মিথ্যেবাদী রাখাল

মিথ্যেবাদী রাখাল

নাটিকা অক্টোবর ২০১৪

মুস্তাগিছুর রহমান

[dropcaps round="no"](রাখাল[/dropcaps] বালক মাঠে গরু চরাচ্ছে, গরু ঘাস খাচ্ছে বালকটি একটি গাছের নিচে বিশ্রাম নিচ্ছে। এমন সময় সেখান দিয়ে এক শয়তান যাচ্ছে। শয়তানটি চিন্তা করল এই বালককে কিভাবে ধোঁকা দেয়া যায়। তারপর শয়তানটি বালকের কাছে এসে বলল) শয়তান    :    কী হে বালক কী ভাবছ একা একা। বালক    :    তুমি কে। তোমাকে তো চিনতে পারলাম না। শয়তান    :    আমাকে তুমি চিনতে পারলে না। আমি তোমার এক বন্ধু। বালক    :    তুমি আমার বন্ধু। তোমাকে আগে দেখেছি বলে মনে পড়ছে নাতো। আচ্ছা যাই হোক এবার বল তুমি কী বলতে চাও? (শয়তান মনে মনে বলবে আমার কাজই হচ্ছে মানুষকে মিথ্যে কথা বলানো। এই সুযোগে কাজটা করে নেই।) বালক    :    কী বলছ মনে মনে। শয়তান    :    না বলছিলাম তোমাকে একটা সুন্দর পরামর্শ দেবো। যদি তুমি শোন। বালক    :    বল না কী পরামর্শ তুমি দেবে। শয়তান    :    তুমি তো একা একা বসে আছ, এক কাজ করলে কেমন হয়। বালক    :    কী কাজ? শয়তান    :    কাজটি খুব মজার যদি তুমি মনোযোগ দিয়ে তা করতে পার। বালক    :    বল না আমি সব পারি। তুমি যা যা বলবে সব করতে পারব। শয়তান    :    এখন যদি তুমি বাঘ বাঘ বলে চিৎকার কর। তোমার ডাকে সবাই ছুটে আসবে। কিন্তু এসে দেখবে বাঘ আসেনি। সবাই বোকা বনে যাবে, কী মজা তাই না! বালক    :    সত্যিইতো খুব মজার ব্যাপার! শয়তান    :    তাহলে আর দেরি কেন এক্ষুনি শুরু করে দাও। বালক    :    ঠিক আছে আমি তাই করব। কী মজার ব্যাপার, তাই না। খুব আনন্দ হবে। শয়তান    :    আজকে তাহলে আসি। আবার আসব। বালক    :    থেংক ইউ। থেংক ইউ। তোমাকে অনেক ধন্যবাদ। ভালো একটা বুদ্ধি দিয়েছ। (বালক একটি বড় মাঠের একপ্রান্তে দাঁড়িয়ে চিৎকার করতে থাকলো) বালক    :    বাঘ এসেছে। বাঘ এসেছে। তোমরা কে কোথায় আছ। বাঁচাও, বাঁচাও, বাঘ আমাকে খেয়ে ফেলল। বাঁচাও, বাঁচাও। (বালকের চিৎকার শুনে সবাই বের হয়ে এলো) মা    :    কে কোথায় আছ। আমার ছেলেকে বাঘে খেয়ে ফেললো। বাঁচাও বাচাও। কৃষক    :    কে যেন বাঘ বাঘ বলে চিৎকার করছে। সম্ভবত বাঘ এসেছে! চলো ছেলেটিকে বাঁচাতে হবে। মজুর    :    সবাই লাঠিসোটা নিয়ে বের হয়ে এসো, বাঘ এসেছে। বাঘ এসেছে। বৃদ্ধ    :    যার যা আছে তা-ই নিয়ে বেরিয়ে আস, বাঘ এসেছে। (সবাই লাঠিসোটা, দা, কুড়াল ইত্যাদি নিয়ে রাখাল বালকের কাছে এলো। এসে দেখে বালক একটি ঝুপের ভেতর থেকে বাঘ বাঘ বলে চিৎকার করছে) কৃষক    :    কী ব্যাপার বাঘ কোথায়? তুমিতো শুধু শুধু চিৎকার করছ। বালক    :    কী মজার ব্যাপার সবাই এসেছে। কী মজা ! কী মজা! বৃদ্ধ    :    শুধু শুধু বাঘ বাঘ বলে চিৎকার করলে কেন? মা    :    এভাবে কেউ চিৎকার করে। তুমি তো আমাদের ভারি চিন্তায় ফেলে দিয়েছিলে। মজুর    :    এগুলোর কোন মানে হয়। চল, আমরা যে যার কাজে যাই। সবাই    :    চল, চল। মা    :    বাবা এ রকমটি করতে নেই। আমি তোমার জন্য কী দুশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম। তাড়াতাড়ি কাজ সেরে বাড়ি চলে এসো। (বিরক্ত হয়ে সবাই চলে যায়। বালক খুব আনন্দিত, এ রকম একটি বোকা বানানোর খেলায় সে খুব মজা পায়। এরই মাঝে শয়তানটি আবার আসে) শয়তান    :    দেখলে কেমন মজা হলো। খুব আনন্দ হয়েছে তাই না। আমার কথা মত চললে আরো মজা পাবে। বালক    :    সত্যিই খুব মজা হয়েছে। কিন্তু বড়রা যে কষ্ট পেয়েছে। শয়তান    :    বড়দের কথা শুনে কোনো লাভ নেই। ওরা খালি উপদেশ দেয়। ওদের কথা এমনকি মায়ের কথাও শুনবে না, কেমন। বালক    :    ঠিক আছে বন্ধু। শয়তান    :    আজ তাহলে আসি। আবার কাল আসব। বালক    :    আরেকটু থাক না। তোমার কথায় খুব মজা পাই। শয়তান    :    আমার কথা মত চললে শুধু আনন্দ আর আনন্দ। একটা কথা, বড়দের কথায় কোনো আনন্দ নেই। আমরা তো এখন অনেক বড় হয়েছি। সুতরাং বড়দের কথা শুনবো কেন। বালক    :    ঠিক আছে বন্ধু। আজ থেকে কারো কথাই শুনব না। শয়তান    :    এই তো বুদ্ধিমানের মত কথা। আসি। বালক    :    কাল আবার এসো। শয়তান    :    ঠিক আছে। (শয়তান চলে যাবে বালক মনে মনে আনন্দ করতে করতে বাড়ির দিকে চলে আসবে।) দ্বিতীয় দৃশ্য আগের মত রাখাল বালক এবং শয়তান কথা বলছে। রাখাল বালককে শয়তান পরামর্শ দিচ্ছে। শয়তান    :    তাহলে বন্ধু আর দেরি না করে কালকের মতো আবারও শুরু কর। আজও দেখবে তোমার ডাকে সবাই ছুটে আসবে কী মজা হবে। সবাই বোকা বনে যাবে। বালক    :    ঠিক আছে বন্ধু তোমার কথামত আজও বাঘ বাঘ বলে চিৎকার করব। শয়তান    :    আজ তাহলে আসি। বালক    :    ঠিক আছে বন্ধু। (রাখাল বালক আগের মতোই চিৎকার করতে থাকবে)। বালক    :    বাঘ এসেছে বাঘ এসেছে। তোমরা কে কোথায় আছ বাঁচাও বাঁচাও। বাঘ আমাকে খেয়ে ফেলল। আমাকে বাঁচাও বাঁচাও। (রাখালের চিৎকার শুনে অনেকেই দৌড়ে আসবে। রাখাল আনন্দ পাবে)। রাখাল    :    তোমরা আবারও বোকা হয়েছ। কী মজা, কী মজা। কৃষক    :    বাবা এরকম দুষ্টুমি করতে হয় না। তুমি কেন এ রকম কর। আমরা অনেক কাজ ফেলে তোমার ডাকে চলে এসেছি। বৃদ্ধ    :    মিথ্যে কথা বলা মহাপাপ। আল্লাহ বিরক্ত হন। মজুর    :    মানুষকে ধোঁকা দেয়া শয়তানের কাজ। এমনটি আর কক্ষনো করো না। বুড়ি    :    বাবারে বাবা এতটুকু ছেলে কী পাকনা হয়েছে। বাপের জনমেও এরকমটি কখনো দেখিনি। একজন    :    চল। ওর কথায় আর কখনোও আমরা আসব না। সবাই    :    চল সবাই, চল। (সবাই চলে যাবে। রাখাল বালক একা একা দাঁড়িয়ে থাকবে।) বালক    :    (আনমনে) যে যাই বলুক কত মজা হয়েছে। কী আনন্দ হয়েছে! তৃতীয় দৃশ্য (রাখাল বালক একা একা বসে আছে। চিন্তা করছে এরই মাঝে সত্যি সত্যিই বাঘ এসে যাবে বালক বাঘ দেখে ভয় পেয়ে যাবে। ভয়ে চিৎকার করতে থাকবে। শয়তান তার রূপ ধরে আসবে।) বালক    :    বাঁচাও বাঁচাও। কে কোথায় আছ। বাঘ আমাকে খেয়ে ফেল। তোমরা আমাকে বাঁচাও। এরই মাঝে শয়তানকে দেখতে পাবে। শয়তান তার রূপ ধরে এসে হাসতে থাকবে। বালক    :    বাঁচাও বন্ধু। বাঁচাও। বাঘের ছোবল থেকে বাঁচাও। বাঘ আমাকে খেয়ে ফেলবে। আমাকে বাঁচাও। শয়তান    :    হা হা হা হা। বোকা বালক আমি তোমাকে কিভাবে বাঁচাব। বালক    :    তুমি না আমার বন্ধু। শয়তান    :    বোকা বালক! শয়তান কি কখনো মানুষের বন্ধু হয়? আমি তোমার শত্রু। মানবসন্তানকে বিপদে ফেলাই হলো আমার কাজ। বালক    :    বাঁচাও বাঘ আমাকে খেয়ে ফেলল। বাঁচাও, বাঁচাও। শয়তান    :    এখন তোমাকে কেউ বাঁচাতে আসবে না। কারণ তুমি তাদেরকে ধোঁকা দিয়েছ। তোমাকে তো তারা অনেক বারণ করেছিল। তুমি তা শুননি, তুমি আমার কথা শুনেছিলে। এখন বুঝ মজা। যারা বড়দের কথা শুনে না, যারা মা-বাবার কথা শোনে না, তারা এরকমই বিপদে পড়ে। হা হা হা হা হা... (শয়তান হাসতে হাসতে চলে যাবে) বালক    :    বাঁচাও আমাকে বাঁচাও। বাঘ আমাকে খেয়ে ফেলল। বাঁচাও, মা গো, বাঁচাও। একজন    :    শুনছ দুষ্ট বালকটা আবার চিৎকার করছে। অন্যজন    :    মিথ্যে কথা বলে মানুষকে বোকা বানানোই হলো ওর কাজ। বালক    :    বাঁচাও। বাঁচাও। আ আ আ ... (বালককে বাঘ কামড়াতে থাকবে। এবং খেয়ে ফেলবে)

আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ