ভূত অদ্ভুত

ভূত অদ্ভুত

গল্প জুন ২০১৩

রাসেল, সজীব ও ইমন তিন বন্ধু। তারা একই ক্লাসে পড়ে। যদিও ভিন্ন স্কুলে তারা তিনজনই কিন্তু তাদের বন্ধুত্বের তুলনা হয় না। লোকে বলে, ‘বিপদের বন্ধুই প্রকৃত বন্ধু’। বিপদের বন্ধু আজ আর নেই এ কথাটি তাদের তিনজন সম্পর্কে একেবারেই বেমানান। কারণ তাদের বন্ধুত্ব এতটা-ই অটুট যে, একজন আরেক জনের জন্য জীবন উৎসর্গ করতে পারে। সেবার, সুন্দরবন বনভোজনে গিয়ে সজীব, রাসেল ও ইমন একটি বাঘের খপ্পরে পড়ে যায়। সজীব খুব দ্রুত একটি গাছে উঠে পড়ে, রাসেল একটি লতা ধরে ঝুলে পড়ে কিন্তু বাঘ ইমনকে ঠিকই তাড়া করে। সজীব ও রাসেল ইমনকে বাঁচানোর জন্য তারা বাঘের পেছনে ছুটতে থাকে। হঠাৎ ইমন পড়ে গেলে বাঘটি ইমনের ঘাড়ের ওপর ওঠে যাবে এমন সময় রাসেল কোথা থেকে একটি লাঠি সংগ্রহ করে বাঘটির মাথায় সজোরে আঘাত করে। ফলে বাঘটি মাথা ঘুরে পড়ে যায় এবং সজীব একটি গাছের ডাল ভেঙে বাঘটিকে আধমরা করে ইমনকে নিয়ে দ্রুত সেখান থেকে পালিয়ে আসে। তারপর থেকে তাদের বন্ধুত্বের বন্ধন সম্পর্কে সকলের জানা আছে। এপ্রিল মাস শেষে স্কুল গ্রীষ্মের ছুটি দেয়। এবার তারা তিনজন সিদ্ধান্ত নেয় সজীবের গ্রামের বাড়ি বেড়াতে যাবে। আম, জাম, লিচু ও কাঁঠাল খাবে মজা করে সজীবের সাথে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গ্রীষ্মের বন্ধে তাদের গ্রামের বাড়ি যায়। গ্রামটি অনেক সুন্দর। রাস্তায় রাস্তায় গাছের ছায়া, বিশাল মাঠের ঠা-া হাওয়া। একটি ছোট খাল গ্রামটিকে মায়ার জালে আবদ্ধ করে রেখেছে। সজীবের গ্রামটির সৌন্দর্যে অপর দুই বন্ধু মুগ্ধ। একদিন একটি ছোট্ট ডিঙ্গি নৌকা নিয়ে তারা তিন বন্ধু খাল ভ্রমণে বের হয়। সজীবের হাতে ডিঙিটির বৈঠা ছিল। সে হঠাৎ বৈঠা উঁচু করে একটি পুরনো বাড়ি দেখিয়ে দিয়ে বলে, গ্রামের সবার বিশ্বাস এই বাড়িতে ভূত থাকে। তাদের তিনজনই ভূত অবিশ্বাস করে। তাই তারা বাড়ির ভেতরে কী আছে তা দেখার জন্য ভেতরে যেতে চায়। কিন্তু সেদিন প্রায় সন্ধ্যা নেমে এসেছিল। তাই তারা পরদিন ঢোকার সিদ্ধান্ত নিলো। রাতে সজীবের দাদুর নিকট থেকে কাঁচা আম খেতে খেতে বাড়িটি সম্পর্কে জেনে নেয় তিন কিশোর বন্ধু। সজীবের দাদু বলেন বাড়িটি অনেক পুরনো। একদিন বিকেলবেলায় বাড়িটির ভেতরে এক মাঝি কান্না শুনতে পায়। মাঝিটি বাড়ির ভেতরে ঢুকলে পরদিন তার লাশ পানিতে ভাসমান অবস্থায় পাওয়া যায়। পানিতে রক্ত ছড়িয়ে যায়। তবে লাশটিতে চোখ ছিল না। পেট কাটা ছিল। তার পর থেকে সবাই জানে ঐ বাড়িতে ভূত আছে। কিন্তু রোমাঞ্চকর তিন বন্ধু কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছে না। কিছুতে গোলমাল হচ্ছে। তাই তারা তার দাদুকে তাদের সিদ্ধান্ত জানাল। এ কথা শুনে দাদুর মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ল। তিনি কিছুতেই তিন বন্ধুকে একসাথে ওই বাড়িতে যেতে দিতে রাজি নন। কিন্তু তাদের নাছোড়বান্দা স্বভাবের জন্য দাদু শেষ পর্যন্ত তাদের বন্দী করে ঘরের ভেতরে রেখে যান। সকালে স্বভাব অনুযায়ী নামাজ পড়ার জন্য বের হওয়ার কথা বললে দরজা খুলে দেয়া হয়। তখন তারা নামাজ পড়ে বাড়ি ফিরে এসে সকালের নাস্তা করে বাড়িতে কাউকে কিছু না বলে সোজা খাল পাড়ে গিয়ে পৌঁছায়। খালপাড় থেকে ডিঙি নিয়ে বাড়িটির পেছন দিকে গিয়ে থামে। আল্লাহর নাম স্মরণ করে, আয়াতুল কুরসি পড়ে ডিঙি থেকে নেমে পড়ে তারা। আস্তে আস্তে নিঃশব্দে এগোতে থাকে। হঠাৎ কিসের যেন একটা শব্দ শুনতে পায় তারা। বাড়িটির ভেতর থেকে এসেছে শব্দটি, বুঝতে পারলেও কিসের শব্দ অনুমান করতে পারেনি। পরক্ষণেই দাদুর কথা মনে পড়ে গেল ইমনের। তিনি বলেছিলেন, আজ পর্যন্ত যত লোকেই এই বাড়িতে ঢুকেছে কেউই জীবন নিয়ে ফেরেনি। সকলেরই চোখবিহীন পেট কাটা লাশ পাওয়া গিয়েছে। কিন্তু, অত সহজে দমবার পাত্র নয় সে। তাই অন্য বন্ধুদের সাথে সে-ও হাঁটতে থাকে। কিছুক্ষণ পর, শব্দটি আবারো শুনতে পারে তারা। কিন্তু এবার বুঝতে পারে সে শব্দটি কোনো শিশু বাচ্ছা করছে। তারা হঠাৎ একটা রাস্তা দেখতে পায় বাড়ি উত্তর পাশে। রাস্তাটি দেখে বোঝা যায় যে এখানে মানুষ ও অন্যান্য যানবাহনের নিয়মিত চলাচল আছে। সজীব আসার সময় একটি ব্যাগে কয়েক বোতল পানি ও তার ক্যামেরাটি এনেছিল। তারা সবাই পানি খেয়ে নেয়। এবার বাড়িটির ভেতরে ঢুকবে তারা। অনেক সাবধানতার সাথে নিঃশব্দে পেছন পাশ দিয়ে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে তারা। ভেতরে প্রবেশ করে তারা একটি অস্ত্রসহ লোক দেখতে পায়। তারা সম্পূর্ণ রূপে বুঝতে পারে যে বাড়িটি কোনো অন্যায় কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। বাড়ির ভেতরে কোনো ভূত নেই। সজীব তার হাতের পাশে একটি ঘরের পুরনো ইট খুলে দেখতে পায় কিছু লোকের আনাগোনা ঘরটির ভেতরে। কিন্তু কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। কিছুক্ষণ পর লোকগুলো সেখান থেকে সরে যায়। স্পষ্ট বোঝা যায় শিশুদের কিডনি, হৃৎপিণ্ড তোলা হচ্ছে। সজীব সঙ্গে সঙ্গে কয়েকটি ছবি তুলে নেয়। ইতোমধ্যে কয়েকটি শিশুবোঝাই গাড়ি আসে সেখানে। তারা বুঝতে পারে যে, এরা শিশু পাচারকারী। শিশুপাচার করে এনে সেখানে তাদের অপহরণ করা হয়। গাড়িসহ শিশুদের কয়েকটি ছবি তুলে ক্যামেরাটি ব্যাগে রেখে আস্তে আস্তে বের হবার চেষ্টা করে তারা। কিন্তু বের হবার সময় হঠাৎ রাসেলের পায়ের আওয়াজে এক প্রহরী টের পেয়ে যায়। তখনি শুরু হয় গুলি নিক্ষেপ। খুব দ্রুত তিনজন পালানোর চেষ্টা করে পাশের কাশবনে ঢুকে। কিন্তু তার আগেই রাসেলের ডান হাতে গুলি লাগে। আর দুই বন্ধু তাকে টেনে হিঁচড়ে কাশবনের মাঝখানে নিয়ে যায়। ততক্ষণে রাসেল অজ্ঞান হয়ে গেছে। পরবর্তীতে পরিস্থিতি ঠাণ্ডা হলে রাসেলকে নিয়ে ডিঙি করে সোজা হাসপাতালে চলে যায়। হাসপাতালে সজীব রাসলের পাশে ইমনকে রেখে পুলিশকে সচিত্র সংবাদ দেয়। ফিরে আসার কিছুক্ষণ পর রাসেলের জ্ঞান ফেরে। কিছুদিন পর জানতে পারে যে, তিন তরুণ যে তথ্য দিয়েছে তা সব থেকে বড় সন্ত্রাসী সংস্থা। এদেরকে ধরিয়ে দেয়ার জন্য তারা প্রত্যেককে পঞ্চাশ হাজার টাকা পুরস্কার পাচ্ছে এ কথা শুনে তিন বন্ধু খুশিতে আত্মহারা হয়ে যায়। তারপর মসজিদে গিয়ে নফল নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করে, ‘হে আল্লাহ আপনি আমাদের মন থেকে কুসংস্কার দূর করে দিন।’ হ

আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ