বুবুর জন্য

বুবুর জন্য

গল্প সেপ্টেম্বর ২০১০

জুবায়ের হুসাইন

হঠাৎ করে আকাশটা কেমন জানি মেঘলা হয়ে উঠল। পড়ন্ত বিকেলের রক্তিম আভা কেবল চারপাশে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে। একটু পর সন্ধ্যা নামবে। কিছুক্ষণ আগেও আকাশটা জুড়ে টুকরো টুকরো সাদা মেঘেরা উড়ে চলছিল পেঁজা তুলোর মতো। গলার মালা তৈরি করে কয়েকটা পাখিও উড়ে গেছে, দেখেছে ও। মিলন বলেছে ওগুলো গাঙচিল। দিনের শেষে নীড়ে ফিরছে। হেমন্ত চলছে। অবশ্য এখন আর আগের মতো ঋতুগুলোর বৈচিত্র্য তেমন উপভোগ করা যায় না। বিশ্বব্যাপী পরিবেশ বিপর্যয়ের হাত থেকে রেহাই পায়নি এই দেশটাও। বলা হচ্ছে, আবহাওয়া পরিবর্তনে বাংলাদেশই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। নিম্নভূমি নিমজ্জিত হবে। আরও অনেক কিছু। কিন্তু ও অত সব ভাবতে চায় না। ভাল্লাগে না ভাবতে। ওর ছোট্ট মস্তিষ্কটাতে ওসব বিষয় ঢোকেও না। এই কিছুদিন আগেও যে মাঠগুলো দেখলে মনে হতো কোনো শিল্পী তার তুলি দিয়ে সবুজ রঙের বিরাট এক শামিয়ানাই যেন এঁকে দিয়েছেন, এখন সে মাঠগুলো দেখলে মনে হবে ওই শিল্পী এবার সেখানে সোনালি রঙের প্রলেপ বুলিয়ে দিয়েছেন। পাকা ধানের ক্ষেতের ওপর দিয়ে যখন বাতাস বয়ে যায়, তখন ধানগাছগুলো দোল খায়। ঠিক যেন সাগরের ঢেউ! সোনালি সেই ঢেউয়ের সাথে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে ‘টুনটুন’ একটা চমৎকার আওয়াজ আর সেই সাথে মৌ মৌ গন্ধে চতুর্পাশটা ভরে যায়। বেশ কিছুদিন ধরেই ও বেলে মাঠের রাস্তার ধারে ওটা দেখে আসছে। আর মনে মনে তো ঠিক করেই রেখেছে সুযোগ মতো একদিন ওটা তুলে নিয়ে গিয়ে বাড়িতে কোথাও পুঁতে দেবে। আজ মাঠ থেকে খেলা শেষে সবাই যখন বাড়ি চলে গেছে, বিশেষ করে মেঘ দেখে আগেভাগেই খেলা শেষ করেছে, তখন ও একেবারেই একা হয়ে গেল। তাছাড়া এই ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় ওটা লাগানোই উপযুক্ত সময়, ভাবল ও। তাই শিশু গাছের চারাটা অত্যন্ত যতেœর সাথে উঠিয়ে নিল যেন কোনো শিকড় না ছেড়ে এবং কোনোরূপ ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। বাড়ি ফিরতে ফিরতেই বৃষ্টি শুরু হলো। প্রথমে বড় বড় কয়েকটা ফোঁটা, তারপর ঝমঝম করে। আব্বা বলেন, ‘শুরুতেই বড় বড় ফোঁটায় বিষ্টি পড়া মানে হলো ম্যালা বিষ্টি হবে। আর ফিসফিস (ছোট ফোঁটা) করে বিষ্টি মানে বিষ্টি ম্যালাক্ষণ হবে কিন্তু কম।’ চালে গুঁজে রাখা নিড়ানি নিয়ে সামনের বাগানে চলে গেল ও। তারপর ভেজা মাটিতে পরিমাণ মতো গর্ত খুঁড়ে শিশুগাছের চারাটা পুঁতে দিল। বাঁশের একটা চিকন কঞ্চি এগিয়ে দিল রেবেকা, ওর বোন। কখন ওর পাশে এসে দাঁড়িয়েছে খেয়াল করেনি। পাশের বেড়া থেকে কঞ্চির খানিকটা ভেঙে এনেছে। ‘থ্যাংকিউ’ বলে ও কাঠিটা নিল এবং চারাটার পাশে মাটিতে চাপ দিয়ে পুঁতে দিল। তারপর উঠে দাঁড়িয়ে কয়েক মুহূর্ত ওটার দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। ‘কোথায় পেলি?’ রেবেকার জিজ্ঞাসা। ‘বেলে মাঠের পাশে রাস্তার ধারে।’ জবাব দিল ও। ‘অ্যাই মিতুল?’ বারান্দা থেকে মা ডাকলেন। ‘কী করছিস ওখানে? এই অসময় ভিজছিস কেন? রেবু তুইও?’ ‘না মা,’ জবাব দিল মিতুল। ‘এই একটা গাছের চারা পুঁতলাম আর কি।’ ‘তুমি যাও, আমরা এুনি আসতিছি।’ বলল রেবেকা। ‘তা’তাড়ি আয়, বেশি ভিজলি জ্বর আসবেনে।’ বলে মা ঘরের ভেতরে চলে গেলেন। মিতুল ও রেবেকা আর দেরি না করে কলপাড়ে গেল। রেবেকা টিউবওয়েলের হাতল চাপল আর বদনা ভরে পানি নিয়ে মাথায়-গায়ে ঢেলে গোসল করল মিতুল। এরপর বারান্দায় উঠে তারে নেড়ে দেয়া গামছা দিয়ে ডলে গা মুছল। একটু পর উঠে এল রেবেকাও। *    *    * ‘এই বু, এই অঙ্কডা একটু দেখায় দিবি?’ রাতে পড়তে বসে বলল মিতুল। ঘরের মেঝেতে মাদুর পেতে পড়তে বসেছে মিতুল ও তার বোন রেবেকা। বীজগণিতের দ্বিঘাত সমীকরণের একটা অঙ্ক মিতুল কিছুতেই বুঝতে পারছে না। ও জানে, এসব অঙ্ক বু’র কাছে একেবারেই ডাল-ভাত। এলাকার সবাই তো বলে, রেবেকা অঙ্কের একটা জাহাজ! কিন্তু ও তো জানে, রেবেকা বু শুধু অঙ্ক না, সকল সাবজেক্টেই জাহাজ। তাইতো বাড়িতে কোনো টিচার না থাকলেও দিব্যি ভালো রেজাল্ট করে আসছে রেবেকা, আর তার বদৌলতে মিতুলও। ‘কই দেখি, কোন্ অঙ্কটা।’ বলল রেবেকা, মোটা ফ্রেমের চশমার কাচের মধ্য দিয়ে তাকিয়ে। রেবেকা খুব সুন্দর করে অঙ্কটা বুঝিয়ে দিল ভাইকে। তারপর বলল, ‘কি, বুঝেছিস তো?’ ‘হ্যাঁ বু, খুব সহজ অঙ্ক। জীবনে আর ভুল হবে না।’ খুশি খুশি গলায় বলল মিতুল। ‘ঠিক আছে, এখন এই ৩ নম্বর অঙ্কটা জলদি করে দেখা তো।’ মিতুল যেন একটু ঘাবড়ে গেল। বু’কে নিয়ে এই এক ঝামেলা, কিছু না পারলে দেখিয়ে দেয়, বুঝিয়েও দেয় চমৎকারভাবে। কিন্তু তারপরই এক্সারসাইজ, এটা তার রুটিন কাজ। বার তিনেক অঙ্কটা পড়ল মিতুল। বুঝতে চেষ্টা করল প্যাঁচটা কোথায়। তারপর খসখস করে খাতায় লিখতে লাগল। অঙ্ক কষা শেষ হলে ভয়ে ভয়ে খাতাটা বোনের দিকে এগিয়ে দিল। রেবেকা বলল, ‘একটু দাঁড়া, এই লাইনটা শেষ করে নিই।’ তারপর নিজের পড়া থেকে এবার ভাইয়ের খাতায় মনোযোগ দিল। মিতুলের করা অঙ্কটার ওপর দিয়ে চোখ বুলালো। চেহারার কোনো পরিবর্তন হল না, এতে একটু ঘাবড়েই গেল মিতুল। তাহলে কি হয়নি? কিন্তু ওকে অবাক করে দিয়ে মুচকি হাসি তারপর গালজুড়ে হাসি উপহার দিল রেবেকা। বলল, ‘একদম নির্ভুল হয়েছে। নে, এবার পরপর সব অঙ্ক করে ফেল।’ মিতুলও হাসল, ঠোঁট চেপে। তারপর একে একে অনুশীলনীর বাকি সব অঙ্ক করে ফেলল। মনে বেশ আনন্দ পাচ্ছে ও। একদিনে পুরো একটা অুনশীলনীর অঙ্ক শেষ করতে পেরে ভালোই লাগছে। অঙ্ক করা শেষ হলে ইংরেজি বইটা টেনে নিল মিতুল। একটু পর মা ডাকলেন রান্না ঘর থেকে, ‘কইরে মিতুল-রেবু, খাতি আয়।’ ‘আসতিছি মা।’ সাড়া দিল মিতুল। ‘চল্ বু, খেয়ে আসি।’ উঠে দাঁড়াল। ‘হ্যাঁ চল্।’ বই বন্ধ করে উঠে দাঁড়াল রেবেকাও। *    *    * রেবেকার বিয়ে হয়ে গেছে সপ্তাহখানিক হলো। এখন তাই মিতুল বেশ একা হয়ে গেছে। বিশেষ করে রাতে পড়তে বসার সময় বেশ মিস করে বোনকে। তখন কেমন আনমনা হয়ে যায়। পিঠেপিঠি দুই ভাইবোন ওরা। লোকে বলে, পিঠেপিঠি হলে মায়া মহব্বত একটু বেশিই হয়। সহ-দ্বিঘাত সমীকরণের একটা বর্ণনামূলক অঙ্ক কিছুতেই করতে পারছে না মিতুল। অভ্যাসমতো বইটা তুলে ধরে পাশ ফিরে বলল, ‘এই বু, এই অঙ্কডা একটু...’ ওর কথা মাঝপথেই থেমে গেল। বুঝতে পারল বু’কে তো এখন হাজার ডাকলেও আর পাওয়া যাবে না। আর কখনও ওর অঙ্ক বা বাংলা ও ইংরেজি ব্যাকরণ বুঝিয়ে দেবে না। মনটা খুবই খারাপ হয়ে গেল ওর। পড়াতে কিছুতেই মন বসাতে পারল না আর সে রাতে। মা খেতে ডাকলে চুপিচুপি গিয়ে খেয়ে এল। তারপর বইখাতা গুছিয়ে শুয়ে পড়ল। কিন্তু ঘুমও আসছে না কিছুতেই। কেবলই বু’র কথা মনে পড়ছে। ডান কাত হয়ে শুলো ও। ধীরে ধীরে চোখ বন্ধ করল। ‘এই মিতুল, এই অসময়ে শুইছিস্ কেন? শরীর খারাপ করবে যে! ওঠ শিগ্গির।’ বোনের গলা কানে যেতেই উঠে বসল মিতুল। অপলক চোখে বোনের মুখের পানে চেয়ে রইল ও। রেবেকা বলল, ‘অমন করে কী দেখতিছিস? নে, বই নিয়ে বোস। আজ কোনো অঙ্ক বুঝতি সমস্যা নেই তো?’ মিতুল সহ-দ্বিঘাত সমীকরণের অঙ্কটা দেখাল, বলল, ‘এইটে কত্তি পাচ্ছিনে।’ ‘আরে বোকা,’ বলল রেবেকা। ‘এইটে তো খুবই সোজা অঙ্ক। এই দেখ আমি কত্তিছি।’ তারপর খসখস করে খাতায় অঙ্কটা কষে গেল রেবেকা। বলল, ‘এবার এই অঙ্কটা কর, একই নিয়মের অঙ্ক।’ বই ও খাতা টেনে নিল মিতুল। তারপর করতে শুরু করল অঙ্কটা। কিছুদূর এগোনোর পর এক জায়গায় বেধে গেল। বোনকে ডাকল, ‘বু, এই জায়গাটা ঠিক বুঝতি পাচ্ছিনে। একটু...’ ‘অ্যাই মিতুল? মি-তুউউল!’ ওর মনে হলো বহুদূর থেকে কেউ ওর নাম ধরে ডাকছে। একটু নড়ে উঠল। ‘মিতুউউউউল!’ এবার কণ্ঠটা একটু কাছেই শোনা গেল। এবং বেশ স্পষ্ট। ‘মিতুল সকাল হয়ে গেছে, ওঠ্।’ এবার কণ্ঠটা চিনতে পারল ও, মায়ের গলা। ধড়মড় করে উঠে বসল বিছানায়। তারপর ফ্যালফ্যাল করে মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে রইল। ‘কি রে, ফজরের নামাজ পড়িছিস তো?’ মা জিজ্ঞেস করলেন। ‘না মা,’ জবাব দিল মিতুল। ‘আসলে রেবেকা বু আসলো তো, তাই...’ ওকে থামিয়ে দিলেন মা। বললেন, ‘কী বলতিছিস এসব তুই? রেবেকা বু আসলো মানে?’ ‘না মানে, মা আসলে আমি...’ ‘স্বপ্ন দেখিছিস বুঝি?’ মিতুল উপর-নিচ মাথা নাড়ল। ‘নে এবার ওঠ্। আজ তো তোর খসরু ভা’র (ভাইয়ের) আসার কথা। তা’তাড়ি মুখ-হাত ধুয়ে নে।’ বলে মা বেরিয়ে গেলেন ঘর থেকে। মিতুল কিছুক্ষণ ঝিম মেরে বিছানায় বসে রইল। তারপর আড়মোড়া ভেঙে নামল। ব্রাশে পেস্ট মাখিয়ে নিয়ে কলপাড়ে চলে গেল। মুখ-হাত ধুয়ে ঘরে ফিরল। শরীরটা এখনও কেমন ম্যাজম্যাজ করছে। আবারও শুয়ে পড়তে ইচ্ছে করছে। শুয়েও পড়ল। চিত হয়ে শুয়ে মাথার নিচে দু’হাত রেখে গত রাতে দেখা স্বপ্নটা নিয়ে ভাবতে লাগল। বু স্বপ্নে এসে ওর অঙ্কটা করে দিয়ে গেছে। ‘আচ্ছা দেখি তো এখন করতে পারি কি না অঙ্কটা!’ লাফ দিয়ে বিছানা থেকে নামল ও। পাশ থেকে অঙ্ক বইটা টেনে নিল। সহ-দ্বিঘাত সমীকরণের অনুশীলনীটা বের করে একবার পড়ল অঙ্কটা। দু’মুহূর্ত পরই খুশিতে ঝলমল করে উঠল ওর চেহারা। খাতা ও কলম টেনে নিল। মিনিটখানেক লাগল অঙ্কটা শেষ করতে। সোজা হলো। হঠাৎ করেই মনটা খারাপ হয়ে গেল। অস্ফুটে উচ্চারণ করল, ‘বু, তোরে খুব মিস কত্তিছিরে বু!’ ‘মিতুল,’ বাইরে থেকে মা ডাকলেন। ‘এই দেখ তোর খসরু ভাই চলে এয়েছে।’ বাইরে বেরিয়ে এলো মিতুল। বারান্দার খুঁটি ধরে দাঁড়াল। উঠোনে মায়ের পাশে দাঁড়িয়ে আছে একটা ছেলে, ওর থেকে বয়সে কিছুটা বড়ই হবে। মাথাজুড়ে কোঁকড়া কালো চুল, পুরু ভ্রƒ-জোড়ার নিচে ডাগর ডাগর দু’খানা চোখ, সেই চোখের ওপর কালচে কার্বনফ্রেমের চশমা, ঠোঁটজোড়াও বেশ পুরু এবং একটু যেন কালচে। তবে শরীরটা না চিকন না মোটা। গায়ে সাদার ওপর লালচে ছোপ দেয়া ফুলহাতা শার্ট, পরনে কালো ফুলপ্যান্ট। পায়ে মেটে কালারের চামড়ার স্যান্ডেল। আগে কোনোদিন দেখেনি ও একে। ছেলেটার হাতে ইয়া পেটমোটা এক ব্যাগ। ‘কি রে, অমন করে কী দেখতিছিস?’ বললেন মা। ‘এখন থেকে তোরা একঘরেই থাকবি।’ ছেলেটাকে দেখিয়ে বললেন, ‘ও তোরে পড়াবে।’ মিতুলের অন্তরটা আনন্দে নেচে উঠল। খসরু ভাইকে একনজর দেখেই পছন্দ হয়েছে ওর। অন্তত বুবুর অভাবটা কিছুটা হলেও তো পূরণ হবে। দ্রুত বারান্দা থেকে নামল ও। খসরুর হাত থেকে ব্যাগটা একপ্রকার ছিনিয়ে নিল। উঁচু করতে গিয়ে একটু কুঁজো হয়ে গেল। কিন্তু সেটা বাইরে প্রকাশ করল না। বলল, ‘আসো খসরু ভাই, ঘরে যাই।’ খসরু সম্পর্কে মিতুলের দূর সম্পর্কের খালাতো ভাই। বাবা-মা ওর লেখাপড়ার খরচ ঠিকমতো চালাতে পারছেন না। অন্যদিকে ছেলেটা খুবই মেধাবী। কিভাবে যেন মিতুলের আব্বার কানে এলো বিষয়টা। তিনিও মিতুলের একজন শিক্ষক খুঁজছিলেন। কথা বললেন খসরুর আব্বার সাথে। তিনি খুশি মনেই রাজি হলেন। ব্যস, খসরু চলে এলো। ভর্তি হলো মিতুলদের স্কুলেই, ওর দুই কাস ওপরে। মিতুল একজন সঙ্গী পেয়ে বেশ খুশি। খসরু ভাই আসলেই খুব ভালো। খুবই ব্রিলিয়ান্ট, ঠিক বুবুর মতো। সকালে-রাতে দু’জন এক সাথে পড়তে বসে। কোথাও বেধে গেলে খসরু দেখিয়ে দেয়, ওর বুবু যেমন দিত। মিতুলের লজিং চিটার হয়ে এলেও মিতুল ও খসরুর সম্পর্কটা ভাইয়ের পর্যায়েই রইল। খসরু ওকে ছোট ভাইয়ের মতোই স্নেহ করে। আর মিতুল তো খসরুকে সেভাবেই সম্মান করে। রাতের খাওয়া-দাওয়া শেষ করে নিজের রুমে এলো মিতুল। খসরু যথারীতি বই নিয়ে বসেছে। আজ মিতুলের মনটা বেশ খারাপ। বুবুর কথা মনে পড়ছে বারবার। তাই বারান্দায় গিয়ে দাঁড়াল।  খুঁটির পাশে বসে পড়ল। তাকাল আকাশের দিকে। মেঘশূন্য পরিষ্কার আকাশ। নারকেল গাছের পাতার ফাঁকে প্রায় ভরাট হয়ে ওঠা চাঁদটা যেন উঁকি দিচ্ছে। তার চারপাশ ঘিরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে তারারা। কোনো কোনোটা মিটমিট করছে। একটু পর কোত্থেকে একখণ্ড মেঘ এসে চাঁদটাকে ঢেকে দিল। চারপাশ একটু অন্ধকার হয়ে এলো তাতে। মিনিটখানেক পরই মেঘটা সরে গেল, আবারও ঝলমল করে হেসে উঠল চাঁদটা। কাঁধে কোমল স্পর্শ পেয়ে ফিরে তাকাল মিতুল। খসরু, ওর পাশে এসে বসেছে। ‘কী দেখতিছো অমন করে?’ জিজ্ঞেস করল খসরু। ‘চাঁদটা খুব সুন্দর, তাই না খসরু ভাই?’ খসরুর প্রশ্নের জবাব না দিয়ে বলল মিতুল। খসরু উপর-নিচ মাথা নাড়ল। মিতুল তা দেখতে পারল না, কারণ ও তখন আবারও আকাশের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছে। মিতুলের মুখটা ঝলমল করে উঠল, ঠিক যেন চাঁদটার মতো। আসলে ও তখন চাঁদের মধ্যে বু’র ছবিটা  দেখতে পাচ্ছে। পাশে তাকাল, খসরুকে মনে হলো বুবুরই প্রতিচ্ছবি। তারপর খসরুকে জড়িয়ে ধরে ডুকরে কেঁদে উঠল।
আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ