায় জোহরের নামাজ আদায় করলো। এরপর কিছুটা বিশ্রাম নিয়ে আবার রওনা দিলো গন্তব্যের উদ্দেশে। পথে আসরের সময় হলে আসর পড়ে তারপর এক গ্রামে গিয়ে একঘরে আশ্রয় গ্রহণ করলো। তারা তাকে যথেষ্ট আপ্যায়ন করলো। রাতের খাবার খেয়ে মুসাফির বারান্দায় তার জন্য নির্দিষ্ট খাটে শুয়ে পড়লো। একা হওয়ায় তার ঘুম আসছিলো না। চাঁদনী রাত হওয়ায় সে শুয়ে বাইরের দৃশ্য উপভোগ করতে লাগলো।
সেই গ্রামে ছিল এক চৌকিদার। সে রাত হলে পাহারা দিত আর বাড়ি বাড়ি গিয়ে বলতো, হুঁশিয়ার, সাবধান সবাই চোর থেকে সতর্ক থাকুন। তার ডাক তারা শুনে বুঝতো চৌকিদার পাহারা দিচ্ছে। তাই তারা ঘুমিয়ে পড়তো। তারপর চৌকিদার কোন এক ঘরে গিয়ে চুরি করতো প্রায় রাতেই কোন না কোন ঘরে চুরি হচ্ছিল।
কিন্তু চোর ধরা পড়ছিল না। কেউ ঘুণাক্ষরেও জানতে পারেনি চৌকিদার চোর। প্রতিদিনের মত সেদিনও চৌকিদার বাড়ি বাড়ি গিয়ে বলল, হুঁশিয়ার, সাবধান সবাই চোর থেকে সতর্ক থাকুন। তার ডাক শুনে সবাই নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পড়লো। কিন্তু মুসাফির তখনো ঘুমায়নি। চৌকিদার সেদিন মুসাফিরের আশ্রয় নেয়া ঘরে চুরি করে ঘরের মালামাল বস্তায় ভরে নেয়ার সময় মুসাফির তা দেখলো। সে ভাবলো, আশ্রয়দাতার ঘরে চোর ঢুকে চুরি করেছে।
এখন আমি তা দেখেও তাকে না ধরলে অন্যায় হবে। তারপর সে ঘর থেকে সাবধানে দ্রুত বের হয়ে পেছন থেকে চৌকিদারকে জাপটে ধরে বললো চোর, চোর। চৌকিদারও বস্তাটা মুসাফিরের পাশে ফেলে উল্টে তাকে ধরে বললো, চোর, চোর, তাদের চিৎকারে মানুষ দৌড়ে বের হয়ে এলো। তারা চৌকিদারের কথামতো মুসাফিরকে চোর মনে করে পেটাতে লাগলো। তাকে কথা বলার কোনো সুযোগ দিল না। মার খেতে খেতে মুসাফির দুর্বল হয়ে পড়লে লোকেরা তাকে ছেড়ে দিল। সুযোগ পেয়ে সে দৌড়ে পালাল। তারপর দিন সে আবার ঐ গ্রামে এলো। এক ব্যক্তিকে জিজ্ঞেসা করলো এ গ্রামে সবচেয়ে ভালো বিচার করে কে?
সে বললো, আবেদ আলী। তারপর তার ঠিকানা বলে দিল। এরপর মুসাফির লোকটি আবেদ আলীর কাছে গেল। সে তার কাছে আগের দিন রাত্রের সম্পূর্ণ ঘটনা খুলে বললো এবং এর বিচার চাইলো। তিনি পরদিন সকাল ১০টায় তাকে তার বাড়িতে উপস্থিত থাকতে বললেন। চৌকিদারকে ডেকে বললেন। তুমি কাল সকাল ১০টায় আমার বাড়িতে উপস্থিত থাকবে। সেখানে তোমার ও মুসাফিরের মধ্যকার বিচার হবে। আর গ্রামবাসীকেও পরদিন সকাল ১০টায় তার বাড়িতে বিচার দেখতে উপস্থিত হতে বললেন। পরদিন নির্দিষ্ট সময়ে সবাই হাজির। তিনি কে চোর তা বের করার জন্য একটি বুদ্ধি বের করে নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বে দু’জন লোককে সে মোতাবেক কাজ করার নির্দেশ দিলেন। বিচার শুরু হলো উভয়ে তার কথা ব্যক্ত করলো। এমন সময় এক লোক এসে বললো, আমি একটু আগে ঐখানে রাস্তার পাশে একটা লোককে শোয়া দেখলাম। দেখে তো মনে হয় মৃত, আসলে লোকটি ছিল জীবিত। সে আবেদ আলীর কথামতো সেখানে মৃতের ভান করে শুয়েছিল। আর ঐ লোকটিও আবেদ আলীর নির্দেশে সেখানে গিয়েছিল। কথাগুলো তিনিই তাকে বলতে বলেছিলেন। আসলে কথাটি ছিল সত্যি। কারণ সেতো আর বলেনি লোকটি মৃত। সে বলেছে, লোকটিকে দেখে মনে হয় মৃত। আসলে সে মৃতের ভান করায় তাকে তেমনই দেখা যাচ্ছিল।
আবেদ আলীর বাড়িতে স্ট্রেচার ছিল। তিনি চৌকিদার ও মুসাফিরকে স্ট্রেচারে করে ঐ লোকটিকে আনতে নির্দেশ দিলেন। তারা তাকে তুলে আনার পথে হাঁটতে হাঁটতে চৌকিদার মুসাফিরকে বললো, তুমি আমাকে না ধরে শুয়ে থাকলেই পারতে। সকালে তুমি তোমার মতো চলে যেতে। শুধু শুধু আমাকে ধরে কেন মার খেতে গেলে? মুসাফির কোন উত্তর দিল না। স্ট্রেচারে থাকা লোকটি জীবিত বিধায় সে তা শুনে ফেললো। তাকে এনে আবেদ আলীর কাছে রাখামাত্রই সে দাঁড়িয়ে বললো, চৌকিদারই চোর, তারপর সে আসার পথে শুনা কথাটি বললো।
এদিকে এ ঘটনা দেখে সবাই তাজ্জব হয়ে গেলো। তারপর আবেদ আলী চৌকিদারকে বললো, কে চোর? সত্যি কথা বল। চৌকিদার কোনো উপায় না দেখে সেই যে চোর এটা স্বীকার করলো। তারপর আবেদ আলী তাকে গ্রামের এমন চুরি কে করেছে জিজ্ঞেস করলে, সেই যে করেছে তাও বললো। এসব শুনে গ্রামবাসীর মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ল। চৌকিদার মুসাফিরসহ সবার কাছে মাফ চাইল। মুসাফির তাকে ক্ষমা করে দিল। আবেদ আলী গ্রামের মানুষের যা চুরি করেছে তা তাদের ফিরিয়ে দেয়ার নির্দেশ দিলেন। চৌকিদার চেষ্টা করে সবার চুরি করা মালামাল ফেরত দিল। যা দিতে পারলো না তার জন্য ক্ষমা চাইল। আর সে শপথ করলো কখনো চুরি করবে না। সে আর কখনো চুরি করেনি বরং চুরি রোধের জন্য কঠোরভাবে পাহারা দিত।
এভাবে আবেদ আলীর বুদ্ধিতে সে গ্রামে চুরি বন্ধ হয়ে গেলো।
                        
আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ