মানুষ মানুষের জন্য

মানুষ মানুষের জন্য

নাটিকা এপ্রিল ২০১৫

মুস্তাগিছুর রহমান#

(একটি ছেলে রাস্তার পাশে ফুল বিক্রি করছিল। সে বেশ ক্লান্ত পরিশ্রান্ত। তার গায়ে ছেঁড়া ময়লা পোশাক। আজ তার ফুল বিক্রি হয়নি, তাই সকালের নাশতাও হয়নি!)

ফুল বিক্রেতা    :    স্যার একটা ফুল নেন না স্যার। ও স্যার নেন না একটা ফুলের মালা।
বাবা    :    যা তো, বিরক্ত করিস না ।
ফুল বিক্রেতা    :    নেন না স্যার একটা ফুলের মালা। ও স্যার নেন না। স্যার নেন না।
বাবা    :    আহা তোকে না যেতে বলেছি।
ফুল বিক্রেতা    :    স্যার সকাল থাইকা কিচ্ছুই খাই নাই, নেন না স্যার।
বাবা    :    দূর হ সামনে থেকে বলছি। একটা থাপ্পড় দেবো, যা ভাগ।
ছেলে    :    নাও না আব্বু একটা মালা। ওকে ক’টা টাকা দিয়ে দাও।
বাবা    :    বাবা ওদের দিকে তাকাতে নেই। দেখছো না ওরা কত নোংরা।
স্যার    :    নেন না একটা ফুলের মালা। স্যার ও স্যার।

(লোকটি ফুল বিক্রেতা ছেলেটিকে একটা থাপ্পড় দেয়। ছেলেটি পড়ে গিয়ে কাঁদতে থাকে)
ফুুল বিক্রেতা    :    স্যার আমরা গরিব বইলা আমারে থাপ্পড় মারলেন। সকাল থাইক্কা কিচ্ছুই খাই নাই, খিদার জন্য কয়ডা টেকা চাইছিলাম। তার জন্য আমারে থাপ্পড় দিলেন। মাগো, মা-তুমি কেন আমারে রাইখ্যা আল্লাহর কাছে চইলা গেলা। আমগরে কেউ দেখবার পারে না মা। কেউ দেখবার পারে না।
বাবা    :    চল বাবা, আজ তোমাকে অনেক কিছু কিনে দেবো। কী খাবে বল? চক্বার, আইসক্রিম, পিজা, হটডগ, কী খাবে বলো!
ছেলে    :    সকাল থেকে তো অনেক কিছুই খেয়েছি। আমার আর খেতে ইচ্ছে করছে না।
বাবা    :    তাই কি হয়, না খেলে তোমার ক্ষুধা লাগবে। বলো কী খাবে?
ছেলে    :    আব্বু আমাকে একটা ব্রেড কিনে দেবে?
বাবা    :    ব্রেড! এতো খাবার রেখে ব্রেড! ঠিক আছে তোমাকে ব্রেড কিনে দিচ্ছি।

(বাবা তাকে একটা ব্রেড কিনে দেবেন।)
ছেলে    :    বাবা আমাকে আগামী কালকের টিফিনের টাকাটা দেবে?
বাবা    :    অবশ্যই দেবো। এই নাও।
ছেলে    :    বাবা আমি একটু আসছি।
বাবা    :    কোথায় যাচ্ছ সাব্বির?
ছেলে    :    তুমি একটু দাঁড়াও, আমি এক্ষুনি আসছি।

(ছেলে দ্রুত ফুলওয়ালা ছেলেটির কাছে যাবে। কাছে গিয়ে তার হাতের রুটি ও টাকা বাড়িয়ে দেবে।)
ফুল বিক্রেতা    :    (কাঁদতে কাঁদতে বলবে) না ভাই, আমার আর খিদা নাই। আপনে আসছেন তাতেই আমি খুব খুশি হয়েছি।
ছেলে    :    নাও ধর। তুমিতো সকাল থেকে কিছুই খাওনি, নাও।
ফুল বিক্রেতা    :    না ভাই, আপনের আব্বায় রাগ করবো। আমার লাগবো না ।
ছেলে    :    তুমি নেবে না? ঠিক আছে, তোমার এই ২টি ফুল আমি কিনে নিচ্ছি। এবার নাও।

(ফুল বিক্রেতা রুটি নেবে, তারপর সাব্বিরের দিকে তাকিযে থাকবে)
ছেলে    :    কী হলো, খাও? ঠিক আছে আমি তোমাকে খাইয়ে দিচ্ছি।
ফুল বিক্রেতা    :    আপনে খুব ভালা ভাইজান। আপনে খুব ভালা ।
ছেলে    :    এসো আমরা দু’জনে মিলে খাই।

(এরই মধ্যে বাবা চলে আসবেন। এসে দেখবেন তার ছেলে ফুল বিক্রেতাকে খাওয়াচ্ছে)
বাবা    :    ছি ছি বাবা, তোমাকে না বলেছি নোংরা ছেলের সাথে কখনো মিশবে না! এ কী করেছো!
ছেলে    :    বাবা আমি তো প্রতিদিনই ভালোভালো খাবার পাই। ওর তো বাবা-মা কেউ নেই, ওকে একটু খাইয়ে দেই বাবা।
বাবা    :    আহা পাগলামো করো না তো, চল উঠে এসো।
ছেলে    :    বাবা প্লিজ আমার তো সব আছে ওর তো কেউ নেই।
বাবা    :    বলছি চলে এসো।
ছেলে    :    ওর মতো যদি আমিও এতিম হয়ে যাই তখন কে আমাকে খাইয়ে দেবে বাবা।

(বাবা তার ছেলের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকবেন। দু’চোখ দিয়ে পানি ঝরবে। দুই হাত দিয়ে ছেলেকে বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরবেন।)
বাবা    :    আয় বাবা পৃথিবীতে যার কেউ নেই তার জন্য আল্লাহ রয়েছেন। এখন থেকে তুমি আমাদের সাথে থাকবে। এক সাথে স্কুলে যাবে।
ছেলে    :    তোমাকে আর ফুল বিক্রি করতে হবে না। তুমি আজ থেকে আমার বন্ধু ও ভাই।
বাবা    :    হ্যাঁ, এখন থেকে তোমরা দু’জন ভাই।
ফুলওয়ালা    :    খালুজান আমার তো আব্বা নেই। আপনেরে আমি আব্বা কইরা ডাকি? কোনদিন আব্বা কইয়া ডাকতে পারি নাই তো। জানেন সবাই যখন আব্বা কইয়া ডাক দেয়, তখন আমার খুব খারাপ লাগে।
বাবা    :    (চোখ মুছতে মুছতে) মাথা নেড়ে বলেন আজ থেকে তুমিও আমার সন্তান।

(ফুল বিক্রেতা ছেলেটি দু’হাত দিয়ে বাবাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে। আব্বু আব্বু বলে ডাকতে থাকে, এটা দেখে ছেলেটিও চোখের পানি ধরে রাখতে পারে না। দূর থেকে আধো আধো সুরে ভেসে আসে ‘মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য, একটু সহানুভূতি কি পেতে পারে না’ গানটি।)
                        
আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ